আদম যদি আল্লাহর ছুরত হন, তবে হাওয়া কার ছুরত?
অমৃত জিজ্ঞাসা (পর্ব-০৩)
প্রশ্নঃ আদম (আঃ) যদি আল্লাহর ছুরত হন, তবে মা হাওয়া (আঃ) কার ছুরত?
উত্তরঃ
কুরআন হাদীস ও অন্যান্য শাস্ত্র অনুযায়ী প্রমাণিত যে, আদম (আঃ) কে স্রষ্টা নিজের ছুরতে সৃষ্টি করেছেন। এই বিষয়টা নিয়ে কারোই তর্ক বিতর্ক নেই। আদম তত্ত্ব অনেকেই বুঝে, এটা নিয়ে কারো সমস্যা নেই, সমস্যা হল মা হাওয়া তত্ত্ব নিয়ে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব বুঝানোর জন্য।
আদম (আঃ) কে আল্লাহ্ তায়ালা আপন ছুরতে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন। কিন্তু হাওয়া (আঃ) এর তৈরির উপাদানের ব্যপারে বলেছেন আদম (আঃ) এর বাম পাঁজরের হাড়ের কথা। আর এইটা নিয়েই গুলিয়ে গেছে সবাই। তাছাড়া হাওয়া (আঃ) কে কার ছুরতে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ এটাও বলেন নাই। আর এই সুযোগে নামধারী পীর ফকিররা ভক্তদেরকে রেখেছেন গোলক ধাঁধায়। আদম তত্ত্ব সহজে বললেও হাওয়া তত্ত্ব জিজ্ঞেস করলে কোনো কোনো পীরের ভাব বেড়ে গিয়ে এমন মন্তব্যও করে যে “হাওয়া তত্ত্ব জানতে হলে আমার পায়ে ৬ মাস তেল মালিশ করতে হবে, তারপর তোমাকে কিঞ্চিৎ জানানো হবে”। কথা শুনলেই ভয় লাগে, বাপরে বাপ, তার মানে হাওয়া তত্ত্ব কত জটিল তত্ত্ব :)। এমনই ভেবে বসে থাকে অনেক ভক্তেরা। তবে বিষয়টা সূক্ষ্ম; কিন্তু সহজ।
মূলত আদম (আঃ) দ্বারা পুরুষ মানুষকে বুঝায় এবং হাওয়া (আঃ) দ্বারা নারী জাতিকে বুঝায়। কিন্তু কুরআন হাদীস ও সকল শাস্ত্রে আদম (আঃ) বলতে সকল নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন হাদীসে আছে ‘মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই” অর্থাৎ মেয়েরা হল বোন; কিন্তু এখানে আলাদাভাবে মেয়েদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। কুরআনেও অনেক জায়গায় শুধু মুমিনদের কথা বলা হয়েছে, মুমিনাতদের কথা বলা হয়নি। কারন মুমিন দ্বারাই মুমিন পুরুষ ও মুমিনাত নারীদের বুঝানো হয়েছে। ঠিক সেভাবেই আদম তত্ত্ব দ্বারা হাওয়া তত্ত্বও বুঝানো হয়েছে।
আদম তত্ত্ব মানেই মানুষ তত্ত্ব, হোক সে নারী বা পুরুষ। অর্থাৎ হাওয়া (আঃ) কেউ আল্লাহ নিজের ছুরতে সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাকেই নয়, সমস্ত মানব জাতিকেই আল্লাহ আপন ছুরতে সৃষ্টি করেছেন। তবে বাম পাঁজরের হাড়ের কথাটা আল্লাহ রূপক ভাবে ব্যবহার করেছেন। এটা দ্বারা নারীর প্রতি পুরুষের ভালবাসা ও আকর্ষনের বিষয়টা বুঝাতে চেয়েছেন মূলত।
আরেকটা বিষয় হল গন্দম তত্ত্ব। অনেকে নারীকে গন্দম বলে, কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে ‘তোমরা দুইজন ঐ বৃক্ষের নিকট যেও না”। অর্থাৎ দুইজনকেই বারণ করা হয়েছে, সুতরাং নারীকেও গন্দম খেতে নিষেধ করা হয়েছে, নারী বা নারীর যৌনাঙ্গ যদি গন্দম হয়, তাহলে নারীকে কেন গন্দমের নিকট যেতে বারণ করা হল। কুরআনে দ্বিবচন ব্যবহার করা হয়েছে।এখান থেকেও বুঝা যায় যে, আদম ও হাওয়া উভয়ের জন্যেই গন্দম একই বস্তু।
মূল কথা হল, আদম তত্ত্বই মানুষ তত্ত্ব, আর মানুষ তত্ত্বই হাওয়া তত্ত্ব, আর হাওয়া তত্ত্ব মানেই নারী-পুরুষ তত্ত্ব।
লেখাঃ DM Rahat