সূফী কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি ও বাণী: ২য় খন্ড

সূফী কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি ও বাণী: ২য় খন্ড

জীবনী সংক্ষেপণঃ

সুফি কবি কাজী নজরুল ইসলাম চুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে ১৮৯৯ সালের ২৪মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতশিল্পী, সুফি এবং আধ্যাত্মবাদীদের বিদ্রোহী মনোভাবের প্রতিচ্ছবি হওয়ার কারণে তাঁকে বিদ্রোহী বা সুফি কবি বলা হয়। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব, এই কবি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উভয় ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রশংসিত। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

উক্তি ও বাণী গুলো:

৫১.
“নুড়ি হাজার বছর ঝরণায় ডুবে থেকেও রস পায় না।”

৫২.
“আর্থ দিয়ে মাড়োয়ারিকে, জমিদার,
মহাজনকে বা ভিখারিকে হয়তো খুশি করা যায়,
কিন্তু কবিকে খুশি করা যায় না ।”

৫৩.
“সত্যকে অস্বীকার করিয়া ভশ্তামি দিয়া কখনো
মঙ্গল উৎসবের কল্যাণ প্রদীপ জ্বলিবে না।”

৫৪.
“গাহি সাম্যের গান –
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই,
নহে মহীয়ান।”

৫৫.
“যার ভিত্তি পচে গেছে,
তাকে একদম উপড়ে ফেলে
নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে
তার ওপর ইমারত যতবার খাঁড়া করা যাবে,
ততবার তা পড়ে যাবে।”

৫৬.
“শোন মর্ত্যের জীব অন্যের যত করিবে
পীড়ন নিজে হবে তত ক্লীব।”

৫৭.
“তিনিই আর্টিস্ট, যিনি আর্ট ফুটাইয়া তুলিতে পারেন।
আর্টের অর্থ সত্য প্রকাশ এবং সত্য মানেই সুন্দর;
সত্য চিরমঙ্গলময়।”

৫৮.
“অসুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর করতে;
সর্বনির্যাতন থেকে মুক্ত করতেই মানুষের জন্ম।”

৫৯.
“ব্যর্থ না হওয়ার সব চাইতে নিশ্চিন্ত
পথ হলো সাফল্য অর্জনে দৃঢ় সঙ্কল্প হওয়া।”

৬০.
“দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি
তাই যাহা আসে কই মুখে”

৬১.
“অনেক সময় খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে
নিজের সত্যেকে অস্বীকার করে ফেলা হয়।
তাতে মানুষকে ক্রমেই ছোট করে ফেলে,
মাথা নিচু করে আনে ও রকম মেয়েলি
বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক ভালো।”

৬২.
“দূর আজানের মধুর ধ্বনি, বাজে, বাজে মসজিদের-ই মিনারে।
মনেতে জাগে, হাজার বছর আগে, হজরত বেলালের অনুরাগে।
তার খাস এলাহান, মাতাইতো প্রাণ।
ভাঙ্গাইতো পাষান, জাগাইতো মহিমারে।
দূর আজানের মধুর ধ্বনি, বাজে, বাজে মসজিদের-ই মিনারে”

৬৩.
“আজ বুঝি-কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর-
‘মোর পরে যদি নবী হত কেউ, হত সে এক উমর!”

৬৪.
“মওলানা মৌলবি সাহেবকে সওয়া যায়,
মোল্লাও চক্ষুকর্ণ বুজিয়া সহিতে পারি,
কিন্তু কাঠমোল্লার অত্যাচার অসহ্য হইয়া উঠিয়াছে।
ইসলামের কল্যাণের নামে ইহারা যে কওমের
জাতির ধর্মের কি অনিষ্ট করিতেছেন
তাহা বুঝিবার মত জ্ঞান নাই বলিয়াই
ইহাদের ক্ষমা করা যায় না।
ইহারা প্রায় প্রত্যেকেই
‘মনে মনে শাহ ফরীদ,বগল মে ইট’। ইহাদের নীতি
‘মুর্দা দোজখ মে যায় আওর বেহেশত মে যায়,
মেরা হালুয়া রুটি সে কাম’।”

৬৫.
“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই। ”

৬৬.
“পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর
বিধির বিধান সত্য হোক।”

৬৭.
“খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে
বিরাট শিশু আনমনে।
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা
নিরজনে প্রভু নিরজনে। ”

৬৮.
“মৌ-লোভী যত মৌলবি আর মোল-লা’রা কন হাত নেড়ে
দেব-দেবী নাম মুখে আনে সবে দাও পাজিটার জাত মেরে
ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও
যদিও শহীদ হইতে রাজি ও
আমপারা পড়া হামবড়া মোরা এখনও বেড়াই ভাত মেরে
হিন্দুরা ভাবে পার্শী শব্দে কবিতা লেখে ও পা’ত নেড়ে।”

৬৯.
“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।”

৭০.
“নামাজ পড়, রোজা রাখ, কলমা পড় ভাই,
তোর আখেরের কাজ করে নে সময় যে আর নাই।”

৭১.
“জানিস নাকি ধর্ম সে যে বর্মসম সহনশীল
তাই কি ভাই ভাঙতে পারে ছোঁওয়া ছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল ?
যে জাত-ধর্ম ঠুনকো এত আজ না হয় কাল ভাঙবে সে ত।
যাক না সে জাত জাহান্নামে রইবে মানুষ নাই পরোয়া।”

৭২.
“শুণ্যে মহা আকাশে তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে
ভাঙ্গিছো গড়িছো নীতি ক্ষণে ক্ষণে
নির্জনে প্রভু নির্জনে খেলিছো।”

৭৩.
“খোদার কি আশ্চর্য মহিমা।
রাজা–যার অত ধন মালামাত্তা,
অত প্রতাপ,সেও মরে মাটি হয়।
আর যে ভিখারি খেতে না পেয়ে তালপাতার
কুঁড়েতে কুঁকড়ে মরে পড়ে থাকে, সেও মাটি হয়।”

৭৪.
“নামাজ পড়, রোজা রাখ, কলমা পড় ভাই,
তোর আখেরের কাজ করে নে সময় যে আর নাই।”

৭৫.
“বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে,
আমরা তখনও বসে-
বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি,
ফিকাহ ও হাদিস চষে”

৭৬.
“কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা
দাঁড়ি মুখে সারিগান- লা শরীক আল্লাহ।”

৭৭.
“ভগবান! তুমি চাহিতে পার কি ঐ দুটি নারীর পানে?
জানি না, তোমায় বাঁচাবে কে যদি ওরা অভিশাপ হানে!”

৭৮.
“হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে,
কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র ”

৭৯.
“আমি বিদ্রোহী ভৃগু,
ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন।”

৮০.
“বল বীর-বল উন্নত মম শির!
শির নেহারী’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর”

৮১.
“আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।”

৮২.
“মহা – বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-
রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ,
ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।”

৮৩.
“ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?”

৮৪.
“আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি।”

৮৫.
“কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।”

৮৬.
“বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।

৮৭.
“নারীর বিরহে নারীর মিলনে নর পেলো কবি প্রাণ
যত কথা তার হইল কবিতা শব্দ হইল গান।”

৮৮.
“কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী;
প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী।”

৮৯.
“কান্না হাসির খেলার মোহে অনেক আমার কাটল বেলা
কখন তুমি ডাক দেবে মা, কখন আমি ভাঙব খেলা ?”

৯০.
“খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা
মেঘের এলোকেশে ওড়ে পুবালি বায়
দোলে গলায় বলাকার মালিকা।। ”

৯১.
“গিন্নির চেয়ে শালী ভালো ”

৯২.
“কেয়া পাতার তরী ভাসায় কমল -ঝিলে
তরু-লতার শাখা সাজায় হরিৎ নীলে।
ছিটিয়ে মেঠো জল খেলে সে অবিরল
কাজলা দীঘির জলে ঢেউ তোলে
আনমনে ভাসায় পদ্ম-পাতার থালিকা।”

৯৩.
“বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি।”

৯৪.
“আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায়ে মল,
মাথায় ঘোমটা, ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও শিকল!
যে-ঘোমটা তোমায় করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ!
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন ঐ যতো আবরণ।”

৯৫.
“নর-ভাবে আমি বড় নারী ঘেঁষা!
নারী ভাবে, নারী বিদ্বেষী!’

৯৬.
“শিরী লায়লীর খোঁজে ফরহাদ খোঁজে কায়েস…
খুঁজে ফেরে হেথা যুবা সেলিম নূরজাহানের দূর সাকিম
চাঁদ বাজারে এই নওরোজের
দোকান বসেছে মোমতাজের,
সওদা করিতে এসেছে ফের
শাহজাহান হেথা রূপ পাগল!”

৯৭.
“হে মোর রাণী! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে।
আমার বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।
আজ বিদ্রোহীর এই রক্ত-রথের চূড়ে,
বিজয়িনী! নীলাম্বরীর আঁচল তোমার উড়ে।”

৯৮.
“আমার বাণী জয়মাল্য, রাণী! তোমার সবি।
তুমি আমায় ভালোবাসো, তাইতো আমি কবি।
আমার এ রূপ,— সে যে তোমার ভালোবাসার ছবি।”

৯৯.
“প্রিয় রূপ ধরে এতদিনে এলে আমার কবিতা তুমি,
আঁখির পলকে মরুভূমি যেনো হয়ে গেলো বনভূমি।”

১০০.
“বেলা গেলো বধূ’ ভাসে ননদী,
চলে জল নিতে যাবি লো যদি।”

১০১.
“সর্বসহা কন্যা মোর! সর্বহারা মাতা!
শূন্য নাহি রহে কভূ মাতা ও বিধাতা!’ (মা,সর্বহারা)”

১০২.
“তোমার মমতা-মানিক আলোকে চিনিনু …
মাতা তুমি লাঞ্ছিতা বিশ্ব-জননী।
তোমার আঁচল পাতা নিখিল দুঃখী-নিপীড়িত তবে,
বিষ শুধু তোমা দহে যথা তব মাগো
পীড়িত নিখিল ধরণীর ভার বহে।’

সূফী কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি ও বাণী: ১ম খন্ড

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel