আজকে দরবার শরীফে যে বিশাল কর্মকান্ড চলিতেছে অতীতে এক সময় এমন ছিল না। তখন সময় ছিল কঠিন। পঞ্চাশটি টাকার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খাইতে হইত। তখনকার একটি ঘটনা বর্ণনা করিতেছি। সে সময় রেডিও যত্রতত্র পাওয়া যাইত না। কেবল ধনী ব্যক্তিগণ অনেক মূল্য দিয়া রেডিও কিনিয়া ব্যবহার করিতেন। সে সময় বাইশ রশির এক ধনী হিন্দু ভদ্র লােকের বাড়ীতে একটি রেডিও ছিল। কোন এক রমজানের চাদ দেখার খবর জানার জন্য কেবলাজান হুজুর এক খাদেম ‘আলেম ভাইকে ঐ হিন্দু ভদ্র লােকের বাড়ীতে পাঠাইলেন। কিন্তু খাদেম ভাই ফেরত আসিয়া কেবলাজান হুজুরকে জানাইলেন যে ঐ দিন ঐ ভদ্রলােক রেডিও খােলেন নাই। তাই কোন খবর জানা যায় নাই।
এ খবর শুনিয়া হুজুর পাক বলিলেন, “ঠিক আছে বাবা, আমরা আগামী দিন রােজা রাখিব। ঈদ করিব নিজেদের রেডিওর খবর শুনিয়া।” পরের দিন হইতে যথারীতি সবাই রােজা রাখিলেন। ২৭ রােজায় এক খাদেম ভাইকে ৫০০/- (পাচশত) টাকা দিয়া রেডিও কিনার জন্য ঢাকা পাঠাইলেন। তখন এমন দুঃসময় ছিল যে এই ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা জমাইতে ২৭ টি রােজা চলিয়া গিয়াছিল। ঢাকায় বিল্লাল হােসেন নামক এক ধনী জাকের ভাই ছিলেন। খাদেম সাহেবকে বিল্লাল সাহেবের নিকট পাঠানাে হইল। খাদেম সাহেব টাকা নিয়া বিল্লাল সাহেবকে দিয়া বলিলেন যে কেবলাজান হুজুর এই টাকা দিয়া একটি রেডিও কিনিয়া দিতে বলিয়াছেন। বিল্লাল সাহেব খাদেম আলম ভাইকে সাথে নিয়া ৪৫০/- (চারশত পঞ্চাশ) টাকা দিয়া একটি রেডিও এবং ৭৫ টাকা দিয়া রেডিওর জন্য একটি ব্যাটারী কিনিয়া দিলেন।
তখন রেডিও চালাইতে নেটের তৈরী যে এরিয়াল টানাইতে হইত তাহাও দিয়া দিলেন। এইসব নিয়া খাদেম ভাই দরবার শরীফে আসিলেন। রেডিও রাখার জন্য একটি বাক্স বানানাে হইল। এই বাক্সটি রং করার জন্য আমার ডাক পড়িল। খাজা বাবা আমাকে বলিলেন, “তােমাকে তাে কাজী সাহেবের সাথে থাকিয়া রং এর কাজ শিখিতে বলিয়াছিলাম। আমি বলিলাম- আমি ত কিছুই শিখি নাই- কিভাবে রং করিব। তখন হুজুর পাক আমাকে কাগজ কলম আনিতে বলিলেন, আমি কাগজ কলম আনিয়া দিলে তিনি আমাকে ৮/১০ প্রকার রং এর নাম নিজ হাত মােবারকে লিখিয়া দিলেন। আমার কাছে ১০ টি টাকা ও রং এর ফর্দ দিয়া ভাঙ্গা বাজারে রং কিনিতে পাঠাইলেন।
আমি ফর্দ মােতাবেক রং কিনিয়া আনিলে হুজুরপাক নিজে সাথে সাথে থাকিয়া আমাকে দিয়া রং এর কাজটি করাইলেন প্রকৃতপক্ষে কেবলাজান হুজুর এই রং এর কাজটি করাইয়া আমাকে ইঙ্গিত করিলেন যে ভবিষ্যতে এই কাজই তােমাকে করিতে হইবে। কিন্তু পীরের ইশারা সবাই বুঝতে পারে না – আমিও তখন বুঝতে পারি নাই। পরবর্তী সময়ে বহু পেশায় কাজ করিয়াছি কিন্তু কোনটাই সুবিধা হয় নাই সর্বশেষ এই রং এর কাজ করিয়াই আমাকে সংসার চালাইতে হইয়াছে।
সংকলকঃ আলহাজ্জ্ব আব্দুল খালেক।
সূত্রঃ “বিশ্বওলি খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেবের কারামত” নামক বই হতে তুলে ধরা হয়েছে।
→ বিশ্বওলি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেবের আরও কিছু কারামত