মাজার জেয়ারতের তাৎপর্য ও নিয়মাবলীঃ

মাজার জেয়ারতের তাৎপর্যঃ

মাজার জেয়ারতের প্রধানতম উদ্দেশ্যই হইলো কবরবাসী বা বাসিনীর রূহ পাকে ফাতেহা পাঠান্তে ছওয়াব রেছানী করা।
অলী আল্লাহসকল কাহারাে নিকট কিছু চান না। তোমরা কেউ কিছু তাঁহাদের আরওয়াহ পাকে পাঠাও, আর নাই পাঠাও, তাহাতে তাহাদের কিছু আসে যায় না। তাঁহাদের সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, “আলা ইন্না আউলিয়াল্লাহে লা খাওয়ুন আলাইহিম ওয়া লাহুম ইয়াহ জানুন’ -সাবধান! নিশ্চয়ই অলী আল্লাগণের দুঃখিত বা গমগিন হইবার কিছুই নাই।

এনতেকালের পর তাহারা খােদাতায়ালার সান্নিধ্যে চলিয়া যান। নুরের শরীরে মহা শান্তিময় নুরের জগতে বিচরণ করেন। দুনিয়া ও আখেরাতের সমুদয় শান্তি একত্রিত করিলেও নুরময় জগতে খােদাতায়ালার একান্ত সান্নিধ্যে অবস্থানের সেই শান্তির এক রতিরঃ সমানও হইবে না।

কাজেই তােমরা তাহাদের পাক আত্মায় কিছু নজরানা পাঠাও বা না পাঠাও, তাহাতে তাঁহাদের কিছু আসে যায় না। তবে তাহাদের আরওয়াহ পাকে তােমাদের কিছু নজরানা পাঠানাে উচিৎ তােমাদেরই প্রয়ােজনে। যে কয়েকদিন দুনিয়ায় তাহারা ছিলেন, তােমাদের মংগলের চিন্তাতেই তাহারা আহার-নিদ্রা ত্যাগ করিয়া মহান খােদাতায়ালার দরবারে ক্রন্দন করিতেন।

তােমাদের ইহ ও পারলৌকিক মুক্তির জন্যে ঐহ্যিক ও পারত্রিক কল্যাণের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের মংগলের জন্য তাঁহারা দিবা-নিশি আহার-নিদ্রা, বিশ্রাম পরিত্যাগ করিয়া খােদাতায়ালার নিকট অঝরে কাঁদিতেন। তাঁহাদের অছিলাতেই তােমরা রহমত পাও। কারণ অলী-আল্লাহসকল সেই জেকেরকারী দল-যাহাদের অছিলায় গাছে ফল হয়, জমিনে শস্য হয়, পানিতে মাছ হয় আকাশ হইতে মিঠা পানি বর্ষে। তাহাদের অছিলাতেই জগতে রহমতের ধারা প্রবাহিত থাকে।

মানুষ ও জীন ব্যতীত সৃষ্টি জগতের সবকিছুই ইহা বুঝিতে পারে। তাই অলীআলাহর এনতেকালে আসমান জমিন কাদিতে থাকে (তিরমিজী ও মেশকাত শরীফ)। শুধু আসমান জমিন নয়, সৃষ্টির সবকিছুই তাহাদের এনতেকালে রােদন করে। এমনিভাবে কাদিতে থাকে যেমন কোন আপনজনের মৃত্যুতে তাহার আত্মীয় স্বজনেরা কাঁদে।

কাজেই যাহাদের অছিলাতে তােমরা রহমত পাও, পানিতে মাছ পাও, জমিনে শস্য পাও, আকাশ থেকে মিঠা পানি পাও, যাহাদের অছিলাতে তােমরা খােদাতায়ালার অনুসন্ধান পাও; তাহাদের আরওয়াহ পাকে কিছু নজরানা পাঠানাে তােমাদের একান্তই উচিৎ।

যদি না পাঠাও তাহা হইলে দুনিয়াতে আল্লাহর গজব নামিবে রহমতের ধারা বন্ধ হইবে। অলী-আল্লাহসকল যেমন তাহাদের জীবদ্দশায় সকলের জন্য খােদা প্রাপ্তির অছিলা, তেমনি দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ প্রাপ্তির মাধ্যম। ঠিক তেমনি দুনিয়া হইতে পর্দা উঠানাের পরও তাহাদের পাক আত্মা বিভিন্ন নেক মকছুদ পূরণের অছিলা বা মাধ্যম এই কারণে অলী-আলাহগণের মাজারে উপস্থিত হইয়া ফাতেহা পাঠ করিয়া তাঁহাদের পূণ্যাত্মায় ছওয়াব রেছানী করিয়া তাহাদের অছিলা লইয়া বিভিন নেক মকছুদ পূরণের জন্য মহান খােদাতায়ালার দরবারে দোয়া বা মােনাজাত করিলে আল্লাহপাক তাহা কবুল করেন।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়ঃ নকশবন্দীয়া তরিকার সম্রাট হযরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (রঃ) দীর্ঘকাল পীরে কামেলের অনুসন্ধান করিয়া ব্যর্থ হইলেন, কোথাও হক্কানী পীরের সন্ধান মিলিল না।

অতঃপর অলী-আল্লাহগণের মাজার জেয়ারত শুরু করিলেন। উদ্দেশ্য, যদি মাজার হইতে কবরে শায়িত মহাত্মা দয়াপরবশ হইয়া কোন পীরে কামেলের খােজ দেন। এই ভাবে এক রাত্রিতে বিভিন্ন অলী-আল্লাহর মাজার জেয়ারত কালে মােরাকাবা হালতে তিনি দেখিতে পান যে, নকশবন্দীয়া সেলসেলার পূর্ববর্তী কালের বিশিষ্ট কয়েকজন অলী-আল্লাহ তাহাকে যুগের শ্রেষ্ঠতম সাধক হযরত আমীর কুলাল (রঃ) ছাহেবের নিকট খােদা প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিতেছেন।

সেই নির্দেশ তিনি পালন করেন এবং আমীর কুলাল (রঃ) ছাহেবের খেদমত করিয়া তিনি খােদাতায়ালার রেজামন্দী লাভ করেন। অলী-আলাহগণের মাজার জেয়ারতে ইহ ও পারলৌকিক-উভয় কল্যাণই নিহিত। মাজার জেয়ারতে দুনিয়ার মহব্বত হ্রাস পায়। আখেরাতের কর্মে উৎসাহ বা উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় এবং মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। মনের অহংবােধ ক্ষণিকের জন্য হইলেও স্তিমিত হয়।

মাজার জেয়ারতের নিয়মাবলীঃ

প্রথমে অজু করিয়া পাক পবিত্র হইয়া মাজারের নিকটবর্তী হইয়া। কবরবাসী বা বাসিনীর কদমের দিকে দাড়াইয়া তাহাকে ছালাম প্রেরণ করিবে। বলিবে, আসসালামু আলাইকা ইয়া আহলুল কুবুর”-অর্থাৎ ছালাম হউক তােমাদের প্রতি হে কবরবাসীগণ। অতঃপর অত্যন্ত আদবের সাথে ফাতেহা পাঠ করিবে।

ফাতেহা নিম্নরূপঃ

১। প্রথমে পড়িবে, আউযুবিল্লাহ হিমি নাশ শাইতােয়ানির রাজিম; বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। অতঃপর সাতবার (৭) তওবা পড়িবে। তওবা হইল- “আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বী মিন্ কুল্লে জাম্বেও ওয়া তুবু ইলাইহে।”

২। তৎপর বিছমিল্লাহসহ তিন বার (৩) সুরা ফাতেহা (আলহামদু…) পড়িবে।

৩। তারপর বিছমিল্লাহসহ দশবার (১০) সুরা এখলাস (কূলহু আল্লাহু …………) পড়িবে।

৪। অতঃপর এগার (১১) বার দরুদ শরীফ পড়িবে।

দরুদ শরীফ নিম্নরূপঃ

“আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা ছায়্যেদেনা মােহাম্মাদেও ওয়াছিলাতি ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম।”

উক্তরূপে ফাতেহা পড়িয়া বিশেষভাবে কবরবাসী বা বাসিনীর পূণ্যাত্মায় ছওয়াব বখশাইয়া দিবে।

(ছওয়াব রেছানীর নিয়ম পদ্ধতি ফাতেহা শরীফের মােনাজাত দ্রষ্টব্য)।

আরো দেখুন

→ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা-পদ্ধতির সব গুলো অধ্যায়

→ আদাবুল মুরিদের সবগুলা নসিহত একসাথে

→ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতি আদব প্রদর্শন

→ নফল নামাজের মােনাজাতঃ

→ দয়াল-নবী (সাঃ) এর খাছ হােব্ব এশক মহব্বতের ফয়েজ।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel