বোরাক কি?
বোরাকের আকার- প্রকার সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে যে ধারণা প্রচলিত আছে তাহাকে অবলম্বন করিয়া কেহ কেহ এক প্রকার বিদ্রূপ করিয়াই আকাশলোকে বোরাকের উপর সমাসীন অবস্থায় হুজুর (আ.) -এর ভ্রমণের প্রতীক ছবি আঁকিয়া থাকে।
প্রকৃতপক্ষে হুজুর (আ.) বোরাক নামক ঐরূপ কোনো জীবের পৃষ্ঠে উঠিয়া আকাশলোকে ভ্রমণে বাহির হন নাই- যাহার পা ঘোড়ার মতো, বক্ষদেশ সিংহের মতো, ডানা পরীর মতো, এবং চেহারা স্ত্রীলোকের মতো।
বোরাকের এমন অদ্ভুত আকৃতি কেমন করিয়া কল্পিত হইল তাহা একটু চিন্তা করিলেই বোঝা যায়। মানুষের স্বভাবের মধ্যে যে সকল গুণ অর্জন করিলে সৃষ্টির মধ্যে মানুষ বিদ্যুতের মতো গতিসম্পন্ন হইতে পারে তাহারই রূপক প্রতিচ্ছবি হইল ‘বোরাক’।
১. পা ঘোড়ার মতো: কারণ ঘোড়া অধিক দ্রুতগতিশীল। সাধককে আল্লাহর পথে ঘোড়ার মতো দ্রুতগতিতে অগ্রসর হইতে হইবে। আলস্য করিলে চলিবে না।
২. বক্ষস্থল সিংহের মতো: সালেক অর্থাৎ সাধককে হইতে হইবে সিংহের মতো নির্ভীক। আল্লাহ্ ব্যতীত সৃষ্টির কোনোরূপ ভীতি বা তোয়াক্কা তাঁহার থাকিতে পারিবে না, যেই হেতু প্রবল মনোবল ও নির্ভীকতা ব্যতীত আল্লাহ লাভ হয় না।
৩. পরীর মতো ডানা: অর্থাৎ পৃথিবীর জীব হইয়াও পার্থিব প্রলোভন ইত্যাদি হইতে সাধক ঊর্ধ্বলোকে বিরাজ করেন। ধূলিমলিন এই পৃথিবীর কলঙ্ক তাঁহাকে স্পর্শ করিতে পারে না। দুনিয়ার সকল আবিলতা হইতে তিনি থাকেন দূরে। মাটির মানুষ হইয়াও তিনি মাটির মায়ায় আকৃষ্ট নহেন। উহা হইতে ঊর্ধ্বদিকে তাঁহার গতি ও দৃষ্টি। এই ভাবটি পরীর পাখনা দ্বারা প্রতিক করা হইয়াছে।
৪. স্ত্রীলোকের মতো চেহারা: সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে নারীর মুখাবয়ব গ্রহণ করা হইয়াছে। চেহারাতেই মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ পাইয়া থাকে। সাধক-মনের সমগ্র অভিব্যক্তি হইতে হইবে সৌন্দর্যমণ্ডিত। কারণ, তিনি সুন্দর ও সত্যের সাধক। সত্য ও সৌন্দর্য্যের সাধনা ব্যতীত পার্থিব প্রলোভনের অসৌন্দর্যে আবদ্ধ থাকিলে আল্লাহপ্রাপ্তি সম্ভব হয় না। কারণ আল্লাহ স্বয়ং সুন্দর ও সত্য।
এই সকল গুণাবলী সাধকের বাহন হইতে হইবে, কারণ ইহাদের সাহায্যে আল্লাহর দর্শন লাভ সম্ভব হইতে পারে।
ছবিতে আমরা যেইরূপ ‘বোরাক’ -এর নারীমূর্তি দেখিতে পাই তাহা রূপক এবং অ-বাস্তব হইলেও অতি সুন্দর প্রতীকধর্মী ছবি। আল্লাহর সঙ্গে মিলনের আকাঙ্ক্ষা রাখিলে যে কোনও মানুষের উপরিউক্ত মৌলিক গুণগুলি বাহন রূপে গ্রহণ করিতেই হইবে নতুবা তাঁহার মেরাজ সম্ভব হইবে না।
সূত্র- মসজিদ দর্শন
লেখক- সদর উদ্দিন আহমেদ চিশতী (রহ.)