ভজন ও সাধনের মধ্যে পার্থক্য:
ভজন ও সাধন শব্দ দুটির শাব্দিক অর্থ এক রকম হলেও এই দুইটির মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। ভজন মানে হল এমন দাসত্ব, যার দ্বারা প্রভু বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোনো উপকার লাভ করে থাকে দাস হতে। আর সাধন তথা সাধনা হল এমন কর্ম যার ফলাফল শুধু সাধক একাই ভোগ করেন, এতে যার সাধনা করা হয় তার কোনো উপকার করা হয় না বাহ্যিক দৃষ্টিতে। অর্থাৎ ভজন করতে হয় শরীরের সামর্থ শক্তি প্রয়োগ করে, যেমনঃ গুরুর সেবা যত্ন করা, গুরুর বাড়ির গোলামী করা, কোনো ব্যক্তির সেবা করা বা সাহায্য করা। আর সাধনার উদারহরন হল, গুরু ধ্যান করা বা মোরাকাবা মোশাহেদা করা, জ্বিকির করা ইত্যাদি যে কাজ গুলোতে শারিরীক পরিশ্রম হয় না।
প্রথমে ভজনা করতে হয়, পরে সাধনা। কারন গুরুর সেবা করে তাকে সন্তুষ্ট করলেই সে এমন কোনো কর্ম শিক্ষা দেয়, যার ফলে ভক্ত সেটা ঘরে বসে বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বা সব সময় সেই কর্ম করতে পারে প্রভু লাভ করার জন্য। অধিকাংশ সাধকই তাদের গানে সাধনার আগে ভজনার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন লালন সাঁইজি বলেছেন “নাই আমার ভজন-সাধন/ চিরদিন কুপথে গমন।”
ভজনে সন্তুষ্ট হলেই গুরু সাধনা পদ্ধতি প্রদান করেন ভক্তকে। যে যত বেশি ভজন করেন, গুরু তার প্রতি ততবেশি সন্তুষ্ট হন এবং উচ্চতর সাধনা ও জ্ঞান দান করেন। বিভিন্ন ওলীদের জীবনেও দেখা যায় যে পীরের দরবারে বছর বছর গোলামীর পর গুরুর সন্তুষ্টি অর্জন করে গুরুর কাছ থেকে সাধন কর্ম পদ্ধতি শিক্ষা লাভ করার পর বনে জঙ্গলে গিয়ে একাকী সাধনা করে ওলীয়তী প্রাপ্ত হয়েছেন।
লেখাঃ DM Rahat