আজানের পর দোয়া সমূহের মধ্যে উত্তম একটি দোয়া।

আজানের পর দোয়া সমূহের মধ্যে উত্তম একটি দোয়া।

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আ’ল্ ক্বালবী বারাও, ওয়া আ’মালী সারাও, ওয়া আ’য়াশী কারাও, ওয়া রেজেক্বী দারাও, ওয়া আওলাদী আবরারাও অআ’ল্লী এ’নদা কাবরে নবীয়েকা মোহাম্মদ আ’লাইহে সালাতু আস্সালাম মোস্তাক্বাররাও ওয়া ক্বারারা বেরাহমাতেকা ইয়া আরহামার রাহেমীন।”

অনুবাদ: হে আল্লাহ, তুমি আমার অন্তরকে ভাল (বা কল্যাণকর) করিয়া দাও, এবং আমার আমলকে (অর্থাৎ কার্যাবলীকে) সহজ করিয়া দাও, এবং আমার আরাম-আয়েশকে সংক্ষিপ্ত করিয়া দাও, এবং আমার রেজেক দান কর, এবং আমার সন্তান-সন্ততিকে সৎচরিত্র (বা সৎকর্মশীল) বানাইয়া দাও, এবং আমাকে তোমার রহমতের দ্বারা, হে সকল রহমতকারীগণের মধ্যে বিশেষ রহমতকারী, তোমার নবী মোহাম্মদের (আঃ) কবরের নিকটবর্তী করিয়া বানাইয়া দাও (যাহাতে ঐরূপে) বিশ্রামপ্রাপ্ত এবং প্রতিষ্ঠিত হইতে পারি।

ব্যাখ্যা: কলব বলিতে অন্তর বা অনুভূতির কেন্দ্র বুঝায়। অনুভূতিসমূহ সত্য ও সৌন্দর্যের দিকে গতিশীল থাকিলে ক্রমশ ভাল হইয়া ইহা কল্যাণকর হইয়া উঠে। আমল শুদ্ধ এবং পবিত্র না হইলে দুনিয়ার কলুষ হইতে মানুষের উদ্ধার পাইবার উপায় নাই। দুনিয়ার জীবন কঠিন, জান্নাতের জীবন সহজ। অতএব দুনিয়ার আমলগুলি কঠিন এবং জান্নাতের আমলগুলি সহজ হইয়া থাকে। কিন্তু দুনিয়ার জীবনে কলুষিত সমাজ ব্যবস্থার কারণে সহজ আমল করা কঠিন এবং কষ্টকর ব্যাপার হইয়া থাকে। দুনিয়ার আয়েশে অধিক মত্ত হইলে সত্যাশ্রয়ী হওয়া যায় না, এইজন্য আরাম-আয়েশ সংক্ষিপ্ত হইতে হয়।

রেজেক দুই প্রকার- ফানার রেজেক ও বাকার রেজেক। এই প্রার্থনায় বাকার রেজেক অর্থাৎ স্থায়ী রেজেকের উল্লেখ করা হইয়াছে। অস্থায়ী রেজেক শুধু মানুষ কেন সকল জীবই পাইয়া থাকে, কিন্তু স্থায়ী রেজেক প্রাপ্তি সৌভাগ্যের বিষয়। এখানে “আমার রেজেক” বলিতে মুক্তির রাজ্যে যে রেজেক আমার জন্য নির্ধারিত হইবার জন্য রাখা হইয়াছে তাহাই ত্বরান্বিত করিবার জন্য প্রার্থনা জানাইতেছি।

সুসন্তান লাভ করা অপেক্ষা অধিক কল্যাণ জগতে আর কিছুই নাই। বিনীত প্রার্থনা জানালেই সুসন্তান দান করা হয় না। আপন নফস শুদ্ধির পরেই কেবল সুসন্তান লাভ করা যাইতে পারে। এর কারণ নফস শুদ্ধি বা আত্মশুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আপন মানব বীজ ক্রমশ শুদ্ধ এবং উন্নত হইতে থাকে। সুসন্তান লাভের প্রার্থনা অপেক্ষা অধিক কল্যাণকর প্রার্থনা আর নাই। নবীগণের প্রার্থনার মধ্যে এই আদর্শ আমরা কোরানে দেখিতে পাই।

নবীর কবরের নিকটবর্তী বানাইয়া দেওয়ার অর্থ কী? “কবর” অর্থ জ্যান্ত মানবদেহ। তাঁহার পবিত্র দেহ মোবারক যে সকল গুণাবলী ধারণ করিয়া আছে তাহার যতটুকু নিকটবর্তী হওয়া যায় ততটুকুই কল্যাণ। মহানবী জগতের সকল মানবের আদর্শ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণের ধারক বা ভান্ডার। তাঁহা হইতে যে যতটুকু গুণাবলী অর্জন করিবে সে তাঁহার সান্নিধ্য ততটুকুই লাভ করিতে পারিবে। তাঁহার কবরের নিকটবর্তী হওয়া অর্থই তাঁহার প্রিয় হওয়া। দেহের শুদ্ধি অর্জনের দ্বারা অর্থাৎ জীবনের শুদ্ধি অর্জনের দ্বারা যতকাল পর্যন্ত বিশ্রামপ্রাপ্ত না হইবে ততকাল পর্যন্ত মানুষের ভ্রমণের শেষ নাই। জান্নাতে যাইয়া ভ্রমণের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং বিশ্রাম প্রাপ্ত হয়। কিন্তু মানবীয় নিজ শক্তিতে এইরূপ বিশ্রামপ্রাপ্ত হওয়া যায় না। বিশ্রামস্থল নিকটবর্তী হইয়া ডাকাডাকির প্রয়োজন অবশ্যই থাকিয়া যায়। নবীর দেহের নিকটবর্তী করিয়া গড়িয়া তোলার প্রার্থনা অতি চমৎকার।

উল্লেখ্য যে, এই দোয়াটি আজানের পর পাঠ করা যায়।

সূত্র: (সুফী সদর উদ্দিন আহমদ চিশতীর শাজরা শরীফ হইতে সংকলিত)

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel