হোমপেজ ইলমে মারেফত হাকিকতে মুসল্লির পরিচয়

হাকিকতে মুসল্লির পরিচয়

789
Advertisement:
IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

হাকিকতে মুসল্লির পরিচয়

আমরা মুসল্লির পরিচয় তুলে ধরবো কোরানের ৭০নং সুরা আল মারিজ হতেঃ-

(৭০:১৯) ইন্নাল ইনসানা খুলেকা হালুয়ান (লোভী, অস্থির, বেসবুর, অধীর, ধর্মহীন), (৭০:২০) ইজা মাসসাহুশ্ শাররু জাজুয়ান (ধৈর্যহারা, অস্থির হওয়া, দুঃখ প্রকাশ করা), (৭০:২১) ওয়া ইজা মাসসাহুল খায়রু মানুয়ান (কৃপণ, বখিল, নিষেধকারী), (৭০:২২) ইললাল মুসাললিনা, (৭০:২৩) আল্লাজিনা হুম আলা সালাতেহিম দায়েমুনা (সদাসর্বদা, সার্বক্ষণিক, সবসময়)।

(৭০:১৯) নিশ্চয়ই একমাত্র মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে লোভীরূপে, (৭০:২০) যখন তাকে স্পর্শ করে কোন খারাপ বিষয় তখন সে হয় ধৈর্যহারা, (৭০:২১) এবং যখন তাকে স্পর্শ করে কোন ভাল বিষয় তখন সে হয় কৃপণ, (৭০:২২) একমাত্র মুসল্লি ছাড়া, (৭০:২৩) (মুসল্লি সেই) যারা তাদের সালাতের উপর সব সময় থাকেন।

১৯, ২০ এবং ২১ নং আয়াতের বর্ণিত বিষয়সমূহ হতে যিনি বা যারা মুক্ত তাকেই ২২ এবং ২৩ নং আয়াতে কোরানের ভাষায় মুসল্লি বলা হয়েছে। আরো একটু ব্যাখ্যা দিতে গেলে বলতে হয় যে, উপরের তিনটি বিষয় হতে মুসল্লিকে কেবল মুক্ত থাকলেই চলবে না, বরং মুসল্লিকে সদা সর্বদা তথা সব সময় সালাতের উপর থাকতেই হবে। যাকে কোরানের ভাষায় দায়েমী সালাত বলা হয়েছে। আরো একটু অবাক হবার কথাটি হল এই যে, কোরানের বর্ণিত এই দায়েমী সালাতের উপর অবস্থান করার কথাটি আমাদের জানা মতে আমরা মাত্র একবার পাই। আমরা আরো বেশী অবাক হই যখন এই মুসল্লিকেই আবার ওয়াইল নামক দোজখে ফেলে দেওয়া হবে যারা সালাতের প্রতি উদাসীন, অমনোযোগী এবং লোক দেখানোর মন মানসিকতায় নিমজ্জিত।

মানুষকে লোভী করে বানানোর কথাটি আল্লাহ্ বললেন। কেবল সাধারণ ভাষায় বলেননি। বলেছেন, নিশ্চয়ই লোভী রূপে। কিন্তু যিনি মুসল্লি তিনি সবরকম লোভ হতে যুক্ত। সব রকম লোভ হতে মুক্ত না হতে পারলে কোরানের ভাষায় সে মুসল্লি নয়। মানুষ লোভী, কিন্তু যিনি লোভ জয় করতে পেরেছেন তিনি মুসল্লি। বিশেষ করে ধনলোভ, কর্তৃত্বের লোভ সামাজিক ভারসাম্যটিকে দুর্বল করে দেয়। কোন বিশেষ লোভের কথা না বলে সব রকম লোভে আচ্ছন্ন কমবেশী থাকে বলে মানুষকে লোভী বলেছেন আল্লাহ। সম্পদের প্রতি লোভের বর্ণনা করতে গিয়ে তো রূপক ভাষায় আল্লাহ্ বলছেন যে, মুখে মাটি না পড়া পর্যন্ত মানুষের লোভটি থেকে যায়। অথচ মুসল্লির সংজ্ঞা দিয়ে কোরানে আল্লাহ্ বলছেন যে, সর্বপ্রকার লোভ হতে যে মুক্ত হতে পেরেছে সেই মুসল্লি। এ রকম মুসল্লি সমাজ জীবনে কতজন থাকতে পারে?

IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

আবার কোরান অন্যত্র বলেছেন যে, সেই সকল মুসল্লিদেরকে “ওয়াইল” নামক জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হবে যারা আল্লাহর জন্য এবাদত না করে লোক দেখানো এবাদত করে। মুসল্লিদের কোরানিক সংজ্ঞা অনুসারে লোক দেখানো ইবাদত করার কথাটির ব্যাখ্যা দিতে পারছি না। কারণ এটা আমার জানা নেই। তবে কেউ কোরান অনুসারে ব্যাখ্যা দিলে উপকৃত হব। যে কোন ধরনের খারাপ বিষয় স্পর্শ করলে বেশীরভাগ মানুষ ধৈর্যধারণ করতে পারে না। কিন্তু যারা পারে, তারাই মুসল্লি। আবার ভাল বিষয়টি স্পর্শ করলে বেশীরভাগ মানুষ কৃপণে পরিণত হয়, কিন্তু যারা মুসল্লি তারা নয়। আর যারা মুসল্লি তারা কোন নির্দিষ্ট সময়ের বেঁধে দেওয়া উপাসনার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই সব সময়ের সালাতের উপর মনোযোগী থাকেন তথা দায়েমী সালাতের উপর যত্নবান থাকেন।

সদাসর্বদা সালাতের মধ্যে বাস করাই মুসল্লির লক্ষণ। কাজ করাটা দোষের বিষয় নয়। কাজ করাটা বাঁধন নয়, বরং এবাদতের অংশ। লোভ মনকে আচ্ছন্ন করে ফেললেই কর্ম বাধঁন হয়। উৎসাহ এবং লোভ এক বিষয় নয়। সুতরাং কর্ম বাঁধন নয় বরং লোভের কামনাটাই বাঁধন। কোনটাকে উৎসাহ বলা হবে আর কোনটাকে লোভ বলা হবে সেটা ব্যক্তির নিয়তের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে। তাই আল্লাহ্ কেবল মানুষের নিয়তটাকেই সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেন। কারণ ধন উপার্জন করা এক কথা আর ধনের প্রতি লোভ অন্য কথা। তাই বিষয়টা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। লোভ আছে কি নেই, এটা নিজের বিচার নিজেকে করতে হবে। উপরের চালচলন দিয়ে মাপতে গেলে অনেক সময় ভুল হয়।

(সুফিবাদ আত্মপরিচয়ের একমাত্র পথ প্রথম খন্ড)

– আর এফ রাসেল আহমেদ