হোমপেজ সকল দলিল উৎকৃষ্ট বা হক্কানী এবং নিকৃষ্ট বা দুনিয়াদার আলেমের পরিচয়ঃ

উৎকৃষ্ট বা হক্কানী এবং নিকৃষ্ট বা দুনিয়াদার আলেমের পরিচয়ঃ

847
উৎকৃষ্ট বা হক্কানী এবং নিকৃষ্ট বা দুনিয়াদার আলেমের পরিচয়ঃ
Advertisement:
IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

উৎকৃষ্ট বা হক্কানী এবং নিকৃষ্ট বা দুনিয়াদার আলেমের পরিচয়ঃ

‘আলেম’ আরবী ‘আলিম’ শব্দের পরিবর্তিত রুপ। আলিম শব্দের আভিধানিক অর্থ ইসলাম ধর্মতত্ত্বজ্ঞ বা ধর্ম বিশেষজ্ঞ। অর্থাৎ যিনি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত এলেমে বুৎপত্তি অর্জন করেন, তিনিই ‘আলেম’ বলিয়া অভিহিত।

আলেম দুই প্রকারঃ

১। উৎকৃষ্ট আলেম বা হক্কানী আলেম।
২। নিকৃষ্ট আলেম বা দুনিয়াদার আলেম বা মোনাফেক আলেম।

সেই আলেমকেই উৎকৃষ্ট আলেম বলা হয়, যিনি তদীয় অর্জিত জ্ঞান দ্বারা আখেরাতকে দুনিয়ার উপরে প্রাধান্য দেন; স্বীয় জ্ঞান দ্বারা খোদাতায়ালাকে অন্বেষণ করেন।” যে ব্যাক্তি আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়, আল্লাহও তাহার প্রতি অগ্রসর হন।” (হাদীসের ভাষায়) ফলে আল্লাহতায়ালা সেই ব্যক্তির দেল পরিচ্ছন্ন করিয়া দেন, দেলের প্রশস্ততা দান করেন, আপন নূরে আলোকিত করেন; তদোপরি সান্নিধ্য দান করেন।

IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

তাহাদের পরিচ্ছন্ন দেলে আল্লাহ উপবিষ্ট হন এবং তাহারা আল্লাহপাক কর্তৃক পরিচালিত হন। এই সকল আলেমদেরকে আল্লাহপাক আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা দান করেন। তাহাদেরকে এমনই শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয় যে, সমগ্র সৃষ্ঠিই তাহাদেরকে নত মস্তকে সম্মান প্রদর্শন করেন।

গাছ পালা, বৃক্ষ-লতা, পশু-পাখী, কিট-পতঙ্গ, নদীর মাছ সবাই তাহাদেরকে ছালাম জানায়। হযরত গউস পাক আব্দুল কাদের জেলানী (রাঃ) ছাহেব তদীয় ‘মজলিসে সিত্তীন’ পুস্তকে বলেন, “উৎকৃষ্ট আলেম বা আল্লাহওয়ালা আলেমকে আল্লাহতায়ালা এমন উন্নত স্থানে ও আধ্যাত্মিক অবস্থায় উপনীত করেন যে, আসমানের ফেরেশতাগণ পর্যন্ত চতুর্দিকে হইতে তাহাকে ঘিরিয়া সেজদা করিতে থাকে।”

হক্কানী আলেম বা ওলী-আল্লাহদের খাতিরেই আল্লাহতায়ালা জমিনে শস্য দেন, পানিতে মাছ দেন, গাছে ফল দেন, আকাশ হইতে বৃষ্টি বর্ষন করেন। তাই হয়তঃ শোকরিয়া আদায় স্বরুপ আকাশের পাখী, সমুদ্রের মাছ, পৃথিবীর চতুষ্পাদ জন্তু ও কেরামন-কাতেমিন তাঁহাদের জন্য অবিরাম দু‘আ করিতে থাকে। (হাদীসের ভাষ্য)

কিন্তুু আলেম সমাজের মধ্যে আরেক শ্রেণীর আলেম আছে, যাহারা স্বীয় এলেম দ্বারা দুনিয়াকে অন্বেষণ করে; দুনিয়ার মান-সম্মান, ইজ্জত, ধন-সম্পদ, শান-শওকত, ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনে স্বীয় এলেমকে মূলধন হিসেবে কাজে লাগায়। এই সকল আলেমদেরকেই দুনিয়াদার আলেম বা নাফসপরস্ত আলেম বলা হয়। ইহারা মানবজাতির কলংক। ইহারাই নিকৃষ্ট আলেম হিসেবে আখ্যায়িত। ইহাদের উদ্দেশ্য অভিশপ্ত দুনিয়া অর্জন।

হাদীস শরীফে আছে, বান্দা যতক্ষণ আল্লাহর জেকের করে, আল্লাহ তাঁহার কালবে অবস্থান করেন; আর যখনই সে জেকের থেকে গাফেল হয়, তখনই তাহার কালবে শয়তান উপবিষ্ট হয় ও শয়তান কর্তৃক সে পরিচালিত হয়। দুনিয়াপূজারী বা নাফসপরস্ত আলেম সর্বদাই আল্লাহবিরোধী চিন্তায় মশগুল থাকে। ফলে তাহার কালবে অবস্থান করে অভিশপ্ত শয়তান।

হাদীস শরীফে আছে, “মানবদেহস্থিত কালব পবিত্র হইলে, মানুষের সমস্ত অজুদ (অস্তিত্ব)-ই পাক হয়, কালব অপবিত্র হইলে সমস্ত সত্ত্বাই অপবিত্র হয়।” দুনিয়াদার আলেমের কালবে থাকে অপবিত্র শয়তান। ফলে উক্ত আলেমের সমস্ত সত্ত্বাতেই শয়তানের প্রভাব বিদ্যুতের মতোই প্রবাহিত হয়; সে শয়তানের মুর্ত প্রতীকে পরিণত হয়; শয়তানের খেলাফতি প্রাপ্ত হয়।

হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব বলেন, “কোন এক বুজুর্গ ব্যক্তি স্বপ্নে শয়তানকে নিশ্চিন্ত ও নির্লিপ্ত দেখিয়া উহার কারণ জানিতে চাহিলে সে জানাইল যে, দুনিয়াপুজক আলেমগণ তাহার কার্যে বিশেষ সহায়তা করিতেছে এবং তাহাকে চিন্তা হইতে অবসর দান করিয়াছে। (মকতুবাদ শরীফ, মকতুব নং-৩৩)

মোটকথা দুনিয়াদার আলেমবর্গ শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করিতেছে। এই কারণে তরিকতের পরিভাষায় দুনিয়াপ্রেমিক আলেমকে মানব শয়তান বলা হয়। তাহাদের রুহকেই আরোওয়াহ শয়তান বলা হয়।

রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন, অবশ্যই আমি দাজ্জালকে ততটুকু ভয় করি না, যতটুকু দাজ্জাল নয়, এমন ব্যক্তিকে ভয় করি। প্রশ্ন করা হইল সেই ব্যক্তি কে? তিনি বলিলেন, আমি পথভ্রষ্টকারী শাসকদেরকে ভয় করি।” (এহ্‌ইয়াউ-উলুমদ্দীন-ইমাম গাজ্জালী)

আর উপরোক্ত পথভ্রষ্টকারী শাসকদেরকে যাহারা পথচ্যুত করেণ তাহারাই হইলেন দুনিয়া পুজারী আলেম সমাজ। এই কারণেই দুনিয়াদার আলেম সমাজ সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট জীব। তাহাদের অশুভ প্রভাব সমাজে সংক্রামক ব্যাধির মত ছড়ায়। তাহাদের সংস্পর্শ প্রানণাশক বিষতুল্য।

সূএঃ শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরীর (নসিহত-সকল খন্ড একত্রে, নসিহত নং ১২, পৃষ্টা নং ১৩৬-১৩৭)