হোমপেজ আকিদা সংক্রান্ত মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সাজরায় মাওলা আলীর নাম নেই যে কারণে।

মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সাজরায় মাওলা আলীর নাম নেই যে কারণে।

332

মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সাজরায় মাওলা আলীর নাম নেই যে কারণে।

আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সাজরা শরীফ নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি। আমি অধমের কোনো যোগ্যতা নেই যে আমি এ বিষয়ে লিখতে পারি। তারপরেও বিবেকের ডাকে মনে হলো এ বিষয়ে কিছু লেখা দরকার। দয়াময় আল্লাহতালা আমার সকল ভুলকে ক্ষমা করুন, আমিন।

কিছুদিন থেকে দেখছি তরিকার কিছু ভাই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সাজরা শরীফ নিয়ে তুলকালাম চালাচ্ছে। তাদের দাবি এই তরিকার অনুসারীরা সঠিক রাস্তায় নেই। কারণ হিসেবে তারা বলে যে, মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সাজরায় মাওলা আলী আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম মোবারক নেই। বরং তাঁর পরিবর্তে হযরত আবু বকর এর নাম রয়েছে। এতোদিন ধরে কেন এই ভুলটি সংশোধন করা হয়নি তা আমার মতো জ্ঞানপাপীর বোধগম্য নয়। এতে কি কোন গোপন ভেদ জড়িত আছে? না কি এটা আহলে বাইত বিদ্বেষীদের গভীর চক্রান্ত? প্রত্যেক চিন্তাশীল আহলে বাইত প্রেমিককে বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। যাহোক, ভুলটি অতিসত্বর সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার পবিত্র সাজরা শরীফে উল্লেখিত কয়েকজন মহামানবের নাম উল্লেখ করতে চাই।
হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) রাসূল পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন বিখ্যাত সাহাবী ছিলেন। সর্বপ্রথম তিনি খন্দকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনিই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খন্দক খননের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনি মোট ৬০ টি হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন। প্রসিদ্ধ হাদীসের কিতাবসমূহে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ বিদ্যমান। বুখারী শরীফে ৪টি এবং মুসলিম শরীফে ৩টি হাদীস উল্লেখ আছে। অসংখ্য সাহাবা ও তাবেয়ীন তাঁর থেকে হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন। হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহঃ) এর নাম কে না জানে। তিনি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ৬ষ্ঠ উর্ধতন মহামানব ছিলেন। তাঁর মোর্শেদ ছিলেন ইমাম জাফর সাদিক আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন ইমাম জাফর সাদিক আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আহলে বাইত নন? তিনি কি মাওলা আলী আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করেছিলেন? হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সুলতান বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলেন, একদিন খাজা বায়েজীদ আল্লাহর সান্নিধ্যের নিকটবর্তী হলে গায়েবি আওয়াজ এলো, হে বায়েজীদ! আজ রহমতের বর্ষণের দিন, তোমার যা চাইতে হয় এখন চেয়ে নাও।’ প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, হে আমার প্রভু! আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমি চাই না দুনিয়ার পার্থিব সুখ-শান্তি, এমনকি বেহেশতী সুখও আমি চাই না।

আমি একমাত্র দিদারে এলাহী কামনা করে তাঁর সান্নিধ্যে থাকতে চাই। আসলে পবিত্র আত্মাই ভালো জ্ঞাত আছেন আমার একমাত্র বাসনা কি? সাথে সাথে জবাব এলো, ‘হে বায়েজীদ! তোমার কামনা-বাসনা যা- তা তুমি পরিপূর্ণভাবে পাবে। তাতেই তোমার পরিতপ্তি।’এ আনন্দ সংবাদ শোনার সাথে সাথে বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলায়হি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেকে লুটিয়ে দিয়ে পুরোপুরিভাবে আত্মসমর্পণ করলেন।

হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, ‘বায়েজীদ বোস্তামী মারেফাতের উচ্চমার্গে পৌঁছে নিজেই বলছিলেন, ত্রিশ বছর আগে আমি আল্লাহর অস্তিত্বে বিরাজমান ছিলাম। এখন আমি দর্পণে দেখি যে, আমি আগে যা ছিলাম তা নেই। আমার ভিতরকার দ্বৈত-সত্ত্বা বিলুপ্ত হয়েছে। ‘আমি’ আর তাঁর মধ্যে কোনো তফাৎ দেখছি না। আল্লাহর জাত-সত্তায় আমি বিলীন হয়ে গেছি। প্রভু, আমার জবান দিয়ে কথা বলেন। আমার স্বকীয়-সত্তা বলতে কিছু নেই।

এই বায়েজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি- ই বলেছিলেন, “লাইছা ফি জুব্বাতি ছিওয়া আল্লাহিতালা”
অর্থাৎ আমার জামার নিচে যা দেখো তাই আল্লাহ ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা বিভিন্ন তরিকার অনুসারীরা উনার এই বিখ্যাত উক্তিকে ফানাফিল্লাহ বুঝাতে গিয়ে উদাহরণ দিয়ে থাকি। অথচ আজ কিছু চিশতিয়া তরিকার ভাইয়েরা মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সাজরা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্বয়ং গরীবের নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনউদ্দীন চিশতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে কতো সুউচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। এই তরিকার ৩২,৩৩,৩৪ তম অধস্তন মহামানব হলেন যথাক্রমে হযরত ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সৈয়দ ওয়াজেদ আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইউনুস আলী এনায়েতপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

আচ্ছা, উনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন জগতের কোন অলি আউলিয়া কি মাওলা আলী আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলায়েত না পেয়ে অলি আউলিয়া হতে পেরেছেন, না ধর্মের সংস্কারক হতে পেরেছেন? আমি অধমের তা জানা নেই। উনাদের জানা থাকলে অধমকে দয়া করে জানাবেন।

প্রত্যেক তরিকার সাাজরা শরীফে মাওলা আলী আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম লেখা না থাকলে কি সেই তরিকা-ই বাতিল? মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সাজরা শরীফে যে ৩৪ জনের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে যদি কেউ মাওলা আলী আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরোধিতা করে, যদি কেউ পবিত্র আহলে বাইতদের বিরোধিতা করে, তবে আমরা তাদেরকে এই তরিকার ভাবতে পারি না।

যুগে যুগে নবী রাসূল, অলি আউলিয়ার বিরুদ্ধে বিরোধিতা ও চক্রান্ত হয়েছিল, হচ্ছে ও হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেখানে বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফের মতো হাদিসে অসংখ্য জাল হাদিসের সংযোজন হয়েছে সেখানে তরিকার সাজার শরীফের মাওলা আলীর নাম মোবারক কর্তন খুব সাধারণ ব্যাপার। যেখানে পবিত্র কোরআন শরীফের ৬৭ নং আয়াত থেকে মাওলা আলী আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম মোবারককে সুকৌশলে কর্তন করা হয়েছে সেখানে চক্রান্তকারীরদের কাছে মোজাদ্দেদিয়া তরিকা, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকা বা যেকোন তরিকার সাজার শরীফ থেকে মাওলা আলী আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম মোবারককে অপসারণ করা অতি মামুলি বিষয়।

আপনারা নিজেরা একজন আর তরিকার ভাইয়ের সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারনে পুরো তরিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। এর ফলাফল শুভ নয়। তরিকা বিরোধীরা এ বিষয়টাকে তিলকে তাল করে ফায়দা লুটতে পারে। এতে বিভিন্ন তরিকার ভাইদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহতালা বলেছেন যে, তোমরা আমার রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো।পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়ো না।

“কথায় আছে- ‘জন্ম হউক যথা তথা কর্ম হউক ভালো।’
‘নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশের পরিচয়,
সেই আশরাফ যাহার জীবন পূণ্যকর্মময়।’

পরিচয় দিয়ে কি করব, ভাই? মারা গেলে তো সেই সাড়ে তিন হাত মাটি ছাড়া আর কিছুই নাই। কিন্তু যদি আমাদের ভিতরে রাসূল পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসা থাকে, তাঁর পবিত্র আহলে বাইতদের প্রতি মোহাব্বত থাকে, তাদের আদর্শ থাকে তবে আর তরিকার নামে, নিজের নামে, বংশের নামে, মাজহাবের নামে কি আসে যায়!

যদি আমাদের কর্ম ভালো হয়, দিন শেষে সেই কর্মের-ই বিচার হবে। তাই, পারস্পরিক হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে আসুন! আমরা তরিকতের সকল ভাই একত্রে রাসূল পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শকে সামনে রেখে, আহলে বাইতের প্রেমকে বক্ষে লালন করে, নিজ নিজ মোর্শেদের নির্দেশকে আন্তরিকতার সাথে পালন করি। তবেই আমাদের মুক্তি! তবেই আমাদের সুখ!

দয়াময় আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন, আমিন।

সংগ্রহিত: ইলমে মারেফত – ﻋﻠﻢ ﻣﻌﺮﻓﺔ (Facebook Group)