সুফিইজম ও সুন্নিইজমের মধ্যে পার্থক্য।
সুফি দর্শনের দার্শনিক, চেরাগে জানশরীফ ডা বাবা জাহাঙ্গীর ইরশাদ করেন “৩৯ টি বছর কোরান – হাদিস গবেষণা করে বিরাট একটি জ্ঞান অর্জন করেছি, আর সেই জ্ঞানটি হলো- আমি অধম লিখক কোরান হাদিসের কিছুই বুঝতে পারি নি।”
আমি অকপটে স্বীকার করব, ওহাবি মোল্লারা সুন্নি মোল্লাদের চেয়ে অনেক ভালো, অনেক আদর্শবান এবং নীতির প্রশ্নে অনঢ় থাকেন। অথচ সুন্নি মোল্লাদের আগা-মাথা কিছুই পেলাম না, বরং মহিষের মতো কেবল ফাঁকা বুলির জ্ঞানের গুঁতা যেখানে-সেখানে মেরে বসে। সুন্নি মোল্লারা পীর ফকির কেমন হবে তার সুন্দর সুন্দর প্রেসক্রিপশন দিয়ে যায় এবং সেই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ সেবন করে সুদে মূলে সবকিছু হারিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসতে হয়। এই সুন্নি মোল্লারা নফস আর রূহের বিরাট পার্থক্যটি করতে পারে না। কখনও নফসকে রূহ বানিয়ে ফেলে, আবার কখনও রূহকে নফস বানিয়ে ফেলে।
ওয়াক্তিয়া সালাত এবং দায়েমি সালাতের পার্থক্যটুকু পর্যন্ত এরা করতে জানে না। এবং এরা নিজেদেরকে একেক জন বিরাট জ্ঞানী তথা এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা মনে করে। ওহাবি মৌলভী চেনা যায়। কিন্তু সুন্নি মোল্লারা যে এত বর্ণচোরা এবং হিংসুটে ইহা বাস্তবে কয়েক জনের সাথে কিছুদিন মেলামেশা করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে আপনার কাছে ধরা পড়বে এবং আমার কথাটি যে সত্য উহা মর্মে মর্মে বুঝতে পারবেন। (কোরানুল মজিদ হুবুহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা: ২১ পৃষ্ঠা,)
সুফিজম এবং সুন্নিইজমের প্রভেদ:
১: সুফিজম আহলে বায়াত, আসহাবে সুফ্ফা, আউলিয়া কেরামের দর্শনের অনুসারী। আর সুন্নিইজম আমির মোয়াবিয়ার দর্শনের অনুসারী।
২: সুফিইজম নফসের বিবর্তনবাদের আকীদার বিশ্বাসী। কিন্তু সুন্নিইজম নফসের বিবর্তনবাদ অস্বীকারকারী।
৩: সুফিজম সামা, কাওয়ালী ও মরমী সংগীত ইবাদতের অংশ এই আকিদায় বিশ্বাসী। কিন্তু সুন্নিইজম সামা, কাওয়ালী ও মরমী সংগীত হারাম জানে।
৪: সুফিইজম নগদ দর্শনের আকিদায় বিশ্বাসী। যেমন : যে দেহধারণকৃত অবস্থা অন্ধ, সে দেহধারণ করে পরজম্মেও অন্ধই হবে এবং অধিক পথভ্রষ্ট হবে। (১৭ঃ৭২)। কিন্তু সুন্নিইজম বকেয়া দর্শনের আকিদায় বিশ্বাসী। যেমনঃ বাকির নাম ফাঁকি, সুন্নিইজম ফাঁকিবাজী দর্শন।
৫: সুফিইজম ওয়াক্তি সালাতের চেয়ে দায়েমি সালাতের গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু সুন্নিইজমের কোরানে বর্নিত দায়েমি সালাতের কোনো গুরুত্ব নেই। যে ওয়াক্তিয়া সালাতের কথা কোরানে নেই তার প্রাধান্য বেশি দিয়ে থাকেন।
৬: সুফিইজমে আপন রসুল তথা অলিয়্যাম মুর্শিদের ধ্যান করাকে ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু সুন্নিইজম আপন রসুল তথা অলিয়্যাম মুর্শিদের ধ্যান করাকে হারাম ও শিরিক জানে।
৭: সুফিজম মাটির গর্তনামক কবরের আজাবের আকিদায় বিশ্বাসী নয়, সুফিইজম বলে জীবন্ত দেহটি হলো নফসের হাকিকি কবর। কিন্তু সুন্নিইজম মেজাজি কবরে আজাব এই আকিদায় বিশ্বাসী।
৮: সুফিজম মহানবী সা: কে আল্লাহর জাতনূরের প্রকাশ এই আকিদায় বিশ্বাসী। কিন্তু সুন্নিইজম মহানবী সাঃ কে সেফাতি নূররে আকিদায় বিশ্বাসী।
৯: সুফিজম হেরাগুহাকে কেবলা করে মোরাকাবা মোশাহেদার গুরুত্ব দিয়ে থাকে বেশি। তাই সুফিজম বলে কাবায় শরিয়ত আর হেরাগুহায় মারফত। কিন্তু সুন্নিইজম মেজাজি কাবাঘরকে কেবলা করে মেজাজি অনুষ্ঠান পালন করেন।
১০: সুফিইজম রসুল তথা অলিয়্যাম মুর্শিদের মাধ্যমে আল্লাহর জাতকে সিজদা করেন। কিন্তু সুন্নিইজম রসুল তথা অলিয়্যাম মুর্শিদের মাধ্যমে আল্লাহকে সিজদা করাকে শিরিক ও হারাম জানে। তাই তারা সিফাত দেয়াল, পাথর, ও মাটিতে সিজদা করে।
১১: সুফিইজম ধর্মের অনুষ্ঠান স্বীকারলেও অনুষ্ঠানের কোনো গুরুত্ব নেই, কিন্তু সুন্নিইজম ধর্মের অনুষ্ঠানকেই মূলরূপে মানেন।
১২: সুফিইজম নফসের জন্য মাগফিরাত চায়, আর সুন্নিইজম রবের আদেশ রুহের জন্য মাগফিরাত চায়।
১৩: সুফিইজম মহানবীর বাইরে আল্লাহ চিনে না, তাই মহানবীর মাধ্যমে রহমত ভিক্ষা চায়। কিন্তু সুন্নিইজম মহানবী সাঃ কে জান্নাতে পাঠানোর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
১৪: সুফিজম নবী- আউলিয়ারর সমাধিস্থলকে আল্লাহর নিশানা মেনে ভক্তি ও তাজিম করে। কিন্তু সুন্নিইজম আল্লাহর আউলিয়াদের সমাধিতে তাজিম করাকে নাজায়েজ, হারাম ও শিরিক বলে।
১৫: সুফিইজম রাজনীতিকে হারাম বলে, কিন্তু সুন্নিইজম রাজনীতিতে বহাল তবিয়তে প্রতিষ্ঠিত।
১৬: সুফিজম অদ্বৈতবাদী দর্শন। কিন্তু সুন্নিইজম দ্বৈতবাদী দর্শন।
১৭: সুফিইজম মাওলাইতের আকিদায় বিশ্বাসী। কিন্তু সুন্নিইজম উমাইয়া আর আব্বাসীয়া রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী।
১৮: সুফিইজম নফসের বাহিরে জান্নাত আর জাহান্নাম জানে না। কিন্তু সুন্নিইজম নফসের বাহিরে আকাশে কাল্পনিক জান্নাত আর জাহান্নাম খোঁজে।
১৯: সুফীইজম কোরানিক দর্শন কিন্তু সুন্নিইজম লেবাসি দর্শন।
২০: সুফিইজমের শিক্ষায় অলি পয়দা হয়, আর সুন্নিইজমের শিক্ষায় ফতোয়াবাজ আর আলহাজ্ব পয়দা হয়।
২১: সুফিইজম প্রেম , সত্য ও ত্যাগের দর্শন প্রচার করে, কিন্তু সুন্নিইজম নীতি আর আদর্শের জার্সি পড়ায়।
২২: সুফিইজমের আকিদা নবুওয়ত শেষ , রেসালাত নয়। কিন্তু সুন্নিইজমের আকিদা হলো নবুওয়ত ও রেসালাত উভয়ই শেষ, যা কোরানের দর্শন বিরোধী আকিদা।
নিবেদক- আর এফ রাসেল আহমেদ