মোয়াবিয়াপন্থী ও আহলেবাইত প্রেমিকের মধ্যে কথোপকথন: পর্ব-১
- আহলেবাইত প্রেমিক: আচ্ছা ভাই আপনারা মোয়াবিয়াকে জলিল কদর সাহাবী বলেন এবং এজিদকে কাফের বলেন। তাহলে বলুন তো কাফের ইয়াজিদকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো কে?
- মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: অবশ্যই মোয়াবিয়া (রাঃ) ইয়াজিদকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করছে। দেখুন পুত্রের দোষে পিতা দোষী নয়।
- আহলেবাইত প্রেমিক: আচ্ছা ভাই তখন খলিফা হিসাবে ইয়াজিদ বেশি যোগ্য ছিলো নাকি মাওলা ইমাম হোসাইন বেশি যোগ্য ছিলো? ইসলামে তো স্বজনপ্রীতির স্হান নেই।
- মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: তখন ইয়াজিদ খুবই ভালো মানুষ ছিলো। নামাজ, রোজা এবং শরিয়তের সব হুকুম আহকাম পালন করতো। তাছাড়া তৎকালীন ইসলামের নাজুক অবস্থার জন্য ইয়াজিদের মতো একজন সাহসী খলিফা দরকার ছিলো। এইদিক দিয়ে ইয়াজিদ তখন সবচেয়ে যোগ্য ছিলো।
- আহলেবাইত প্রেমিক: ভাই ইয়াজিদ তখন নামাজ পড়লেও কিন্তু মদ পান করতো এবং জেনা কাজে লিপ্ত থাকতো। তাহলে একজন চরিত্রহীন মানুষ কিভাবে সমগ্র মুসলিম জাহানের খলিফা হওয়ার যোগ্য হয়। আমার কিন্তু বুঝে আসে না। আপনি একটু খোলাসা করে বলুন।
- মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: দেখুন ভাই তখন বিধর্মীদের খুবই উৎপাত ছিলো। তাই ইহুদি ও খ্রাীষ্টানদের শায়েস্তা করার জন্য ইয়াজিদের চেয়ে বেশি যোগ্য কেউ ছিলো না। তবে ঈমান ও আমলের দিক দিয়ে অবশ্যই ইমাম হোসাইন (রাঃ) বেশি যোগ্য ছিলো। ঈমান আমল এক জিনিস আর শাসক আরেক জিনিস। ঈমান আমল দিয়ে বিধর্মীদের শায়েস্তা করা সম্ভব নয়।
- আহলেবাইত প্রেমিক: আচ্ছা ভাই ইসলামে তো খেলাফত শাসন ব্যবস্হার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মোয়াবিয়া ইসলামের রীতিনীতি ভঙ্গ করে খেলাফত ব্যবস্হা ধ্বংস করে রাজতন্ত্র কায়েম করে গেল। ইহা তো ইসলামের দৃষ্টিতে কুফরি গুনাহ।
- মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) যখন ইয়াজিদকে ক্ষমতায় বসায়, তখন আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে বলে। হে আল্লাহ! আমি ইয়াজিদকে ইসলামের স্বার্থে খলিফা নিয়োগ করলাম, আমার ছেলে হিসাবে নয়। যদি ইয়াজিদ খারাপ হয়, তাহলে তাকে এখনই মৃত্যু দাও। আর যদি ইয়াজিদকে খলিফা হিসাবে সবচেয়ে যোগ্য মনে করো, তাহলে তুমি তাকে বাঁচিয়ে রাখো। এখন বুঝতে পারছেন ইয়াজিদকে মোয়াবিয়া মনোনয়ন করেনি বরং স্বয়ং আল্লাহ খলিফা হিসাবে মনোনয়ন করছেন।
- আহলেবাইত প্রেমিক: তাহলে ইয়াজিদ মাওলা ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে হ*ত্যা করলো কেনো? আল্লাহর মনোনীত খলিফা কিভাবে এমন অপরাধমূলক কাজ করতে পারলো?
- মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) মৃত্যুর পর ইয়াজিদ মারওয়ানের চক্রান্তে বিপদগামী হয়ে যায়। মূলত ইয়াজিদ মারওয়ানের কু পরামর্শেই ইমাম হোসাইন (রাঃ) কে হ*ত্যা করে। এই জন্যই তো আমরা সুন্নিরা ইয়াজিদকে কাফের বলি। এই জন্য কোনভাবেই হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) দায়ী নয়।
- আহলেবাইত প্রেমিক: আচ্ছা আপনারা তো মোয়াবিয়াকে অলী আল্লাহদের চেয়ে হাজারগুন বেশি সম্মানিত মনে করেন এবং মোয়াবিয়ার ঘোড়ার ধূলিকণার চেয়েও বেশি মর্যাদাবান মনে করেন। অথচ অলী আল্লাহগণ অন্তরযামী এবং ভবিষ্যৎ বলতে পারেন। তাহলে মোয়াবিয়া অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখতে পেলো না, ইয়াজিদ কিছুদিন পরেই মাওলা ইমাম হোসাইনকে হ*ত্যা করবে।
- মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: হকচকিয়ে গিয়ে চুল চুলকাতে চুলকাতে বলল, দাঁড়ান বাসায় গিয়ে কিতাব দেখে আপনাকে উত্তর দিবো। আজকে আমার হাতে তেমন সময় নাই। (পালানোর পথ খুঁজতেছে)।
- আহলেবাইত প্রেমিক: আচ্ছা আমার শেষ প্রশ্নের উত্তর দিন। দয়াল রাসূল পাক (সাঃ) ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলো, মোয়াবিয়া তোমার ছেলের হাতেই আমার আদরের নাতি কলিজার টুকরো ইমাম হোসাইন শহীদ হবে। এখন বলুন তো ভাই, তাহলে কি মোয়াবিয়া ইমাম হোসাইনকে হ*ত্যা করার জন্যই ইয়াজিদকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। কারণ দয়াল রাসূল (সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণী কখনো মিথ্যা হতে পারে না। তাহলে নিঃসন্দেহে বলতে পারি, ইমাম হোসাইনের হ*ত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মোয়াবিয়া। তাই মোয়াবিয়া জেনেশুনে ইয়াজিদকে ক্ষমতায় বসায়।
- মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: এতক্ষণ পর বুঝতে পারলাম, আপনি শিয়া। আর শিয়ারা কাফের এবং জাহান্নামের কুকুর। আপনাদের সাথে কথা বললে ঈমান থাকবে না। আপনার সাথে কথা বলে অযথা সময় নষ্ট করলাম। আমি চলে যাচ্ছি প্রচুর কাজ রয়েছে। আর পিছন থেকে ডাকবেন না। আপনারা সাহাবী বিদ্বেষী, আল্লাহ আপনাদের হেদায়েত নসিব করুক।
- আহলেবাইত প্রেমি: আরে ভাই আমরা তো শিয়া নই বরং সুফিবাদের লোক এবং পাক পাঞ্জাতনের গোলাম। আমরা শিয়াদের মতো তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়ি না বরং আপনাদের সুন্নিদের মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। তাহলে আমরা শিয়া হলাম কিভাবে? আরেকদিন ধরবো, তখন উত্তর দিবেন।
চলমান—–।
এভাবেই মোয়াবিয়ার অনুসারীরা আমাদেরকে বারবার শিয়া উলুধ্বনি দিয়ে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে, উত্তর দিতে পারে না। কিন্তু এভাবে আর কতকাল চলবে জানি না।
নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।
