জাকের পার্টি প্রতিষ্ঠার পটভুমি এবং মূলনীতিঃ
বর্তমান বিজ্ঞানের যুগ। এই যুগে বস্তু জ্ঞানচর্চার উৎকর্ষতা হইয়াছে, জাগতিক জ্ঞানচর্চার মাত্রা বৃদ্বি পাইয়াছে; কিন্তু আধ্যাত্মিকতার অনুশীলন নেই। জাগতিক জ্ঞানচর্চার আধ্যাত্মিকতার সমন্বয় না থাকার কারনে, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আজ শান্তি নেই। সর্বত্রই হিংসা, হানাহানি, অনাচার, অবিচার।মানবতা নাই, শিষ্টাচার নাই, ভদ্রতা নাই, আদব নাই, লেহাজ নাই, গাছে ফল নাই, পানিতে মাছ নাই, জমিনে ফসল নাই, শুধু নাই আর নাই। শুধু শুন্যতা আর শূন্যতা।
মানবতা আজ ভূলুণ্ঠিত। মানবতার প্রান আজ ওষ্ঠাগত। এই সংকট থেকে মানবতাকে রক্ষা করিতে হইলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রয়োজন জাগতিক জ্ঞানচর্চার পাশা-পাশি আধ্যাত্মিকতার অনুশীলনের।
উভয় জ্ঞানের যুগপুত চর্চার মাধ্যমে যে মন মানুষের জাগতিক উন্নতি হইবে তেমনি হইবে আত্মিক উন্নতির সাধন বা মানবতার গুনাবলির বিকাশ। আমার পীর কেবলাজান, চতুর্দশ হিজরির মুজাদ্দেদ, হযরত এনায়েতপুরী (কুঃছে;আঃ) সাহেবের সাংগঠনিক পদ্বতিতে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বস্তুজ্ঞান চর্চার পাশা-পাশি আধ্যত্মিক জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন।
তদীয় জীবনে শেষ উরসে তাই তিনি জাকের পার্টির ঘোষনা দিয়া যান। তাহার উফাতের ৩৭ বছর পরে তাহার ইচ্ছা অনুযায়ী আমি ১৪১০ হিজরিতে ১২ই রবিউল আউয়াল মোতাবেক ১৪ই অক্টোবর ১৯৮৯ সালে রহমতের সময়ে জাকের পার্টি গঠন করি।
এই পার্টির মূল নীতিমালা হইলঃ ইসলাম, ইমান, এহসান। এই তিনটির মধ্য নিহিত আছে পরিপূর্ণ ইসলাম। আছে- শরিয়াত, তরিকত, হাকিকত, মারেফাত।আছে রাসুল(সাঃ) এর ২৩ বছর কর্মকাণ্ডের নিখুত সার-নির্যাস। একদা দয়াল নবী (সাঃ) এর মজলিসে হযরত জিব্রাইল (আঃ) একজন মোসাফিরের বেশ ধরিয়া আসিয়া বসেন। দয়াল নবী (সাঃ) কে পরপর জিজ্ঞাসা করেন ঈমান কি? ইসলাম কি? এহসান কি?
প্রথম উত্তরে নবী (সাঃ) বলিলেনঃ
ঈমান হইলঃ আল্লাহ্র অস্তিত্বে বিশ্বাস করা।, ফেরেস্তাদের অস্তিত্ত্বে বিশ্বাস করা।, আসমানি কিতাব সমুহে বিশ্বাস করা।, পয়গম্বরগনের উপরে বিশ্বাস আনা।, পুনরুথান দিবসে বিশ্বাস করা, তকদীরে বিশ্বাস করা
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে রাসুলে পাক (সাঃ) বলেনঃ
ইসলাম হইলঃ দিনে পাঁচবার নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা।, যাকাত প্রদান করা, পূর্ণ রমজান মাসে রোজা রাখা, সামর্থবান হইলে হজ্জব্রত পালন করা।
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে রাসুল(সাঃ) বলেনঃ
এহসান হইলঃ এমনভাবে ইবাদাত করা যেন তুমি খোদাতায়ালেক দেখিতেছ অর্থাৎ খোদাতায়ালাকে দেখিয়া ইবাদাত করাই হইল এহসান। যদি ইহা সম্ভব না হয় তাহলে মনে করিতে হইবে যে, খোদাতায়ালা তোমাকে দেখিতেছেন।
উপরের আলোচনায় বুঝা গেল যে, ঈমান ও ইসলাম হইল শরিয়াতের ইশারা এবং এহসান হইল মারেফাতের ইশারা বা মেরাজ তত্ত্বের ইশারা।
সুতরাং ইসলাম, ঈমান, এহসান এই তিন নীতিমালায় সজ্জিত হইল জাকের পার্টি। এই পার্টি ওলী-আল্লাহগনের পার্টি। এই পার্টি জাকেরান, আশেকানদের পার্টি।
এই পার্টির সদস্যগনের কর্তব্যঃ
জাগতিক জ্ঞানচর্চার সাথে সাথে আধ্যাত্মিকতার চর্চার মাধ্যমে নিজেদের মানবিক গুনাবলির বিকাশ সাধন করা।, অন্যদেরকে আধ্যত্মিক জ্ঞানার্জনে উদ্বুদ্ধ করা।, আর্ত্মানবতার সেবা করা।
বর্তমান জামান মুছিবতের জামানা জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে কেবল বিপদ আর বিপদ। অদুর ভবিষ্যতে সারা পৃথিবী ব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী বিপদের ইশারা পাওয়া যায়। সেই বিপদে জাকের পার্টি নুহের তরীসম কাজ করবে।
নুহ (আঃ) এর তরীতে যাহারা আরোহণ করিয়াছিলেন, কেবল তাহারাই মহা প্লাবন থেকে বাঁচিয়াছিলেন। তেমনি বিশ্বব্যাপী যে ভয়ংকার বিপদ আসিতেছে, সে বিপদে জাকের পার্টির পতাকা তলে যাহারা সমবেত হইবে অর্থাৎ যাহারা নিজেদের জাহের ওবাতেনকে শরিয়াতের জাহেরি ও বাতেনি পোশাকে সজ্জিত করিবে- তাহারাই কেবল উদ্ধার পাইবে।
কেননা আমার পীর কেবলাজান ছাহেব বলিয়াছেন, বিশ্বব্যাপী লোহার মই টানা হইবে। একমাত্র মোমিন ব্যতীত কেহই বাচিতে পারিবেনা। মোমিন আল্লাহ্র কুয়াতের কেল্লায় হেফাজত থাকিবে।
আর মোমিনতো তিনিই যিনি দয়াল নবী (সাঃ) এর আদর্শের পূর্ণ অনুসারী। জাকের পার্টি ক্ষমতা কেন্দ্রিক পার্টি নয়। আদর্শ কেন্দ্রিক পার্টি। রাসুলে পাক (সাঃ) এর পরিপূর্ণ আদর্শ প্রচার করাই এই পার্টির মূল লক্ষ। সে দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বিশ্ব ব্যাপী জাকের পার্টির বিজ্য ডংকা বাজিবে। আল্লাহপাকই সব ভাল জানেন।
সূত্রঃ “বিশ্বওলি খাজাবাবা ফরিদপুরী ছাহেবের পবিত্র নছিহত শরীফ হতে”
আরো পড়ুন: