হিলফুল ফজুল ও জাকের পার্টিঃ
নবুয়াত প্রাপ্তির আগে হইতেই রাসুলে পাক (সাঃ) মানুষের কল্যাণের পথে আহব্বান করিয়াছেন। আরববাসীগন তখন গোত্রে গোত্রে বিভক্ত ছিল। গোত্রে গোত্রে যুদ্ধে ভয়ানক পরিনতি নামিয়ে আসিত। গোত্রীয় যুদ্ধ কয়েক বছর ধরিয়া চলিত। এমনকি শক্তিশালী গোত্র দুর্বল গোত্রকে অত্যাচার করিয়া নিচিহ্ন করিয়া দিত। এই অবস্থা হইতে তৎকালীন আরবের মানুষদেরকে বাঁচাইবার জন্য, সত্য, ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য তিনি “হিলফুল ফজুল” নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তোলেন। মক্কানগরীর সৎ ও সত্যচারী যুবকদের লইয়া তিনি এই সংগঠন গড়িয়া তোলেন।
এই সংগঠনের সদস্যগন আল্লাহতায়ালার নামে শপথ গ্রহন করেনঃ
- আমরা নিঃস্ব, অসহায় ও দুর্বলের সেবা করিব।
- অত্যাচারীকে প্রাণপনে বাঁধা দিব।
- দেশের শান্তি ও শৃংখলাকে রক্ষা করব।
- বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের চেষ্ঠা করিব।
সবলের অত্যাচার হতে দুর্বলকে রক্ষা করা মানবতার ধর্ম। মানবতা ও জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বই ইসলামের আদর্শ ও বৈশিষ্ঠ। আল্লাহতায়ালার নৈকট্যের জ্ঞান হইতে দূরে সরিয়া মানবতা যে অন্ধকারে নিপতিত হইয়াছে ও শান্তির ধারা পৃথিবীতে শাসন করিতে উদ্যত হইয়া আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে মানবতাকে ফিরাইয়া লইবার প্রয়াস পাইয়াছে।
আমার হুজুর হযরত মাওলানা শাহ সুফি খাজাবাবা এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ইহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন। এই অবস্থা হইতে মানবতাকে মুক্তিদান করিবার জন্য আল্লাহতায়ালার নৈকট্য জ্ঞানে মানুষকে জ্ঞানী করিয়া হযরত রাসুলে করীম (সাঃ) যেমন জাগতিকজ্ঞানের সহিত আল্লাহতায়ালার জ্ঞান ও গুনকে সমন্বিত করিতে চাহিয়া ছিলেন। তেমনি সত্য জ্ঞান ও মানবতার আদর্শে অনুপ্রানিত করিবার জন্য আমার কেবলাজান হুজুর সাহেব জাকের পার্টি সংগঠনের ইঙ্গিত দিয়ে যান।
এই দলের সদস্যগনের উদ্দেশ্য হইল আল্লাহতায়ালার নৈকট্য হাসিল করিয়া তাহার গুনে গুনান্বিত হওয়া, আল্লাহতায়ালার জ্ঞানে জ্ঞানী হওয়া ও মানবতার শ্রেষ্ঠতম গুন যাহা নবী (সাঃ)কে মানব শ্রেষ্ঠ করিয়া ছিলেন সেই আদর্শে চরিত্র গঠনে ও আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন ও নৈকট্য অর্জনের অনুপ্রাণিত করা।
বর্তমান কালের মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও প্রভাব বিস্তারের অস্ত্রতে পরিনত করিয়া মানবতাকে নিগৃহীত করিতেছে। সত্য ও সুন্দর হইতে মানবতার আদর্শ হইতে মানুষক দূরে সরিয়া যায়তেছে, এই অবস্থায় আমার দয়াল পীর কেবলাজান হুজুরের ইশারা অনুযায়ী হযরত রাসুলে পাক (সাঃ) এর পবিত্র জম্মদিনে ১৪১০ হিজরিতে ১২ই রবিউল আউয়াল মোতাবেক ১৪ই অক্টোবর ১৯৮৯ সালে হযরত রাসুল(সাঃ) এর আদর্শ অনুযায়ী আল্লাহতায়ালার নৈকট্য হাসিলের মাধ্যে সত্যজ্ঞান ও মানবতার গুনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ কআরিবার জন্য আমার মুরিদানবর্গকে লইয়া জাকের পার্টি গঠন করি।
এই জাকের পার্টি যেদিন গঠিত হয় সেদিন ছিল শনিবার অর্থাৎ সেদিন আমার দয়াল পীর কেবলাজান এই ধরাধামে আবির্ভূত হন। আর যে সময় এই দলের গঠন হয় সে সময় ছিল রহমতের সময় বা রাত্রির শেষ ভাগ। যখন মহা নবী (সাঃ) ও আমার দয়াল পীর কেবলাজান হুজুর-উভয়ই এই ধরাধামে আবির্ভূত হন। আমারা দয়াল পীর কেবলাজান হুজুর ছিলেন দয়াল নবীর (সাঃ) এর গুনে গুনান্বিত।
তদীয় ইচ্ছা অনুযায়ী নবি (সাঃ) এর আদর্শে গঠিত জাকের পার্টির জন্ম লগ্ন, জন্ম তারিখ তাই নবী (সাঃ) এবং আমার দয়াল পীরের জম্ম তারিখ ও জন্মলগ্নে গঠিত হইয়াছে।
জাকের পার্টি নবী(সাঃ) এর সত্য আদর্শ ব্যক্তি, ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে ও সুসংহত করিতে বদ্ধপরিকর।
ইসলাম শান্তি ও মানব কল্যাণের ধর্ম। আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য অর্জনের মাধ্যমে মহান স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পনের, মাধ্যমে মানুষ এই শান্তির সুশীতল ধারার সন্ধান পায়। স্রষ্টার নৈকট্য হাসিলের জন্য মানুষকে হতে হয় সকল মানবিক গুনের অধিকারী ও পবিত্র হ্নদয়ের অধিকারী।
নিজ জীবনে কাম, ক্রোদ, মোহ, মদ, মাৎসর্য, তথা সকল পাপ ও রিপুর পথ থেকে নিজেকে দূরে রাখিতে হয়। যে পথ হযরত রাসুল (সাঃ) সারা জীবন অনুসরণ করিয়াছেন। মক্কা বিজয়ের দিন ক্রীতদাসের সহিত একই উটের পিঠে আরোহণ করিয়া হযরত নবী (সাঃ) দাস পথার উচ্ছেদ করিয়াছেন।
মানুষে মানুষে সাম্য ঘোষনা করিয়াছেন। মক্কা বিজয়ের দিনে ক্ষমতা ও বিজয় নবী (সাঃ) মধ্যে দম্ভ ও প্রতিশোধ পরায়ণতা সৃষ্টি করে নাই। সৃষ্টি করিয়াছেন বিনয় এবং ক্ষমাপরায়নতার। আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য, গুন, ও জ্ঞানের জন্যই নবী (সাঃ) এর মধ্য এই বিনয় ও সত্যপরায়নতা সৃষ্ট হইয়াছিল। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ব্যতিরেকে বিজয় ও ক্ষমতা মানুষের যে কতখানি নিপীড়নকারী ও প্রতিশোধ পরায়ন করিতে পারে তাহার উদাহরনের ইতিহাস এত অধিক যে তাহার জন্য নিদিষ্ট কোণ উদাহরনের প্রয়োজন নেই।
বর্তমান জামানার মানুষের শক্তি বাড়িয়াছে, কিন্তু আল্লাহতায়ালার নৈকট্য হাসিলের আকাংকা বাড়ে নাই। তাই মানুষে মানুষে সম্প্রিতি নাই, উৎপীড়ন নিপীড়ন বাড়িয়াছে-যাহা বলিতে গেলে এক নব্য অন্ধকার যুগ।
বর্তমান নব্য অন্ধকার যুগ হইতে যদি বাচিতে চাও, তবে রাসুলে পাক (সাঃ) এর আদর্শে প্রতিষ্ঠিত জাকের পার্টির পতাকা তলে সমবেত হইয়া নবী (সাঃ) এর সম্পূর্ণ শিক্ষানুযায়ি নিজেদেরকে গড়িয়া আগাইয়া আস।
হযরত খাজা এনায়েতপুরী বলিয়া গেছেন যে, বর্তমান জামানায় নবী (সাঃ) এর সম্পূর্ণ ও সত্য আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য ইমাম মেহদী (আঃ) আল্লাহতায়ালার ইঙ্গিতে আবির্ভূত হইবেন। আল্লাহতায়ালার তরফ হইতে যে ইঙ্গিত জামানার ওলী আল্লাহগন লাভ করিতেছেন, তাহাতে বুঝা যায়, হযরত ইমাম মেহেদী (আঃ) এর আবির্ভাবের সময় আসন্ন। আর হযরত ইমাম মেহেদী (আঃ) এর আবির্ভাব হইবে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেসানি (রাঃ) সাহেবের সত্য তরিকায়।
তাই তোমরা যদি আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করিয়া আদর্শ মানুষ হইতে চাও, হযরত ইমাম মেহদী (আঃ) এর আশ্রয় পাইয়া বর্তমান জামানার অত্যাসন্ন কঠিন মুসিবত হইতে বাঁচিতে চাও, তবে দয়াল পীর কেবলাজানের আদর্শ আঁকড়াইয়া ধর। হযরত পীর কেবলাজানের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত জাকের পার্টির পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হও।
সূত্রঃ “বিশ্বওলি খাজাবাবা ফরিদপুরী ছাহেবের পবিত্র নছিহত শরীফ হতে”
আরো পড়ুন:
- পীরজাদা আলহাজ্জ খাজা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী
- আদাবুল মুরিদের সবগুলা নসিহত একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন…
- দয়াল-নবী (সাঃ) এর খাছ হােব্ব এশক মহব্বতের ফয়েজ।
- গোটা পৃথিবীতে লোহার মই টানা হবে! বাঁচার উপায়। (শাহ্সুফি খাজাবাবা ফরিদপুরী)