আল্লাহর প্রতিছায়া হায়াতুন নবী মোহাম্মদ (সা:) – পর্বঃ ২
আল্লাহপাক যখন ইচ্ছা করলেন, তখন আহাদ নাম ধারণ করলেন। আহাদ হতে আহম্মদ নাম প্রকাশিল। আহম্মদআহাদের দ্বিতীয় অবস্থা। তাই নবীপাক বলেছেন‘ আনা আহমাদু বেলা মিম‘ অর্থ্: আমি মিম শূন্য আহম্মদ অর্থাৎ যিনি আহাদ তিনিই আহম্মদ। যেমন জল বরফ। আহাদ-আহম্মদ,মুহাম্মদ।বাস্প,জল,বরফ।জ্ঞানীদের জন্য এই ইশারাটুকুই যথেষ্ট।
তাই আল্লাহ কোরানপাকে নিজের জন্য বলেছেন: হুওয়াল আউয়ালু, হুওয়াল আখেরু, হুওয়াল জাহেরু, হুওয়াল বাতেনু তথা আল্লাহ প্রথমে ও শেষে, প্রকাশ্যে ও গোপনে-(সুরা হাদিদ আয়াত ৩)। হযরত আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (রহ:) তার বিশ্ব বিখ্যাত কেতাব মাদারাজুন নাবুয়াতে নবীপাককে আওয়াল-আখের-জাহের-বাতেন বলে কেতাব শুরু করেছেন। আমাদের নবীপাকের নাম: মোহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ।
কোরানের সমস্ত তাফসিরকারকরা ইহার অর্থ এভাবে লেখেছেন। মোহাম্মদ আল্লাহকে রাসুল হ্যায়। যাহার অর্থ দাঁড়ায় মোহাম্মদ আল্লাহর রাসুল আছেন। এখানে যদি বলা হয় ছিলেন তাহলে বিষয়টি শুধু অতিত হয়ে যায় বর্তমান কথা আর থাকেনা। কিন্তু আমাদের নবী বর্তমানেও রাসুল আছেন স্ব-শরীরে হায়াতে আছেন। তাঁহার বহু প্রমাণ আছে অল্প সময়ে শুধু একটি প্রমান দেওয়ার ইচ্ছা রাখি।
বিশ্ব বিখ্যাত কেতাব মাদারাজুন নাবুয়াতে হযরত আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (রহ:) একটি ঘটনা এভাবেই উল্লেখ করেছেন: ৫৫৫ হিজরী সালে সৈয়দ আহম্মদ রেফায়ী নামে একজন আল্লাহর বান্দা নবীর আশেক হজ্জ করার পরে মদিনা গিয়ে নবীর রওজা মোবারকের পাশে দাঁড়িয়ে দরুদ ও সালাম পেশ করছেন এবং কেঁদে কেঁদে বলেছেন “ইয়া রাসুলাল্লাহ! হায়াতুন নবী” আমাকে দেখা দিন-আমাকে দেখা দিন। একজন আশেক যেমন মাশুক লাভের জন্য ব্যকুল হয় তেমনি সৈয়দ আহম্মদ রেফায়ী নবীপাকের দর্শন লাভের জন্য ব্যকুল হয়ে পড়েছিলেন।
চোখের পানিতে তাঁর বুক ভেসে যাচ্ছে, আবার অনেকে বুঝাচ্ছেন সবুর করুন। তিনি কারো কথা শুনছেন না, শুধু কেঁদেই চলেছেন। এভাবে আট দিন কাঁদলেন। হাজি সাহেবদিগকে মদিনা শরীফে আট দিন থাকতে দেওয়া হয়। এই আট দিনে ৫x৮= ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়া হলে মদিনা শরীফ থেকে চলে আসতে হয়। যেদিন চলে আসবেন, সেইদিন ছিল জুম্মার দিন, জুম্মার নামাজ পড়ে নব্বই হাজার হাজি নবীপাকের রওজার পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন।
সৈয়দ আহম্মদ রেফায়ী কেঁদে কেঁদে বলছেন ”ইয়া রাসুল আল্লাহ” ইয়া রাসুলাল্লাহ আটদিন কাঁদলাম আপনার দেখা সাক্ষাৎ পেলাম না। আপনি যে হায়াতুন নবী তার প্রমাণ পেলাম না। আজ আপনার রওজা থেকে চলে যাচ্ছি, হয়তো আর জীবনে আসা হবে না, দয়া করে একখানা হাত মোবারক দেখিয়ে দিন, আমি তাকেই দেখে খুশি হয়ে ফিরে যাব। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর নবী হায়াতুন নবী পবিত্র রওজা মোবারক ভেদ করে পবিত্র একখানা হাত মোবারক বের করে দিয়েছেন (সোবহান আল্লাহ)।
সৈয়দ আহম্মদরেফায়ী নবীপাকের পবিত্র হাত মোবারকে চুমা দিলেন, নব্বই হাজার হাজি নবীপাকের পবিত্র হাত মোবারক দেখতে পেয়েছিলেন। উল্লেখ্য সেই মজলিসে গাউসুল আজম পীড়ানেপীর বড়পীড় হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ:) উপস্থিত ছিলেন। এখানে আরও উল্লেখ থাকে যে, এই ঘটনা তবলিগ জামাতের কেতাব তবলিগি নেসাব এর দ্বিতীয় খন্ড ফাজায়েল হজ্জ বারে জিয়ারাতুল কবুর চালিশ জায়েরিনকি হেকায়েত, লেখক মাওলানা জাকারীয়া সাহেব সাহারানপুর-এর মধ্যেও লেখা আছে।
তথ্য সহযোগী গ্রন্থসূত্র: হায়াতুন নবী ও ওলি।