[বাংলা এই ভাবানুবাদ বরিশাল থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে প্রকাশিত। এই দুর্লভ সংস্করণটি সরবরাহ করেছেন সুহৃদ (ব্যাংকার) নাঈমুল আহসান সাহেব। সম্পাদক – কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন]
মসনবী শরীফ পর্ব-১০
শাম্মা জী ইঁ হালে আরেফ ওয়া নামুদ,
খালকে রা হাম খাবে হেচ্ছি দররে বুদ।
অর্থ: আল্লাহতায়ালা দয়াপরবশ হইয়া সর্বসাধারণকে আরেফীনদের ন্যায় আল্লাহর মহব্বতে মশগুল হইবার জন্য নিদ্রিত অবস্থায় স্বপ্ন দেখার শক্তি প্রদান করিয়াছেন। স্বপ্ন দেখিয়া আল্লাহর ধ্যানে মশগুল হইবার চেষ্টা করিবে।
রফতাহ্ দর ছাহ্রায়ে বেচু জানে শাঁ,
রূহে শাঁ আছুদাহ্ ওয়া আবদানে শাঁ।
ফারেগানে আজ হেরছে ও আকবারে ও হাছাছ,
মোরগে ওয়ার আজ দামে জুস্তা আজ কাফাছ।
অর্থ: স্বপ্নে লোকের রূহ্ অবর্ণনীয় ময়দানে চলিয়া যায়। ইহাতে দেহ ও মন উভয়ই তৃপ্তি লাভ করে। লোভ ও লালসা এবং নিজের প্রাপ্য ও চাহিদা হইতে মুক্ত হইয়া যায়। যেমন ফাঁদে বা পিঞ্জিরাবদ্ধ পাখী মুক্তি পায়। সেই রকম স্বপ্নে মানুষের রূহ দেহ হইতে মুক্তি পায়। ইহা দ্বারা বুঝিতে হইবে যে, জাগ্রত অবস্থায়ও পার্থিব বস্তুর লোভ-লালসা ত্যাগ করিয়া মনকে সুস্থ রাখিতে হইবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিতে নিজের মনকে সন্তুষ্ট রাখিতে হইবে। তবেই আরেফের অবস্থা অনুধাবন করিতে সক্ষম হইবে।
চুঁ বছুয়ে দামে বাজ আন্দর শওয়ান্দ,
দাদে জুইয়ানে দরপায়ে দাওর শওয়ান্দ।
ওয়াজ ছফীরে বাজ দামে আন্দর কাশী,
জুমলারা দর দাদে ও দর দাওরে কাশী।
চুঁকে নূরে ছোবহা দম ছার বর জানাদ,
কার গাছে জররীন গেরদুনে পর জানাদ।
তরকে রোজে আখির চুবা জরীন ছাপার,
হিন্দুবী শবেরা বে তেগ আফগান্দাহ্ ছার।
মায়েলে হর জানে বছুয়ে তন শওয়াদ,
হর তনে আজ রূহে আ বস্তান শওয়াদ।
ফালেকুল ইছ্বাহ্ ইস্রাফীল ওয়ার,
জুমলারা দরছরাতে আরাদ জানে দিয়ার।
রূহায়ে মোমবাছাত রা তন কুনাদ,
হর তনে রা বাজ আ বস্তান কুনাদ।
অর্থ: এখানে মানুষের নিদ্রা ভঙ্গ হওয়ার পর রূহ্ দেহের মধ্যে প্রবেশ করে, অর্থাৎ নিদ্রা হইতে জাগ্রত হওয়ার পর মানুষের যে অবস্থা হয়, তাহার বর্ণনা দিতেছেন। মাওলানা বলেন, যখন রূহ্ মানবদেহে আসিয়া পুনঃআবদ্ধ হয়, তখন ইহ-জাগতিক কাজে লিপ্ত হইয়া যায়। যেমন, নিজের বিচারের রায় প্রাপ্তির জন্য হাকীমের পিছে পিছে ঘুরিতে থাকে। আল্লাহর হুকুমে রূহ্কে ফাঁদস্বরূপ দেহের মধ্যে আবদ্ধ করিয়া লয়। যেমন শিকারী নিজের পোষা পাখী দ্বারা বনের পাখী খাঁচায় আবদ্ধ করিয়া লয় এবং প্রত্যেককে নিজেদের বিচারের ফলাফল ভোগ করার জন্য নিজ নিজ কাজে লাগাইয়া দেয়। যখন ভোরে সূর্য উদিত হয়, রাত্রির অন্ধকার বিদূরিত হয়, সূর্য পূর্ণ আলোক বিস্তার করে, তখন রূহ দেহের মধ্যে আসিয়া পড়ে এবং প্রত্যেক দেহ রূহ্ দ্বারা এমনভাবে পরিপূর্ণ হইয়া যায়, যেমন গর্ভবতী মেয়েলোকের পেট সন্তান দ্বারা ভরিয়া যায়।
আল্লাহতায়ালা সমস্ত মাখলুকাতকে নিজ নিজ দেহে রূহ প্রত্যাবর্তন করাইয়া দেহগুলিকে পুনঃজীবিত করিয়া দেন।
আছপে জান রা মী কুনান আরী জে জীন,
ছাররেন নাওমু আখুল মওয়াতাস্ত ইঁ।
লেকে বহ্রে আঁকে রোজে আইয়ান্দ বাজ,
বর নেহাদ বর পায়ে শাঁ বন্দে দরাজ।
তাকে রোজশ ওয়া কাশাদ জাঁ মর গাজার,
দরচেরাগাহ্ আরাদাশ দর জীরে বার।
অর্থ: এখানে দ্বিতীয়বার নিদ্রা যাইবার কথা বর্ণনা করা হইয়াছে। অর্থাৎ, আল্লাহতায়ালা রূহ্কে ফের ইহ-জগতের সম্বন্ধ হইতে ফিরাইয়া লন এবং হাদীছের বর্ণনা অনুযায়ী ঘুম যে মৃত্যুর ভাই, উহা আসিয়া রূহ্কে ঘিরিয়া ধরে। ইহ-জাগতিক চিন্তা হইতে মুক্ত হইয়া যায়, কিন্তু রূহের পায়ে এক গাছি রশি বাঁধিয়া দেওয়া হয়, যেন সে ফিরিয়া আসিতে পারে। যেমন ঘোড়া মাঠে চড়িতে দিবার সময়ে পায়ে রশি বাঁধিয়া দেওয়া হয়; কারণ যখন ইচ্ছা টানিয়া আনা যায় এবং সময় মত কাজও করান যায়। অর্থাৎ, রূহকে ফিরাইয়া আনা, হায়াত পর্যন্ত দুনিয়ার বোঝা বহন করিবার জন্য।
কাশ চুঁ আাছহাবে কাহাব আঁ রূহ রা,
হেফ্জে করদে ইয়া চু কাস্তে নূহরা।
তা আজি তুফানে বিদারী ও হুশ,
ওয়া রাহীদে ইঁ জমীরো চশমো গোশ।
অর্থ: এখানে আরেফের আকাঙ্ক্ষার কথা বর্ণনা করা হইয়াছে। আরেফ বলেন, যদি আল্লাহতায়ালা আমাদিগকে আসহাবে কাহাফের মত আবদ্ধ করিয়া রাখিতেন, তবে অত্যন্ত ভাল হইত। কারণ, আমরা দুনিয়ার খেয়াল হইতে বিরত থাকিতাম, অথবা নূহ (আঃ)-এর কিশতির ন্যায় আমাদিগকে উহাতে উঠাইয়া রাখা হইত, তবে আমরা দুনিয়ার মুসিবত হইতে রক্ষা পাইতাম। অর্থাৎ, আমাদের নিদ্রা যদি অনেক বৎসর ধরিয়া স্থায়ী থাকিত, তবে আমরা এই দুনিয়ার অস্থায়ী বস্তুর মহব্বত যাহা নূহ (আ:)-এর সময়ের তুফানের ন্যায় বিপদজনক, উহা হইতে মুক্তি পাইতাম। পার্থিব বস্তুর মহব্বতে আমরা আবদ্ধ হইতাম না। সর্বদা আল্লাহর মহব্বতে মশগুল থাকিতাম। সালেক যখন আল্লাহর মহব্বতে ডুবিয়া থাকে, তখন উক্তরূপ আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করিয়া থাকেন। যখন দুনিয়ার অবস্থা সম্বন্ধে জাগ্রত থাকেন, তখন মোজাহেদা করিয়া অন্তরকে আল্লাহর দিকে ধাবিত রাখিতে হয়।
আয় বছা আছহাবে কাহাব আন্দর জাহ্যাঁ,
পহ্লেবে তু পেশে তু হাস্ত ইঁ জমাঁ।
গারে বাতু ইয়ারে বাতু দর ছরুদ,
মহ্রে বর চশমাস্ত ও বর গোশাত চে ছুদ।
বাজে গো কাজো চিস্ত ইঁ রু পোশে হা।
খত্মে হক্ বর চশমোহাউ গোশেহা।
অর্থ: এখানে বর্ণনা করা হইয়াছে যে, সাধারণ লোকেরা নিদ্রিত অবস্থায় যেমন দুনিয়ার অবস্থা হইতে বেখবর হইয়া যায়, সেই রকমভাবে আরেফ লোক জাগ্রত অবস্থায় দুনিয়ার হালত হইতে সর্বদা বে-খবর থাকেন। তাই মাওলানা বলেন যে, আসহাবে কাহাফের ন্যায় বহু আরেফ লোক এই দুনিয়ায় জীবিত আছেন। তোমাদের সম্মুখে তোমাদের নিকট তোমাদের বন্ধু হিসাবে তোমাদের সাথে মিলিয়া মিশিয়া আলাপ-আলোচনা করেন। কিন্তু, তোমাদের চক্ষে ও কর্ণে সীলমোহর লাগান হইয়াছে। তাঁহারা তোমাদের সম্মুখে তোমাদের সাথে থাকায় কী উপকার হইবে? মাওলানা প্রশ্ন করিতেছেন, তোমরা বল তো, তোমাদের এই আবরণ কিসের কারণে সৃষ্টি হইয়াছে যে, তোমরা আল্লাহ্র অলিকে চিন না । অতঃপর মওলানা নিজেই জওয়াব দিতেছেন, তোমাদের কর্ণে ও চক্ষে আল্লাহতায়ালা মোহর করিয়া দিয়াছেন। তারপর তিনি আবরণের বর্ণনা করিয়া নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন, যাহাতে ঐ আবরণ দূর করা সম্ভব হয়।
[খলিফার লায়লাকে দেখার বর্ণনা]
গোফ্তে লায়লা রা খলিফা কাঁ তুই,
কাজ তু মজনুন শোদ পেরিশাঁও গবি।
আজ দিগা খুঁবা তু আফ্জু নিস্তি,
গোফ্তে খামুশ চুঁ তু মজনুন নিস্তি।
দীদায়ে মজনুন আগার বুদে তোরা,
হর দো আলম বেখ্তর বুদে তোরা।
বাখোদী তু লেকে মজনুনবে খোদাস্ত,
দর তরীকে ইশকে বেদারী বদাস্ত।
অর্থ: খলিফা লায়লার নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন, হে লায়লা! তুমি কি ঐ ব্যক্তি, যাহার জন্য মজনুন দুঃখিত হইয়া পাগল হইয়া গিয়াছে। অন্য সুন্দরী হইতে তুমি ত কোনো অংশে অধিক সুন্দরী নও! লায়লা উত্তর করিল, তুমি যখন মজনুন নও, চুপ থাক; যদি তোমাকে আল্লাহ্তায়ালা মজনুনের ন্যায় দুইটি চক্ষু দান করিতেন, তবে দুনিয়া ও আখেরাত তোমার নিকট মূল্যহীন হইয়া পড়িত। তোমার ও মজনুনের মধ্যে পার্থক্য শুধু এইটুকু যে, তুমি এখন পর্যন্ত হুশ অবস্থায় আছ, আর মজনূন হুশ অতিক্রম করিয়া বেহুশ হইয়া রহিয়াছে। এইজন্য তুমি আমার সৌন্দর্যের রহস্য অবুভব করিতে পারিতেছ না, এবং মজনুন আমি ব্যতিত কাহারও উপর দৃষ্টি রাখে না, এই জন্য সে আমার সৌন্দর্যের রহস্য অনুভব করিতে পারিয়াছে। ইশ্কের পথে হুশ রাখা ও জাগ্রত থাকা অবৈধ কাজ। মাওলানা এখানে উক্ত আবরণের কথা উল্লেখ করিয়া দিয়াছেন যে, উক্ত আবরণ দুনিয়ার মহব্বত ও উহার সম্বন্ধে সজাগ থাকা।
হরকে বেদারাস্ত উ দর খাবে তর,
হাস্তে বিদারিয়াশ আজ খাবাশব্দতর।
চুঁ ব হক্কে বেদার নাবুদ জানে মা,
হাস্তে বেদারিয়ে চু দর বন্দানে মা।
জানে হামা রোজ আজ লাকাদ কুবে খেয়াল,
ওয়াজ জিয়ানো ছুদো ও আজ খাওফে জওয়াল।
নায়ে ছাফাহী মান্দাশ নায়ে লুতফো ওয়াফার,
নায়ে বছুয়ে আছেমান রাহে ছফার।
অর্থ: এখানে মাওলানা দুনিয়াদারীর খেয়ালের কুফল বর্ণনা করিতেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় বেশী বুদ্ধিমান, সেই ব্যক্তি-ই খোদাকে বেশী ভুলিয়া রহিয়াছেন। তাহার জাগ্রত অবস্থা নিদ্রিত অবস্থার চাইতে অনেক খারাপ। কেননা জাগ্রত অবস্থায় দুনিয়ার ধন সম্পদ এবং সুখ-শান্তির অন্বেষণে পাপের কাজে লিপ্ত হয়। যদি আমাদের জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহর সাথে যোগাযোগ না হইল, তবে আমাদের জাগ্রত অবস্থা কয়েদখানায় আবদ্ধ বলিয়া পরিগণিত হয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্য বস্তুর অন্বেষণে থাকায় আমাদের রূহ্ সদা দুঃখিত থাকে। দুনিয়ার মুনাফা, ক্ষতি ও লোকসানের চিন্তায় ও ধন সম্পদ ধ্বংস হওয়ার ভাবনায় এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে, অন্তরে কোনো সময়ে আল্লাহর মহব্বতের আলো এবং উহার সৌন্দর্য বিকাশ লাভ করিতে পারে না। আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করিতেও সাহস পায় না।
খোফ্তাহ্ আঁ বাশদ কেউ আজহর খেয়াল,
দারাদ উমেদ ও কুনাদ বা উ মাকাল।
নায়ে চুনাকে আজ খেয়াল আিইয়াদ বহাল,
আঁ খেয়ালাশ গরদাদ উরা ছদ ও বাল।
দউয়ারা চুঁ হুর বীনাদ উব খাব,
পাছ্ জে শাহওয়াত রীজাদ উবা দউয়াব।
চুঁ কে তখমে নছলরা দর শুরাহ্ রীখ্ত,
উ বখেশ আমদ খেয়ালে আজ ওয়ায়ে গিরীখ্ত।
জোয়ফে ছার বীনাদ আজাঁ ওতন পলীদ,
আহ্ আজ আঁ নক্শে পেদীদ ওনা পেদীদ।
অর্থ: মাওলানা এখানে নিদ্রার প্রকার ও ভেদাভেদ বর্ণনা করিতে যাইয়া বলিতেছেন, নিদ্রার মধ্যে ঐ নিদ্রা উত্তম, যে নিদ্রার মধ্যে সব সময়ে আল্লাহর খেয়াল থাকে এবং আল্লাহর সাথে মিলন ও কথাবার্তা বলার আশা থাকে। ঐরূপ নিদ্রা ভাল নহে, যাহার মধ্যে খারাপ চিন্তা ও ভাবনার সম্ভাবনা আছে এবং প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়া আসিলে ঐ খেয়ালের কারণে তাহাকে শাস্তি ভোগ করিতে হয় এবং ধ্বংস হইতে হয়। অর্থাৎ, ইহ-জগতে বসিয়া সব সময়ে দুনিয়ার সুখ-শান্তির চিন্তায় মগ্ন থাকিলে যে সময়ে মৃত্যু আসিবে তখন পাপসমূহ ও ভয়ঙ্কর শাস্তি ব্যতীত আর কিছুই দেখিবে না। এই রকম নিদ্রার উদাহরণ দিয়া মাওলানা বলিতেছেন, যেমন, কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে শয়তানকে এক সুন্দরী মেয়েলোক রূপে দেখিতে পাইল এবং কাম উত্তেজনায় তাহার সহিত সঙ্গম করিয়া বীর্যপাত করিল। তাহার বীর্য নছলের বীজ ছিল, উহা লোনা জমিনে বপণ করিল; অর্থাৎ অনুপযুক্ত জায়গায় ফেলিল। যখন স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেল এবং হুশ ইহল, তখন মাথায় দুর্বলতা অনুভব করিতেছে এবং শরীর না-পাক হইয়া গিয়াছে বুঝিতে পারিল। এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই বাকী নাই। কারণ, সেই খেয়ালী সুরত দেখিতে পায় না, জাগ্রত হওয়ার কারণে উহা দূর হইয়া গিয়াছে। প্রকৃত অবস্থায় উহা কিছুই ছিল না। শুধু তাহার খেয়ালীপনা ছিল। এইরূপভাবে যাহারা ইহজীবনে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য বস্তুর মোহগ্রস্ত আছে, মৃত্যুকালে তাহাদের দুঃখ ও আফসোস ব্যতীত কিছুই থাকিবে না।
মোরগে বর বালা পর আঁ ও ছায়াশ,
মী রওয়াদ বরখাকে পররানে মোরগোয়াশ।
আবলাহে ছাইয়াদে আঁ ছায়া শওয়াদ,
মী রওয়াদ চান্দাঁ কে বে মায়া শওয়াদ।
বে খবর কানে আক্ছে আঁ মোরগে হাওয়াস্ত,
বেখবর কে আছলে আঁ ছায়া কুজাস্ত।
তীর আন্দাজাদ বছুয়ে ছায়া উ,
তর কাশাশ খালি শওয়াদ আজ জুস্তে জু।
তরকাম ওমরাশ তিহি শোদ ওমরে রফ্ত,
আজ দওবীদানে দর শেকারে ছায়ায়ে তাফ্ত।
অর্থ: এখানে মাওলানা এই অস্থায়ী জগত ও চিরস্থায়ী আখেরাত সম্বন্ধে একটি উদাহরণ দিয়া পরিষ্কার করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছেন, এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী কখনও চিরস্থায়ী আখেরাতের সমতুল্য হইতে পারে না। অতএব, আখেরাত বাদ দিয়া দুনিয়া তলব করা যেমন কোনো পাখী আকাশে বায়ু ভরে উড়িতেছে এবং উহার ছায়া জমিনে পতিত হইয়া দৌড়াইতেছে। যদি কোনো বোকায় ঐ ছায়া দেখিয়া উক্ত ছায়া শিকার করার জন্য যতই চেষ্টা করিবে সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হইয়া যাইবে। কিছুতেই ছায়া শিকার করিতে পারিবে না। এইরূপভাবে যে ব্যক্তি ইহ-জগতে তৃপ্তি লাভ করিতে চাহিবে, তাহার সমস্ত জীবন নষ্ট হইয়া যাইবে, কিন্তু কিছুতেই সে সন্তুষ্ট হইতে পারিবে না। শেষফল দুঃখিত ও লজ্জিত হইতে হইবে। অতএব, সকলকেই আখেরাতের কথা ভাবিয়া ইহ-জীবনে পরকালের সম্বল জোগাড় করিতে হইবে।
অলিয়ে মোরশেদের অনুসরণ করার জন্য প্রেরণা
ছায়ায়ে ইজদানে চু বাশদ দায়াআশ,
ওয়া রেহানাদ আজ খেয়ালো ছায়াশ।
ছায়ায়ে ইজদানে বুদ বান্দায়ে খোদা,
মোরদায়ে ইঁ আলম ও জেন্দাহ্ খোদা।
দামানে উ গীরিজ ও তর বেগুমান,
তারহি আজ আফাতে আখেরে জমান।
অর্থ: যখন দুনিয়ার খেয়ালাত এবং উহা হাসিল করার কুফল বর্ণনা করা হইয়াছে; এখন উহা হইতে মুক্তি পাইবার পথ প্রদর্শন করা হইতেছে। তাই মাওলানা বলেন, দুনিয়ার গোমরাহী হইতে মুক্তি পাইতে হইলে কামেল পীরের সোহ্বাত লাভ করিতে হইবে। কেননা, যদি কাহারো নেতা বা মুরব্বি আল্লাহ্র ছায়া হইয়া যায়, অর্থাৎ পীরে কামেল যদি কোনো ব্যক্তির নেতা হয়, তবে সে দুনিয়ার খেয়াল হইতে মুক্তি পায়। ঐ আল্লাহর ছায়া হইল আল্লাহর কামেল বান্দা, যিনি ইহ-জগতের খোয়াল হইতে মৃত এবং আল্লাহর ধ্যানে জীবিত। এইরূপ ব্যক্তির নিকট শীঘ্র করিয়া যাইয়া কোনো সন্দেহ না করিয়া তাঁহার উপদেশ অনুযায়ী নিজেকে গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করিবে। তাহা হইলে মৃত্যুর সময়ে ঈমান নিয়া চলিয়া যাইতে পারিবে। উপরে দুনিয়াকে অস্থায়ী হিসাবে ছায়ার সহিত তুলনা করা হইয়াছে। আর এখানে কামেল বান্দাকে আল্লাহর পথপ্রদর্শক হিসাবে আল্লাহর ছায়া বলা হইয়াছে। যেমন, সূর্যের ছায়া সূর্য বিদ্যমান হওয়ার প্রমাণ করে।
কাইফা মদ্দা জেল্লে নক্শে আউলিয়াস্ত,
কো দলিলে নূরে খুরশীদে খোদাস্ত।
আন্দর ইঁ ওয়াদীয়ে মরো বেইঁ দলীল,
লা উহেব্বুল আফেলীন গো চুঁ খলীল।
অর্থ: মাওলানা বলেন, দেখো, আল্লাহ্তায়ালা তাঁহার ছায়া কীভাবে বিস্তার করেন। যেমন, প্রকাশ্যে ছায়া সূর্য বিদ্যমান হওয়ার প্রমাণ করে, সেইরূপভাবে অলিয়ে কামেল আল্লাহর নূরের পরিচয় বহন করেন। অর্থাৎ, আল্লাহকে কীভাবে পাওয়া যায়, সেই পথ কামেল অলিগণ প্রদর্শন করিয়া থাকেন। যদি কেহ আল্লাহর অনুসন্ধান করিতে চাও, তবে কামেল মোরশেদ ব্যতীত কেহ সেই পথে পা রাখিও না। কেননা, ঐ পথ অত্যন্ত বিপজ্জনক। নেতা বা মুরব্বিবিহীন চলিতে আরম্ভ করিলে শয়তান চিরতরে গোমরাহ করিয়া ফেলিতে পারে। ঐ পথে চলিতে চলিতে কোনো অলৌকিক ঘটনা দেখিলে, হজরত ইব্রাহীম (আ:)-এর ন্যায় ‘লা-উহেব্বুল আফেলীন’ বলিতে হইবে। অর্থাৎ, আমি কোনো ধ্বংসশীল বস্তুকে ভালোবাসি না।
রোজে ছায়া আফতাবেরা বইয়াব,
দামানে শাহ্ শাম্ছে তিবরেজী বতাব।
রাহ্ না দানী জানেবে ইঁ ছুর ও উর্ছ,
আজ জিয়া উল হক হুচ্ছামুদ্দীন বপোরছ।
অর্থ: মাওলানা বলেন, পীরে কামেল যখন আল্লাহর ছায়ামাত্র এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রধান উপায়, তখন তাহাদের অসিলায় জাতে পাকের মহব্বত হাসিল করো। তারপর নিজের সময়ের কামেলীনদের নাম উল্লেখ করিয়া মওলানা বলিতেছেন, এই নেয়ামত জনাব শামছুদ্দীন (শমসের) তিবরীজি (রহ:)- এর অসিলা ধরিলে অতি সহজে হাসিল করা যায়। যদি তাঁহার নিকট পৌঁছিতে না পারা যায়, তবে তাঁহার শিষ্য জিয়াউল হক হুস্সামুদ্দীনের নিকট গেলেও পাওয়া যাইতে পারে। কারণ, তিনি ইমাম শামসুদ্দীন তিবরীজির নিকট হইতে ফায়েজ-প্রাপ্ত হইয়াছেন।
ওয়ার হাছদ গীরাদ তোরা দর রাহে গুলু,
দর হাছাদে ইব্লিছরা বাশদ গুলু।
কো জে আদম (আঃ) নংগে দারাদ আজ হাছাদ,
বা ছায়াদাতে জংগে দারাদ আজ হাছাদ
উকবায়ে জিইঁ ছোওব তর দররাহে নিস্ত।
আয়ে খানাক আ কাশ হাছাদ হামরাহ নিস্ত।
ইঁ জাছাদ খানায়ে হাছাদ আমদ বদাঁ,
কাজ হাছাদ আলুদাহ্ বাশদ খান্দা।
খানো মানে হা আজ হাছাদ বাশদ খারাব,
বাজো শাহীঁ আজ হাছাদ্ গরদাদ্ গুরাব।
অর্থ: মাওলানা বলেন, যদি কাহারো ইমাম শামসুদ্দীন তিবরীজি (রহ:) অথবা জিয়াউল হক হুস্সামুদ্দীনকে অনুসরণ করিতে অহংকার হয় যে, আমি কাহারো চাইতে সম্মানে কম নহি, তবে তাহা হিংসা ব্যতীত আর কিছুই নয়। তাই মওলানা হিংসার ফলাফল বর্ণনা করিতে আরম্ভ করিয়া দিয়াছেন। তিনি বলেন, যদি সত্য ও সৎপথ ধরিতে কাহারও হিংসার উদ্রেক হয়, তবে বুঝিতে হইবে যে হিংসার পথ ইব্লিসের পথ। হজরত আদম (আ:)-কে সেজদা করিতে অত্যন্ত লজ্জাবোধ করিয়াছিল। হিংসার বশবর্তী হইয়া আদমকে সেজদা করা হইতে বিরত রহিয়াছিল। মারেফাতের পথে হিংসার চাইতে ক্ষতিকারক বস্তু আর কিছুই নাই। ঐ ব্যক্তি অত্যন্ত সৌভাগ্যশালী, যাহার মধ্যে হিংসার লেশমাত্র নাই। হিংসা শারীরিক খেয়ালের দরুন সৃষ্টি হয়। যেমন ক্রোধ ও কামভাব সৃষ্টি হয়। উহা দ্বারা স্বার্থপরতা ও অহংকার সৃষ্টি হয়। যদ্বারা অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করিতে উদ্যত হয়। সেই কারণেই হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। এই জন্য মাওলানা বলেন, এই দেহ-ই হিংসার ঘর জানিয়া রাখো, এই হিংসার দ্বারাই দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হইয়া যায়; জ্ঞান, বুদ্ধি খারাপ হইয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে ঐ সমস্ত বস্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ অসিলা, যাহা দ্বারা অতি সম্মান লাভ করা যায়। কিন্তু কাঁকের ন্যায় নানা প্রকার হিলা সাজী করিয়া নাজাসাত ভক্ষণ করিয়া ইতরে পরিণত হইয়া গিয়াছে। এইজন্য হিংসা-দ্বেষ পরিত্যাগ করিয়া কামেল পীরের সোহবাত ইখ্তিয়ার করো। কারণ, অলি-আল্লাহর উপর হিংসা করিলে নানা প্রকার বিপদ মুছিবাত আসে এবং অবশেষে ধ্বংস হইয়া যাইতে হয়। এই জগতে আল্লাহতায়ালা বহু অলি-আল্লাহকে গুপ্ত রাখিয়াছেন। কেননা, তাঁহাদের বিরোধিতা করিলে বহু লোক ধ্বংস হইয়া যাইবে।
গার জাছাদ খানায়ে হাছাদ বাশদ ওয়ালেকে,
ইঁ জাছাদ রা পাক করদ আল্লাহ্ নেক,
ইয়াফ্ত পাকী আজ জনাবে কিব্রিয়া,
জিছমে পুর আজ হেক্দোজে কেবরো রিয়া।
তাহেহ্রা বায়তি বয়ানে পাকিস্ত,
গঞ্জে নুরাস্ত আজ তেলেছমাশ খাকিস্ত।
অর্থ: যখন দেহ-ই হিংসার কারখানা, তবে সে দেহ তো অলি-আল্লাহরও আছে, তখন তাঁহারাও হিংসা, ক্রোধ, লোভ- লালসা হইতে পবিত্র নন। তাঁহাদের অনুসরণ করলে অন্যের কী উপকার সাধিত হইতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে যাইয়া মাওলানা বলেন, যদিও দেহ হাসাদ-এর কারখানা হয়, কিন্তু কামেল লোকের দেহ রিয়াজাত ও মোজাহেদাহ করার দরুণ আল্লাহ্তায়ালা পূর্ণভাবে পাক করিয়া দিয়াছেন। যে মানবদেহ হিংসা, অহঙ্কার ও তাকাব্বরীতে পরিপূর্ণ ছিল, আল্লাহ্তায়ালা তাঁহাদের রিয়াজাত ও মোজাহেদার কারণে দেহসমূহ সম্পূর্ণ পবিত্র করিয়া দিয়াছেন। যেমন, আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কুরআনে হজরত ইব্রাহীম ও হজরত ঈসমাইল (আ:)-দ্বয়কে ফরমাইয়াছেন, “তোমরা উভয়েই আমার ঘরকে অর্থাৎ কাবাকে পবিত্র রাখো। “ এই আয়াত দ্বারা ইশারা সূত্রে বুঝা যায় যে, অন্তরকে পবিত্র করার নির্দেশ আছে। এইজন্য কামেল লোকে নিজেদের অন্তঃকরণ কু-রিপু হইতে পবিত্র করিয়া লইয়াছেন। যদিও প্রকাশ্যে তাঁহাদের কলবের খাঁচা মাটির দেহ। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে উহা আল্লাহ্র নূরের ভাণ্ডার।
চুঁ কুনি বর বে হাছাদ মকরো হাছাদ,
জাঁ হাছাদ দেলরা ছিয়াহি হা রাছাদ।
খাফে শো মরদানে হকরা জীরে পা,
খাকে বরছারে কুন হাছাদরা হামচুমা।
অর্থ: মাওলানা বলেন, যখন তোমার জানা হইল যে কামেল লোকের অন্তরে হাসাদ নাই, তখন তাঁহাদের উপর হাসাদ করা অতিশয় ক্ষতিকারক। কেননা, হিংসাশূন্য মানুষের উপর হিংসা করিলে অন্তঃকরণ গুণাহের দরুণ অন্ধকার হইয়া যায়। এইজন্য খাঁটি কামেল লোকের অনুকরণ করা চাই। তাঁহাদের পায়ের ধূলা হইয়া যাও এবং হিংসার মাথায় লাথি মারিয়া দূর করিয়া আমার ন্যায় শামছুদ্দীন তিবরীজীর অনুসরণ কর। ইহার পর মাওলানা বলেন, ইহুদী উজির হিংসার বশবর্তী হইয়া নিজের ক্ষতি স্বীকার করিয়া কান ও নাক কাটাইয়া লইয়াছে।
হিংসা ও উজিরের ঘটনা বর্ণনা
আঁ উজিরকে আজ হাছাদ বুদাশ নাসাদ,
তা বা বাতেল গোশো বীনি বাদ দাদ।
বর উমেদে আঁকে আজীনাশ হাছাদ,
জে হর উ দর জানে মিছ্কীনানে রছাদ।
অর্থ: ইহুদী উজিরের জন্মের মধ্যে হাসাদ পরিপূর্ণ ছিল। তাই বিনা কারণে নিজের নাক ও কান কাটিয়া নিজের ক্ষতি স্বীকার করিয়া লইয়াছিল। আশা করিয়াছিল যে, তাহার এই হিংসার চাল দ্বারা গরীব নাসারাদের প্রাণে ইহার বিষ ছড়াইয়া পড়িবে এবং ধ্বংস হইয়া যাইবে।
হর কাছে কো আজ হাছাদ বীনিকুনাদ,
খেশতন বে গোশ ও বে বীনি কুনাদ।
বীনি আঁ বাশদ কে উ বুয়ে বুরাদ,
বুয়ে উরা জানেবে কোয়ে বুরাদ।
হরকে বুয়ে আশ নিস্তে বে বীনি বুদ,
বুয়ে আঁ বুয়ে আস্ত কো দীনিবুদ।
অর্থ: যে ব্যক্তি হিংসার কারণে সত্যকে অস্বীকার করে, সে নিজের কান ও নাক কাটিয়া বসে। অর্থাৎ, হিংসার দরুণ নিজের বিবেকশক্তি লোপ পাইয়া বসে। ভাল ও মন্দ বিচার করিতে পারে না। যাহার এই বিবেকশক্তি আয়ত্ত্বে থাকে, অর্থাৎ যাহার বিবেচনা করার শক্তি থাকে, তাহাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে তাহা পৌঁছাইয়া দেয়। যাহার ভাল-মন্দ বিবেচনা করার শক্তি থাকে না, সে প্রকৃতপক্ষে নাকশূন্য, ঘ্রাণ লইবার শক্তিশূন্য। কেননা, যে ব্যক্তি ঘ্রাণশক্তি দ্বারা আল্লাহ্র পথ বাছিয়া লইতে পারে না, সে শক্তি থাকা আর না-থাকা একই রকম। এইজন্য তাহাকে বিবেক ও বিবেচনাহীন বলা হইয়াছে।
চুঁকে বুয়ে বুরাদ ও শোকরে আঁ না করদ,
কুফ্রে নেয়ামত আমদ ও বীনাশ খোজাদ।
শোক্রে কুন মর শাকেরে আঁ রা বান্দা বাশ্
পেশে ইশাঁ মোরদাহ্ শো পায়েন্দাহ্ বাশ।
চুঁ উজির আজ রাহ্জানি মায়ায়ে মছাজ,
খলকেরা তু বর মইয়াওর আজ নামাজ।
অর্থ: এখানে মাওলানা কামেল লোকের সোহবত লাভ করার জন্য বলিতেছেন, যদি কামেল লোকের কথাবার্তা দ্বারা বুঝা যায় যে তিনি কামেল; তাহার পর যদি তাঁহার সেবা না করা হয়, তবে নেয়ামতের কুফরি করার লাজেম আসে। ইহাতে বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাইয়া যায়। যেমন আল্লাহ্তায়ালা বলিয়াছেন, যদি তোমরা কুফরি করো, তবে নিশ্চয় আমার শক্ত আজাব দেখিতে পাইবে। অতএব, কামেল লোকের আনুগত্য স্বীকার করিয়া তাঁহাদের সেবায় আত্মনিয়োগ করো এবং তাঁহাদের সম্মুখে নিজেকে মৃতের ন্যায় করিয়া রাখো। তাহা হইলে চিরস্থায়ী জীবন লাভ করিতে পারিবে। কামেল লোকের শিক্ষা ত্যাগ করিয়া ইহুদী উজিরের ন্যায় মজুর হইয়া ধর্ম্মাবলম্বীদের ডাকাতে পরিণত করিও না এবং লোকজনকে নামাজ পড়া হইতে ফিরাইয়া রাখিও না।
বুদ্ধিমান নাসারাদের উজিরের ধোকাবাজী বুঝিতে পারা
নাছেহ্ দীন গাস্তাহ্ আঁ কাফের উজির,
গরদাদ উ আজ মক্কর দর বুজিনাছের।
হরকে ছাহেবে জওকেবুদ আজ গোফ্তে উ,
লজ্জতে মী দীদ ও তলখে জুফ্তে উ।
নোক্তাহা মী গোফ্ত উ আমীখ তাহ,
দর জুলাবো ও কান্দে জহরে রীখ্তাহ।
অর্থ: উক্ত কাফের উজির, ধর্মের নসীহতকারী সাজিয়াছিল। নসীহতের মধ্যে ধোকাবাজীর কথা মিশ্রিত করিয়া বলিত। যেমন, মিঠা হালুয়ার মধ্যে কিছু রসুন মিশ্রিত করিয়া দিত। যে সমস্ত লোক আল্লাহ্র পথে ধার্মিক ছিল, তাঁহারা তাহার কথায় স্বাদ পাইতেন, কিন্তু সাথে সাথে কিছু তিক্ততা অনুভব করিতেন। সে ধর্মের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কথা বর্ণনা করিত, কিন্তু উহার মধ্যে শয়তানী ও গোমরাহির কথা বলিত – যেমন মিশ্রিত শরবতে কিছু বিষ মিশাইয়া দিত।
হাঁ মশো মাগরুরে জাঁ গোফ্ত নেকু,
জাঁকে বাশদ ছদ বদী দর জীরে উ।
হরকে বাশদ জেশ্তে গোফ্তাশ জেশ্তে দাঁ
হরচে গুইয়াদ মোরদাহ আঁরা নিস্তে জাঁ।
গোফ্তে ইনছান পারায়ে ইনছান বুদ
পারায়ে আজনানে ইয়াকীন হামনানে বুদ।
অর্থ: মাওলানা বলেন, এই সমস্ত ধোকাবাজদের মুখের সুন্দর কথায় ভুলিতে হইবে না। ইহাদের অন্তরে শত শত প্রকারের খারাবি নিহিত আছে। যে ব্যক্তি খারাপ চরিত্রবিশিষ্ট হয়, তাহার কথায়ও খারাপ ক্রিয়া করে এবং মৃত্যু অন্তঃকরণ-বিশিষ্ট ব্যক্তি যাহা বলিবে, উহাতেও কোনো ভাল ক্রিয়া করিবে না। কেননা, মানুষের কথা মানুষের একটা অংশমাত্র।মানুষটি যেরূপ হইবে, তাহার কথাও সেইরূপ হইবে। যেমন রুটির অংশ রুটি-ই হয়।
জাঁ আলি ফরমুদ নকলে জাহে লাঁ,
বর মুজাবেল হাম চু ছবজাস্ত আয় ফুলাঁ।
বরচুনাঁ ছবজাহ হর আঁকাছ কো নেসাস্ত,
বর নাজাছাত বে শক্কে ব নেশাস্তাস্ত।
বাইয়াদাশ খোদরা ব মোস্তান জা আঁ হদছ,
তা নামাজে ফরজে উ-না বুদ আবাছ।
অর্থ: হজরত আলী (ক:) রলিয়াছেন, জাহেলের নেয়ামত এইরূপ, যেমন পায়খানার সারের উপর শাক-সব্জি লাগান হয়। দেখিতে তরতাজা ও শ্যামলা, অতি চমৎকার; কিন্তু অভ্যন্তর ভাগ নাপাক ও দুর্গন্ধময় হয়।
ভাব: মাওলানা এখানে হজরত আলী (ক:)-এর কথার উদ্ধৃতি দিয়া দেখাইয়াছেন, যে ব্যক্তির অন্তর আল্লাহর মারেফাতের আলো হইতে খালি, তাহার কথাবার্তা ও উপদেশ ঐ প্রকার নেয়ামত যেমন পায়খানার সারের উপর শাক-সব্জির বাগান। প্রকাশ্যে খুব চাকচিক্য দেখায়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উহা দুর্গন্ধময় ও নাপাক। এই রকম শাক-সব্জির উপর কেহ ধোকায় পড়িয়া গেলে সে নাপাক হইয়া যাইবে – নাপাকের উপর বসিয়াছে বুঝিতে হইবে। এই রকমভাবে ঐ ব্যক্তির কথার উপর কেহ বিশ্বাস করিয়া আমল করিলে নিশ্চয় সে ধ্বংস হইয়া যাইবে। তাহার উচিত নিজেকে ঐ নাপাকী হইতে ধৌত করিয়া পবিত্র করা, আর কখনও ঐরূপ ব্যক্তির কথায় বিশ্বাস না করা এবং তাহার উপর আমল না করা। তওবা করিবে, যাহাতে ফরজ নামাজ নষ্ট হইয়া না যায়।
জহেরাশ মীগোফ্ত দররাহে চুস্ত শো,
ওয়াজ আছর মীগোফ্ত জানরা ছোস্ত শো।
জাহেরে নকরাহ্ ছুপিদাস্ত ও মনির,
দস্তো জামা জা আঁ চিয়াহ্ গরদাদ চু কীর।
আতেশ আজ চে ছার খরবীস্ত আজ শরার,
আজ ফেলে উ ছিয়াহ্ কারী নেগার।
বরকে গার নূরে নোমাইয়াদ দর নজর,
লোকে হাস্ত আজ খাছিয়াত দোজদে বছর।
অর্থ: ঐরূপ লোকের কথায় প্রকাশ্যে বুঝা যায় যে, আল্লাহর পথে খুব হুঁশিয়ার থাকো এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে দৃঢ় থাকো। কিন্তু ইহার কথায়, মূলে কোনো ক্রিয়া নাই। বরং সৎকাজে দুর্বলতা আরো বাড়িয়া যায়। কেননা, উক্ত উপদেশ সৎ উদ্দেশ্য ও সততাপূর্ণ ছিল না। শুধু লোক দেখানো ও ধোকা দিবার নিয়তে ছিল। (একটি উদাহরণ দিয়া মাওলানা বলিতেছেন), ঐ উপদেশগুলি যেমন চান্দির মত ধপধপে সাদা দেখায়। কিন্তু কাপড় এবং হাতের সাথে স্পর্শ করিলে কালো হইয়া যায়। এই রকম অগ্নির প্রতি লক্ষ্য করো, প্রকাশ্যে দেখিতে লাল দেখায়, কিন্তু উহার ক্রিয়া কালো। বিজ্লিও এই রকম দেখিতে আলো, কিন্তু চক্ষের জ্যোতি হরণ করিয়া নিয়া যায়।
হরফে জুজ আগাহ্ ও ছাহেব ও জওকে বুদ,
গোফ্তে উ দর গরদানে উ তওকে বুদ।
মুদ্দাতে শশ ছালে দর হেজরানে শাহ্,
শোদ উজির ইত্তেবায়ে ঈছারা পানাহ্।
দীন ও দেলরা কুল বদু বছপরদে খল্ক,
পেশে আমর ওনিহি উ মি মরদে খল্ক।
অর্থ: মাওলানা এখানে অজ্ঞ জনসাধারণের অবস্থা বর্ণনা করিয়া বলিতেছেন, যাহাদের কোনো জ্ঞান বা বিবেক শক্তি ছিল না, তাহারা উজিরের কথা গলার হার বানাইয়া পরিধান করিয়া লইয়াছিল এবং তাহার জন্য পাগল হইয়া গিয়াছিল। এই রকমভাবে ছয় বৎসর বাদশাহর নিকট হইতে দূরে থাকিয়া উজির নাসারাদের নেতা ও ভরসাস্থল হইয়া দাঁড়াইলো। সমস্ত নাসারাদের প্রাণ উজিরের হাতে সমর্পণ করিয়া দিল। তাহার আদেশ ও নিষেধের প্রতি জান-কোরবান করিয়া দিত।
গুপ্তভাবে বাদশাহ উজিরের নিকট খবরাখবর পাঠান
দর মীয়ানে শাহ ও উ পয়গামে হা,
শাহ রা পেনহানে বদু আরামে হা।
আখেরাল আমরে আজ বরায়ে আঁ মুরাদ,
তা দেহাদ চুঁ খাকে ইশাঁরা ববাদ।
পেশে উ ব-নাবেস্ত শাহ কা আয়ে মুকবেলাম,
ওয়াক্তে আমদ জুদে ফারেগ কুন ও লাম।
জে ইন্তে জারাম দীদাহ ও দেল বররাহে আস্ত,
জে ইঁ গমাম আজাদ কুন গার ওয়াক্তে হাস্ত।
গোফ্তে ইনাক আন্দার আঁ কারাম শাহা,
কা আফগানাম দর দীনে ঈছা ফেতনাহা।
অর্থ: গুপ্তভাবে উজির এবং ইহুদী বাদশাহর মধ্যে খবরাখবর চলিতেছিল। বাদশাহ্র অন্তরে উজিরের উপর পূর্ণ আস্থা ছিল। অবশেষে নাসারাদিগকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য বাদশাহ্ উজিরের নিকট লিখিলেন, “হে সৌভাগ্যবান, এখন সুযোগ আসিয়াছে, শীঘ্র করিয়া আমাকে সান্ত্বনা দাও। আমার চক্ষু ও অন্তর অপেক্ষায় রহিয়াছে। তোমারও যদি এখন সুযোগ হইয়া থকে, তবে এই চিন্তা হইতে আমাকে মুক্ত কর। উজির প্রতিউত্তরে লিখিয়াছিল, আমিও এই চিন্তায় সর্বদা নিযুক্ত আছি যে ঈসায়ী ধর্ম সম্পূর্ণরূপে বিলীন করিয়া দিব।
নাসারাদের বার নেতার বর্ণনা
কওমে ঈছারা বুদ আন্দর দারো গীর,
হাকেমানে শানে দাহ আমীর ও দো আমীর।
হর ফরিকে হর আমীরে রা তাবেয়,
বান্দাহ গাস্তাহ মীরে খোদ্রা আজ তামেয়।
ইঁ দাহ ও ইঁ দো আমীর ও কওমে শাঁ।
গাস্তে বান্দাহ আঁ উজিরে বদ নেশাঁ।
ইতেমাদে জুমলা বর গোফ্তারে উ।
ইক্তে দায়ে জুমলা বর রফ্তারে উ।
পেশে উ দর ওয়াক্তে ও ছায়াতে হর আমীর,
জানে ব দাদী গার বদু গোফ্তীকে আমীর।
চুঁ জবুন করদে আঁ হছুদাক জুমলারা,
ফেতনা আংগিখ্ত আজ মকর ও দেহা।
অর্থঃ:প্রশাসনিক ব্যাপারে ঐ নাসারাদের বারজন নেতা ছিল। প্রত্যেক নেতার একেক দল ছিল। জাগতিক উপকারার্থে নেতাদিগকে মান্য করিত। অতএব, উক্ত বার নেতা এবং তাহাদের শিষ্য-শাগরেদ প্রত্যেকেই ঐ কমিনা ইহুদী উজিরের বশবর্তী হইয়া গিয়াছিল। সকলেই তাহার কথায় বিশ্বাস করিত এবং তাহাকে অনুসরণ করিত। উজিরকে এমন ভাবে মান্য করিত যে, যদি সে মরিতে বলিত, তবে তৎক্ষণাৎ মরার জন্য প্রস্তুত হইত। অবশেষে যখন কমিনা উজির সকলকে বাধ্যগত করিয়া লইল, তখন ধুরন্ধর উজির চালাকি করিয়া মারাত্মক একটি নূতন ফেতনা আবিষ্কার করিল।
উজিরের ইঞ্জিল কিতাব রদ-বদল করা।
ছাখ্তে তুমারে বনামে হর কাছে,
নকশে হর তুমার দূীগার মাছলাকে।
হুক্মহায়ে হরি এক নুয়ে দীগার,
ইঁ খেলাকে আঁজে পায়ানে তা জেছার।
অর্থ: এখানে নূতন আবিষ্কৃত ফিতনার কথা বলা হইয়াছে। উক্ত উজির প্রত্যেক নেতার নামে একখানা কপি তৈয়ার করিল। প্রত্যেক কপির মর্ম অন্য হইতে বিরুদ্ধে ছিল। প্রত্যেক কপির মধ্যে নূতন নূতন আহ্কাম লিপিবদ্ধ করা হইয়াছিল। একে অন্যের সম্পূর্ণ বিপরীত মর্ম ধারণ করিয়াছিল।
দর একে রাহে রিয়াজাত রা ও জুউ,
রোকনে তওবা করদাহ ওশরতে রুজুউ।
দর একে গোফ্তাহ রিয়াজাত ছুদে নিস্ত,
আন্দর ইঁ রাহ্ মোখলেছি জুজ জুদে নিস্ত।
অর্থ: এখানে মাওলানা কপির কয়েকটি পরস্পরবিরোধী আহ্কামের বর্ণনা দিয়াছেন। যেমন, এক কপিতে রিয়াজাত ও ভূখা থাকাকে তওবার পদ্ধতি ও আল্লাহ্র প্রতি মনোনিবেশ করার পন্থা বলিয়া প্রকাশ করিয়াছে। অন্য এক কপিতে লিখিয়া দিয়াছে যে, রিয়াজাত দ্বারা কোনো উপকার হয় না। আল্লাহকে পাইতে হইলে দান-সদ্কা ছাড়া আর কিছু দ্বারা পাওয়া যায় না। একই মসলা সম্বন্ধে কপিদ্বয়ের মধ্যে ভিন্নরূপ বর্ণনা করা হইয়াছে।
দর একে গোফ্তাহ-কে জুদ ও জুউ তু,
শেরকে বাশদ আজ তু বা মায়াবুদে তু।
জুজ তাওয়াক্কুল জুজকে তাছলীমে তামাত,
দরগমে দর রাহাতে হামা মকরাস্ত ওদাম।
দর একে গোফতাহকে ওয়াজেবে খেদ মতাস্ত,
ওয়ার না আন্দেশাহ তাওক্কাল তোহ্মাতাস্ত।
অর্থ: অন্য এক কপিতে লিখিয়া দিল, দান, সদ্কা ও ভূখা থাকা মাবুদের সহিত শরীক করা ব্যতীত আর কিছুই নহে। কেননা, উহা দ্বারা নিজের কার্যকলাপ ও গুণ-গরিমার পূর্ণত্বের উপর নির্ভর করার ধারণা আসে। অতএব, ঐ দুই পন্থা ত্যাগ করিয়া তাওয়াক্কুল অবলম্বন কর এবং সুখে দুঃখে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকো। এই সমস্ত বর্ণনা সকলই তাহার ধোকাবাজী ছিল। অন্য এক কপিতে লিখিয়া দিয়াছিল যে, তাওয়াক্কুল দ্বারা কোনো ফায়দা হয় না। সেবা ও আনুগত্য প্রকাশ করা চাই। তাওয়াক্কুলের কথা চিন্তা করা অর্থ নবীদের উপর শুধু দোষারোপ করা; আদেশ নিষেধ সবই বেহুদা বলিয়া মনে করা হয়।
দর একে গোফ্তাহ কে আমর ও নেহি হাস্ত,
বহর করদান নিস্তে শরাহ ইজ্জো মাস্ত।
তাকে ইজ্জে খোদ বা বীনাম আন্দর আঁ,
কুদরাতে আঁরা বদানেম আঁ নজমাঁ।
দর একে গোফতাহ্ কে ইজ্জেখোদ মুবীন,
কুফ্রে নেয়ামত করদানাস্ত আঁ ইজ্জেহীন।
কুদরাতে খোদ বী কে ইঁ কুদরাত আজ উস্ত,
কুদরাতে তু নেয়ামতে উ দাঁকে হুস্ত।
দর একে গোফ্তাহ কাজ ইঁ দো দর গোজার
বুতে বুদ হরচে ব গুঞ্জাদ দর নজর।
অর্থ: এক নোছখায় লিখিয়া দিল, এই যে সমস্ত আদেশ নিষেধ আছে, ইহা আমাদের পালন করার জন্য নয়; শুধু আমাদের ক্লান্তি ও অপরাগতা প্রকাশের জন্য দেওয়া হইয়াছে, যাহাতে আমরা অপারগ হইয়া আল্লাহ্র কুদরত দেখিতে পারি। তখন আল্লাহর কুদরতের উপর আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন হইবে। এই নোছখার সারমর্ম হইল জবরিয়া মোজহাব। অন্য এক কপিতে লিখিয়া দিয়াছে, নিজের অপরাগতা দেখা এক প্রকার না-গুক্রি প্রকাশ করা বুঝায়। অর্থাৎ, খোদাতায়ালা বান্দাকে যে নেয়ামতস্বরূপ শক্তি প্রদান করিয়াছেন, উহার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা বুঝা যায়। ইহা কুফরির মধ্যে গণ্য করা হয়। অতএব, শক্তির প্রভাব দেখান চাই। অন্য এক কেতাবে লিখিয়া দিয়াছে যে, যবর ও কদর উভয়কেই বাদ দিয়া দেখিতে হইবে। কেননা, ইহার যে কোনোটার প্রতি লক্ষ রাখিলে প্রতিমার সমতুল্য হয়। প্রতিমার প্রতি লক্ষ্য রাখিতে গেলে আল্লাহর তরফ হইতে খেয়াল ছুটিয়া যায়। এখানে হওয়া আর না হওয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব রহিয়াছে।
দর একে গোফ্তাহ কে ইজ্জো ও কুদরাতুত,
বোগ জারাদ ওজে হরচে আন্দর ফেক্রেতুত।
আজ হাওয়া খেশে দর হর মিল্লাতে,
গাস্তাহ্ হর কওমে আছিরে জিল্লাতে।
অর্থ: এক কপিতে বর্ণনা করিয়াছে, তোমার মধ্যে যে অপরাগতা ও শক্তি ইচ্ছাধীন রহিয়াছে, উহা দূর করার জন্য কোনো চেষ্টা বা তদবীর করিতে হইবে না। ঐ সব চিন্তা বা খেয়াল আপন হইতেই দূর হইয়া যাইবে। উহা দূর করার জন্য নিজে কোনো চেষ্টা করাও আত্মার কু-রিপুর অংশ বলিয়া বিবেচিত। উহা অপমানজনক কাজ। আত্মার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যে জাতি কাজ করে, সে জাতি পৃথিবীতে সর্বদা অপমানিত থাকে।
মসনবী শরীফ
মূল: মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহ:)
অনুবাদক: এ, বি, এম, আবদুল মান্নান
মুমতাজুল মোহদ্দেসীন, কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা।
সূত্রঃ https://mishukifti.wordpress.com/