হোমপেজ জীবনী ও পরিচিতি ক্ষুদ্র লেখায় জেনে নেই মনসুর হাল্লাজকে

ক্ষুদ্র লেখায় জেনে নেই মনসুর হাল্লাজকে

2284

ক্ষুদ্র লেখায় জেনে নেই মনসুর হাল্লাজকে

মনসুর হাল্লাজ। এক মহান উচ্চাঙ্গের সূফি সাধকের নাম। পুরো নাম আবু আব্দুল্লাহ হুসাইন ইবনে মানসুর আল-হাল্লাজ। জন্মগ্রহন করেন ইরানের ৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইরানে। এবং শহিদি ওফাত লাভ করেন ২৬ মার্চ, ৯২২ খ্রিস্টাব্দে। Medieval যুগে তার মূল আগ্রহ ও দর্শন ছিল সূফিবাদ এবং জিকির। মুসলিম জগতে খ্যাত প্রধানত তার চরম বিতর্কিত বক্তব্য “আনাল হাক্ক” (“আমিই পরম সত্য”) এবং এর ফলশ্রুতিতে লম্বা বিচার-প্রক্রিয়ার পরে আব্বাসীয় খলিফা আল মুকতাদির এর আদেশে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য ধারনা ছিল মরমীবাদ, আরবী সুফিবাদী কবিতা। তার দর্শন তত্ত্ব অনেক যুগশ্রেষ্ঠ সূফি-সাধকদের প্রভাবিত করেছেন, যেমন- হাফিজ, আত্তার, সানাই, রুমি, Sachal SarmastSarmast.

তার শান মান প্রকাশ করার ধারনা চিন্তায় ও আনতে চাইনা, শুধু তার দর্শনের প্রেমে পড়ে একটু লেখালেখি।  যুগের অনেক সূফিগনই তাকে বুঝতে পারেনি, পারেনি মানতে, কারন তার তত্ত্ব সাধারন চেতনার বোধগম্যের বাহিরে।

উনি প্রাথমিক যুগে জুনায়েদ বাগদাদী এবং আমর-আল-মক্কীর শিষ্য ছিলেন, কিন্তু পরে দুজনেই উনাকে পরিত্যাগ করেন ভাবগত ও কৌশলগত কারনে। সাহল আল-তাশতারিও আল-হাল্লাজের একজন প্রাথমিক যুগের উস্তাদ ছিলেন।

তিনি প্রভু ধ্যান ও প্রেমে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে জজবার হালতে বলতে থাকেন আনাল হক। ওফাত লাভ করার আগ পর্যন্ত, ফাঁসির মঞ্চে দাড়িয়ে তিনি একই ধ্বনি বের করেন, “আনাল হক”।

তার মুখনিঃসৃত বাণী সাধারণে বুঝতে না পেরে তাকে শহিদ করেন, তিনি আরো বলেছিলেন- “মা-ফি জুব্বাতি ইল্লাল্লাহ” অর্থাৎ আমার জুব্বার ভিতরে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই।

তার এ ধরনের বাণী কোন লোকেরই বোধগম্য হলো না তাই তাকে তৎকালীন সকল সল্পজ্ঞানী আলেম-  ফুকাহায়ে কেরামের ফতোয়ার ভিত্তিতে সরকারি বিচারকদের নির্দেশে হত্যা করা হয়।

মনসুর হাল্লাজ রহঃ সম্পর্কে বিখ্যাত সূফি শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার (রহঃ) বলেন-

আমি এটাকে অবাক মনে করি যে, হযরত মূসা আলাইহিসসালাম যখম তূর পাহাড়ে দিদারে নূরে এলাহী করেন, তখন গাছ থেকে ইন্নি আনাল্লাহ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ এ শব্দ শোনা গিয়েছিল। এ আওয়াজ ছিল সয়ং আল্লাহর গাছের নয়। তাহলে মনসুর হাল্লাজ (রহঃ) এর মুখ থেকে যখন আনাল হক শব্দ বের তখন কেন বলা হবেনা তার মুখের বাণীটি আসলে আল্লাহর বাণী। ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহি আরো বলেছেন, মনসুরের মুখ দিয়ে খোদা আল্লাহ আনাল হক শব্দটি উচ্চারণ করেছেন।

মনসুর হাল্লাজ সম্পর্কে বিখ্যাত সূফি সাধক শিবলী( রহঃ) বলেন –

হযরত মনসুর (রহঃ) কে যখন শূলে তোলা হয়, তখন ইবলিশ তার সামনে এসে বলে- আপনি যা বলেছিলেন আমিও তাই বলেছিলাম আনা খাইরুন (আমি সর্বোত্তম)। তবে কেন আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ আর আমার প্রতি অভিসম্পাত? মনসুর হাল্লাজ (রহঃ) জবাব দিলেন, তুমি তো বলেছিলে অহমিকায় প্রসূত হয়ে সেচ্ছায়। আর আমি আনাল হক বলি স্বীয় আমিত্ব সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর ইচ্ছায়। এই হলো অনুগ্রহ ও অভিশাপের কারন। জেনো রেখো অহংকার আল্লাহর দরবারে অত্যন্ত ঘৃনীত ও নিকৃষ্ট। অন্যদিকে আমিত্বকে বিসর্জন দেয়া আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজ।

মনসুর হাল্লাজ সম্পর্কে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি রহমাতুল্লাহি বলেন-

না, না যে আনাল হক (আমি খোদা) বলেছিল সে মনসির ছিল না, বরং খোদাই বলেছিল আনাল হক। আর মূর্খরা কেবল বলে যে মনসুরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু না ফাঁসির কাঠিতে যে ঝুলেছিল সে মনসুর ছিল না।

অবশেষে আমি ও বলি-

মনসুর হাল্লাজ যখন আনালে পৌছিল,
এক ভিন্ন দ্বিতীয় রুপ নয়নে না হেরিল।
কাজী শূলে দিল, তবু না নাম ছাড়িলো,
এমন ও মধুর ডাক শিখনারে।।

সর্বোপরি মনসুর হাল্লাজ ছিলেন খোদার রহস্য মন্ডলির একজন বিশেষ আউলিয়া যার ভেদ সকলে মানতে পারবেনা। যেমন করে আল্লাহ মহাপবিত্র কোরআনে আমাদের উদাহরন দেখিয়ে দিলেন- হযরত মূসা আলাইহিসসালাম কিতাবদারী নবুয়ত প্রাপ্ত হয়ে আল্লাহর ওলি খিজির আলাইহিসালাম এর কোন কর্মকান্ডই বুঝতে পারেন নি। আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন আমি খিজিরকে দান করেছি ইলমে লাদুনি তথা ঐশ্বরিক জ্ঞান।

কোরআন পাকে আল্লাহ ইরশাদ ফরমান-

“সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহর আউলিয়াগনের কোন ভয় নেই, তারা চিন্তিত ও হবে না।”

বোখারী ও হাদীসে কুদসিতে উল্লেখ মহান আল্লাহ পাক ঘোষনা করেন-

আমার আউলিয়াদের বিরুধীদের প্রতি আমি আল্লাহ যুদ্ধ ঘোষনা করি। আমি আমার আউলিয়াগনের হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে, মুখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে বলে, কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে।

মহান প্রভু আমাদের এ মহান সূফি সাধক সম্পর্কে সঠিক ভাব ও জ্ঞান রাখার তাওফিক দান করুক। আমিন।