পীরে কামেল আল্লামা শাহ্সূফি আহসানুল্লাহ (রহ:)’র জীবন ও কর্ম।
- আধ্যত্ম জগতের সূর্যপ্রভা সূফি আহসানুল্লাহ রহ.’র জীবন ও কর্ম।
- সূফিবাদী লেখক ও গবেষক— মুহাম্মদ কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী।
কালের আবর্তনে, সময়ের বিবর্তনে কত ইতিহাস, কত ব্যক্তির স্মৃতি অতল গহীনে হারিয়ে যায়। তবুও কিছু মহৎ মানুষের স্মৃতি ইতিহাসের পাতায় রয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে অবিস্মরণীয় ব্যক্তি হচ্ছেন ত্রয়োদশ শতাব্দির ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, হেরার রাজ তোরণ থেকে বিচ্ছুরিত ইলমে ওহীর ধারক ও বাহক, নববী কাননের ফুটন্ত গোলাপ, উপমহাদেশের প্রখ্যাত ধর্মপ্রচারক, অলীয়ে মুকাম্মেল মশুরীখোলা দরবার শরীফের পীর হজরত ক্বেবলা শাহ্ সূফি আহসান উল্লাহ রহ.। যার অসাধারণ বিচক্ষণতার ছোঁয়াতে অসংখ্য মানুষ সিরাতুল মুস্তাকিমের সন্ধান পেয়েছে। এ মহান গুণীজন সকলের কাছে হজরত ক্বেবলা ও দরবেশ মিয়া নামে পরিচিত ও সমাদৃত।
বংশ পরিচিতিঃ— তাঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বি.’র বংশধর বিশিষ্ট ধর্মপ্রচারক হজরত নাওজাওয়ান রহ.। যিনি হজরত শাহ্ জালাল ইয়েমেনীর সহযোদ্ধা বাবা আদম শহীদ রহ.’র অন্তরঙ্গ বন্ধু। ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি সুদূর আরব হতে ভারত হয়ে এ বঙ্গদেশে আগমন করেন। তাঁর পিতা হজরত মাওলানা শাহ্ নূর মুহাম্মদ রহ., পিতামহ হজরত শাহ্ রফিক উদ্দীন, প্রপিতামহ হজরত শাহ্ তাজ মুহাম্মদ রহ.।
জন্মস্থান ও জন্মসালঃ—
বাংলার জনপদের এ মহান সাধক পুরুষ ২৫ ই জুলাই ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা শাহ্ নূর মুহাম্মদ রহ.’র ঘরে আড়াইহাজার থানার টেটিয়া নামক একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভাদ্র মাসের শেষ জুমার রাত্রির শেষভাগে।
ধর্মীয় শিক্ষাঃ—
হজরত কেবলার শৈশবেই পিতৃ ও মাতৃ বিয়োগ ঘটে। পিতা—মাতা, পিতামহী ও মামাজানের কাছ থেকে কুরআনুল করীমের বিশুদ্ধ পাঠসহ আরবি, উর্দ্দু, বাংলা ও ফারসি ভাষার বুৎপত্তিগত জ্ঞান, গণিত শাস্ত্র ও আম্বিয়ায়ে কেরামদের জীবন—কাহিনী ও সদুপদেশ মূলক জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর মামা ছিলেন ঢাকা আজিমপুর দায়রা শরীফের সাজ্জাদানশীন শাহ্সূফি সৈয়দ লাকিত উল্লাহ রহ.’র সন্তান হজরত শাহ্ সূফি সৈয়দ হাফিজুল্লাহ রহ.’র শিক্ষক। ইলমে তফসির (তফসিরে বায়জাবী, তফসিরে ইবনে আব্বাস, তফসিরে জরীর/তাবারী) ও ইলমে হাদিসের (সিহাহ সিত্তাহ ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ) জ্ঞান লাভ করেছিলেন সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার সুজাতপুর ইউনিয়নের মাওলানা নেজামুদ্দীন রহ.’র কাছ থেকে। তাঁর হাতের লেখা ছাপানো অক্ষরের মত সুন্দর ছিলো। বহু তফসির ও হাদিস গ্রন্থ স্ব—হস্তে লিখেছিলেন। কপিগুলো এখনোও হুজুরের বাড়ীতে সংরক্ষিত আছেন। তীক্ষ্ণ মেধাবী ও স্মরণশক্তির অধিকারী হওয়া দরুন কোন বিষয় একবার শুনলে বা পড়লে স্মরণে থাকত।
প্রাথমিক জীবন—
শৈশবেই পিতৃ ও মাতৃ বিয়োগ হওয়া দরুন দুঃখকষ্টে প্রাথমিক জীবন অতিবাহিত করেন। এতদ্ব সত্ত্বেও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য এক দুঃসাহসিক যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ যাত্রায় সফলতার সবোর্চ্চ স্থান অধিকার করেছিলেন। আলহামদুল্লিাহ।
ইলমে তাসাউফ শিক্ষা বা তরীক্বতের শিক্ষাঃ—
এ ছালেকে মজজূব ইলমে শরীয়ত ও ইলমে তরীক্বতে বেশ পারদর্শী ছিলেন। সবসময় ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ ধ্বনিতে মুখরিত থাকত তাঁর জবান। কায়কোবাদ ‘আযান’ কবিতায় বলেছেন, মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী। নানী আম্মার কাছ থেকে কালিমায়ে তাইয়্যেবার জিকির—আজকারের শিক্ষা নিয়ে ছয় লতিফাকে সতেজ ও জাগ্রত করেন। যা তরীক্বত পন্থীদের কাছে নফি—এসবাতের জিকির নামে পরিচিত। পরে নানা (মায়ের চাচা) হজরত শাহ্ পীর মুহাম্মদ রহ. থেকে লা—ইলাহা ইল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র ছবক সহ জিকির—আজকারের তালিম নেন। এ ছবকদ্বয়ে পূর্ণতা পেলে হজরত কেবলার নানা পশ্চিম দেশে সফরের নির্দেশ দেন। হজরত শাহ্ পীর মুহাম্মদ রহ. ছিলেন একজন প্রকৃত দরবেশ ও চিরকুমার। কালবিলম্ব না করে ৩৪ বছর বয়সে বায়তুল্লাহ শরীফ ও মদীনাতুল মুনাওয়ারায় সফর করেন। আরব থেকে ফেরার পথে বাগদাদ শরীফের বহু বুজুর্গ ও আলেম—ওলামাদের সোহবত লাভ করেছিলেন। এমনকি বহু বুজুর্গ ব্যক্তিদের মাজারও জিয়ারত করেন।
সেখানে একজন খোরাসানী মজ্জুব ফকিরের সাথে মোলাকাত হয়। তাঁর দেশে (খোরাসান) যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়ে বললেন, আপনি মাওলানা রুমী রহ.’র মাজার জেয়ারত শেষ করলে আপনার জন্য আমি সাওয়ারী পাঠাব। যথাসময়ে, রুমী রহ.’র মাজার জেয়ারত শেষ করে হাঁটতে হাঁটতে একটি গভীর অরণ্যের মধ্যে ঢুকে পড়েন। পথিমধ্যে এক দরবেশের সাথে দেখা, যিনি বাঘের পিঠের উপর সাওয়ার! সাওয়ারী তাঁকে দেখামাত্র হাতে চুম্বন করে বললেন, আপনার বন্ধু যিনি আমার পীরও মুর্শিদ (খোরাসানী দরবেশ) তিনি আপনাকে এ সাওয়ারী করে খেরকান শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি এ সাওয়ারীতে আরোহণ করুন। হজরত কেবলা ‘বিসমিল্লাহি মাজরেহা ওয়া মুরছাহা ইন্না রাব্বি লাগাফুরুর রাহীম’ বলে বাঘের পিঠে চড়ে খেরকান শহরে দরবেশের আস্তানায় পৌঁছান। ঐ স্থানে চল্লিশ দিন অতিবাহিত করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন। নিরাপদে ও সুস্বাস্থ্যে স্ব—দেশে পৌঁছান। এ সফরটি ছিলো তাঁর জীবনের একটি ঐতিহাসিক সফর। এ সফরের মাধ্যমে আধ্যাত্ম জগতের নতুন নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে তাঁর।
সেখানকার পীর-দরবেশ এবং আল্লাহর ওলীদের সোহবত ও রূহানিয়াত লাভ করেছিলেন। এক শুভক্ষণে আল্লাহর এক মজ্জুব ফকির হজরত কেবলার ঘরে মেহমান হয়ে উপস্থিত হন, যার প্রকাশ নাম— হজরত পেটু শাহ্ রহ.। হজরত কেবলা তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সাদরে গ্রহণ পূর্বক আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। হজরত কেবলার বিনয়ী আচরণ ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে, মজজুব ফকির আল্লাহর দরবারে দোয়া করে বললেন, ‘‘বাবা! থোরা রোজ কী আন্দর এক হজরত আয়েঙ্গে, উয়ে তোমকু এলমে আসরার কী তা’লীম দেয়েঙ্গে।’’ বঙ্গানুবাদ— হে স্নেহস্পদ সন্তানতুল্য! কিছু দিনের মধ্যেই একজন অলিয়ে কামেলের সাক্ষাৎ পাবেন; যিনি আপনাকে আল্লাহর রহস্যময় ধনভান্ডারের জ্ঞান লাভের কলাকৌশল শিক্ষা দিবেন। মজযূব ঐ ব্যক্তিকে বলে; যার আকল কোন অদৃশ্য হালের (অবস্থা) প্রাবল্যে দূর হয়ে যায়। কিন্তু কোন কোন হালের প্রাবল্যের কারণে দেহের মৌলিক উপাদানেও পরিবর্তন এসে যায়। এজন্য কারণ দেখে তাঁদের পরিচয় লাভ করা মুশকিল। যুগের অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা মজযূবের উপর আপত্তি করে না।
মজযূবরাও কাশফের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারেন। তথ্যসূত্র— শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা নং ৩৩৫। পেটু শাহ্ রহ.’র প্রস্থানের পর থেকেই হজরত কেবলা আরোও নিবিড়ভাবে মোরাক্বাবা ও মোশাহাদার প্র্যাকটিস শুরু করেন। কোন এক শুভক্ষণে এক জ্যোতিষ্ময় নূরানী মানুষ তাঁর ঘরকে আলোকিত করেন; যিনি কাদেরিয়া তরীক্বার পীর, হযরত কালীম শাহ্ বাগদাদী রহ. তাঁর মাজার শরীফ ইরাকের বাগদাদে অবস্থিত। তিনি হজরত আবদুল আবদুল কাদের জিলানী রহ’র রূহানি নির্দেশে হজরত ক্বেবলার কাছে এসেছিলেন। পরক্ষণেই, হজরত কেবলাকে কাদেরিয়া তরীক্বার বায়’আত পূর্বক খেলাফত বখশিশ করেন। তিনি এক বছর হজরত কেবলার দরবারে ছিলেন এবং প্রস্থানকালে তাঁকে দোয়া ও নসিহত প্রদান পূর্বক বলেছিলেন, ‘‘বাবা! আপনি চিশতিয়া তরীক্বার মুরিদ হতে পারলে বেলায়াতে কুবরার মকাম লাভ করতে পারবেন।’’ বেলায়তে কুবরার মকামটি খুবই সুউচ্চ। যারা সুভাগ্যবান তাঁরাই এ মকামে পৌঁছতে পারেন। চিশতিয়া তরীক্বার মুরিদ হওয়ার জন্য একজন কামেল পীরের সন্ধানে ছিলেন।
হাজী ফয়জুল্লাহ রহ.’র সহযোগিতায় নরসিংদীর জেলার নরসিংদী থানাধীন পাইকার চর ইউনিয়নের দড়িচর ভাসানিয়া গ্রামের চিশতিয়া তরীক্বার সু—প্রসিদ্ধ পীর হজরত খাজা লশকর মোল্লা রহ.’র সন্ধান পান। কালক্ষেপন না করে খাজা লশকর মোল্লার স্বাক্ষাতে দুর্গম পথ পাড়ি জমান। কত খাল—বিল, নদী—নালা পেরিয়ে; ক্লান্ত শ্রান্ত পথিক! পথিমধ্যে এক বটবৃক্ষের নিচে ঘুমে বিভোর হয়ে পড়েন। চোখ মেলে দেখেন এক নূরানী মানুষ! তিনি আর কেউ নয়, তিনি সেই মহাপুরুষ, খাজা লশকর মোল্লা রহ.। সাক্ষাৎ পেয়ে হজরত কেবলা তাঁকে সালাম সহকারে কদমবুসী করেন। আল্লাহর ওলি, খাজা লশকর মোল্লা রহ. তাঁকে লক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘বাবা! এই বান্দার নাম লশকর মোল্লা। আপনি আমার ওস্তাদের বংশধর। আপনাকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা এবং ইলমে আসরারের আমানত সোর্পদ করার আদেশে ১০ বছর অপক্ষেমান ছিলাম।
এসো বাবা! আপনার জিনিস আপনি বুঝে নিন। এ বলে হজরত কেবলাকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে যান এবং চিশতিয়া তরীক্বার খেলাফত বখশিশ করেন। তখনকার সময় কাল ছিলো ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ, বাংলা ১২৭৭ সন, ফাল্গুন মাসের প্রথম শুক্রবার। একদা তিনি স্বপ্নে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী রহ.’র স্বাক্ষাৎ লাভ করেন। বড়পীর বললেন, ‘আপনি কাদেরিয়া তরীক্বতে লোকজনকে মুরিদ করান।’ স্বপ্নটি খাজা লশকর মোল্লা রহ. কে জানালে আনন্দচিত্তে কাদেরিয়া ও চিশতিয়া তরীক্বায় লোকজনকে মুরিদ করতে অনুমতি প্রদান করেন।
সাধনা বা রেয়াজতঃ— আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআনুল করিমের সূরা মুমিনে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।’ অন্যত্রে আল্লাহ তা’লা সূরা আল—ইনশিকাকের ০৬ নং আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘হে মানুষ! তোমাকে তোমার রব পর্যন্ত পৌঁছতে বহু কষ্ট স্বীকার করতে হবে, অতঃপর তুমি তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করবে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ করতে চায়, আল্লাহও তাঁর সাক্ষাৎ করতে চায় (বুখারী— ৬৫০৭)।’ উপরোক্ত কুরআন ও হাদিসের তাফসিরের আলোকে ব্যাখ্যা করলে জ্ঞানী গুণী নিশ্চয়ই এ কথা স্বীকার করবে যে, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে কঠোর সাধনার প্রয়োজন। কারণ, রেয়াজত ব্যতিরেখে ক্বলবে সলীম, হুজুরি ক্বলব ও অন্তর্দৃষ্টি মূলক জ্ঞান লাভ করা যায়না। এ হিসেবে ১৮ বছর বিভিন্ন বরকতময় স্থানে সাধনাজীবন অতিবাহিত করেন। তন্মধ্যে— বিশিষ্ট ধর্মপ্রচারক হজরত মাওলানা শাহ্ আলী বাগদাদী রহ.’র মাজার শরীফে ১৪ বছর (মিরপুর—০১, ঢাকা), নারায়ণগঞ্জ শাহী কিল্লাহ সংলগ্ন পাকা কবরের পাশে^ প্রায় ৩ বছর এবং ঢাকা লালবাগ শাহী মসজিদ সংলগ্ন মসজিদ সংলগ্ন সুরঙ্গেঁ ১ বছর।
সংসার জীবনঃ—
এ মহান ওলিয়ে কামেল ষাট বছর বয়সে বেলায়াত লাভ করেন। এ সময়কালে শ্রদ্ধেয় নানার আদেশক্রমে চাচাতো বোনেকে বিবাহ করেন। আল্লাহর কি ভেদ রহস্য! বিবাহের প্রথম রাতে নব—বিবাহিত পত্নী কলোরায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিয়ুন। এ ইন্তেকালের রহস্য ভেদ আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালো জানেন। দ্বিতীয় বিবাহ সমাধা করেন মশুরীখোলার কাজী মঈনুদ্দীন মোল্লার মেয়ের সাথে। তখন হুজুর কেবলার বয়স ৭৫ বছর। এ ঘরে ৯ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তান। তৃতীয় বিবাহ সমাধা হয়, আপন পীরও মুর্শিদ হজরত খাজা শাহ্ লশকর মোল্লা রহ.’র তালাকপ্রাপ্ত মেয়ের সাথে। তখন হুজুরের বয়স ছিলো ১০১ বছর। বিবির বয়স ছিলো ৭৫ বছর।
বিশিষ্ট আউলিয়া কেরামের সান্নিধ্য লাভঃ—
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার—প্রসারে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন আওলাদে রাসূল, শহীদে বালাকোট, মুহাম্মাদীয়া তরীক্বার প্রবর্তক, সৈয়দ আহমদ শহীদ রায়বেরেলী রহ. ও তাঁর অসংখ্য অনুরাগী। তাঁরা উপমহাদেশের বিপদগামী মুসলামানদের সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে আহবানে ব্যস্ত ছিলেন। তন্মধ্যে, মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী, সূফি নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী, মাওলানা খাজা শাহ্ গোলজার ও হজরত মাওলানা ইমামুদ্দীন সন্দীপিসহ অসংখ্য দাঈয়ী। যাঁরা বালাকুটি নামে মশগুর। এ সুবাধে তিনি মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহ. ও মাওলানা কাজী ইমামুদ্দীন সন্দীপি রহ.’র সান্নিধ্যে আসেন। বেশ কিছু দিন তােঁদর সোহবতে দ্বীন প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। একদা হজরতের ঢাকার সাভার বাড়ীর কাছাকাছি কালাতিয়া বাজারের মসজিদ প্রাঙ্গনে মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী কয়েক হাজার লোকের সম্মুখে ইসলামের হুকুম—আহকামের তালীম দিচ্ছিলেন। এ সময় জৈনপুরী হজরত সবার সামনে বলেছিলেন, ‘‘অদূর ভবিষতে আহসানুল্লাহ পূর্ববঙ্গ ও আসামের একজন অতি সুপ্রসিদ্ধ কামেল ও হাদী হিসেবে প্রকাশিত হবে।” উক্ত মজলিসে জৈনপুরী হজরতের স্বরচিত একখানা ‘রাহে নাজাত’ ও ‘মিফতাহুল জান্নাত’ কিতাব তাঁকে উপহার দিয়ে তাঁকে ধন্য করেছিলেন।
হিন্দু সাধু সন্ন্যাসীদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণঃ—
বাংলা ১৩০১ সনের ভাদ্র মাসের এক গভীর রজনীর তাহাজ্জুদের নামাজের সময়ে একদল হিন্দু সাধু—সন্ন্যাসী নৌকা নিয়ে হুজুরের মশুরীখোলা বাড়ীতে এসে উপস্থিত হন। মসজিদের ইমাম সাহেব তাঁদের ধমক দিয়ে তাঁড়িয়ে দিলেন। শোরগোলের শব্দ শুনে তাহাজ্জুদের নামাজ থেকে উঠে তৎক্ষণাৎ অন্দর মহল থেকে বেরিয়ে বিস্তারিত ঘটনা জেনে মসজিদের ইমাম কে বললেন, ‘শীঘ্রই এ দল কে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।” ইমাম সাহেব সাথে আরোও দু’জনকে নিয়ে একটি নৌকা করে তাঁদেরকে বহু দূর হতে অনুনয় বিনয় করে দরবারে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। অতিযত্ন সহকারে তাঁদের আপ্যায়ন করে খাওয়ালেন। তাঁরা সংখ্যায় ছিলো আটাশজন। তাঁরা বাদ্যবাজনা ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ভাবের গান গাইতেন প্রায় সময়। মাঝেমাঝে মসজিদের পাশে এসে হুজুরের বয়ান ও নসিহত শুনতেন। এভাবে প্রায় এক মাস অতিবাহিত করেন। কোন এক রাতের দুইটা নাগাদ চামড়া পোড়ার গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে হুজুর ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলেন পুস্করিণীর উত্তর পাড়ে কিছু আগুন জ¦লছে! এমনকি অস্পষ্ট কিছু শব্দও শুনা যাচ্ছে! হুজুর কেবলা ধীরে গতিতে পুস্করিণীর পাশে গিয়ে দেখলেন, হিন্দু অতিথিগণ তাঁদের ঢোল, শহরত, সারিন্দা ও যাবতীয় বাদ্যযন্ত্রাদি একে একে পুড়িয়ে পেলে এবং বলতে লাগলেন, শাহ্ সাহেবের নিকট প্রত্যুষে তওবা করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে দীক্ষা নিলে পাপ মুক্তি ও আত্মার উন্নতি হবে।
এমন নিঃস্বার্থবান আল্লাহ প্রেমিক সাধু কোথায় আছে! প্রাতে নিজনিজ ইচ্ছামতে নখ, গোঁফ ও বগলের চুল কেটে স্নান করে মসজিদে এসে মুসলমান হওয়ার ও তওবা করার জন্য হুজুরকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানান। হুজুর মসজিদের সিন্দুক হতে প্রত্যেককে আড়াই গজ করে মার্কিন কাপড় পরিধান করতে দিলেন। তাঁদেরকে ওজু করে তওবা ও বায়’আত করে নামাজে দাঁড় করালেন। হুজুর নিজেই তাঁদের কে কুরআন তেলাওয়াত ও কতিপয় সুরা মুখস্ত করাতেন এবং হালাল—হারামের ও পাক—নাপাকের মাস’আলা—মাসায়েল শেখাতেন। তাঁরা ফরজ, সুন্নাত, নফল ও ওয়াজিবসহ অন্যান্য নামাজাদি এবং জিকির—আজকার শিখতে আরোও একমাস দরবারে অবস্থান করেন। সময়মত প্রত্যেকে নিজনিজ দেশে চলে যান। পরবতীর্তে সাধুগণ আল্লাহর ওলিতে পরিণত হয়েছিলেন। আলহামদুল্লিাহ! তাঁদের প্রস্থানের পর হুজুর ইমাম সাহেবকে একটি কুরানের আয়াত পড়ে বললেন, কারো প্রতি রাগ করতে নেই, আল্লাহ তা’লা বিনয়ীকে পছন্দ করেন। আর আয়াতটুকু হলো, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় (ইসলাম ধর্মে) লোকজনকে আহবান করো, হেকমত (আভিধানিক অর্থ— বিশেষ জ্ঞান, ব্যবহারিক অর্থ— যাবতীয় বিষয় বস্তুকে সঠিক জ্ঞান দ্বারা জানা, বুঝা ও অনুধাবন করা ) ও সদুপদেশের দ্বারা। (সুরা আন—নাহাল— ১২৫)
স্বভাব চরিত্রঃ—
কুরআনকে যদি প্রশ্ন করা হয়, নবীজির চরিত্র কেমন ছিলো? কুরআন উত্তর দিবে, “উসওয়াতুল হাসনাহ” তথা— রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামগ্রিক চরিত্রই ছিলো উত্তম চরিত্রে পরিপূর্ণ। আর প্রকৃত ওলামায়ে কেরাম ও পীর—আউলিয়াগণ হলেন নবী মুহাম্মাদুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তরসূরি। পুরা হায়াতি জিন্দেগী কুরআনও হাদিসের অনুসৃত পথ ও মতের উপর অতিবাহিত করেন তিনি। এক কথায় তিনি ছিলেন, নায়েবে রাসূল ও মুহিউস সুন্নাহ। জীবনের শেষাবস্থায়ও ইসলামের পথ থেকে এক সূতা পরিমাণ ও বিচ্যুতি হননি।
হাজী শরীয়তুল্লাহ’র ভ্রান্ত ফতোয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নির্যাতনের স্বীকার—
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্ষমতা দখলের ফলে বাংলার মুসলমান সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসে। হাজী শরীয়তুল্লাহ (১৭৮১—১৮৪০) ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের শাসন মেনে নিতে পারেননি। শরীয়তুল্লাহ ভারতবর্ষকে ‘দারুল হারব’ বলে ঘোষণা করেন। ‘দারুল হারব’ অর্থ হলো বিধর্মীর দেশ বা যুদ্ধের ঘর। হাজী শরীয়তুল্লাহ বিধর্মী বিজাতীয় শাসিত দেশে জুমার নামাজ এবং দুই ঈদের নামাজ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) বর্জনের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা দেশের পূববঙ্গের ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ভারতের ত্রিপুরীদের প্রভাবিত করেছিলো। হাজী শরীয়তুল্লাহ’র সন্তান মুহসিন উদ্দীন দুদুমিয়া (১৮১৯—১৮৬২) এ ঘোষণা বা ফতোয়াকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে ঢালাওভাবে প্রচারণা শুরু করেন। যাদের কে দুধিয়াল নামে অভিহিত করা করা হত। এরা জুমার নামাজ পড়তেন না। তাদের ফতোয়া ছিলো, যেসমস্ত মুসলমান জুমার নামাজ পড়েন তাঁরা পথভ্রষ্ট ও কাফের। জুমার নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির উপর জুলুম ও অত্যাচার করা তাদের মতে সাওয়াবের কাজ ছিলো। এমন গর্হিত কাজের কারণে কত জুমা মসজিদ ধুলিসাৎ হয়েছে তাঁর কোন ইয়াত্তা নেই। এমনকি তারা হুজুর কেবলার ওস্তাদ মাওলানা নেজামুদ্দীন সুজাতপুরীর ঘর জালিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলা ১২৯৭ সনে হুজুরের মশুরীখোলা বাড়ীর উপরও ন্যাক্কারজনক হামলা করার প্রচেষ্টা চালায়।
এ কুচক্রীমহলের আগমন দেখে তিনি হুজরা থেকে বের হয়ে দেখলেন মুষ্টিমেয় মুরিদান ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কাঁন্না করতে লাগলের! হুজুর বললেন, “বাবা! আপনারা বিচলিত হবেন না, আল্লাহর ধ্যানে ও জিকিরে মগ্ন থাকুন। আল্লাহ তা’লার রহমত আসতেছে।” দুধুমিয়ার খলিফারা তাদের দলবল নিয়ে হজরতের বাড়ীর সীমানায় প্রবেশ করতেই তাদের চোখের জ্যোতি চলে যায়। পরক্ষণেই— তাদের কাঁন্নাকাটি ও ক্ষমাপ্রার্থনার কারণে আল্লাহর ওলি তাদের ক্ষমা করে দেন এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে পুনরায় তারা চোখের জ্যোতি ফিরে পান। বাংলা ১২৯৮ সনে প্রায় তিন হাজার দুধিয়াল হজরতের প্রাণনাশ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। কতিপয় মুরিদ এ সংবাদ শুনে বিচলিতচিত্তে হুজুরকে বিষয়টি অবহিত করেন। হুজুর বললেন, “বাবা! আমার একটি মাত্র লাঠি আছে, সেই জন্য আমি শত সহস্র লাঠির ভয় করি না। হজরত ইব্রাহীম (আ.) কে অগ্নিকুন্ড হতে, হজরত মুসা (আ.) কে ফেরাউনের ফেরাউনীয়ত ও ক্রোধ হতে, হজরত ঈসা (আ.) এবং আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে শত সহস্র শত্রুর কবল থেকে আল্লাহ তা’লা বাঁচিয়ে রেখে সত্যের জয় ও অসত্যের পরাজয় দেখিয়েছেন। আল্লাহ তা’লা এখনও হাইয়ুন ও কাইয়ুম।
তিনি আমার সাথী, কোন কিছুরই ভয় নেই। বাবা! আপনারা আমার সেই মাবুদ ও রক্ষাকতার্কে স্মরণ করুন। কারণ— অস্মরণে মরণ।” নসিহত শেষ হওয়ার সাথে সাথেই দুধিয়ালরা হজরতের বাড়ীর কাছাকাছি চলে আসে। এমনতাবস্থায় শুভ্র দাঁড়ি বিশিষ্ট একজন প্রাচীন মানুষ তাদের মধ্যে এসে বলতে লাগলেন, “বাবা! কেন তোমরা একজন বুজুর্গ ব্যক্তিকে উৎপীড়ন করতে যাচ্ছ?” এটা বলতে না বলতে উক্ত ব্যক্তিকে দুধিয়াল বাহিনীর একজন লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দিলো! দরদর ধরায় রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল! এ দৃশ্য দেখে দুধিয়াল বাহিনীর পরস্পরের মাঝে তুমুল মারামারি লেগে শতশত লোক জখম হয়ে নিজবাড়ী চলে যায়। যারা জ্ঞানী তারা হুজুরের কাছে এসে ক্ষমাপ্রার্থনা করে হুজুরের হাতে বায়’আত নিলেন। তারা দুটি ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হওয়ায় হুজুরকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করেন এবং কতিপয় দুবৃর্ত্ত কে এ কাজে নিয়োগ দেন। কোন এক শুক্রবারে রাস্তা দিয়ে জুমার নামাজে মসজিদে যাওয়ার পথে এক দুবৃর্ত্ত একটি রামদা নিয়ে হজরতকে হত্যার জন্য উদ্যত হন।
আল্লাহর কি কুদরত! ঐ রামদাটি দুবৃর্ত্তের পায়ের উপর পড়ে পা কেটে পেলল! আর্তনাতের আওয়াজ শুনা মাত্রই তিনি এ ব্যক্তির নিকটে এসে দেখলেন, লোকটি রামদা দিয়ে নিজের পা কর্তন করেছে। এ দৃশ্য দেখে হজরত কেবলা নিজ চাদর ছিঁড়ে আহত ব্যক্তির পায়ে পট্টি বেঁধে কোলে করে লোকালয়ের দিকে রওনা করেন এবং ঔষধাদি ব্যবস্থা করে কলাতিয়ার মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষ করে আহত ব্যক্তিকে মশুরীখোলা বাড়ীতে নিয়ে আসেন। আহত ব্যক্তির ‘মা’ সংবাদ শুনে হুজুরের দরবারে চলে আসেন। তাঁর মা ছিলো হুজুরের মুরিদীন। পরে পুত্রের কু উদ্দেশ্য শুনে তিরস্কার ও প্রহার করতে উদ্যত হন। হজরত কেবলা বৃদ্ধার অবস্থা দেখে প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলেন। বৃদ্ধা সম্পূর্ণ ঘটনাটি খুলে বলে হুজুর কে বললেন, বাবা! সে দুধিয়াল থেকে পুরষ্কার লাভের আশায় আপনাকে হত্যার জন্য রামদা চালাতে চেয়েছিলো। আল্লাহ তা’লা আপনাকে হেফাজত করেছেন। হুজর কেবলার বিশিষ্ট মুরিদ ফরিদপুর জেলার মাদারীপুরের অন্তর্গত চৌদ্দরশী গ্রামের মৌলভী ইব্রাহীম নিজগ্রামে ওয়াজ—নসিহত মূলক বয়ান করতেন এমনকি জুমার নামাজের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও।
এ বয়ানের ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা স্বতঃস্ফূতভাবে জুমার নামাজে অংশগ্রহণ শুরু করলে দুধিয়াল বাহিনী তাঁকে আটক পূর্বক তিনশত টাকা কর্জ করার কারণ দেখিয়ে কোর্টে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান। পরে দুধুমিয়ার ছেলে কলকাতা গিয়ে মৌলভী ইব্রাহীম সম্পর্কে আরোও একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। কুচক্রীমহল ঘুষ দিয়ে মামলাটির সমর জারি করেন। পরবতীর্তে মৌলভীর এক বন্ধু বিষয়টি জানালে হুজুর কেবলাকে মামলা সম্পর্কে জানান। হুজুর কেবলা বলেন “বাবা! আপনি কলকাতা কোর্টে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন। আপনাকে দেখলে বাদী মামলা তুলে নিবেন! অনুরূপে মৌলভী সাহেব কোর্টে উপস্থিত হয়ে হাজিরা দেওয়া মাত্রই বাদী মামলা তুলে নেন এবং মৌলভী সাহেব বেকসুর খালাস পান। আল্লাহ তা’লা হাদীসে কুদসীতে বলেছেন, ‘আমার ওলির জবান আমি আল্লাহর জবান’। এ রায় শুনে কতিপয় দুধুমিয়া দলের কতিপয় লোক হুজুরের কাছে তাওবা গ্রহণ পূর্বক জুমার নামাজ পড়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।
সংবাদটি দুধুমিয়ার ছেলে শুনলে হুজুরের উপর আরোও তেলে বেগুনে জ¦লে উঠে বাহাসের প্রস্তাব দেন। হুজুর কেবলা বাহাসের প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে দু’পক্ষের মতামত অনুসারে কলাতিয়া বাজারে জয়দেবপুরের রাজার কাচারীতে বাহাসের স্থান ও দিনক্ষণ নিধার্রণ করেন (১২৯৮ বাংলা)। জুমার নামাজের পক্ষের আলেমগণ হলেন— মাওলানা সূফি আহসানুল্লাহ রহ., ঢাকা মোহসেনিয়ার মাদ্রাসার হেড মাওলানা আবদুস সালাম রহ. ও তাঁর ৬/৭ জন বন্ধু ওলামা। দুধুমিয়ার ছেলের পক্ষে— দুধুমিয়ার ছেলে, মৌলানা আইনুদ্দীন, মৌলানা আবদুল জাব্বার ও মৌলানা সমীরুদ্দীন। যথাসময়ে— উভয়পক্ষ বাহাসের স্থানে উপস্থিত হন। উপরোক্ত তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন এমনকি মাওলানা আবদুস সালাম রহ.’র সরাসরি ছাত্র ছিলেন তথা জামাতে চাহারাম, জামাতে পানজাম ও জামাতে শশম। মাওলানা আবদুস সালাম রহ. কে দেখে তারা নিজকে লুকাতে চেষ্টা করে। পরে জুমার নামেজর বিপক্ষীয় আলেমদের উদ্দেশে মাওলানা আবদুস সালাম রহ. বললেন, এ দেশে জুমার নামাজ নাজায়েজ এ বিষয়টি কুরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করুন। এ প্রশ্ন শুনে মৌলানা আইনুদ্দীন সাহেব থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে মাঠিতে লুটে পড়েন। বাকী দু’জন অবস্থা বেগতিক দেখে বাহানা করে সভাস্থল হতে সরে যান।
অল্প কিছুক্ষণ পরে দুধুমিয়ার ছেলের শারীরিক অবস্থা ভাল না বলে চলে যেতে দেখে দুধুমিয়ার ছেলের খলিফাগণ তাকে বললেন, হজরত শাহ্ কেবলার পক্ষে মাওলানা আবদুস সালাম রহ. যে বক্তব্য রেখেছেন তা সত্য কিনা? সঠিক উত্তর দিতে না পারলে কুরআন—হাদিসের বিপরীত কাজে এ দেশের মানুষকে ক্ষেপিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টি করবেননা। পেটের ভীষণ ব্যথা বেদনার কথা বলে কোন উত্তর না দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। পরে, সকলে হুজুরে নিকট দুধুমিয়ার দলের অত্যাচার ও অন্যায় আচরণের কথা গুলো তুলে ধরেন। এ বাহাসের পরে কলাতিয়া ও মশুরীখোলার আশে—পাশের বহুগ্রামে জুমার নামাজের ঘর নিমার্ণ কাজ গুরু করেন। শয়তানের দল পুনরায় আঁটি, পাঁচদানা ও ভাওয়ালকান্দি গ্রামের দুধিয়ালগণ দুধুমিয়ার ছেলের সাথে যোগাযোগ করে পাঁচদানার ঈদের ময়দানে এসে পুনরায় বাহাসের প্রস্তাব দেন এবং হুজুর প্রস্তাবে সম্মতি জানান।
আসরের নামাজের শেষেও দুধুমিয়ার ছেলে উপস্থিত না হলে তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে জুমার নামাজের আবশ্যকীয়তা সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন এবং উপস্থিত জনগণ জুমার নামাজ আদায়ের জন্য তাঁর হাতে বায়’আন নিলেন। বাংলা ১৩০১ সনে হুজুর কেবলা কে দোষী সাব্যস্ত এক বৃদ্ধাকে দিয়ে আরোও একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা সাজান। আল্লাহর রহমতে হুজর কেবলা সব ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পেয়ে তাদের ঈমান বিধ্বংসী ফতোয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জুমার নামাজ ও দুই ঈদের নামাজ কে বঙ্গদেশে কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যবসা—বাণিজ্য ও ক্রয় বিক্রয়—
আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআনুল করিমে এরশাদ করেন, “আমি ব্যবসাকে হালাল করেছি এবং রিবা (সুদ) কে হারাম করেছি।” হুজুর কেবলা ব্যক্তিগত জীবনে হালালভাবে ব্যবসা—বাণিজ্য করেছেন।
ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা—
হুজুর কেবলার খরিদ করা জমির ফসলাদি চোর—ডাকাত ও দুবৃর্ত্তরা লুটতরাজ করত। কিন্তু কখনোও তিনি তাদের শাস্তি বা জরিমানা করেননি। কখনোও অধৈর্যও হতাশ হননি। বরং তাদের ক্ষমা করে সৎভাবে জীবনযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন।
কাশফ—
দ্বীনের এ অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন উঁচু মানের কাশফদারী আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। কাশফের মাধ্যমে যা জানা যায় তা কুরআন ও হাদিস সম্মত হলে গ্রহণীয় অন্যথায় পরিতাজ্য। কাশফ কোন বান্দার আয়ত্বাধীন বিষয় না বরং আল্লাহ তা’লা যাকে যা কিছু ইলহামে বা কাশফের মাধ্যমে যতটুকু জানান তারা ততটুকু জানেন। বাংলা ১৩১৩ সন। আষাঢ় মাস। কুমিল্লার জনাব সৈয়দ আবদুল জাব্বার সাহেব নিজ বাড়ী কান্দিকাচারী, কুমিল্লা হতে হযরত কেবলার সাক্ষাতের জন্য ঢাকা চরভাসানিয়া অভিমুখে রওনা হন। স্টিমার তখনও বিষ্ণুদী স্টেশনে পৌঁছার প্রায় এক ঘন্টা বাকী। ভাবতে ছিলেন মশুরীখোলার বাড়ী শাহী মাকান বা শাহী কারখানায় নানা জাতীয় ফলমূলের খেলামেলা। বিশেষত এই আষাঢ় মাসে বিন্নি ধানের খৈ ও বড় বড় ফজলী আম ও নানা জাতীয় মেওয়া এবং পর্যাপ্ত দুগ্ধে ঐ বাড়ী পরিপূর্ণ থাকে; আর চরভাসানিয়া দাদা পীর সাহেবের বাড়ী হল— “ফকীর বাড়ী” এই প্রকার বিন্নি ধানের খৈ ও ফজলী আম কি ঐ বাড়ীতে পাওয়া যাবে। যাক, যথাসময়ে তিনি চরভাসানিয়া গিয়ে পৌঁছান। পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই হযরত ক্বেবলা অন্দর বাড়ী হতে এক হাতের তালুর উপর এক টুকরী বিন্নি ধানের খৈ ও উহার উপর এক বাটি গরম দুধ ও অন্য হাতে দুইটি বড় বড় ফজলী আম নিয়ে বৈঠকখানায় প্রবেশ করলেন। সৈয়দ সাহেব হযরত কেবলাকে সালাম ও কদমবুচি করতেই হযরত কেবলা প্রথমেই বললেন, “বাবা! নাস্তা কর।” তখন সৈয়দ সাহেবের পুনঃপুন মনে হল—“ এটাকেই বলে, আওলিয়াগণের কাশফ ও বেলায়েত।” তখন তিনি নিজ নাফস (জীবাত্মা) কে ধিক্কার ও তিরস্কার করে বললেন— হে দুর্বৃত্ত! যা খেতে চেয়েছ ভাল করে খাও।
কারামাত—
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশুদ্ধ আক্বিদা হচ্ছে, কারামাতুল আউলিয়া হাক্কুন। অথার্ৎ— আল্লাহর আউলিয়াদের কারামত সত্য। এ হিসেবে হুজুরের অসংখ্য অগণিত কারামত রয়েছে। সব লিপিবদ্ধ করা অসম্ভব। হযরত কেবলা ছিলেন শরীয়ত ও তরীক্বতের সুদক্ষ আলেম। আলেম বহু প্রকার আছে তন্মধ্যে তিনি ছিলেন আলেমে রাব্বানি ও হক্কানী। জীবনে কখনও সুন্নতের পরিপন্থী কাজ সমাধা করেননি। নানান ঘটনা প্রবাহের কারণে প্রতিদিন এ মহান আল্লাহর অলি হতে কারামত প্রকাশিত হত! কারামতের দ্বারা হযরত কেবলার কে মূল্যায়ন করা যাবেনা। তারপরও একটি কারামত না বললে নয়। বাংলা ১৩২০ সনের জ্যৈষ্ঠ মাস। জনাব সৈয়দ আবদুল জাব্বার সাহেব আশুগঞ্জ হতে ভৈরব বাজার যাওয়ার সময় মেঘনা নদীতে রাত্র ৯টার সময় তাঁর নৌকা ভীষণ তুফানে ডুবে যায়। নৌকার মাঝি মাল্লা স্রোতে কে কোথায় চলে গেল তার খবর নাই। সৈয়দ সাহেব তাঁর এক বিশ্বস্ত চাকর আয়াজসহ নৌকার ছৈ ভাল করে আকড়ে ধরেন। পরে বেগতিক মনে করে নিজকে এটার সাথে বেঁধে নিলেন তরঙ্গের সাথে কোন অজানা স্থানে চলতে লাগলেন। কত কুরআন শরীফের আয়াত, দোয়া-ই- ইউনুস, কত দুরূদ ইত্যাদি পড়তে লাগলেন। কয়েকঘন্টা পরে তিনি মৃত্যু অনিবার্য মনে করে ‘‘লা—ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’’ পড়লেন।
এই কালেমা পড়ার সময় দেখলেন যে, শয়তান তাকে প্রশ্ন করছে ‘মুহাম্মাদ’ যে, তোমার রাসূল, তার প্রমাণ কি? শয়তানের এই উক্তি শুনে সৈয়দ সাহেব ভাবলেন যে মৃত্যুর সময় শয়তান আমার ঈমান বরবাদ করার জন্য হাজির হয়েছে। তাই তিনি হযরত ক্বেবলার কথা স্মরণ করে কেঁদে বললেন, ‘আগেসনী ইয়া হযরত কেবলা (হে হযরত ক্বেবলা! আমাকে সাহায্য করুন!) ইহা বলার সঙ্গে সঙ্গে সৈয়দ সাহেব হযরত ক্বেবলার ডান হাত মোবারক প্রসারিত দেখলেন। হযরত কেবলা বললেন, “বাবা আবদুল জাব্বার! পাকড়ো মেরে হাত কো।” হাত ধরার সঙ্গে সঙ্গেই এক ঝটকাতে নৌকার ছাপ্পরটি চরের উপর গিয়ে উঠল। আয়াজ ফজরের নামাজ পড়ার তালাশ করতে করতে এসে দেখলেন, সৈয়দ সাহেব চৈ—এর উপর বেহুশ হয়ে চরের মধ্যে পড়ে আছেন।
সে দৌঁড়ে এসে সৈয়দ সাহেবের কানে জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘‘সাব গো, চৈয়া ডেঙ্গায় লেগেছে, চক্ষু মেলে দেখ ও উঠ।” নোয়াখালী ফেনী মহকুমার অন্তর্গত ছাগলনাইয়া থানার অধীন বসন্তপুর গ্রামের মাস্টার শাহ্ আবদুর রহমান সাহেব, মরহুম শাহ্ আবদুল গফুর সাহেব, গুণবতীর মরহুম হাফেজ আবদুল মজীদ সাহেব ও জিঞ্জিরার হাফেজ এসমাতউল্লাহ সাহেব বলেন, তারা সেই রাত্রে এশার নামাজের পর হযরত কেবলাকে অত্যন্ত পেরেশান দেখলেন। তিনি তখন মসজিদের আঙ্গিনাতে অন্দর ও বাহির বাড়ীতে আনাগোনা ও পায়চারি করতেছিলেন। রাত্রি প্রায় ১টার সময় হযরত ক্বেবলা অতি উচ্চঃস্বরে “ইল্লাল্লাহু” বলে উঠলেন ও বললেন, “বাবা আবদুল জাব্বার, পাকড়ো মেরে হাতকো। ইহা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি অন্দর বাড়ীর হুজরাতে প্রবেশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! এতে বুঝা যায় হযরত কেবলা আল্লাহর কত বড় ওলী ছিলেন।
চিকিৎসাবিদ—
হজরত কেবলা হেকিমী ও কবিরাজী ঔষধে বিশেষ পারদশীর্ ছিলেন। ঔষধ ও রোগের নাম সমূহ।
- ১. লাল বড়ী—ইহা সর্বরোগে অনুপান ভেদে ব্যবহার্য।
- ২. দাক্ষে সুজাক ও তেলায়ে একসীর—ইহা যাবতীয় মেহ ও প্রমেহ রোগের এবং ধ্বজভঙ্গের ঔষধ।
- ৩. পাগলের মহৌষধ—লাল নস্য ইহা উন্মাদ ও সর্বপ্রকার মস্তিষ্ক বিকৃতির ঔষধ ।
- ৪. বাতের তৈল—ইহা যাবতীয় বাত রোগে দেওয়া হয়।
- ৫. বায়ুর তৈল অনিদ্রা ও যাবতীয় মাথা ঘুরানীর আরোগ্যের ঔষধ।
- ৬. ধনুস্টঙ্কারের ঔষধ ও হাঁপানীর ঔষধ।
- ৭. নাকসী—সর্বপ্রকার কাটা ঘায়ে ও নাকের অসুখে ইহা প্রযোজ্য ।
- ৮. গরমী—শান্তি —ইহা ব্যবহারে যাবতীয় গরমীর অসুস্থ আরাম হয় ।
- ৯. প্লীহার ঔষধ।
- ১০. দত্ত—মাজন ।
- ১১. কুওতে—বাহ ও পোষ্টাই হালুয়া ইহা সেবনে শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ—প্রতঙ্গে শক্তি সঞ্চার হয় ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক—
সূফি আহসান উল্লাহ ছিলেন একাধারে আত্মিক শুদ্ধ পুরুষ ও প্রতিবাদী রাজনীতিক। সমসাময়িক রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে সম্পৃত্ত ছিলেন; এজন্য তাঁকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকও বলা যায়। বিধর্মীদের সাথে মিলনধমীর্ আন্দোলনের ঘোর বিরোধী ছিলেন এমনকি গান্ধীর লিডারশীকেও। তৎকালীন সময়ের খিলাফত আন্দোলন ও মুসলিম জাতীয়তাবাদী নেতা মাওলানা শওকত আলী (১৮৭৩—১৯৩৯) ও মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর (১৮৭৮—১৯৩১) হজরত কেবলার সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তাঁদের কে উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, বাবা! আপনারা গান্ধীর মিলনধমীর্ যুগপৎ আন্দোলন কেন করছেন? এরা পূর্ববর্তী সময়ে মুসলমানদের সাথে ওয়াদা খেলাপ করেছে এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে বিধমীর্র নেতৃত্ব মেনে নেওয়া নাজায়েজ। হজরত কেবলা মুসলিম লীগের হাত কে শক্তিশালী করতে সকলকে নির্দেশ দিতেন।
কারণ গান্ধীর নেতৃত্ব মেনে নিলে মুসলিম লীগ স্তিমিত হয়ে পড়বে এবং এ পূর্ববঙ্গ পরাধীন থাকবে কখনোও স্বাধীনতার মুখ দেখতে পাবেনা। এজন্য তিনি স্বাতন্ত্র্যনীতি এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদী নীতিতে আস্থা রাখতেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, মুসলিম লীগের হাতধরেই এ বাংলা একদিন স্বাধীন হবে। এ দেশকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে প্রায় সময় ফরিয়াদ জানাতেন। তাঁর মৃত্যুর ৪৫ বছর পর আল্লাহ পাক বাংলাদেশ কে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা দান করেছেন। আলহামদুল্লিাহ! হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘‘তোমরা মু’মিনের দূরদৃষ্টি সম্পর্কে সজাগ থাক। কারণ তাঁরা আল্লাহ্ তা’আলার নূরের সাহায্যে দেখে’’। জামে’আত—তিরমিজি— ৩১২৭।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে আর্থিক অনুদান প্রদান—
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত ‘নাথান কমিশন’র সদস্য শিক্ষাবিদ শামসূল ওলামা আবু নসর মুহাম্মদ ওয়াহিদের হাতে ঢাকা বিশ্বববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে হজরত কেবলা তিন হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। তথ্যসূত্র— বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘জালালাবাদের কথা’ লেখক দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর বইয়ের ৩৯৭ নং পৃষ্ঠায় এ তথ্যটি সংযুক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সুপ্রসিদ্ধ আউলিয়াদের নির্দেশনা—
যুগশ্রেষ্ঠ আউলিয়া ও হক্কানী আলেমগণ তাঁকে খুবই সম্মান করতেন। চট্টগ্রামের সুপ্রসিদ্ধ সিলসিলা বারীয়া—হামেদীয়ার পীর—আউলিয়াগণ তাঁদের অনুসারীদের বলতেন, বাবা! আপনারা ঢাকা শহরে আসলে মশুরীখোলা দরবার শরীফের পীর হজরত কেবলার মাজার জিয়ারত করবেন। সময় পেলে জুমার নামাজও আদায় করবেন।
সুন্নীয়তের বাতিঘর—
আমিরুল মুমিনিন হজরত সৈয়দ শহীদ আহমদ বেরলভী রা.’র বাগানের সুভাষিত ফুল হজরত কেবলা রহ. ছিলেন সুন্নীয়তের বাতিঘরতূল্য এক আলোকিত মহান মনীষী। তিনি সবসময় সুন্নী আলেম—ওলামাদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। সুন্নীয়তের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সমর্থিত সভা— সমাবেশ ও মিটিং—মিছিল করার জন্য গদ্দিনেসীন পীর সাহেব আলহাজ্ব মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ আহ্ছানুজ্জামান মা.জি.আ. ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে এমন নিঃস্বার্থবান ব্যক্তি পৃধিবীতে অপ্রতুল। ঢাকা কেন্দ্রীক প্রোগাম সমূহকে সফল ও বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা গাড়ীবহরে অসংখ্য নেতা—কর্মী ঢাকায় আসেন। তাঁরা গাড়ীবহর নিয়ে প্রথমেই মশুরীখোলা দরবারে আসেন এবং আতিথেয়তা ও বিশ্রাম গ্রহণ করে কর্মসূচিতে যোগদান করেন। অতঃপর ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সময়ও সকল নেতা—কর্মীরা এ দরবারের মেহমানদারি গ্রহণ পূর্বক গাড়ীবহরে নিজনিজ গন্তব্যে চলে যান।
প্রত্যেক হক্কানী পীর—আউলিয়াদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন—
হজরত কেবলা দুনিয়া ও আখেরাতের বিষয়ে কোন দিন উদাসীন ছিলেন না। সকল হক্কানী পীর—আউলিয়াদের সম্মান জানাতেন এবং তাঁদের অনুসারীদের মেহমানদারি ও সমাদর করতেন। সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য—সহযোগিতাও করতেন। এজন্য তাঁকে আধ্যাত্মিক মানবাতাবাদী নেতাও বলা যায়। একদা উত্তরবঙ্গ হতে কিছু লোক নদী পেরিয়ে বহু কষ্ট করে হজরত কেবলার কাছে মুরিদ হওয়ার আশায় মশুরীখোলা দরবারে আসেন। তাঁদের মেহমানদারি পূর্বক বলেছিলেন, বাবা! এত কষ্ট করে এতদূরে কেন আসলেন ? এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী সাহেব আছেন। তাঁর কাছ থেকে তরীক্বতের কাজ নিতে পারেন। তিনি যথেষ্ট কামেল ও তাকওয়াবান আল্লাহ ওয়ালা মানুষ।
নসিহত সমূহ—
১. সদা সর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করিবেন, স্মরণই তরণ, ২. পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ আউয়্যাল ওয়াকতে পড়িবেন ও পাক পাকিজা থাকিবেন, ৩. মা—বাবার ও পীর—ওস্তাদের খেদমত জান ও মাল দ্বারা করিবেন, ৪. হালাল রুজী রোজগার করিবেন ও হালাল খাইবেন, ৫. ব্যবসা—বাণিজ্য করিবেন, ব্যবসা দ্বারাই লোক উন্নত হয়, ৬. কখনও আলস্য করিবেন না, আলস্যতাই হইল দুঃখের আকর, ৭. সদা সর্বদা ওজুর সহিত থাকিবেন, সত্য কথা বলিবেন ও সৎ সঙ্গে থাকিবেন, কাহাকে কটু কথা ও গালিগালাজ করিবেন না, ৮. কখনও ঋণ করিবেন না। এতে বরকত হয় না। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা আমার বাবাগণের ঋণ মুক্ত করেন, ৯. কাহারও মনে দুঃখ দিবেন না, ১০. মানব মাত্রকেই সাহায্য করিবেন, ১১. দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথা ঘনিয়ে বসে কাছে, কথা দিয়া কথা নেয়, প্রাণে মারে শেষে।” (দুষ্ট লোকের মিষ্ট কথা ঘনিয়ে কয় কাছে, কথা দিয়া কথা নিয়া পরাণে মারে পাছে), ১২. তাওবা কবুল—ফজরের নামাজ দ্বারা, ১৩. জাহান্নামের আগুন হইতে মুক্তি—জোহরের নামাজ, ১৩. আজাদী লাভ—আসরের নামাজ দ্বারা, ১৪. শত্রুর জুলুম হইতে রক্ষা—মাগরীবের নামাজ দ্বারা, ১৫. কেয়ামতের বিচারের দিন, সকল উম্মতগণের আগে, এই উম্মাতে মুহাম্মাদীর বিচার—এশার নামাজ দ্বারা, ১৬. তাওয়াঙ্গীরী তেজারত দ্বারা, ১৭. ইত্তেহাদ দান দক্ষিণার দ্বারা. ১৮. রোগ মুক্তি তাহারাতের দ্বারা. ১৯. সরদারী ‘এবাদত, বিনয় ও নম্রতা দ্বারা, ২০. বে—আদাব বেনসীব ও বা—আদাব বা—নাসীব, ২১. বে—আদব মাহরুমে গাশ্ত আজ ফাদলে রাব্ব, ২২. পীরে কামেলের হুকুম, আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম বলিয়া মান্য করিবে, ২৩. কাহারও সঙ্গে আলাপ করিবার সময় আস্তে আস্তে করিবে, ২৪. পীরে কামেলের সামনে দুজানু হইয়া নিস্পন্দভাবে বসিবে, ২৫. আল্লাহর হইও, তাহা হইলে সারা জগতই তোমার হইবে, ২৬. মোমেনগণের সঙ্গে ভদ্র ও নরম ব্যবহার করিও, ২৭. রোজা রাখা, ২৮. যৌন বিষয় কিংবা কু—ভাবনা অন্তরে আসিলে তৎক্ষণাৎ ওজু করুন ও মেসওয়াক করুন, ২৯. তিক্ত দ্রব্য বেশী খাওয়া ও অম্বল না খাওয়া, ৩০. মধুর শরবৎ—এক ভাগ মধু ও ৯ ভাগ পানি (মেঘের পানি হইলে অতিউত্তম) পান করা, ৩১. প্রাতে ফজরের নামাজ পড়িয়া সুর্যোদয়ের পূর্বে খোলা জায়গায়, ময়দানে, মাটে বা ফুলের বাগানে যাইয়া দৌড়, ডন, বটকী ও বুক ডন ইত্যাদি ক্রীড়া করা এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে গোসল করা। তারপর কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা (ইহা শুধু মোসলমান ছাত্র— ছাত্রীগণের জন্য), ৩২. প্রাতে কিছু নাস্তা করা। ভাগ্যে না জুটিলে একমুষ্ঠি সিদ্ধ চাউল মুখে দিয়া না চিবাইয়া এক গ্লাস পানি পান করা। ইহা নেহায়েতই জরুরী, নতুবা স্বাস্থ্য ভাল থাকিবে না, ৩৩. পড়ার সময়, ‘রাব্বি জিদনী ইলমান ওয়ালহিকনী বিস সালিহীন বেজোড় পড়িয়া দৈনন্দিন পড়া শুরু করিবে। মনোযোগ দিয়া পড়িবে। কখনও আলস্য করিবে না। আলসা লাগিলে তৎক্ষণাৎ ওজু করিবে, ৩৪. বৈকালে আসরের নামাজ পড়িয়া কিছু হালকা আহার করিয়া খেলাধূলায় লিপ্ত থাকিবে। আর যদি খেলায় মন না লাগে, তবে বৈকালে মাঠে হাঁটিবে ও পরে মাগরিবের নামাজ মসজিদে আসিয়া পড়িবে। নামাজ পড়িয়া পড়িতে বসিবে। সাবধান! কেহ যেন সূর্যাস্তের সময় হাঁটাহাঁটি না করে। শুধু নামাজের জন্য মসজিদে যাইতে পারিবে, ৩৫. পাঠ্যাবস্থায় কোন ছাত্র যেন বিবাহ না করে। ভাবী ও শ্বশুরের টাকা পয়সা লইয়া কেহ যেন না পড়ে। ইহার পরিণাম প্রায়ই ভয়াবহ হইয়া থাকে, ৩৬. পাঠ্যাবস্থায় পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য কোনও নফল নামাজ বা এবাদত করা নিষেধ। ইহাতে ছাত্র—ছাত্রীগণের পড়ার ক্ষতি হয় এবং তাহাতে শয়তান হাসে, ৩৭. খাওয়া দাওয়ার লোভ লালসা করিতে নাই। যাহাই সামনে খাওয়ার হালাল বস্তু আছে তাহাই খাইয়া শোকর গুজারী করিবে, ৩৮. ছাত্রগণকে কবরস্থানে অত্যাধিক যাইতে নিষেধ করিতেন। কেননা উহাতে তাহাদের কোমল হৃদয়ে সন্ন্যাস ভাব আসিতে পারে ও পড়াশুনায় মন না ও বসিতে পারে। হাঁ, যাহারা কু—ভাবনায় ও কু—চিন্তায় কিংবা যৌন চিন্তায় কাতর হইয়া পড়ে তাহাদিগকে প্রত্যেক জুমআর রাত্রিতে কবরস্থানে জেয়ারত করিতে উপদেশ দিতেন, ৩৯. যাহারা কু—ভাবনা মন হইতে দূর করিতে অক্ষম হইত, তাহাদিগকে ফজরের নামাজের পর প্রত্যহ সূরায়ে দাহর (২৯ পারায়) একবার পড়িতে আদেশ দিতেন, ৪০. ছাত্র—ছাত্রীগণকে মা বাপের কিংবা নিজ নিজ অভিভাবকের আদেশোপদেশ পালন করিতে কঠোরভাবে বলিতেন এবং স্বীয় ওস্তাদগণকে বাপের মত মান্য করিতে ও তাঁহাদের সেবা জানমাল দ্বারা করিতে নির্দেশ দিতেন, ৪১. ছাত্রীগণকে পর্দা করিতে ও বোরকা পরিধান করিতে আদেশ করিতেন, ৪২. তিনি পরীক্ষার্থীদের নিম্নরূপ উপদেশ দিতেন, “পরীক্ষার হলে পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার ১০—১৫ মিনিট পূর্বে যাইবে। ‘বিসমিল্লাহ’ বলিয়া হলে ঢুকিবে। প্রশ্নপত্র দেওয়া হইলে বিসমিল্লাহ বলিয়া গ্রহণ করিয়া একবার দুরূদ শরীফ ও তৎসঙ্গে “রাব্বি জিদনী ইলমান ওয়াল হিকনী বিস সালেহীন” পড়িয়া প্রশ্নপত্র পড়িবে। সহজ প্রশ্নের উত্তর প্রথম দিবে। প্রত্যেক প্রশ্নোত্তরের ‘সময়’ সমানভাবে ভাগ করিয়া লইবে। প্রত্যেক প্রশ্নোত্তরের পরই উহা একবার করিয়া পড়িবে। উত্তরপত্র লেখা শেষ হইলে ‘বিসমিল্লাহ’ বলিয়া উস্তাদকে উত্তরপত্র দিয়া চলিয়া আসিবে। প্রশ্নোত্তর লিখিতে লিখিতে ভুলিয়া গেলে— লা—তাখাফু দারকাও ওয়ালা তাখশা) পড়িলে পুনরায় মনে আসিবে। পরীক্ষার হলে এদিক ওদিক তাকাইবে না। আমি ছাত্র—ছাত্রীদের জন্য সব সময় দোয়া করিতেছি।”
হযরত শাহ্ আহসানুল্লাহ (রহ:) কমপ্লেক্স—এর অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহ:—
১. মশুরীখোলা শাহ্ সাহেব বাড়ী জামে মসজিদ, নারিন্দা, ঢাকা—১১০০, ২. মশুরীখোলা শাহ্ সাহেব বাড়ী জামে মসজিদ, মশুরীখোলা, সাভার, ঢাকা, ৩. দারুল উলুম আহসানিয়া কামিল মাদ্রাসা, নারিন্দা, ঢাকা—১১০০, ৪. দারুল উলুম আহসানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, মশুরীখোলা, সাভার, ঢাকা—১১০০, ৫. আহসানিয়া এতিমখানা, নারিন্দা, ঢাকা—১১০০, ৬. লতিফিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, নারিন্দা, ঢাকা—১১০০, ৭. হযরত কালিম শাহ্ বোগদাদী (রহ.) হাফিজিয়া মাদ্রাসা, শহীদনগর, চট্টগ্রাম, ৮. প্রফেসর হুমায়ূন ইসলামিক একাডেমি, শহীদনগর, চট্টগ্রাম, ৯. হযরত খাজা লস্কর মোল্লা (রহ:) হাফিজিয়া মাদ্রাসা, গোপালদী, নরসিংদী, ১০. হযরত শাহ্ আহ্সানুল্লাহ (রহ.) ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, সুতিরপাড়, শেরপুর, ১১. হযরত শাহ্ আহ্সানুল্লাহ (রহ.) হাফিজিয়া মাদ্রাসা, সুতিরপাড়, শেরপুর, ১২. আল—জামিয়াতুল জামানিয়া দৌলতিয়া মাদ্রাসা, তারুয়া, বি—বাড়ীয়া, ১৩. আল—জামিয়াতুল, জামানিয়া দৌলতিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, তারুয়া, বি—বাড়ীয়া, ১৪. হযরত শাহ আহসানুল্লাহ (রহ.) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মশুরীখোলা, সাভার, ঢাকা, ১৫. আহসানিয়া ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, ধীতপুর, বি—বাড়ীয়া, ১৬. নূর মানিক চর হযরত ক্বেবলা আহসানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবিদ্বার, কুমিল্লা, ১৭. হযরত শাহ্ আহসানুল্লাহ (রহ.) হাফিজিয়া মাদ্রাসা, মশুরীখোলা, সাভার, ঢাকা, ১৮. আলহাজ্বা রাজিয়া খাতুন দারুল ক্বিরাত মাদ্রাসা, ৫২/২, শাহ্ সাহেব লেন, নারিন্দা, গেন্ডারিয়া, ঢাকা, ১৯. হযরত শাহ্ আহসানুল্লাহ (রহ.) হাফিজিয়া মাদ্রাসা, মাধবপুর, হবিগঞ্জ (প্রক্রিয়াধীন)।
তরীক্বতের শাজরা সমূহ—
শেজরায়ে চিশতিয়া— ১. সূফি আহসানুল্লাহ রহ., ২. খাজা লশকর মোল্লা রহ., ৩. খাজা গোলজার শাহ্ রহ., ৪. শহীদ সৈয়দ আহমদ বেরলভী রহ., ৫. শাহ্ আবদুল আজীজ মুহাদ্দেস দেহলভী রহ., ৬. শাহ্ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী রহ., ৭. শাহ্ আবদুর রহিম রহ., ৮. শেখ শাহ্ রফীউদ্দীন রহ., ৯. শেখ কুতুবুল আলাম রহ., ১০. শেখ নজমুল হক রহ., ১১. শেখ আবদুল আজীজ রহ., ১২. কাজী ইউসুফ নাসেহী রহ., ১৩. শেখ হাসান তাহের রহ., ১৪. শেখ রেজা হামেদ রহ., ১৫. শেখ হোসামুদ্দীন মানকপুরী রহ., ১৬. খাজা নূরে কুতবে আলম রহ., ১৭. শেখ আলাউল হক রহ., ১৮. শেখ আখী সেরাজুলদ্দীন রহ., ১৯. খাজা নেজামুদ্দীন আউলিয়া, ২০. খাজা ফরিদুদ্দীন শক্করগঞ্জ রহ., ২১. খাজা কুতুবদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহ., ২২. খাজা গরীবে নেওয়াজ সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাসান সানজারী চিশতি রহ., ২৩. খাজা ওসমান হারুনী রহ., ২৪. খাজা শরীফ জিনদানী রহ., ২৫. খাজা মওদুদ চিশতী রহ., ২৬. খাজা ইউসুফ চিশতী রহ., ২৭. খাজা আবু মোহাম্মদ চিশতী রহ., ২৮. খাজা আবু আহমদ চিশতী রহ., ২৯. খাজা আবু এসহাক চিশতী রহ., ৩০. শেখ আলাউদ্দীন উশী রহ., ৩১. খাজা আবু হোরায়রা রহ., ৩২. খাজা মার’আশী রহ., ৩৩. খাজা সুলতান ইবরাহীম আদহাম রহ., ৩৪. হযরত আরাদ এবনে ফোদায়েল রহ., ৩৫. শেখ আবদুল ওয়াহেদ আরেফীন রহ., ৩৬. হযরত হাসান বাসরী রহ., ৩৭. হযরত আলী কাররামুল্লাহ রাদ্বি আল্লাহু তা’লা আনহু, ৩৮. দুজাহানের বাদশা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ৩৯. তাঁহার দাস্ত মোবারক ছিল, আল্লাহ জাল্লাজালালুহুর কুদরতের হস্তের উপর!
শেজরায়ে ক্বাদেরিয়া—
১. সূফি আহসানুল্লাহ রহ., ২. হজরত কালীম শাহ্ বাগদাদী রহ., ৩. মিয়া জিউ (নূর মোহাম্মদ) রহ., ৪. শাহ আবদুর রহিম রহ., ৫. শাহ আবদুল বারী রহ., ৬. শাহ আবদুল হাদী রহ., ৭. আদু’দুদ্দীন রহ., ৮. মোহাম্মদ মাক্কী রহ., ৯. শাহ মোহেব বুল্লাহ রহ., ১০. আবু সাইদ রহ., ১১. শেখ নেজামুদ্দীন রহ., ১২. শেখ জালালুদ্দীন রহ., ১৩. মাওলানা আবদুল কুদ্দুস গাঙ্গুয়ী রহ., ১৪. মোহাম্মদ এবনে কাসেম রহ., ১৫. মোহাম্মদ দ্বীন বাহার রহ., ১৬. শাহ সৈয়দ আজমল রহ., ১৭. হযরত মাখদুম জাহানীয়া জাঁহা গাত রহ., ১৮. সৈয়দ জালালুদ্দীন বোখারী রহ., ১৯. শেখ ওবায়েদ ইবনে ঈসা রহ., ২০. শেখ ওবায়েদ এবনে আবুল কাশেম রহ.; ২১. শেখ আবুল মোকারেম ফাদেল রহ., ২২. শেখ কুতবুদ্দীন আবুল গায়েস রহ., ২৩. শেখ শামসুদ্দীন আলা এবলিহী রহ., ২৪. শেখ শামসুদ্দীন হাদ্দাদ রহ., ২৫. গাওসুল আজম পীরে দাস্তগীর শেখ আবদুল কাদের জিলানী রহ., ২৬. আবু সাঈদ মাখজুমী রহ., ২৭. আবুল হাসান ক্বারশী রহ., ২৮. শেখ আবুল ফারাজ; ২৯. আবদুল ওয়াহেদ এবনে আবদুল আজিজ রহ., ৩০. শেখ আবু বকর শিবলী রহ.; ৩১. শেখ জোনায়েদ রহ., ৩২, সেররে সাকাতী রহ., ৩৩. শেখ মারূফ কারখী রহ., ৩৪. শেখ দাউদ তা’য়ী রহ., ৩৫. শেখ হাবীব আজামী রহ., ৩৬. হযরত হাসান বাসরী রহ., ৩৭. হযরত আলী কাররামুল্লাহ রাদ্বি আল্লাহু তা’লা আনহু, ৩৮. দুজাহানের বাদশা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সম্মানিত খলিফাবৃন্দ—
- ১. হজরত শাহ্ আবদুল আজিজ রহ. (১৮৭০—১৯৪৮)
- ২. হজরত শাহ্ আবদুল লতিফ রহ.
- ৩. আলহাজ মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ আহ্ছানুজ্জামান (মা.জি.আ.)।
- ৪. হজরত মুন্সী শাহ্ আবদুল ওয়াহেদ রহ. (জয়মন্টপ, সিংগাইর,মানিকগঞ্জ)
- ৫. হজরত মাওলানা সৈয়দ আবু আহমদ রহ. (ছাগলনাইয়া,ফেনী, চট্টগ্রাম)
- ৬. সৈয়্যদুল আযম আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ বজলুর রহমান (দরবার—ই বেতাগী আস্তানা শরীফ, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম)
- ৭. এ.এফ.এম. আবদুল মজিদ রুশদী রহ. (মতলব থানা, চাদপুর)
- ৮. শামসুল উলামা মৌলানা আবু নসর মুহাম্মদ ওয়াহিদ রহ. (সিলেট)
- ৯. হজরত মাওলানা শাহ্ আনোয়ারউল্লাহ খান চিশতি রহ. (চাদপুর)
- ১০. হজরত মাওলানা আবদুল জব্বার রহ. (দেবিদ্বার, কুমিল্লা)
- ১১. হজরত মৌলানা হাফেজ শাহ্ আবদুল মজিদ রহ. (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা)
- ১২. হজরত মনোয়ার আলী রহ. (চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ)
- ১৩. হজরত ফয়জুর রহমান রহ. (ফুলগাজী, ফেনী, চট্টগ্রাম)
- ১৪. হজরত ওয়াহেদ বক্স রহ. (টংগিবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ)
- ১৫. হজরত মাওলানা সৈয়দ নূর আহম্মদ কাদেরী চট্টগ্রাম (শাহরাস্তি, চাদপুর)
- ১৬. হজরত মুহাম্মদ পছন্দ আলী ফকির রহ. (নাসিরাবাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
- ১৭. হজরত মিয়া চান হাজী সাবেহ রহ. (পুকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ)
- ১৮. হযরত মাওলানা আহসানুল্লাহ (আম্বর আলী) রহ. (হবিগঞ্জ)
- ১৯. হজরত মুন্সী তোরাব আলী শাহ্ সাহেব রহ. (রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ)
- ২০. হযরত সৈয়দ আব্দুল জাব্বার রহ. (সৈয়দ বাড়ি কুমিল্লা
- ২১. হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান খলিফা রহ. (সাগরকাঁটি, বরিশাল)
- ২২. হযরত মাওলানা হুসাইন উদ্দিন আহাম্মেদ রহ. (মুরাদপুর,পাবনা)
- ২৩. হযরত মাওলানা অধ্যাপক শাহ সুফি ওসমান গনি রহ. (নোয়াখালী)
- ২৪. শামসুল ওলামা হযরত মাওলানা এছহাক রহ. (বর্ধমান, ভারত)
- ২৫. হযরত মাওলানা ক্বারী শাহ আব্দুল করিম রহ. (ঘোড়াদিয়া, মতলব, চাঁদপুর)
- ২৬. হযরত মাওলানা সৈয়দ ইউনুস বিহারী রহ. (সুপারেনটেন্ডে, হোসেনিয়া মাদরাসা, কুমিল্লা)
- ২৭. হযরত মাওলানা হাফেজ ইসমাত উল্লাহ রহ. (জিনজিরা, ঢাকা)
- ২৮. হযরত মাওলানা সৈয়দ ফয়েজ আহমদ রহ. (নিজপানুয়া দরবার শরীফ, ছাগলনাইয়া, ফেনী)
- ২৯. হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল গফুর রহ. (ঘোড়াদাড়ী, মতলব, চাঁদপুর)
- ৩০. হযরত খান বাহাদুর আব্দুর রৌউফ (নওয়াব মিয়া) রহ. (রতনপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া)
- ৩১. হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল আজীজ জোওয়ারী রহ. (কুমিল্লা)
- ৩২. হযরত আব্দুল আলি মিয়া রহ. (আড্ডা, বরুরা, কুমিল্লা)
- ৩৩. হযরত মাওলানা আব্দুল আলী খাঁন রহ. (মেমানিয়া, হিজলা, বরিশাল
- ৩৪. হযরত সুফি ওসমান গনি মাতব্বর রহ. (আতলাকুড়ি, কনেশ্বর, ডামুড্যা, শরিয়তপুর)
- ৩৫. হযরত মাওলানা আব্দুল আজীজ দরবেশ রহ. (মড়খড়িয়া, চিতশী, লাকসাম, কুমিল্লা)
- ৩৬. হযরত মাওলানা হাফেজ খবীর উদ্দিন রহ. (নারায়নগঞ্জ, ঢাকা)
- ৩৭. হযরত মাওলানা আব্দুল শুক্কুর রহ. (লাখাই, হবিগঞ্জ)
- ৩৮. হযরত মাওলানা আবু আলী আক্তার রহ. (গ্রাম:—ফরিদপুর, থানা— কুলিয়ারচর, জেলা— কিশোরগঞ্জ)
- ৩৯. হযরত মাওলানা নূরধন মুন্সি রহ. (ইসলামপুর, বিজয় নগর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া)
- ৪০. হযরত মাওলানা সৈয়দ শাহ অহিদুল্লাহ রহ. (মাস্টারহাট, কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম)
- ৪১. হযরত মাওলানা আবু আহমদ আউলিয়া রহ. (হাসমতউল্লাহ মনসেব লেন, চকবাজার, চট্টগ্রাম, ইন্তেকাল— ১৯৭৬ ঈসায়ী রোজ— বুধবার, ২১ রজব)
- ৪২. হযরত মাওলানা সৈয়দ আব্দুল হক রহ. (নিউমুরিং, সল্টগোলা ক্রসিং, দক্ষিন হালিশহর, চট্টগ্রাম, ইন্তিকাল—৭ ই মহররম, ১৯৩৬ ঈসায়ী)
- ৪৩. হযরত মাওলানা সিদ্দিক আলী রহ. (ঘরগাঁও, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ। ইন্তেকাল— ফাল্গুন মাসের শেষ বুধবার
- ৪৪. হযরত মুন্সী আব্দুর রফিক রহ. (কোন্ডা, নবাবগঞ্জ, ঢাকা)
- ৪৫. হযরত শাহ সূফী হাফেজ মাওলানা আমজাদ আলী রহ. (গ্রাম—দত্তপুর হাফেজ বাড়ী, উপজেলা— লালমাই, কুমিল্লা, জন্ম—১৮৮৫ ঈসায়ী, ইন্তেকাল— ১৯৬৫ ঈসায়ী)
- ৪৬. হযরত শেখ শাহ মতিউর রহমান রহ. (গ্রাম—ইসলামপুর, উপজেলা—বিজয় নগর,জেলা—ব্রাহ্মণবাড়ীয়া)
ইন্তেকালঃ—
বর্তমানেও এ দরবারে পীর—মুরিদী চালু আছে। ভবিষৎ সম্পর্কে আল্লাহ পাক ভাল জানেন। বর্তমান গদিনসীন পীর সাহেব আলহাজ¦ মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ আহ্ছানুজ্জামান (মা.জি.আ.) শরীয়ত মোতাবেক দরবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন খানকা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তিনি যুগের এ ক্রান্তিকালে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। আমার দৃষ্টিতে তিনি বর্তমান সময়ের একজন মুজাহিদ ও আল্লাহর প্রকৃত অলি। আল্লাহ পাক তাঁর হায়াতে অফুরন্ত বরকত দান করুক। এ দরবার সম্পূর্ন শরীয়তের উপর পরিচালিত। প্রতিদিন বহু ধমার্বলম্বী বর্তমান হুজুরের স্বাক্ষাতে নিতে ভীড় জমায়। এ দরবারে আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত ও বরকতে ভরপুর। আল্লাহ পাক সবাইকে এ নেয়ামত হাসিল করার তৌফিক দান করুক।
হজরত কেবলার হাতধরে অসংখ্য ইসলামের দাঈয়ী ও তরীক্বতের মাশায়েখ কেরামের জন্ম হয়েছে। নিজহাতে প্রতিষ্ঠা করেছেন বহু মসজিদ—মাদ্রাসা। এ সফল ধর্মপ্রচারক ১৯২৬ সালে এ নশ্বর পৃথিবীতে অবিনশ্বর কীর্তি রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বর্তমানেও সারা বাংলাদেশ হতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তাঁর মাজার শরীফ জেয়ারতে আসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত জুমা মসজিদে প্রতি জুমায় চার—পাঁচ হাজার লোক জুমার নামাজ আদায় করতে সমবেত হয়। হে আল্লাহ! এ মহান অলিয়ে কামেলের উচিলায় আমাদের সহজ—সরল পথে চলার তৌফিক দান করুন। এবং তাঁর রুহানি ফয়েজ দিয়ে আমাদের ধন্য করুন। তাসাউফপন্থীদের কাছে তিনি অনুস্মরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। হে আল্লাহ! আপনি তাঁর মযার্দাকে আরো বুলন্দ করুক। আমিন।
তথ্য সূত্র সংযুক্তি—
- ১. হজরত কেবলা শাহ্ আহসানুল্লাহ (র.) স্মারক
- ২. হজরত কেবলা— এ.এফ.এম. আবদুল মজীদ রুশ্দী
- ৩. জালালাবাদের কথা—দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী
- ৪. মাজার নগরী ঢাকা ও একশত অলির জীবনকথা— মোঃ মোজাম্মেল হক
- ৫. আজিমপুর দায়রা শরীফ— শাহ সূফি সাইয়্যেদ আহ্মাদুল্লাহ
- ৬. বাংলায় ফরায়েযী আন্দোলনের ইতিাহস— মুঈন উদ—দীন আহমদ খান
- ৭. আসুদেগানে ঢাকা— হেকিম হাবিবুর রহমান