গোলাম সালমানী আব্বাসী ফুরফুরাবী (রহ.)এর জীবনী ও কর্ম
লেখক- প্রপৌত্র, মুহাম্মদ নাসেরউদ্দিন আব্বাসী
জন্ম:- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুর মহুকুমার জাঙ্গিপাড়া থানার ইতিহাস প্রসিদ্ধ ফুরফুরা শরীফের আব্বাসী দরবার শরীফে ১৮৫৪ সালের ১ জুলাই (৫ শওয়াল১২৭০ হিজরী,১২৬১ বঙ্গাব্দের ১৭ আষাঢ়) জন্মগ্ৰহণ করেন।
পিতা-মাতা:- পিতা হজরত গোলাম রব্বানী আব্বাসী আরবি -ফারসী সাহিত্যের পন্ডিত ও কলকাতা হাইকোর্টের জন্মলগ্নে বিচারপতি।মাতা জাহিদুন্নিসা সিদ্দিকা রাহ.
পূর্বপুরুষ:- ১৩৩২ সালে দিল্লির সম্রাট মুহাম্মদ বিন তুঘলক -এর শাসনকালে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে দিল্লি হয়ে বালিয়া বাসন্তী তথা ফুরফুরা শরীফে আসেন পীর গোলাম রহমান আব্বাসী রাহ.
বংশনামা:- বিশ্বনবী সা.-এর পিতৃব্য হজরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব -,এর সঙ্গে পিতৃকূল বংশধারা সংযুক্ত। খোলাফায়ে রাসূলুল্লাহ সা.তথা প্রথম খলিফা হজরত আবুবকর সিদ্দিকী রা.-সঙ্গে মাতৃকূল বংশধারা মিলিত।
শিক্ষা:- শৈশবে আব্বাসিয়া দরবারে পিতা-মাতার সমীপে তালিম শুরু,পরে সৈয়দ হেদায়েতুল্লাহ ,মাওলানা রাশেদ সিদ্দিকী , মাওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরী প্রমুখদের নিকটে পাঠচর্চা করেন। তিনি শৈশব থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। অতঃপর সীতাপুর মাদ্রাসা,হুগলি মহসিনীয়া মাদ্রাসা,কোলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পর্যায়ক্রমে শেষ পরীক্ষায় শীর্য স্থান দখল করেন।
চাকরি:- ১৮৮৭ সালে হুগলি মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপক নিযুক্ত হন। পরে হেড মাওলানা পদে আসীন হন। ১৮৯০ সালে হজরত গোলাম সালমানী আব্বাসী কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় চতুর্থ অধ্যাপক মনোনয়ন পান।১৯১০ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী তিনি হুগলি মাদ্রাসার সহকারি সুপার নিযুক্ত হন।প্রথমে অস্থায়ী,পরে স্থায়ী পদে উন্নীত হলেন।১৯১০ সালের ৯ নভেম্বর সেন্ট্রাল একজামিনেশনের তিনি পরীক্ষক নির্বাচিত হন।
অনন্য পুরস্কার:- ১৯১০ সালের হজ্জ মরশুমে হজ্জব্রত পালন করার পর সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে এক রাজকীয় সভায় সৌদি আরব সরকার কতৃক “সুলতানুল আরিফিন” (ধআর্মইকদ এর রাজা), অন্য একটি সভায় মক্কআ শরীফের উলামা পরিষদ প্রদত্ত “শাইখুল হিন্দ” (ভারতের গুরু) পুরস্কারে ভূষিত হন।
১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর কলকাতার বর্তমান রাজভবনে এক সরকারী অনুষ্ঠানে বৃটিশ রাজা পঞ্চম জর্জ প্রদত্ত জাতীয় অধ্যাপক “শামসুল উলামা-ই-হিন্দ”(হিন্দুস্তানের জ্ঞানীদের সূর্য), সনদ, আমামা, পদক, এক হাজার নগদ টাকা, বন্দুকের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। উপস্থিত ছিলেন, হিন্দুস্তানের গভর্ণর জেনারেল লর্ড চার্লস হার্ডিঞ্জ, বাংলার গভর্ণর উইলিয়াম ডিউক,সহ শীর্যস্থানীয় শিক্ষাবিদ,অধ্যক্ষ।
পীর কেবলা:- কাদিরিয়া,চিশতিয়া,নকশবন্দিয়া,মুজাদ্দিদীয়া তরিকার পীর ছিলেন, হজরত সুফি সৈয়দ ফতেহ আলি ওয়সী রাহ.,তাঁর ৩৯ জন খলিফার মধ্যএ শীর্য স্থানে ছিলেন।জীবনের অন্তিমক্ষণে একমাত্র খলিফা গোলাম সালমানী আব্বাসী রাহ.-কে তালাশ করেছিলেন পীর ওয়সী রাহ.. উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন খলিফা হজরত আবুবকর সিদ্দিকী রাহ.ও আহমদ আলী সুরেশ্বরী রাহ.।
বিদগ্ধ খলিফা:- প্রায় অর্ধ শতক মুরিদ ও খলিফার মধ্যে অন্যতম ছিলেন, হজরত শাহ মাহাতাবুদ্দিন,(পুকুরনিয়া,পআবনআ), সৈয়দ আবদুল বালী, (ব্যান্ডেল, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ), শাহ আবদুল্লাহ (বিশকুটী, ভাদেশ্বরী, সিলেট), আবদুল মজিদ (করমজী,বগুড়া)
সালমানিয়া সিলসিলা:- সৈয়দ আবদুল বারী রাহ.,শাহ আবদুল্লাহ বিশকুটী ভাদেশ্বরী রাহ.,আবদুল মজিদ করমজী রাহ.-এর মাধ্যমে এই সিলসিলা সারা দুনিয়ায় প্রায় ১.৫০ কোটা ওলি,পীর,খলিফা,আওলাদ,ভক্ত বিদ্যমান।কেবলমাত্র প্রায় ২৫ লাখ বাংলা ভাষা -ভাষী অন্তভূক্ত। এই সিলসিলার শাখা বারিয়া হামেদিয়া।তাঁর উল্লেখযোগ্য খলিফা সৈয়দ আবদুল বারী, তাঁর খলিফা হাফেজ হামেদ হাসান আলভী (আজমগড়,ভারত)- এর মাধ্যমে উক্ত সালমানিয়া সিলসিলা এশিয়া,ইউরোপ,আফ্রিকা,আমেরিকা,আরব-সহ বিশ্বের বহু দেশে বিদ্যমান। হজরত সুফি হাফেজ হামেদ হাসান আলভী রাহ. পীর গোলাম সালমানী আব্বাসী রাহ.-এর খুব স্নেহধন্য ছিলেন,এবং দাদাপীর থেকে বইশএষ তাওজ্জুহ,ফায়েজ হাসিল করেছিলেন।দাদা পীরের নির্দেশেই তিনক মাসের তরিকত সফর করতেন।বাংলাদেশে চট্রগ্ৰামে এই সিলসিলার হালিশহর,গারাংগিয়া,সহ অসংখ্য দরবার আছে।
পরিবারবর্গ:- পত্নী-সফুরেন্নাসা বেগোম(ওফাত-৯অগ্ৰহায়ণ,১৩২৭ ),কন্যা-আজিজা আক্তার,খোদেজা বেগম।একমাত্র সাহেবজাদা -পীর আবুল বরাকাত মহিউদ্দিন আব্বাসী, পৌত্র -আবুল ফয়েজ সামসামুদ্দিন আব্বাসী,প্রপৌত্র -মুহাম্মদ নাসেরউদ্দিন আব্বাসী (লেখক).।
বংশধরদের আদেশনামা:- পীরি মুরিদ,মক্তব মাদ্রাসার নামে চাঁদা আদায়,জকাত ,ফিতরা,দান ভিত্তিক অর্থ সংগ্ৰহ,তাবিজের নামে অর্থ উপার্জন,ইমামত,ওয়াজের নামে উপার্জিত পথ পরিহার করে বৈধ ব্যবসা-চাকরির পর উত্তম পন্থা।ফলে আজও তাঁর আওলাদের মধ্যে পীরি মুরিদী কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ আছে।
ইন্তেকাল:- ১৯১২ সালের ১ জুলাই হুগলি মাদ্রাসায় চাকরিরত অবস্থায় হুগলি শহরের খিড়কীঘাটের(ঘোলঘাট) অদূরে আবদুল করিম সাহেবের বাসায় ইন্তেকাল করেন।
শোক প্রকাশ:- বৃটিশ রাজা,,ভারতের গভর্ণর জেনারেল, বাংলার গভর্ণর,আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ,,সহ শীর্যস্থানীয় শিক্ষাবিদ, অধ্যক্ষ শোক জ্ঞাপন করেন।
ছুটি:- পরের দিন স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা,বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষিত হয়।
সালাতে জানাজা:- ২ জুলাই সালাতে জানাজা সমাধা করেন, পীর আবুবকর সিদ্দিকী রাহ, লক্ষাধিক ভক্ত জানাজায় সমবেত হন।
মাজার:- ফুরফুরা শরীফের মোল্লাপাড়ায় পারিবারিক দ্বিতীয় কবরস্থানে শায়িত আছেন।