লায়লা – মজনু

লায়লা – মজনু

একদিন বাদশা লায়লা’কে বললেন, তুমি কি সেই লায়লা, যার প্রেমে মজনু উন্মাদ আত্নহারা হয়েগেছে? তুমি’ত সাধারন সুন্দরী অপেক্ষা অধিক সুন্দরী নও, তবে মজনু কেন শুধু তোমার প্রেমেই আত্মহারা হলো?

উত্তরে লায়লা বলেনঃ- আপনি চুপ থাকুন, আপনি মজনু নন। মজনু না হয়ে আমার প্রেমে তার পাগল হওয়ার রহস্য বুঝবেন কি করে?

মজনুর চোখ যদি আপনার হত, আর আপনি সে চোখে আমাকে দেখতেন, তবে আমার রুপ আপনাকেও মজনুর মতই মোহিত করত, উভয় জগত আপনার জন্য মূল্যহীন হয়ে যেত।

লায়লা আরো বলেন, আপনার মধ্যে নিজস্ব সত্তা বোধ বজায় রয়েছে, কিন্তু মজনুর নিজস্ব সত্তাবোধ বিলুপ্ত হয়েগেছে। প্রেমে পথে নিজের সত্তা চেতনা ক্ষতিকর।

উপরের লেখাতে বাদশার উদ্দেশ্যে লায়লা বলেছেন- আপনার আর মজনুর মধ্যে একটা বড় মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সেটা হচ্ছে, আপনার (বাদশার) সত্তা বোধ স্বস্থান বহাল। তাই মান-মর্যাদা, ধন-সম্পদ, বন্ধু-বান্ধব, সুখ-দুঃখ, লাভ-লোকসান, ভালো-মন্দ ইত্যাদি বহু রকমের ধ্যান খেয়াল আপনার বিবেকের সম্মুখের অন্তরায় উকি দিয়ে থাকে, আপনি সবের প্রতি অবশ্যই লক্ষ করেন।

যে অন্তরে এত সব ধ্যান খেয়ালের জট পাকিয়ে আছে, সে অন্তরে লায়লার সৌন্দর্য অতি সামান্য হবে এটা স্বাভাবিক। সুতরাং, সৌন্দর্য ধরা পরবেন না। অপর দিকে আমার প্রেমে মজনুর নিজেস্ব সত্তাবোধ বিলুপ্ত হয়েগেছে। তার বিবেকে লায়লা ব্যতিক্রম কিছুই নেই মান-মর্যাদা, ধন-সম্পদ,বন্ধু-বান্ধব,সুখ-দুঃখ, লাভ-লোকসান, ভালো-মন্দ, দেশ- সমাজ, পাড়া- পরশি,ইত্যাদি। তার বিবেক ও নেই কারন তার বিবেকে শুধু মাত্র আমি’ই এক মাত্র আমিই তার অন্তর জুড়ে রয়েছি। (এখানে সুস্পষ্ট মানুষ মানুষকে ভালোবেসে তাকে প্রভু বানিয়ে ফেলে যা বলেছিলেন মীর্জা গালিব)

তাই তার দৃষ্টিতে আমার রুপ লাবণ্য অতি সুস্পষ্ট। অথচ লায়লা শ্যাম বর্ন ছিলো মানে কালো ছিলো।

এখানে বর্নীত লায়লা ও মজনুর (কাইয়েস) প্রেম, এমন প্রেম কেবল মাত্র স্রষ্টার জন্য হলেই আমরা সফল হতে পারবো। আল্লাহর ওলী-আউলিয়াগন এই রকম প্রেমে’ই করে। তাই আমরা তাদেরকের আমাদের শিরোমণি করে রাখি। এখানে কোন ব্যার্থতা নেই।

অপর দিকে দুনিয়ার মোহে পড়লে অথবা নারীর মোহে পড়লে জীবন সেখাই সমাপ্তি ঘটে। পরে যে’টা থাকে সেটা শুধু দুনিয়ার মায়াজালে আটকে থাকে দেহ। কারন আত্না মান- মর্যাদা ছাড়া বেচে থাকে না। আর নারী মোহে পড়া আত্না মৃত্যুর সমান।

আব্দুল করিমেও এই ব্যাপারে বলছিল যে নারী প্রেম/দুনিয়া প্রেমে পড়া প্রেমিকদের লজ্জা ভয় থাকে না। কলঙ্ককে অলংকার করে পরে এই সব প্রেমিক প্রেমিকা তাদের দেহ চর্চার মাধ্যমে দেহ’কে বাচিয়ে রাখে। দেহ চর্চাতে প্রেম থাকে না। থাকে লালসা একটা নির্দিষ্ট সময় পর লালসা স্থান পরিবর্তন করে মানে অন্য নারী মুখী হয়।

সূত্র: মছনবী শরীফ

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel