খোদাপ্রাপ্তি জ্ঞানের আলোকে শাহ্সূফী হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের নসিহত-১০ এর “মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ও খাজা বাকীবিল্লাহ (রঃ)” কিতাব পৃষ্ঠা: ৪৯,৫০,৫১ ও ৫২ হতে তুলে ধরা হয়েছে।
বিষয়ঃ দীন-ই-এলাহীর রূপরেখাঃ
১। দীনে এলাহীর মূলমন্ত্র -“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবার খালিফাতুল্লাহ।”
২। নব এই ধর্মে রাসূলে পাক (সাঃ) কে রাসূল হিসেবে স্বীকার করা রাষ্ট্রীয় বিধানে দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া সাব্যস্ত হয় তদস্থানে আকবরকে আল্লাহর প্রতিনিধি স্বীকার করা রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় কর্তব্য বলিয়া নিধারিত হয়।
৩। নব ধর্মে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভকেই অস্বীকার করা হয়।
৪। নব ধর্ম অনুসারীদের তথাকথিত ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার শপথ বাণী ছিল নিম্নরূপ “আমি অমুকের পুত্র অমুক। এ যাবৎ বাব-দাদার ধর্মের অনুসারী ছিলাম। এখন স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে তাহা পরিত্যাগ করিয়া বাদশাহ আকবরের দীনে এলাহী গ্রহণ করিতেছি এবং এই ধর্মের খাতিরে জান, মাল, ইজ্জত ও পর্ব ধর্ম পরিত্যাগ করিতে প্রস্তুত আছি। কাজেই নবধর্মে অনুসারীদেরকে সম্রাটের উদ্দেশ্যে চারিটি জিনিস-ধন, জীবন, ইজ্জত ও ধর্ম বিসর্জন দিতে হইত। দীন-এ-এলাহীর অনুসারীদেরকে চেলা” বলা হইত।
৫। আকবর প্রত্যেক চেলাকে নিজের ক্ষুদ্র একখানি ফটো দান করিতেন। চেলাগণ তাহা সৌভাগ্যের প্রতীক স্বরূপ আপন আপন পাগড়ীর সহিত লাগাইয়া রাখিত।
৬। নবধর্মে সূর্য পূজা, নক্ষত্র পূজা, অগ্নি, বক্ষ বা গরু পূজা। প্রবর্তিত হয়। বাদশাহ আকবর প্রত্যহ নিজে চারবার-ভােরে, দ্বিপ্রহরে, সন্ধ্যায় ও মধ্যরাতে বাধ্যতামূলক ভাবে সূর্য পূজা করিতেন। তাহার অনুসারীবর্গ বা চেলা সকলের প্রতিও সূর্য পূজার কঠোর নির্দেশ ছিল।
৭। বাদশাহের চেহারা দর্শন না করা পর্যন্ত দীন-এ-এলাহীর অনুসারীদের দাঁত মাজা বা কোন কিছু পানাহার করা নিষিদ্ধ ছিল। ভােরের সূর্য পূজা শেষে বাদশাহ বাহিরে আসিলে, নর-নারী নির্বিশেষে সকলেই একসংগে তাহাকে সেজদা করিত।
৮। নতুন ধর্মে পুনর্জন্মবাদ বিশ্বাস করা হয়। বাদশাহ আকবর নিজেও বিশ্বাস করিতেন যে, মৃত্যুর পর তিনি অন্য কোন স্বর্ণ সিংহাসনের অধিকারী হইয়া একই রূপ প্রভাব-প্রতিপত্তির সহিত পুনরায় আবির্ভূত হইবেন।
৯। দীন-এ-এলাহীতে মদ পান বৈধ ঘােষণা করা হয়। বাদশাহ নিজে মদ পান করিতেন ও অন্যান্যদের মদ্য পানে উদ্বুদ্ধ করিতেন।
১০। নব ধর্মমতে সুদ-জুয়া, এমনকি যেনা পর্যন্ত বৈধ ঘােষিত হয়। বাদশাহ আকবরের নির্দেশে “শয়তান পুরে” একটি জুয়ার ঘর স্থাপিত হয় এবং জুয়ারীদেরকে রাজভান্ডার হইতে সুদে টাকা ধার দেওয়া হয়।
১১। দীনে এলাহীতে দাড়ীমুন্ডন বৈধ ঘােষণা করা হয়। পুরুষদের জন্য রেশমী কাপড় বৈধ ঘােষণা করা হয়। পর্দা প্রথা তুলিয়া নেওয়া হয়।
১২। বিবাহ সংক্রান্ত আইন প্রবর্তন করা হয়। খালাতাে, ফুপাতাে, মামাতাে, চাচাতে বােনকে বিবাহ অবৈধ বা হারাম ঘােষণা করা হয়।
১৩। খাতনা সম্পর্কে এই নির্দেশ দেওয়া হয় যে, বার বছরের পূর্বে কোন ছেলের খাতনা দেওয়া চলিবে না।
১৪। মৃতের দাফন সম্পর্কে এই নির্দেশ দেওয়া হয় যে, দাফনের সময় এই খেয়াল অবশ্যই রাখিতে হইবে, যেন মৃতের মস্তক পূর্ব দিকে এবং পদদ্বয় পশ্চিম দিকে থাকে। মুলতঃ কাবা শরীফের অবমাননার জন্য এমন নির্দেশ প্রদান করা হয়। বাদশাহ আকবর নিজেও শয়ন কালে স্বীয় পদদ্বয়কে কেবলার দিকে রাখিয়া শয়ন করিতেন।
১৫। নব ধর্মে গরু জবাই বা কোরবানী নিষিদ্ধ করা হয়।
১৬। গরু মহিষ, উট, বকরীর গােশত যাহা ইসলামী দৃষ্টিকোণে হালাল তাহা হারাম ঘােষণা করা হয় এবং বাঘ, ভালুক, কুকুর, বিড়ালের গােশতকে হালাল করিয়া দেওয়া হয়।
১৭। আরবী এলেম শিক্ষা করাকে রাষ্ট্রীয় বিধানে অমার্জনীয় অপরাধ রূপে সাব্যস্ত হয়। ফলে বহু আলেম-উলামা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। মাদ্রাসা সমূহ বিরাণ হয়। এই সুযােগে বিধর্মীরা বহু মসজিদকে মন্দিরে পরিণত করে।
১৮। নবধর্মে একাদশীর দিনে উপবাস থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। অথচ রমজানে রােজা না রাখিবার প্রতি আদেশ দেওয়া হইত। আকবর তাহার সভাসদদিগকে এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করিতেন যে, তাহারা যেন মাহে রমজানে দরবারে প্রকাশ্যে পানাহার করেন। যদি তাহাদের কাহারােও পানাহারের ইচ্ছা না থাকে, তবে তিনি যেন কম পক্ষে মুখে পান পুরিয়া দরবারে আসেন। যদি এইরূপ না করা হয়, তবে তাহাকে রােজা রাখার অপরাধে পাকড়াও করা হইত।
১৯। নওরােজ উৎসবের দিনে দরবারের আলেম-ওলামা, কাজী মুফতী, সকলের জন্যই মদ্যপান বাধ্যতামূলক ছিল।
২০। দীনে এলাহীর অনুসারীদেরকে একে অন্যের সহিত সাক্ষাত হইলে “আসসালামু আলাইকুম’-এর পরিবর্তে আল্লাহু আকবর। এবং তদুত্তরে জাল্লা জালালুহু মা আকবার শানুহু’ বলার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছিল।
২১। দীনে এলাহীর ভক্তদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহারা যেন প্রত্যেকে নিজ নিজ চিঠিপত্রের শিরােনামে আল্লাহ নামের সাথে ‘আকবর’ নামটি অবশ্যই লিখে। অন্যথায় নতুন আইনে ইহা দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া সাব্যস্ত হইবে।
২২। নতুন এই ধর্মে অগ্নি পূজাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। আকবর নিজে অগ্নিপূজা করিতেন এবং আবুল ফজলকে তাহার দরবারে “শিখা অনির্বাণ’ প্রজ্জ্বলিত রাখিবার নির্দেশ দেন। সম্রাট আকবর দরবারে প্রদীপ জ্বালাইবার সময় দন্ডায়মান হইয়া উহার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা সভাসদদের প্রতি বাধ্যতামূলক করেন।
২৩। দীনে এলাহীতে নামাজ, রােজা, হজ্জ, যাকাত, এমনকি এ সমস্ত বিষয় যাহা নবুয়তের সহিত সম্পর্কিত, তাহার নাম দেওয়া হয় ‘অন্ধবিশ্বাস” এই সমস্ত ব্যাপারকে অবাস্তব আখ্যা দেওয়া হয়।
২৪। নব ধর্মে ইহাও বিশ্বাস করিতে হইত যে, কোরান শরীফ আল্লাহর অহী নয়; ইহা নবী করীম (সাঃ) এর রচিত গ্রন্থ।
→ নসিহত: মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ও খাজা বাকীবিল্লাহ (রঃ) এর সব গুলো অধ্যায়
আরো পড়ুন:
→ পীরের প্রতি মুরিদের আদব সর্ম্পকে মোজাদ্দেদ আলফেছানী রা: এর উপদেশ