সৃষ্টি-ই মোহাম্মদ
“সৃষ্টি-ই মোহাম্মদ” এমন একটি ধারণা যা ইসলামী চিন্তাধারায় গভীরভাবে নিহিত, বিশেষত সূফী দর্শনে। সূফী সাধকরা মোহাম্মদ (সাঃ)-কে শুধু একজন ধর্মপ্রচারক বা নবী হিসেবে নয়, বরং তাকে সৃষ্টির মূল প্রকাশ এবং আল্লাহর স্নেহময় আলো বা “নূর” হিসেবে দেখতে পছন্দ করেন। তাদের মতে, পুরো পৃথিবী এবং সমস্ত সৃষ্টির সৃষ্টি “নূর মোহাম্মদী” থেকে এসেছে।
সৃষ্টি ও মোহাম্মদ (সাঃ):-
সূফী দর্শনে, মোহাম্মদ (সাঃ) হচ্ছেন আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি, যিনি সৃষ্টির মূল ধারণার প্রথম প্রকাশ। এটা বলা হয় যে, আল্লাহ প্রথমে নিজের আলো বা “নূর”-কে সৃষ্টি করেন, এবং সেই “নূর” (মোহাম্মদ) থেকেই পৃথিবী এবং সমস্ত সৃষ্টির উৎপত্তি। এই ধারায়, মোহাম্মদ (সাঃ)-এর উপস্থিতি সৃষ্টির আদিরূপ এবং প্রতিটি সৃষ্টির অন্তর্নিহিত সত্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
নূর মোহাম্মদী:-
মোহাম্মদ (সাঃ)-এর “নূর” বা আলো, সূফী দর্শনে সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, প্রেম এবং করুণার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। এটি হলো সেই আধ্যাত্মিক আলোক, যা মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে, মানবতার সত্য প্রকাশ করে এবং সৃষ্টির উদ্দেশ্য উপলব্ধি করায়। সূফীরা বিশ্বাস করেন যে, মোহাম্মদ (সাঃ)-এর নূরই পৃথিবীতে সমস্ত ভালো কাজের উৎস।
মোহাম্মদ (সাঃ) – সৃষ্টি এবং উদ্দেশ্য:-
যেহেতু তিনি সৃষ্টির আদিরূপ, তাই সূফীরা তাঁর জীবনের আদর্শ ও পথ অনুসরণ করেই আধ্যাত্মিক দিশারী খুঁজে পান। তাঁর জীবন ও কর্মের মাধ্যমে, মানুষ একে অপরকে জানার, প্রেম, সহানুভূতি এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার শিক্ষা পায়। সূফী সাধকরা মোহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতিটি কথা, কাজ এবং অন্তরঙ্গ ভাবনা গভীরভাবে আধ্যাত্মিক উপলব্ধির কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করেন।
সৃষ্টির মধ্যে মোহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতিফলন:-
সূফী দর্শনে, সৃষ্টির প্রতিটি বস্তু এবং প্রতিটি প্রাণীই আল্লাহর প্রকাশ। তারা বিশ্বাস করেন যে, মোহাম্মদ (সাঃ)-এর নূর সৃষ্টির প্রতিটি উপাদানে বিরাজমান। এই ভাবনা অনুসারে, তাঁর চরিত্রের মধ্যে সব সত্তার উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়। মানুষের একাত্মতা ও আধ্যাত্মিক উপলব্ধি কেবল তখনই সম্ভব, যখন তারা নিজের অন্তরে সেই নূর বা আলোর উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।
শেষ কথা:-
“সৃষ্টি-ই মোহাম্মদ” ধারণাটি সূফী চিন্তাধারার গভীর অঙ্গ, যেখানে মোহাম্মদ (সাঃ) কেবল একজন ধর্মপ্রচারক নন, বরং তিনি সৃষ্টির মূল, আল্লাহর নূরের পূর্ণতা এবং সমস্ত জীবনের অন্তর্নিহিত সত্য। তাঁর জীবন এবং শিক্ষা প্রতিটি সৃষ্টি এবং প্রতিটি আত্মার মধ্যে জীবন্ত আলোর প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত হয়।
– ফরহাদ ইবনে রেহান