সূফি দর্শনে আল্লাহর পরিচয়।

সূফি দর্শনে আল্লাহর পরিচয়।

বিশ্ববিখ্যাত শাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন-

“Beware of man whose god is in the skies”

অর্থাৎ- আল্লাহ যার আকাশে তার সম্বন্ধে সাবধান। কেননা, তার দ্বারা যে কোনো অন্যায় ও নিষ্ঠুর কাজ হতে পারে। আল্লাহকে সে স্মরণ করে ইহলোকে মজাসে জীবন যাপন করার জন্য আর পরকালে দোজখের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্য, অথবা স্বর্গে একটা প্রথম শ্রেণির সিট রিজার্ভ করার আগ্রহে-অন্য কোন মহৎ উদ্দেশ্য নয়।ইহকালে এবং পরকালে সবর্বত্রই একটা ইতর লোভ। (সংস্কৃতির কথা, সূফি সাহিত্যিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী)

আল্লাহর পরিচয়:

আল্লাহ ইসমে আজম। সৃষ্টিকর্তার সকলগুনের সামষ্টিক রূপ হলেন আল্লাহ। স্রষ্টার সকল গুনের শক্তির প্রতীক হলেন আল্লাহ। কোরানে আল্লাহর ৯৯টি সিফতী নাম রয়েছে (কম -বেশিও হতে পারে)। আল্লাহর এই সিফত তথা গুনসমূহ একমাত্র ইসনানই নিজের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে পারেন। তাই ইনসানকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ তথা আশরাফুল মাখলুকাত ঘোষনা করা হয়েছে। মানবীয় যে আধারে স্রষ্টার এই গুনগুলো উদ্ভাসিত হয় তিনিই রূহরূপ রব।আল্লাহর জাতি নাম হলো রব। আর সেই রবের নাম হল মুহাম্মদ তথা প্রশংসিত সত্তা।

একমাত্র ইনসানই পারে স্বীয় আধারে আপন রবকে আবিষ্কার তথা খোজে নিতে। আল্লাহর এই গুনগুলো যখন ভিন্ন ভিন্ন থাকে, তাহলে আল্লাহর স্বরূপ বুঝবে কি দিয়ে? মানবীয় যে আধারে আল্লাহর গুনসমূহ প্রস্ফুটিত, তখনই তিনি আর ইনসান থাকেন না, তখন তিনি আদম হয়ে যান।তাই আদম আল্লাহর চেহারা, আদম কিন্তু সৃষ্টির সেরা নয়। আদম দেখতে সৃষ্টির মতো মনে হলেও, আসলে তিনি লামাকামের অধিবাসী তথা তৌহিদময় পরিবেশে অবস্থান রত। তাই আদমকে ফেরেস্তাসহ তামাম মাখলুকাত সিজদা করেন, একমাত্র অহংকার ব্যতীত। কোনো নাস, ইনসান, আমানু, মুসলিমকে সিজদা দিতে কোরানিক দর্শন একবারও বলেন নাই।

আদমের মধ্যে যখন রূহ উদ্ভাসিত হয় তথা ফুৎকার হয় তখন তিনি সিজদার মালিক হয়ে যান। তাই কোরানিক দর্শন বলেন, আল্লাহ আউয়াল, তথা আল্লাহ প্রথম, আল্লাহ আখের আল্লাহই শেষ তথা আল্লাহ জাহের তথা আল্লাহই প্রকাশ, আল্লাহ বাতেন তথা আল্লাহই গোপন। তাই তিনি সর্বব্যাপ্ত তথা কুল্লেশাহিন মোহিত। আবার আলাকুলেল্ল শাহিন কাদির। আবার তিনি আহাদ, আবার তিনি সামাদ, আবার তিনি লাশারিক।

সমগ্রসৃষ্টি জগৎতে আল্লাহ সেফাত রূপে অবস্থান করে, কিন্তু জাত তথা মূল রূপে আল্লাহ জীন আর ইনসানের সাথে অবস্থান করেন। কারণ ইনসানের মধ্যেই আল্লাহ রবরূপ ধারণ করে রূহ ফুৎকার করেন। এই রূহই রাব্বুল আলামিন। আর এই রূহ ধারণকারীই রহমাতুল্লিল আলামিন। এই রহমাতুল্লিল আলামিনই হলেন, আল্লাহর সার্বিক প্রকাশ, আল্লাহর গুনে গুনান্বিত, আল্লাহর চরিত্র, আল্লাহর স্বভাব তথা ফিতরাত তথা প্রকৃতি।

আল্লাহ কোথায় থাকেন?

মুফাসীরে জামান আল্লামা কালান্দার জাহাঙ্গীর আ: কিতাবখানা পড়লে আর কোনো সংশয় থাকার কথা নয়, একজন নাস্তিকও তাওবা করে আস্তিকে পরিনত হবে। কোরানিক দর্শন এত অপূর্বভাবে বর্নিত হয়েছে তা আমার জীবনে কোনো গবেষকের গবেষণা দেখি নাই। লা মজুদা ইল্লাল্লাহ কোনো অস্তিত্বই নাই আল্লাহ ছাড়া,  যা কিছু আছে সবটুকুই তিনি, তিনি অখন্ড ওস্বয়ংভূ। আমাদেরকে আরশ বুঝতে হবে, আল্লাহর গুনাবলি যে সত্তা বা আধার বহন করে সেই সত্তা বা আধারই আল্লাহর আরশ। সুতরাং আদমই হল আল্লাহর আরশ (ইনসান নহে) যিনি জাগ্রহ রূহের অধিকারী তিনিই আদম। তাই কোরানিক দর্শন জানান দিচ্ছে আদমকে সিজদা কর, আদম ব্যতীত অন্য কোথাও সিজদা দিলে সেই সিজদা আল্লাহর নয়, সেই সিজদা দেওয়া হবে শয়তানের।

সুতরাং ইবাদত, আনুগত্য সবকিছু আদমের মাধ্যমেই করতে হবে, কোরানিক দর্শন জানান দিচ্ছে- “ফাসাব্বি বি ইসমি রাব্বিকাল আজিম” সুতরাং “তাসবিহ কর, তোমার রবের নামের দ্বারা যিনি আজমতওয়ালা। মনগড়া বিধানের নয়।” তাই আদম নবী, আদম রসূল, আদম অলি, আদম গাউস, আদম কুতুব, আদম আরিফ, আদম আবদাল ইত্যাদি।

আদম সত্যদ্রষ্টা, আদমই ঈমানের সাক্ষী। সুতরাং আল্লাহর অলিরা বলেন- চরমসত্যের কোনো গালি নাই। যে যতটুকু বুঝে তার উপলব্ধি ততটুকুই। আল্লাহ অসীম তার জ্ঞানও অসীম। আপনার আমার তকদীর যেখানে রাখে সেখানেই থাকতে হবে।

– আর এফ রাসেল আহমেদ

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel