বুদ্ধ যে কারণে ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন
ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করে বুদ্ধ (আ:) মানুষকে সর্বাধিক মর্যাদায় সম্মানিত করেছে। একই যুক্তি নাস্তিকরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করে। তাহলে দুজনের মধ্যে পার্থক্য কি?
বুদ্ধ (আ:) ও আধুনিক নাস্তিকদের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যদিও উভয়েই ঈশ্বর-কেন্দ্রিক দর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষের মর্যাদাকে উচ্চে স্থান দিয়েছেন। পার্থক্যগুলো হলো:—
প্রত্যাখ্যানের ধরন ও উদ্দেশ্য:-
বুদ্ধ (আ:) ঈশ্বরের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন মূলত দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক কারণেই। তিনি মনে করতেন, মুক্তি (নির্বাণ) অর্জনের জন্য বাইরের কোনো ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর না করে মানুষকে নিজের চেষ্টার ওপর নির্ভর করতে হবে। তার দর্শন ছিল আত্ম-উন্নয়ন, চেতনার পরিশুদ্ধি এবং দুঃখ-নাশের পথ।
নাস্তিকরা সাধারণত ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রত্যাখ্যান করে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান ও বস্তুবাদী চিন্তাধারার মাধ্যমে। তাদের মূল যুক্তি হলো— ঈশ্বরের কোনো প্রমাণ নেই, তাই এটি একটি অমূলক ধারণা। অনেক নাস্তিক ধর্মকে অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর হিসেবেও দেখে থাকেন।
নৈতিকতার ভিত্তি:-
বুদ্ধ (আ:) নৈতিকতার ভিত্তি স্থাপন করেন করুণা, অহিংসা ও সংযমের ওপর। তার মতে, ভালো-মন্দ নির্ধারণ হয় কর্মফল (কাম্ম) দ্বারা, এবং এটি একটি স্বতন্ত্র নৈতিক ব্যবস্থা। নাস্তিকদের নৈতিকতা সাধারণত মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ ও সামাজিক চুক্তির ওপর নির্ভরশীল। তারা মনে করেন, ভালো-মন্দ নির্ধারণের জন্য কোনো আধ্যাত্মিক নিয়মের প্রয়োজন নেই, বরং যুক্তি ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই এটি নির্ধারিত হয়।
আধ্যাত্মিকতা বনাম বস্তুবাদ:-
বুদ্ধের দর্শন আধ্যাত্মিক, যেখানে চেতনার উন্নতি ও আত্ম-অনুসন্ধানের মাধ্যমে মুক্তির কথা বলা হয়। নাস্তিকতা সাধারণত বস্তুবাদী বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে, যেখানে আধ্যাত্মিকতার কোনো স্থান নেই।
পরকাল ও মুক্তি:-
বুদ্ধ (আ:) পুনর্জন্ম ও নির্বাণের ধারণা দিয়েছেন, যা একজন মানুষ তার কর্ম ও আত্ম-উন্নতির মাধ্যমে অর্জন করতে পারে। নাস্তিকরা সাধারণত পুনর্জন্ম বা মুক্তির ধারণাকে অবৈজ্ঞানিক বলে মনে করে এবং মৃত্যুর পর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না বলে বিশ্বাস করে।
শেষ কথা:-
বুদ্ধ (আ:) ঈশ্বরের ধারণা প্রত্যাখ্যান করলেও তিনি আধ্যাত্মিক মুক্তি, নৈতিকতা ও আত্ম-উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্যদিকে, নাস্তিকরা ঈশ্বরের ধারণা বাতিল করে বস্তুবাদী ও যুক্তিবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন ও নৈতিকতাকে ব্যাখ্যা করে। সুতরাং, দুজনের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো— বুদ্ধের পথ আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতির দিকে, আর নাস্তিকতা সাধারণত বস্তুবাদী ও যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
-ফরহাদ ইবনে রেহান
৩০/০১/২০২৫