ইসলামের ইতিহাসের ভয়ানক তথ্য।
(মারেফতের গোপনেরও গোপন কথা পবিত্র গ্রন্থ হতে সংগৃহীত…)
মহানবির কন্যা খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমার স্বামী মাওলা আলিকে কুফার মসজিদে নামাজরত অবস্থায় আব্দুর রহমান ইবনে মোলজেম শহিদ করেন। মাওলা আলির বড় ছেলে ইমাম হাসানকে খাদ্যের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মুয়াবিয়া শহীদ করেন। ঐতিহাসিকেরা বলেন যে, সেই বিষ এতোই ভয়ংকর ছিলো যে, রক্তবমির সঙ্গে কলিজার টুকরো অংশগুলো বেরিয়ে গেছে। পাঠক ভাই, শুনতে কেমন লাগছে? আপন শ্বাশুড়ি সালাম পায়না নামের শ্বাশুড়ি পা বাড়ায়। বলছি এই জন্য যে, বুদ্ধিমানকে ইশারা করলেই পরিস্কার বুঝতে পারে। মাওলা আলির পূত্র এবং মহানবীর সবচাইতে আদুরে নাতি শহিদে আজম ইমাম হোসায়েনকে কারবালার মধ্যে এজিদের হুকুমে ইবনে জিয়াদের নির্দেশে আনাস ইবনে নাখই ওরফে সীমার শহিদ করেছে। কেবল কি ইমাম হোসায়েন? না, অনেক আপনজনও শহিদ হয়েছেন।
তার মধ্যে ইমাম হোসায়েন এর বড় ছেলে আলি আকবর, দশ মাসের দুধের শিশু আলি আসগর, ইমাম হাসানের ছেলে ইমাম কাসেম এবং ইমাম হোসায়েন এর ভাই ইমাম আব্বাস এবং ইমাম আউন এবং আরও অনেকে। ইমাম হোসায়েনকে যে মহানবী কতখানি ভালোবাসতেন সে কথাগুলোর সামান্য কিছু পাঠক ভাইদের কাছে তুলে ধরবো, যা পড়লে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। শুনতে কেমন লাগে যে, মহানবীর একুশ হাজার সাহাবা কারবালার মাঠে ইমাম হোসায়েনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে! তবে এদের মধ্যে মাত্র তেত্রিশ জন সাহাবা ইমাম হোসায়েনের দলে এসে যোগ দেন। তাঁরা হলেন হযরত হুর, তার পুত্র এবং আরও একত্রিশ জন সাহাবা। আজও বাগদাদে হযরত হুরের মাজারে লাখো-লাখো মুসলমান ফুল আর চোখের জল দিয়ে প্রাণঢালা শ্রদ্ধা জানায়।
কারবালার মাঠে ইমাম হোসায়েনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মহানবীর এই একুশ হাজার সাহাবা যে সমস্ত হাদিস মহানবীর নামে প্রচার করে গেছে তাদের বর্ণিত হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা কতটুকু তা বিচারের ভারটি পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিলাম। তবে সেই সঙ্গে এটুকু বলা প্রয়োজন যে মহানবী ইমাম হোসায়েনকে কতখানি ভালোবাসতেন। হযরত সালমান ফার্সি বলেছেন যে, একদিন আমি দেখলাম ইমাম হোসায়েন মহানবীর পাশে বসে আছেন এবং আমাদেরকে লক্ষ্য করে মহানবী বললেন, ‘ তোমরা দেখ একজন সাইয়্যেদকে, যিনি সাইয়্যেদের পুত্র এবং সাইয়্যেদের পিত।’ মহানবী মসজিদে নামাজের ইমামতি করছেন। নামাজে সেজদায় যাবার সময় ইমাম হোসায়েন মহানবীর পিঠ মোবারকে বসে পড়লেন। মহানবী সুবহানা রাব্বিল (ভাসমান রব) আলা’ যেখানে তিনবার পড়ার নিয়ম সেখানে সত্তরবার পড়ার পর ইমাম হোসায়েন পিঠ মোবারক হতে নেমে যাবার পর পবিত্র মস্তক মোবারক উঠালেন। একদিন মদিনার মসজিদে সাহাবাদের ধর্ম বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছিলেন, এমন সময় ইমাম হোসায়েন মহানবীর দিকে এগিয়ে আসছেন দেখতে পেয়ে সঙ্গে-সঙ্গে উপদেশ দেওয়া বন্ধ করে দিলেন এবং তাড়াতাড়ি ইমাম হোসায়েনকে কোলে নিলেন।
হযরত আনাস বলেছেন, ‘ মহানবীর সঙ্গে এত হুবহু মিল আর কারো ছিলো না, একমাত্র ইমাম হোসায়েন ছাড়া।’ হজরত ইবনে কাথির (রা.) বলেছেন, আমি হোসায়েনের মত অপূর্ব সুন্দর আর দেখিনি।’ ইমাম হোসায়েনের জম্নগ্রহণ করার পর চোখ বন্ধ ছিলো এবং মায়ের দুধ পান করছেন না দেখে হজরত সালমান ফারসিকে দিয়ে মহানবীকে এই খবর পাঠানোর পর মহানবী এলে শিশু হোসায়েন চোখ খুলে সর্ব প্রথম মহানবীকে দেখলেন এবং মহানবীর মহা পবিত্র জিহ্বা চুষে লালা মোবারক পান করলেন এবং তখন মহানবী বললেন, ‘ হোসায়েনু মিননি ওয়া আনা হোসায়েন ‘ তথা ‘ হোসায়েন আমা হতে এবং আমি হোসায়েন হতে।’ সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করে মহানবী বললেন, ‘ এই দুনিয়াতে এবং বেহেশতে সবচাইতে প্রিয় মানুষটিকে দেখতে চাও? তাহলে দেখে নাও হোসায়েনকে।’ হজরত হুজায়ফা (রা.) বলেছেন, ‘ আমি দেখেছি যে, মহানবী হোসায়েনের হাত ধরে বলছেন, হে আমার সাহাবারা, তোমরা যেনে রাখ, এই হোসায়েন আলি এবং ফাতেমার পুত্র, তোমরা আরও জেনে রখ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ সেই আল্লাহর কসম, হোসায়েন বেহেশতে আছে ( বর্তমান কাল), তাঁর বন্ধুরাও বেহেশতে তাঁর সঙ্গী হবে।’
মহানবী বলেছেন, ‘ হাসান এবং হোসায়েন বেহেশতের দুই যুবক। হাসান এবং হোসায়েন দু’জনই ইমাম, দাড়ানো কি বসা অবস্থায়। ‘ ইমাম হোসায়েনের একমাত্র বেঁচে যাওয়া পুত্র ইমাম জয়নুল আবেদীন, যিনি চার নম্বর ইমাম বলে পরিচিত, তিনিও বিষ মেশানো খাদ্য খেয়ে শহিদ হন। তাঁকে বিষ মেশানো খাদ্য দিয়ে শহিদ করে উমাইয়া রাজবংশের খলিফা ওয়ালিদ, যে ছিলো খলিফা আব্দুল মালেকের পুত্র। এই খলিফা আব্দুল মালেকই ছিলো কুখ্যাত এবং ধিকৃত, মহানবীর দেওয়া মৃত্যুদন্ডের আসামী এবং হজরত ওসমান (রা.) কে শহিদ করার জঘন্য চক্রান্তকারী, ইবনে হেকাম। যেমন গাছ তেমনি ফল। ইমাম জয়নুল আবেদিনের একমাত্র পুত্র ইমাম বাকের, যিনি পাঁচ নম্বর ইমাম বলে পরিচিত, তাঁকে শহিদ করে উমাইয়া রাজবংশের খলিফা হিমাশ। ঐ কুখ্যাত খলিফা আব্দুল মালেকের আরেক কুখ্যাত পুত্র ছিল। ইমাম বাকেরের ছেলে এবং ছয় নম্বর ইমাম এবং ওলিদের ইমাম বলে মুসলিম সমাজে যিনি সুপরিচিত সেই ইমাম বায়েজিদ বোস্তামির মুর্শিদ ইমাম জাফর সাদেককে শহিদ করে কুখ্যাত এবং অভিশপ্ত তথা ধিকৃত খলিফা মনসুর। এই সেই খলিফা মনসুর যে ইসলামের ইতিহাসে রক্তপিপাসু বলে পরিচিত।
ইমাম জাফর সাদেকের পুত্র এবং সাত নম্বর ইমাম মুসা কাজেমকে শহিদ করে আব্বাসীয় রাজবংশের খলিফা হারুন অর রশিদ। একজন মোমিনকে জেনে-শুনে হত্যা করলে কোরান মতে সঙ্গে-সঙ্গে সে কাফের হয়ে যায়। সেখানে আওলাদে রসুল ইমাম মুসা কাজেমকে শহিদ করার পরও আব্বাসীয় রাজবংশ কত রকম চটকদার গল্প বানিয়ে স্ত্রী জুবায়েদার মুর্শিদ বাহালুলদানাকে দিয়ে বেহেশত পাবার গাঁজাখুরি কত গপ্প বানিয়ে আজও মুসলিম সমাজকে বোকার ফাঁদে ফেলে রাখা হয়েছে। ইমাম মুসা কাজিমের পুত্র এবং আট নম্বর ইমাম আলি রেজাকে বিষ প্রয়োগ করে শহিদ করেছে আব্বাসীয় রাজবংশের খলিফা মামুন আর রশিদ। সে খলিফা হারুন আর রশিদ এর ছোট ভাই। খলিফা হারুন আর রশিদের বাবার একটি খুবই সুন্দরী এবং যুবতী বাঁদী ছিলো এবং পিতার মৃত্যুর পর বাবার যৌনসঙ্গী যে মাতার স্থান পাওয়ার বিধান, সেই বিধান হারুন আর রশিদের বেতনখোর আলেমেরা ফতোয়া দিয়ে পাল্টিয়ে ছেলের জন্য যৌনসঙ্গী হওয়া হালাল করা হয়েছিল।সেই দিনের বেতনখোর কত
সেই দিনের বেতনখোর কত রঙ-বেরঙের ফতোয়া দেওয়া হতো ইতিহাসগুলো ভালো করে পড়লেই সেই প্রকার আলেমদের চরিত্রের নকশা-নমুনা হাড়ে-হাড়ে টের পাবেন। যেখানে মহানবীর বার বার সাবধান করে দেওয়া বাণীটি হলো, তোমরা দুটো বিষয় ধরে রাখলে গোমরাহ হবে না : একটি কেতাব এবং অপরটি আলে বায়েত তথা নবিবংশ। আলে বায়েত তথা নবিবংশের কথাটি বলা হয়েছে, অথচ আলে বায়েতের উপর ভরসা রাখা তো দূরের কথা বরং মহানবীর বাণীর সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের একের পর এক শহিদ করে গেছে এই অভিশপ্ত উমাইয়া রাজবংশ এবং আব্বাসীয় রাজবংশ। এই দুই রাজবংশের যুগে কত জাল হাদিস বানানো হয়েছে তার নমুনাগুলো দেখলেই বুঝা যায়। যত উল্টাপাল্টা ফতোয়া, কোরান এর মনগড়া ব্যাখা তথা তফসির করা হয়েছে যার জের আজকের মুসলমানেরাও টেনে চলছি। আমাদের ভাগ্য যে আমরাই পরিবর্তন করে নিয়েছি। কারণ আল্লাহ্ সেই জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যারা নিজেদের ভাগ্য নিজেরা পরিবর্তন করে নিতে পারে না।
কোরান – এর এত বড় গুরুত্বপূর্ণ বাণীটিকে আমরা গ্রহণ করে নিতে পারিনি বলে আমাদের ছাপ্পান্নটি মুসলিম দেশের চেহারা সুরত দেখে কি বুঝতে পারা যায় না? হাতের আঙুল কি আয়না দিয়ে দেখতে হয়। ইমাম আলি রেজার পুত্র এবং নয় নম্বর ইমাম আলি তাকিকে বিষপ্রয়োগ করে শহিদ করেছে আব্বাসীয় রাজবংশের কুখ্যাত খলিফা মোতাসিম এবং এই কুখ্যাত খলিফার দ্বারা নবিবংশের দশ নম্বর ইমাম আলি নাকিকেও বিষ প্রয়োগ করে শহিদ করেছিল। লজ্জায় বলতে হয় যে, এই সেই কুখ্যাত খলিফা যে বলতো যে, একটি নারীর সঙ্গে কয়েক রাত থাকলেই তো বাসি হয়ে যায় এবং আরও অশ্লীল কথা যা লিখে জানাতে পারলাম না। সেই যুগে সে বহু নারী ভোগে রেকর্ড ভঙ্গ করেছিল। এই তো আব্বাসীয় যুগের খলিফাদের কীর্তিকলাপ। অবশ্য এদের করুণ পরিনতির কথা ইতিহাসে লেখা আছে। চেঙ্গিস খাঁর পুত্র হালাকু খাঁ যখন বাগদাদ শহর আক্রমণ করেছিল তখন বাগদাদ নগরীর লক্ষ -লক্ষ মুসলমানদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল এবং বাগদাদের রাজকীয় লাইব্রেরিতে যে লক্ষ-লক্ষ পান্ডুলিপি আকারে বই ছিল প্রায় সবই পুড়িয়ে দিয়েছিল। অবশ্য কিছু পান্ডুলিপি আগুন হতে রক্ষা পেয়েছিল।
কিন্তু সেই বিশাল লাইব্রেরির যিনি রক্ষক ও প্রধান ছিলেন সেই রকম আলিকে কয়েক টুকরো লাইব্রেরির সদর দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। বিখ্যাত পুস্তক তাজকেরাতু আউলিয়ার লেখক শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তারকেও এই সময় হালাকুর সৈন্যবাহিনী নির্মমভাবে শহিদ করেছিল। ইমাম আলি নাকির পুত্র এবং এগার নম্বর ইমাম হাসান আশকারিকেও বিষ প্রয়োগ করে শহিদ করেছিল আর এক কুখ্যাত আব্বাসীয় খলিফা মোতামাদ।
নবিবংশ এবং কেতাবকে ধরে রাখতে পারলে গোমরাহ হবে না’ মহানবীর এই অমূল্যবাণীর মর্যাদা রাখা তো দূরে থাক, বরং একটি পয়সাও যদি মূল্য দিত তাহলে নবিবংশের প্রতিটি ইমামকে এমন নিষ্ঠুরভাবে শহিদ করতে পারতো না এই দুই রাজবংশ উমাইয়া আর আব্বাসীয়রা। নিজেদের হীন স্বার্থ রক্ষার জন্য এরা এমন কোনো কুকর্ম নাই যা না করতে পেরেছে। পাঠক ভাই, এই দুই রাজবংশের বিস্তারিত ইতিহাসগুলো পড়ে দেখলে আপনি চমকে যাবেন এদের নিষ্ঠুর আচরণ ও বর্বরতার নকশা-নমুনা দেখে। এরা আনুষ্ঠানিক ধর্ম পালন করেছে বটে, কিন্তু আসল বিষয়টি হতে বহুদূরে সরে গিয়েছিল বলেই হালাকু খাঁর হাতে নির্মম শিক্ষা নিয়ে ইতিহাস হতে চির বিদায় নিতে হয়েছিল।
– ডাঃ বাবা জাহাঙ্গীর বা ঈমান আল সুরেশ্বরী
নিবেদক: Emran Hassan Emon