গৌতম বুদ্ধ ছিলেন একজন শ্রমণ (তপস্বী) ও জ্ঞানী, যাঁর শিক্ষার ভিত্তিতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। তিনি সিদ্ধার্থ গৌতম, শাক্যমুনি বুদ্ধ, বা ‘বুদ্ধ’ উপাধি অনুযায়ী শুধুমাত্র বুদ্ধ নামেও পরিচিত। অনুমান করা হয়, তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ থেকে ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে প্রাচীন ভারতের পূর্বাঞ্চলে জীবিত ছিলেন এবং শিক্ষাদান করেছিলেন।
গৌতম বুদ্ধের চিরন্তন বাণী সমূহ
(১) অস্ত্র, প্রাণী, মাংস, নেশা, বিষ- বাণিজ্য করবে না। এগুলো মিথ্যাজীবিকা। ধর্মের পরিপন্থী।
(২) নিজেকে বিজয়প্রাপ্ত করা, অন্যের উপর বিজয়প্রাপ্ত করার থেকে বড় কাজ হয়ে থাকে।
(৩) সত্যিকারের ভালোবাসা, বোঝার থেকেই হয়।
(৪) পরমাত্মা প্রত্যেকেই একই রকম করেছেন, পার্থক্য তো শুধু আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে।
(৫) সন্দেহের অভ্যাস সবচেয়ে ক্ষতিকারক, এটা মানুষকে দূষিত করে। সন্দেহ একটা ভালো বন্ধুত্ব ও ভালো সম্পর্কে ধ্বংস করে দেয়।
(৬) যদি আপনার দয়া আপনাকে সম্মিলিত করতে না পারে, তাহলে সেটা অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে।
(৭) অন্যের জন্য ভালো কিছু করতে পারাটাও তোমার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
(৮) ক্ষমাশীল, গুরুজনের আদেশ পালনে সুবাধ্যতা, শীলগুণসম্পন্ন ভিক্ষু- শ্রামণদের দর্শন ও ধর্মালোচনা করবে।
(৯) ইহ-পরকাল ও কর্মফলের প্রতি গভীর বিশ্বাস রেখে স্বধর্মের পথে চলার নাম সম্যক দৃষ্টি।
(১০) সবচেয়ে অন্ধকার রাতের অর্থ অজ্ঞানতা।
(১১) নিশ্চিতভাবে যে ব্যক্তি বিরক্তিপূর্ণ চিন্তার থেকে মুক্ত থাকে, সেই শান্তি পেয়ে থাকে।
(১২) আমি কখনোই দেখি না যে কি কি চলে গেছে, আমি সর্বদা দেখে আর কি করা বাকি আছে।
(১৩) যিনি অস্থিরচিত্ত, যিনি সত্যধর্ম অবগত নন, যার মানসিক প্রসন্নতা নেই, তিনি কখনো প্রাজ্ঞ হতে পারেন না।
(১৪) রেগে যাওয়া মানে নিজেকেই শাস্তি দেওয়া।
(১৫) প্রতিদিন সকালে আমাদের নতুন করে জন্ম হয়। তাই আজ আমরা কি করছি, সেটাই সবথেকে বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
(১৬) শান্তি মনের ভিতর থেকে আসে, তাই সেটা ছাড়া শান্তির অনুসন্ধান করোনা।
(১৭) বর্ষাকালে এখানে, শীত-গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবো-মূর্খরাএভাবেই চিন্তা করে। শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে।
(১৮) জগতে শত্রুতার দ্বারা কখনো শত্রুতার উপশম হয় না, মিত্রতার দ্বারাই শত্রুতার উপশম হয়।
(১৯) তোমার রাগের জন্য তুমি শাস্তি পাবে না, তোমার রাগ দ্বারা তোমার শাস্তি হবে।
(২০) নিজের কথার মূল্য দিতে হবে নিজেকেই। কেননা, তোমার নিজের কথার ওপর নির্ভর করবে অন্যের ভালো কাজ কিংবা মন্দ কাজ।
(২১) যা আপনি চিন্তা করবেন, তাই আপনি হবেন।
(২২) সুখের জন্ম হয় মনের গভীরে। এটি কখনও বাইরের কোনো উৎস থেকে আসে না।
(২৩) তোমাকে তোমার রাগের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে না বরং তুমি তোমার রাগের দ্বারাই শাস্তি পাবে।
(২৪) বাস্তব জীবনের সবচেয়ে বড় বিফলতা হলো, আমাদের অসত্যবাদী হয়ে থাকা।
(২৫) এই তিনটি সর্বদা দেখা দেবেই: চাঁদ, সূর্য এবং সত্য।
(২৬) সত্য বলিও, ক্রোধ করিও না; প্রার্থীত হইয়া সামান্য কিছু দান করিও। এই ত্রিবিধ উপায়ে দেবগণের সান্নিধ্যে গমন করিবে।
(২৭) সবকিছুকে বোঝার অর্থ সবকিছুকে ক্ষমা করে দেওয়া।
(২৮) জীবনে ব্যাথা থাকবেই, কিন্তু কষ্টকেই ভালোবাসতে শেখো।
(২৯) আত্মনির্ভরশীল হও। আত্মপ্রত্যয়ী হও। আত্মশরণই শ্রেষ্ঠ শরণ।
(৩০) তুমিই কেবল তোমার রক্ষাকর্তা, অন্য কেউ নয়।
(৩১) মন ধর্মের পূর্বগামী, মনই শ্রেষ্ঠ, সকলই মনোময়।
(৩২) নিজের কথার মূল্য দিতে হবে নিজেকেই। কেননা, তোমার নিজের কথার ওপর নির্ভর করবে অন্যের ভালো কাজ কিংবা মন্দ কাজ।
(৩৩) ধৈর্য হলো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। মনে রাখবে, একটা কলসি বিন্দু বিন্দু জলের দ্বারাই ভর্তি হয়।
(৩৪) রাগের বশে হাজারও শব্দকে খারাপভাবে বলার থেকে ভালো মৌনতা হচ্ছে এমন একটা শব্দ, যেটা জীবনে শান্তি নিয়ে আসে।
(৩৫) আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। একজন আরেকজনের পরিপূরক। অর্থাৎ সমাজে আমরা কেউ একা নই।
(৩৬) পবিত্রতা কিংবা অপবিত্রতা নিজের উপর নির্ভর করে। কেউই অন্য কাউকে পবিত্র করতে পারে না।
(৩৭) প্রাজ্ঞবান ব্যক্তি কখনো নিন্দা বা প্রশংসায় প্রভাবিত হয় না।
(৩৮) পা তখনই অন্য পাকে অনুভব করে, যখন সেটা মাটিকে ছোঁয়।
(৩৯) শুভর সূচনা করতে প্রত্যেক নতুন সকালই তোমার জন্য এক একটি সুযোগ।
(৪০) তোমার চিন্তাই তোমার শক্তির উৎস। নেতিবাচক চিন্তা তোমাকে অনেক বেশি আঘাত করে যা তোমার ধারণায় নেই।
(৪১) তুমি মুখে কী বলছো সেটি কোনো বিষয় নয়, বিষয় হলো তোমার কাজ।
(৪২) শান্তি মনের ভিতর থেকে আসে, তাই সেটা ছাড়া শান্তির অনুসন্ধান করোনা।
(৪৩) মা যেমন তাঁর নিজ পুত্রকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করে, তেমনি সকল প্রাণীর প্রতি অপরিমেয় মৈত্রীভাব পোষণ করবে।
(৪৪) প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে, তার নিজের দুনিয়াকে স্বয়ং নিজে খোঁজার।
(৪৫) হাজারও খালি শব্দের থেকে ভালো সেই শব্দ, যেটা শান্তি নিয়ে আসে।
(৪৬) মূর্খের সেবা করবে না। পণ্ডিতের সান্নিধ্যে যাবে। পূজনীয় ব্যক্তিকে পূজা করবে।
(৪৭) একটা শুদ্ধ এবং নিস্বার্থ জীবনযাপন করার জন্য একটা ব্যক্তিকে, সবকিছুর মধ্যেও কিছুই নিজের না; এই ভাবনা রাখতে হবে।
(৪৮) রণক্ষেত্রে সহস্রযোদ্ধার ওপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ।
(৪৯) আনন্দ হলো বিশুদ্ধ মনের সহচর। বিশুদ্ধ চিন্তাগুলো খুঁজে খুঁজে আলাদা করতে হবে। তাহলে সুখের দিশা তুমি পাবেই।
(৫০) দুশ্চরিত্র ও অসমাহিত চিত্তে শত বছর বেঁচে থাকার চেয়ে সৎচরিত্রও ধ্যানী ব্যক্তির একদিনের জীবনও শ্রেয়।
(৫১) পরের কৃত ও অকৃত কার্যের প্রতি লক্ষ্য না রেখে নিজের কৃত ও অকৃত কার্যের প্রতি লক্ষ্য রাখবে।
(৫২) সুখের কোনো উপায় নেই, সুখীতে থাকাই হচ্ছে এর একমাত্র উপায়।
(৫৩) যিনি উপদেশ দেন, অনুশাসন করেন এবং অসভ্যতা নিবারণ করেন তিনি অসতের অপ্রিয় এবং সৎলোকের প্রিয় হন।
(৫৪) একটি মানুষের মন তার প্রকৃত বন্ধু কিংবা শত্রু হয়ে থাকে।
(৫৫) পাপী বন্ধু ও নিকৃষ্ট ব্যক্তির সংসর্গে থাকবে না। কল্যাণমিত্র ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরদের সান্নিধ্যে থাকবে।
(৫৬) প্রচুর সম্পদের মাঝে সুখ নেই, মনের সুখই আসল সুখ।
(৫৭) প্রত্যেক অভিজ্ঞতা কিছু না কিছু শেখায়। প্রত্যেক অভিজ্ঞতাই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা আমাদের ভুল থেকেই শিখি।
(৫৮) অনিয়ন্ত্রিত মন মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে। মনকে প্রশিক্ষিত করতে পারলে চিন্তাগুলোও তোমার দাসত্ব মেনে নেবে।
(৫৯) প্রত্যেক মানুষ, তার স্বাস্থের কিংবা রোগের সৃষ্টিকর্তা হয়ে থাকে।
(৬০) কোনো পাপকেই ক্ষুদ্র মনে করো না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাপই জমা হতে হতে মূর্খের পাপের ভাণ্ড পূর্ণ করে ফেলে।
(৬১) অতীতকে প্রাধান্য দিও না, ভবিষ্যত নিয়ে দিবাস্বপ্নও দেখবে না। তার চেয়ে বরং বর্তমান মুহূর্ত নিয়ে ভাবো।
(৬২) তিনটি জিনিস দীর্ঘসময় লুকিয়ে রাখা যাবে না- সূর্য, চাঁদ এবং সত্য।
(৬৩) জীবনের প্রথমেই ভুল হওয়া মানেই এই নয় এটিই সবচেয়ে বড় ভুল। এর থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যাও।
(৬৪) স্বাস্থ্য ছাড়া জীবন, সত্যিকারের জীবন নয়। এটা বেদনার একটা স্থিতি আর মৃত্যুর একটা রূপ।
(৬৫) লক্ষ্য বা গন্তব্যে পৌঁছানোর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেই যাত্রাকে ভালোভাবে পূরণ করা হয়ে থাকে।
(৬৬) অর্থহীন সহস্র বাক্য অপেক্ষা একটিমাত্র সার্থক বাক্য যা শুনে লোকে শান্তি লাভ করে তাই শ্রেয়।
(৬৭) যে ভালোভাবে জীবন কাটিয়েছে, সে মৃত্যুকেও ভয় পায় না।
(৬৮) ঘৃণায় কখনও ঘৃণা দূর হয় না। অন্ধকারে আলো আনতে তোমাকে কোনো কিছুতে আগুন জ্বালতেই হবে।
(৬৯) যে ব্যক্তি জেগে থাকে তার রাত্রি দীর্ঘ হয়; ক্লান্ত ব্যক্তির পথ দীর্ঘ হয়; সদ্ধর্মানভিজ্ঞ ব্যক্তির সংসার ভ্রমণ দীর্ঘ হয়।
(৭০) সত্যিকারভাবে ক্ষমতা নিয়ে বাঁচতে হলে নির্ভয়ে বাঁচো।
(৭১) কোনো খারাপ জিনিস, কোনো খারাপ চিন্তা থেকেই আসে।
(৭২) তুমি যদি সত্যিই নিজেকে ভালোবাসো, তাহলে তুমি কখনোই অন্যকে আঘাত দিতে পারবে না।
(৭৩) বৃকী যেমন মেষ লইয়া পলায়ন করে, মৃত্যু তেমনই সঞ্চয় নিরত অতৃপ্তকাম ব্যক্তিদের নিয়ে প্রস্থান করে।
(৭৪) সবকিছুর জন্য মনই আসল। সবার আগে মনকে উপযুক্ত করো, চিন্তাশীল হও। আগে ভাবো তুমি কী হতে চাও।
(৭৫) ভালো কাজ সবসময় কর। বারবার কর। মনকে সবসময় ভালো কাজে নিমগ্ন রাখো। সদাচরণই স্বর্গসুখের পথ।
(৭৬) জ্ঞানগর্ভ জীবনের জন্য মুহূর্তের ইতিবাচক ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এই জন্য ভয়কে তুচ্ছ করতে হবে, এমনকি মৃত্যুকেও।
(৭৭) যে ব্যক্তি মানুষকে ভালোবাসে, সে দুঃখের দ্বারা ঘিরে থাকে এবং যে কাউকে ভালোবাসে না, তার কোনো সংকট নেই।