হোমপেজ বাণী ও উপদেশ মানসুর আল–হাল্লাজের কয়েকটি মরমী কবিতা

মানসুর আল–হাল্লাজের কয়েকটি মরমী কবিতা

567

মানসুর আল–হাল্লাজ: পুরো নাম ‎‎(আবু আব্দুল্লাহ হুসাইন ইবনে মানসুর আল-হাল্লাজ)” (৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ – মার্চ ২৬, ৯২২ খ্রিষ্টাব্দ), (হিজরী ২৪৪ হিজরী – ৩০৯ হিজরী) ছিলেন একজন ইরানী মরমি সুফী, বৈপ্লবিক সাহিত্যিক এবং সুফিবাদ-এর একজন দিকদর্শি।

তিনি মুসলিম জগতে খ্যাত প্রধানত তার চরম বিতর্কিত বক্তব্য “আনাল হাক্ক” (“আমিই পরম সত্য”) এই কথা উচ্চারণের কারণে তিনি লম্বা বিচারকার্যের সম্মুখীন হন এবং দীর্ঘ ১১ বছর বাগদাদ নগরে কারাবাস করেন। অবশেষে উনাকে ৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চ জনসমক্ষে তত্কালীন সকল ফুকাহায়ে কেরামের ফতোয়ার ভিত্তিতে সরকারি বিচারকদের নির্দেশে হত্যা করা হয়।

মানসুর আল–হাল্লাজের কয়েকটি মরমী কবিতা:

১.
তোমার আত্মা মিশে আছে আমার আত্মায়
বিশুদ্ধ জল ও মদ- মিশে যায় যেমন করে।
আর তোমাকে যা স্পর্শ করে
এই আমাকেও ছুঁয়ে যায় তা।
দ্যাখো, সবকিছুতেই শুধু ‘তুমি আর আমি’।

২.
আমিও এক টুকরো মনসুর হাল্লাজ
দুনিয়াকে ভেবে আমার বলো কী কাজ!
আমিতো স্বপ্নে তোমার আরশের কারুকাজ দেখি
তোমার নুরের তাজাল্লিতে দুচোখ করে মাখামাখি
রাখি তোমার করুণার বালিশে মাথা
অযথাই মোল্লা পুরোতের দল আমায় ভয় দেখায় কত
আমিতো তোমাতে মিশে সারাতে চাই হৃদয়ের যত ক্ষত

৩.
আমিই ‘সে’ যাকে ভালোবাসি
আর যাকে ভালোবাসি, ‘সে’ই আমি:
আমরা দুটি আত্মা
বাস করছি একদেহে।
তোমরা যদি আমার দিকে তাকাও,
তাকে দেখতে পাবে,
আর যদি তার দিকে তাকাও,
দেখতে পাবে আমাদের দুজনকেই।

৪.
তোমার আহ্বান উচ্চারিত হয় আমার ঠোঁটে,
তোমার ঠিকানা এই আমারই হৃদয়ে-
তাহলে, কোথায় তুমি থাকো না বলোতো?

৫.
আমার বিশ্বস্থ বন্ধুরা,
হত্যা করো আমাকে
কেননা, নিহত হবার ভেতরেই
নিহিত আছে আমার বেঁচে থাকা।

৬.
প্রেম সেটাই যখন তুমি দাঁড়িয়ে আছো
তোমার কাঙ্ক্ষিতের সামনে
যখন বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে
তোমার সমুদয় নিজস্বতা;
তখন তার গুণাবলীই হয়ে ওঠে
তোমার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য।
তোমার আর আমার মাঝখানে,
শুধু আমি আছি।
আমিটাকে সরিয়ে নাও,
তাহলেই শুধু তুমি থাকবে।

৭.
তোমার আহ্বান ধ্বনিত হচ্ছে আমার ঠোঁট-মারফত,
আমার কলবে তোমার বাস
তাহলে, কোন স্থান থাকতে পারে,
যেখানে অনুপস্থিত তুমি?

৮.
ধোঁকা দিয়ে যায় বাস্তু পৃ্তহিবী
কোনো কিছুই জানিনা আমি তার
তাদ্র মত নিসিদ্ধ সব
খোদ খোদাকে যারা মন্দ বলে।
আমিও তাদের সিদ্ধগুলোকে নিসিদ্ধ ভাবি
দাক্ষিণ্য যখন বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে
আমি দেখে যায় কাঙালের মতো
তাদের রূপেই সাজায় যখন তারা আমাকে।
যখন আমি তাদের অধিকারে
ভীষণ বিষন্ন নিজের ভয়ে।

৯.
প্রণয়-সমুদ্রে আমি সাঁতার থামাচ্ছি না
জেগে উঠছি ঢেউশীর্ষে,
তারপর তলিয়ে যাচ্ছি
এক্ষুণি ঢেউ আমাকে টিকিয়ে রাখছে,
আর তার পরক্ষণেই ডুবে যাচ্ছি নিচে;
প্রেম আমাকে সেখানেই বয়ে নিচ্ছে
যেখানে নেই কোনও সমুদ্রসৈকত।

১০.
তোমার জন্যই আমি ত্বরিতে ছুটছি স্থল
ও জলভাগের ওপর দিয়ে: তোমার জন্যই,
পার হচ্ছি মরুভূমি আর দুভাগ করছি পাহাড়,
আর সবকিছু থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছি মুখ,
যতক্ষণ না সেই মোকামে পৌঁছানোর সময় হচ্ছে
যেখানে তোমার সাথে আমার দিদার হবে একা।

১১.
সত্যের সন্ধান পেতে ধর্ম পড়ি,
আর খুঁজে পাই শাশ্বত শেকড় আমি
অনেক অনেক সব ডালপালা তলে।
সেই ভালো, খুঁজে পাওয়া অবিশ্বাসে
ডালপালার মাঝে হারানোর চেয়ে।
সেই ভালো, খুঁজে পাওয়া একক শেকড়
সকল অর্থ ও একাত্মতা
দিনের আলোর মত পষ্ট যেখানে।

১২.
তুমি ছাড়া কে আছে আমার ব্যাথাতুর
হৃদয়ের সমব্যথী আমার ভয়ে আমার
ধৈযে-তুমি ছাড়া নেই কেউ আর
সেই ছুটে ছুটে যাওয়া-অর্থের নিগুঢ় কুঞ্জে
সকল কবিতা আমার-হয়ে ওঠে হয়ে ওঠে
ভুল করে যদি চাই কিছু
তবু জেনো আমার সমস্ত চাওয়া তুমি শুধু।

১৩.
ও আমার দৃষ্টির লক্ষ্য
আমার হৃদয়ের গোপন ভাবনার
পর্বাবাপর্ব হে সম্পূ্র্ণিমা! যার পূর্ণতাকে
ভালোবেসে আমার পূর্ণতা বিশাদকে
আলিঙ্গন করে তুমি
আমাকে বাসিয়া ভাল
আমার হৃদয় মন্দিরে
হয়েছো বন্দি হিংস্র পক্ষী
নিমগ্ন দুখে-ভুলে-পথহারা
এক বিরান মরুভূমে
অন্ধের মত পথ চলা।
নেশাতুর রহস্য নিয়ে
বিদ্যুৎ গতিরঝলকে ছুয়ে যায় সব
একি স্বপ্ন? মায়ায় ছুটে চলা-মাটির দেশে
এ দয়া এ মায়া পরম গতির স্রোতে
মগ্নতার গভীর সমুদ্রে-নিয়ে চিন্তাবিন্দু।

১৪.
বারবার আমি লুকায় অপ্রকাশের হলাহলে
লুকাই চাদের আলোয় টালমাটাল বিন্দুর জলে।
লুকাই তিলের মাঝে বর্ণের অন্দরে
যে অক্ষর লিখা আছে কপালে কপালে
তমায় দেখে দেখে যাচ্ছি
আমি এবং তুমি
আহা! না দেখে কিছু
রয়ে গেলে তুমি পিছু।