গুলিস্তান থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল-পর্ব:৮
গুলিস্তান থেকে- বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, আমার দেখা ৪০-বছর।
-আব্দুল হান্নান
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে বা আগে ১৯৮৮ সালে মত এত বড় বন্যা আর হয়নাই পুরো টা দেশ পানির নিচে তলিয়ে যায় সে সময়। আটরশি গ্রামের ও তার আসে পাসের গ্রামের সদরপুর সহ সকল মানুষ কে খাজাবাবা-র নিদেশে আশ্রয় নেয় দরবার শরীফে তিন তলা মাদ্রাসা সহ পুরো দরবারে। সাকল মানুষের থাকা খাওয়ার দাইক্ত নেন পীর কেবলা’জান নিজে।
এখানে একটু আলোচনা করি:-
ওলী- আল্লাহর খেলা বা কেরামত বুঝা বড় দায়! দেখেন তিনাদের ইশারা পানি ও বুঝেন পুরো দেশ পানির নিচে ঢাকা শহর ৫/৬ ফিট পানির নিচে তলিয়ে আছে একমাত্র জান বহন নৌকা, মানুষ ঘরের টিনের চালে কিনবা মাচা তৈরি করে থাকতেন সে সময় দরবারে-র খাজাবাবা -র হুজরা-শরীফে র কাছে এসে পানি থেমে ছিলো শুনেছি প্রায় ২/৩ ফিট পানি উচ্চ হয়েছিল বিতরে যাবে তো দূরের কথা বারান্দায় ও পানি উঠে নাই! ইহা-ই কামেল পীরর ইশারা বা কেরামত ! তাই খাজাবাবা বলতেন পীরের ইশারা যে বুঝেনা বাবা ইহ কাল পরকাল সে খোলা দিয়া খায়।
সমগ্র দেশ তলিয়ে আছে পানি নিচে এদিকে দরবার শরীফ থেকে পীর কেবলা’ জান হুকুম করলেন বাবা- রা আপনাদের যার যা আছে তাই নিয়ে নেমে পরেন দেশের মানুষ অনেক কষ্টে আছে তাদের খাবার দেন, পানি দেন,ঔষধ দেন।
আমাদের ঢাকা শহরের সকল জাকের ভাইয়েরা এক হয়ে গেলেন তখন আমাদের দক্ষিণ অঞ্চল এলাহী বক্স, আলম ভাই উনারা, আমাদের এলাকার শরিফ ভাই আমাদের নেতা আমরা সকলে মিলে তোবারক বা খিচুড়ি রান্না করে প্রতি দিন নিয়ে যেতাম নৌকায় করে নিচু এলাকায় যেমন কেরানীগঞ্জ, কাজলা, নন্দিপাড়া, মাদারটেক, ডেমরা এলাকায়।
বন্যার সময় কাল চলে গেল। এলাকায় জাকের ভাইয়েরা সিদ্ধান্ত নিলেন আমরা কাফেলা করে দরবারে যাব ৮৮ সাল রাস্তা ঘাট বাংগা চুড়া লঞ্চ কাফেলা করে যাবো, সে সময় জাকের ভাইয়েরা বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফে কেহ খালি হাতে আসতেনা আমি দেখেছি ৩ টাকা দিয়ে একটা কচু কিনে নিয়ে আসতেন একটা কুমড়া ৫ টাকা দিয়ে কিনতেন ইহা-ই তাদের কাছে অনেক কিচ্ছু কি যে ভালবাসা একমাত্র তিনিই জানেন।
এদিকে কাফেলার প্রস্তুতি শুরু লঞ্চ ভাড়া করলেন সুলতান ভাই নেমে পরলেন কেনাকাটায় চাল, তেল ,আলু, কচু, মিস্টি কুমড়া, ইলিশ মাছে, লঞ্চ বোঝাই করেছেন টিকেট ১০০/- টাকা করে রাতে সকল কে বলে দেয়া হলো।
পোস্তগোলা ব্রিজের নিচ থেকে সকাল ৮ টায় লঞ্চ ছাড়লেন,আছরের কিনবা মাগরিবের আজানের আগে সময় টা মনে নাই। পিয়াজখালী নামলাম। সে সময় কাদামাটির রাস্তা কিছু কিছু যায়গাতে সুরকি আছে পিয়াজখালী থেকে দরবার শরীফ ১৮/২০ কিলোমিটার দূরের পথ পায়ে হেটে যেতে হবে তার মাঝে তিনটা ছোট ছোট খাল বন্যা ধাক্কায় ভেঙ্গে গেছে ব্রিজ!।
সদরপুরের মানুষ তখন আমাদের কে ভালো চোখে দেখতেন না গালি গালাজ দিতেন গায়ের জামা কাপড় টেনে ধরতেন! ছোট খাল গুলিতে বাসের সাকো ছিলো আমরা উঠলে লাঠি পেটা করতেন।
এখানে একটু আলোচনা দরকার:-
দেখেন একটি কথা না বলেই পারছি না একসময় দেশের একটি শ্রেণির বা সদরপুর ,পুকুরিয়া, পিয়াজখালী, বাইসরশি, সাড়ে সাত রশি, আটরশির, এক শ্রেণির মানুষ আমাদের গালমন্দ করতেন! এখন নিজের ঘরে-র মানুষ ফেসবুকে গালমন্দ করে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আসতে বাদা দেয়! হায় রে দুনিয়া টাকার মোহে কত কি-না হয়। আপন পীর -আল্লাহ-না তবে আল্লাহ-থেকে’ যুদা-ও-না!
যারা খাজাবাবা-র খাটি মুরীদ সন্তান তারা কি পারে আপন পীরকে ভুলতে আর আপন পীরই -কি পারেন মুরীদ সন্তান দের কে ভুলিতে !।
কি আর করা জামা কাপড়, জুতা, বিছানা সব কিছু পোটলা করে মাথায় নিতাম নিয়ে খাল সাতরে এপার আসতাম এমনি করে তিনটি খাল পার হইতে হইতো সদরপুর থানা থেকে রাস্তা টি কিছু টা ভাল ছিলো পায়ের তলাতে ঠোসা পরে যেতো।
আমরা ঢাকাকাইয়া মানুষ হাটার অভাস নাই তাই হয়তো। দরবারে আসতে আসতে রাত ৯/১০ টা বেজে যেতো রাস্তায় অন্ধকার চার পাসে জিজিঁর পোকার ঢাক তার মাঝে ও অনেক শান্তি পেতাম আমরা। পীর কেবলা’জান ৩ নাম্বার হুজরা’শরীফের বসে থাকতেন মাইকে ঘোষণা দিতেন আগে অজু করে খানা খেয়ে আসেন তার পর পীর কেবলা’জান সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
খাজাবাবা -র কাছে যাইতাম তিনি অনেক কথা বলতেন ভালো মন্দ জিগ্যেস করতেন উপদেশ দিতেন যার যার নালিশ নিতেন যতখন প্রজন্ত সাক্ষাৎ দেয়া শেষ না হইতেন হুজুর কেবলা’জান বিতর বাড়ি যাইতে না। তিনাকে দেখা মাত্র পায়ের ব্যাথা কথা মনেও থাকতোনা।
আমার দেখা ৪০ বছর! খাজাবাবা ফরিদপুরী ‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ‘ নিয়ে লেখতে চাই আপনাদের মতামত জানাবেন আশা রাখি।
চলবে……
পরবর্তী পর্বগুলো পড়তে নিচের লিঙ্কে প্রবেশ করুন: