পৃথিবীতে চার শ্রেণীর মানুষ ও তাদের পরিচয়।

পৃথিবীতে চার শ্রেণীর মানুষ ও তাদের পরিচয়।

বিশ্বওলী শাহসূফি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআ) ছাহেব বলেন—

পৃথিবীতে চার শ্রেণীর মানুষ আছে।

  • এক শ্রেণীর মানুষ আছে, যাহাদের জিহ্বা ও দেল উভয়ই মৃত। তাহারা সুরতে মানুষ বটে কিন্ত হকিকেতে পশু। তাহারা যাবতীয় কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত। তাহারা অভিশপ্ত, তাহাদের ঠিকানা দোযখ।
  • আর এক শ্রেণীর মানুষ আছে, যাহাদের জিহ্বা তাজা, কিন্তু দেল মৃত। কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, তাফসিরের জ্ঞানে তাহারা জ্ঞানী বটে, কিন্তু এই জ্ঞানকে দুনিয়া অর্জনে কাজে লাগায়। তাহার আপন স্বার্থ হাছিলে ধর্মীয় রীতি-নীতিকে প্রয়োজনে রদ-বদল করে; হালালকে হারাম, হারামকে হালাল বলিতেও দ্বিধাবোধ করে না। তাহাদের দেল অন্ধকার আচ্ছন্ন; অন্ধকার দেলে শয়তান উপবিষ্ট। তাহারা মানব রুপী শয়তান। তাহারাই মোনাফেক আলেম বা দুনিয়াদার আলেম। রাসূরে পাক (সাঃ) ইহাদেরকে জ্ঞান পাপী বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে ইহাদেরকে বেশী ভয় করিয়াছেন। তিনি ফরমাইয়াছেন, “আমার উম্মতগণের মধ্যে আমি জ্ঞানপাপী দুনিয়াপরস্ত আলেমগণকে সবচাইতে বেশী ভয় করি।” এই সমস্ত দুনিয়াপরস্ত আলেমগণকে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব ‘দীনের চোর’ বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছেন।
  • আরেক শ্রেণীর লোক আছে, যাহাদের জিহ্বা মৃত; কিন্তু দেল জীবন্ত। তাঁহারা মানব সমাজ হইতে গুপ্ত। তাহাদের দেলে আল্লাহর অবস্থান; দেলে সর্বদাই আল্লাহর নূর প্রবাহিত থাকে। দেলের চোখে আল্লাহর সমুদয় সৃষ্টি জগত দেখিতে পান। আধ্যাত্মিক জগতে তাঁহারা ভ্রমণ করেন। তাহারা সকলেই ওলী-আল্লাহ। আল্লাহর সাথে তাহাদের বাক্যালাপ হয়। আল্লাহর রহস্য জগত তাহারা দিব্যদৃষ্টিতে অবলোকন করেন; কিন্তু কোন কিছু বলিবার অনুমতি তাহাদের নাই। তাহারা নীরবে বা গোপনে খোদা কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন।
  • আরেক শ্রেনীর লোক আছে, যাহাদের জিহ্বা এবং দেল উভয়ই তাজা বা জীবন্ত। তাঁহারা আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টিজগত মুহূর্তে ঘুরিয়া দেখিবার ক্ষমতা রাখেন। আবার তাহারা যাহা কিছু বলেন, তাহাও চিরসত্য। তাহাদের বাক্যসিদ্ধ। তাহাদের বাক্য রোগ আরোগ্যকারী। তাহাদের দৃষ্টিতে রহমত বর্ষে। তাহারাই যামানার উৎকৃষ্ট আলেম বা ওলীয়ে কামেল। আল্লাহপাক বলেন, “তোমরা যদি এমন আলেমের সন্ধান পাও, তবে পতংগের মত তাহার ‍দিকে ধাবিত হও, তাহার প্রেম অগ্নিতে নিজেদের কামনা বাসনাকে জ্বালাইয়া ফেল। তাহা হইলে আমার সান্নিধ্য তোমরা লাভ করিতে পারিবে।”

তথ্যসূত্রঃ (শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের নসিহত-সকল খন্ড একত্রে, পৃষ্টা নং-১৩৭)