খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) এর বাণী ও উপদেশ পর্ব-১৪
উল্লেখ্য যে, কেবলাজান হুজুরের দেওয়া খােদাপ্রাপ্তিজ্ঞান অর্জন সম্পর্কিত এই সকল নসিহতসমূহে হযরত পীর কেবলাজান হুজুর মানব জীবনে খােদাপ্রাপ্তিজ্ঞান চর্চার গুরুত্ব ও খােদাপ্রাপ্তি সাধনার পথে মাকাম-মঞ্জিল, ছায়ের-ছুলুক, ফানা-বাকা, উরুজ-নজুল, জাহেরী ও বাতেনী শরীয়ত, কামেল পীরের যথার্থ পরিচয় ইত্যাদি সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মজীদ, হাদীসে রাসূলে করীম (সাঃ) ও তরিকতের পীরানে পীরগণের বক্তব্যের আলােকে ও নিজস্ব আত্মিক অভিজ্ঞতায় বর্ণনা করিয়াছেন। তাহার লিখিত নসিহত হতেই বাণী ও উপদেশ সংগ্র করে তুলে ধরা হয়েছে।
২৬১.
“পীরের কোন হুকুম যদি শরীয়তের খেলাফ মনে হয়, তবুও বিনা দ্বিধায় তাহা পালন করিবে। তবেই কল্যাণ। কারণ কামেল পীর যাহা কিছুই করেন না কেন, তাহা এলহামের নির্দেশে করেন।”
২৬২.
“পীরের আদেশ বিনা দ্বিধায় পালনের ভিতরেই মুরীদের মঙ্গল নিহিত।”
২৬৩.
“সর্বাবস্থায় অর্থাৎ চলা ফেরা, উঠা-বসা, পানাহার, শয়ন-উপবেসন ইত্যাদিতে পীরকে অনুসরণ করিবে। ইহাতে বহু মঙ্গল লুকায়িত।”
২৬৪.
“সর্বাবস্থায় পীরের অনুসরন করাই উত্তম। পীরের সহিত সাক্ষাতান্তে হোজরা হইতে বাহির হওয়ার সময় এমন ভাবে প্রস্থান করিবে যেন, পীরের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিতে না হয়।”
২৬৫.
“তুমি মুরিদ হও ‘বা’ না হও বাবা তুমি একজন ভালো মানুষ হও!”
২৬৬.
“কাম, ক্রোধ, লোভ মোহ, মদ, মাৎসর্য, হিংসা, কিনা, রিয়া, কামনা-বাসনা ইত্যাদি অসৎ রিপুসমূহ নাফস হইতেই সৃষ্ট। সর্বদা খোদাদ্রোহিতায় লিপ্ত থাকা নাফসের জাত স্বভাব।”
২৬৭.
“নাফসকে খাদমুক্ত করিতে হইলে তথা নাফসের অন্ধকার দোষসমূহ ঝাড়িয়া ফেলিতে হইলে নাফসকে দাহন করা প্রয়োজন। কিন্তু জাগতিক আগুন দ্বারা কিংবা নাইট্রিক এসিড দ্বারা নাফসকে জ্বালানো যায় না। নাফসকে দাহনের জন্য যে অগ্নির প্রয়োজন হয় তাহা দেহে উৎপন্ন হয় কেবলমাত্র আনাহারের দ্বারা।”
২৬৮.
“রোজার অর্থই হইল ছুবেহ ছাদেক হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনাহারে থাকা ও প্রবৃত্তিকে সংযত রাখা। রোজার অনাহারে দেহে উৎপন্ন আগুন আল্লাহর শত্রু নাফসে আম্মারাকে পোড়াইয়া তাহার অনিষ্টকর দোষসমূহ ত্যাগ করিতে বাধ্য করে।”
২৬৯.
“যে কোন যুদ্ধেই বিজয়ের জন্য যুদ্ধাস্ত্রের প্রয়োজন। নাফসের সাথে যুদ্ধে রোজার অনাহার প্রতিরক্ষামূলক দায়িত্ব পালন করে। কাম, ক্রোধ, লোভ-মোহ, মদ-মাৎসরয, হিংসা-কিনা, রিয়া, কামনা-বাসনা ইত্যাদির প্রভাবকে রোজায় সৃষ্ট আগুন দুর্বল করিয়া দেয়।”
২৭০.
“মানবদেহে এক টুকরা মাংশপিন্ড আছে-যাহার নাম কালব। কালব পবিত্র হইলে সমগ্র মানবসত্ত্বাই পবিত্র হয়।”
২৭১.
“কালবের অপবিত্রতা বা অপরিচ্ছন্নতার মূল কারণ নাফসের অন্যায় ও পাপাচার। যতক্ষণ পর্যন্ত নাফস পবিত্র না হইবে ততক্ষণ কালবও পবিত্র হইবে না।”
২৭২.
“মানবদেহে চারটি জড় উপাদান তথা আগুন, পানি, মাটি ও বাতাসের সমন্বয়ে গঠিত। চতুর্বিধ জড় উপাদানে গঠিত মানব শরীরে আরও এক জড় সত্ত্বা বর্তমান-যাহাকে ‘নাফস’ বলে। নাফসের উৎস জড় উপাদান হওয়াতে সংগত কারণেই ইহার বৈশিষ্ট বা স্বভাব অন্ধকারময়। যাবতীয় কুচিন্তা ও কু-স্বভাব নাফস হইতেই উৎপন্ন হয়।”
২৭৩.
“আল্লাহ তা-আলার পথের পথিকদের সব চেয়ে বড় সম্পদ আদব। বেয়াদব কখনই খোদাতায়ালা প্রেম লাভ করিতে পারিবেনা।”
২৭৪.
“খোদা তালাশী ব্যক্তিবর্গ পীরে কামেলের খেদমতের মাধ্যমেই খোদাতায়ালার জাত ও সিফাতের জ্ঞান অর্জন করেন!”
২৭৫.
“বাতেনী আনুগত্য ব্যতীত প্রিয়নবী (সাঃ) এর মহব্বত দেলে পয়দা হয় না। আর প্রিয়নবী (সঃ)-এর মহব্বত ব্যতীত দেল থেকে পাপ ও অন্যায়ের মোহ দূর হয় না। দেল পরিষ্কার হয় না।”
২৭৬.
“বাতেনী আনুগত্যের জন্য প্রয়োজন আধ্যাত্মিক অনুশীলন।”
২৭৭.
“সাইয়্যেদুল বাশার বা মানব সরদার। তিনি(রাসূল সা.) রাহমাতুল্লিল আল-আমিন বা জগতসমূহের জন্য রহমত। তিনি(রাসূল সা.) জাতে (সত্তায়) উদ্ভুত প্রেমের প্রথম বিকাশ।”
২৭৮.
তিনি(রাসূল সাঃ)-ই সৃষ্টির কারণ ও উৎস। তাহাকে সৃষ্টি না করিলে আল্লাহতায়ালা আর কিছুই সৃষ্টি করিতেন না।
২৭৯.
“ঐ লােকের কপাল পুড়ে যায়, যে কামেল ও মোকাম্মেল পীরের ভুল খোঁজে।”
২৮০.
“আধ্যাত্মিক চর্চার মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় রােধ হয়, মানুষের সুকুমার বৃত্তি বিকশিত হয়।”
তথ্যসূত্রঃ বিশ্বওলী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের নসিহত-সকল খন্ড একত্রের বিভিন্ন স্থান হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।