উল্লেখ্য যে, কেবলাজান হুজুরের দেওয়া খােদাপ্রাপ্তিজ্ঞান অর্জন সম্পর্কিত এই সকল নসিহতসমূহে হযরত পীর কেবলাজান হুজুর মানব জীবনে খােদাপ্রাপ্তিজ্ঞান চর্চার গুরুত্ব ও খােদাপ্রাপ্তি সাধনার পথে মাকাম-মঞ্জিল, ছায়ের-ছুলুক, ফানা-বাকা, উরুজ-নজুল, জাহেরী ও বাতেনী শরীয়ত, কামেল পীরের যথার্থ পরিচয় ইত্যাদি সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মজীদ, হাদীসে রাসূলে করীম (সাঃ) ও তরিকতের পীরানে পীরগণের বক্তব্যের আলােকে ও নিজস্ব আত্মিক অভিজ্ঞতায় বর্ণনা করিয়াছেন। তাহার লিখিত নসিহত হতেই বাণী ও উপদেশ সংগ্র করে তুলে ধরা হয়েছে।
খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) এর বাণী ও উপদেশ পর্ব-১৩
২৪১
“নবীজীর (সাঃ) মহব্বতই হলো ঈমান। যার অন্তরে রাসূল (সাঃ) এর মহব্বত যতবেশী তার ঈমানও ততবেশী। যার অন্তরে নবীজীর মহব্বত নাই তার ঈমানও নাই। সে সরাসরি বেঈমান।”
২৪২.
“সমস্ত সৃষ্টির হকিকত, হকিকতে মুহাম্মদীতে নিহিত। নবী (আঃ) গণের হকিকত, ফেরেশতাদের হকিকত, মোমিনদের হকিকত-সবই হকিকতে মুহাম্মদীর প্রতিবিম্ব বা প্রতিচ্ছায়াস্বরূপ।”
২৪৩.
“সৃষ্ট জগতের উপর যত রকমের রহমত বা ফয়েজ অবিরাম ওয়ারেদ হইতেছে তাহা সকলই হকিকতে মুহাম্মদীর মধ্যস্থতা হইয়া আসিতেছে। কাজেই, যে কেহ, যাহা কিছুই অর্জন করুক না কেন, যাহা কিছুই খোদাতায়ালার দরবার থেকে প্রাপ্ত হউক না কেন, তাহা সবই রাসূলে পাক (সাঃ) এর মাধ্যম হইয়া আসিতেছে।”
২৪৪.
“হকিকতে মুহাম্মদী আল্লাহতায়ালার জাতপাক ও অপরাপর হকিকত সমূহের মধ্যে মধ্যস্থস্বরূপ। হকিকতে মুহাম্মদীতে উপনীত হইয়া তৎপর জাতে পৌঁছাইতে হয়। ইহা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই।”
২৪৫.
“সৃষ্টিজগতস্থিত সকল বস্তুর অনু-পরমাণুই আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর যৌথ নাম সম্বলিত কালেমা শরীফের জেকের করিয়া আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছে। একমাত্র মানবকুলই অকৃতজ্ঞ।”
২৪৬.
“আল্লাহর ওলীগণ হলেন জ্বলন্ত লৌহসদৃশ। এক খন্ড লৌহ যেইরুপ আগুনে পুড়িয়া আগুনের রং ধারন করে, সেইরুপ আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহ তায়ালার নূরের তাজাল্লীতে জ্বলিয়া আল্লাহর গুণে গুনান্বিত হন।”
২৪৭.
“ওলী-আল্লাহসকল সেই জেকেরকারী দল-যাহাদের অছিলায় গাছে ফল হয়, জমিনে শস্য হয়, পানিতে মাছ হয়, আকাশ হইতে মিঠা পানি বর্ষে। তাঁহাদের অছিলাতেই জগতে রহমতের ধারা প্রবাহিত থাকে।”
২৪৮.
“রাসূলে পাক (সাঃ) আল্লাহপাকের জাতে উদ্ভুত প্রেমের প্রথম বিকাশ!”
২৪৮.
“পীরের মহব্বত অর্জনের চেষ্টা কর। পীরকে ভালবাস। তাহা হইলে আল্লাহ রাসূলের মহব্বত তোমাদের দেলে পয়দা হইবে। আল্লাহ ও রাসূলের খাছ হোব্ব-এশক-মহব্বতের ফয়েজ তোমরা পাইতে থাকিবে।”
২৪৯.
“পীরের সন্তুষ্টি অর্জনই হইল মূল কথা। পীরের সন্তুষ্টির পশ্চাতে আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টির অবস্থান।”
২৫০.
“ধন সম্পদ, আত্নীয়-স্বজন, পুত্র-পরিজন, এমন কি স্বীয় প্রাণাপেক্ষা যদি আপন পীরকে ভালোবাসিতে পার, তাহা হইলে আল্লাহর মারেফাত অর্জন করা বা পরিচয় জ্ঞান লাভ করা তোমাদের জন্য খুবই সহজ হইবে।”
২৫১.
“বাতেনী আনুগত্য ব্যাতিত মহব্বতের লাইন পরিস্কার হয়না!”
২৫২.
“যারা ফকির লোকের সাথে বেয়াদবি করবে, মৃত্যুর পূর্বে তারা ইতরের কাছে লাঞ্চিত হয়ে মরবে।”
২৫৩.
“সবলের হাত থেকে দুর্বলকে রক্ষা করাই মানবতার ধর্ম। মানবতা ও জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বই ইসলামের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য।”
২৫৪.
“মানুষের সাথে এক দুষ্টু সঙ্গী আছে, যাহার নাম নফস্। মানুষকে খোদাবিমূখী রাখাই তাহার কাজ।”
২৫৫.
“পরপারের পাথেয়, পরকালের Establishment পরকালের Environment দুনিয়া থেকে তৈরি করে নিতে হবে। যদি দুনিয়া থেকে তৈরি করতে না পারেন তবে নিশ্চয়ই আপনাকে মহান প্রতিপালকের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে।”
২৫৬.
“একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা স্বীয় পীর ভিন্ন যেনো অন্য কোথাও না যায়। তরিকতের পরিভাষায় একে তৌহিদে মতলব বলে,যেই মুরিদের তৌহিদে মতলব নাই সে বিভিন্ন দরবারে ঘুড়তে পারবে,কিন্তু মঞ্জিলে মাকছুদে কষ্মিনকালেও পৌছাইতে পারিবেনা!”
২৫৭.
“যে সকল সাধক বেলায়েতের নবুয়ত ও কামালাতে নবুয়তের মর্যাদাপ্রাপ্ত-তাহারাই স্বীকৃতি প্রাপ্ত ওলি আল্লাহ। কেবলমাত্র তাঁহাদের দ্বারাই যদি উরস পরিচালিত হয়, তবেই তাহা কবুলিয়তের যোগ্যতা প্রাপ্ত হয়।” (সূত্রঃ নসিহতঃ খন্ড-২১; নসিহত নং-১৩০)
২৫৮.
“নবী-রাসূল (আঃ) ও ওলী-আলাহগণের আরওয়াহপাকে ছওয়াব রেছানী করা প্রত্যেক মােসলমানেরই কর্তব্য। কারণ তাহারা আল্লাহর রহমতস্বরূপ। তাহাদের অছিলাতেই আল্লাহপাক তদীয় সৃষ্টির প্রতি রহমত বিতরণ অব্যাহত রাখিয়াছেন তাহাদের অছিলাতেই জমিতে ফসল হয়, পানিতে মাছ হয়, গাছে ফল হয়, আকাশ হইতে মিঠা পানি বর্ষে তাঁহাদের অছিলাতেই মানুষ আল্লাহর পরিচয় জ্ঞান অর্জন করে। তাই তাহাদের আরওয়াহপাকে ছওয়াব নজরানা দেওয়া দুনিয়াবাসী মােসলমানবর্গের নৈতিক দায়িত্ব।”
২৫৯.
“শরীয়তে পাঁচটি রোকন বা ভিত্তি নির্ধারিত আছে। ঠিক তেমনি তরিকতের পাঁচটি রোকন আছে। শরীয়তের রোকন সমুহ হইলঃ ঈমান, নামাজ, যাকাত, রোজা ও হজ্জ। আর তরিকতের পাঁচটি রোকন হলঃ জেকের, রাবেতা, শোগল, মুরাকাবা ও মোহাছাবা।”
২৬০.
“খোদাতায়ালার জেকের হইল নামাজের অন্তর বা অভ্যন্তরীণ দিক। মুখে আল্লাহর নাম আর অন্তরে দুনিয়ার চিন্তা এমন নামাজে তাই কোন ফল হয় না।মৌখিক ভালবাসার কোন দাম নাই। ইহাকে লিপসিমপ্যাথি বলা হয়।”
তথ্যসূত্রঃ বিশ্বওলী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের নসিহত-সকল খন্ড একত্রের বিভিন্ন স্থান হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।