আদম সৃষ্টির ভেদ রহস্য!

আদম সৃষ্টির ভেদ রহস্য!

আমি আদম গড়ি কেমনে
কোথা পাইসে নকশা নমুনা
আমি যা দেখি নাই জীবনে।
আল্লাহ্ বলেন মকরোম‘রে
চেয়ে দেখো আরশ পরে
সত্তর হাজার পর্দার আড়ে
উঠল ছবি গোপনে।
মকরোম বানালো দেহ সেথা
বানাতে পারে না মাথা
মোকাম মিমের গিলাফেতে
ঢুকলো রুহু গোপনে।
গিলাফ ‘তে ঢুকলো যখন
আদমের ভিতর ছিল কোন জন?
লালন কয় তার মাথার গঠন
আমার মুর্শিদ বিনে কে জানে।

অতি সংক্ষেপে কালামটির তত্ব কথা:-

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহপাক রাসুলের মাধ্যমে ফরমালেন আমি এক গুপ্ত ধনাগার ছিলাম।ইশকের গুণে চেতন পেয়ে নিজেকে ভালবাসিয়া, শুধু নিজকে প্রকাশ করার জন্য, নিজ নূর হইতে আমার প্রিয় হাবিবকে সৃষ্টি করলাম। এরপর আমার হাবিবের নূরের ফোয়ারা হইতে ১৭৯৯৯ মাকলুকাত সৃষ্টি করলাম।

এখানে, উল্লেখ্য এত মাকলুকাত আল্লাহপাক সৃষ্টিকরলেন তবুও যেন তার ইচ্ছার সমাপ্তি হইল না। অবশেষে আল্লাহপাক সৃষ্টির সেরা ফিল আরদে খলিফা তথা আদমকে তৈরীর জন্য মনস্থির করলেন এবং ফেরেশতাদেরকে মাটি সংগ্রহ করে আনতে হুকুম করলেন।

হযরত আজাজিল (আ:) তথা মকারোম সহ তখনও তিনি শয়তান উপাধী পান নাই। সকল ফেরেশতাগন আদম তৈরীর জন্য মাটি সংগ্রহ করে আনলেন এখানে হযরত আজাজিল আ: তথা মকরোম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি। হযরত আজাজিল (আ:) আগুনের তৈরী জিন ছিলেন, তিনি ইবাদতবন্দেগী করতে করতে এতদুর পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন যে, আল্লাহপাক তার ইবাদত বন্দেগীতে খুশি হয়ে ফেরেশতাদের সর্দার বানিয়ে দিলেন।

যা হোক আল্লাহর হুকুম তামিল করাই ফেরেশতাদের কাজ, তাই সকলে আদম তৈরীর জন্য মাটি সংগ্রহ করলেন এবং তা আগুন,পানি,আলো,বাতাসের সংমিশ্রণে কাঁদায় রুপান্তর করে আদম তৈরীর জন্য উপযুক্ত করলেন। তখন ফেরেশতাদের প্রতি আল্লাহর হুকুম হলো তোমরা আদম তৈরী কর? এখন আদম কি প্রকৃতির হবে তা-তো সকলেরই অজানা।

কারণ যা কখনও কেউ দেখেনি তা কি করে হু-বহু তার অবয়ব গঠণ প্রকৃতির অনুযায়ী তৈরী করবে?
ফেরেশতারা অগত্য বাধ্য হয়ে হযরত আজাজিল (আ:) নিকট গেলেন এবং আরজ করলেন আদম কি রুপ আমরা জানিনা এবং দেখি নাই, তাহলে আমরা কিভাবে আদম তৈরী করব? তখন হযরত আজাজিল (আ:) ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন, হে মাবুদ আমরা জীবনে কখনও আদম দেখি নাই, এখন এই আদমের গঠন প্রকৃতি কি রুপ হবে?

সত্যিই-তো যাকে কোন দিন কেউ দেখেই নাই,তাকে না দেখে কিভাবে কোন রুপে তৈরী করবে? তখন মহান আল্লাহপাক হযরত আজাজিল (আ:) তথা মকরোমের প্রার্থনা কবুল করে বললেন: হে মকরোম তুমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখ? আল্লাহপাক সত্তর হাজার পর্দার আড়াল থেকে তার নিজ ছবি (মুখমন্ডল ব্যতীত) পর্দায় ফুঁটিয়ে তুললেন।

সেই ছবি অনুযায়ী মোকরম সহ সকল ফেরেশতারা আদমের দেহগঠন করলেন। দেহের সকল কিছুই গঠণ হলো, কিন্তু কেবল আদমের মাথা গঠণ করতে পারলেননা। আর এই মাথা স্বয়ং আল্লাহপাক তার নিজ মুখমন্ডলের মত করে নিজ হাতে তৈরী করলেন। এরপরআদমকে পুতুল আকারে তৈরী করেবে হেশতের মধ্যে যথাস্থানে রাখা হলো।

পরিশেষে আল্লাহপাক সকল ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিলেন, তোমরা সকলেই আদমের দেহের মধ্যে প্রবেশ করো। তখন আদমের দেহের ভিতর সকল ফেরেশতারা প্রবেশ করলেন কিন্তু ভিতরে ঘোর-অন্ধকার দেখে কেউ আর ভিতরে থাকতে পারলেন না।পরিশেষে সকলেই আদমের দেহের ভিতর থেকে বাহির হয়ে আসলেন। তখন আল্লাহপাক ফেরেশতাদেরকে বাহির হওয়ার কারণ জীজ্ঞাসা করলেন?

সকল ফেরেশতারা উত্তরে বললেন, হে মাবুদ ভিতরে অন্ধকার, এইঘোর অন্ধাকারের মধ্যে আমাদের পক্ষে থাকা মোটেই সম্ভবপর নয়।অবশেষে আল্লাহ পাক নিজেই সকলের অজান্তে আদমের ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং ভিতরে থেকে সকল ফেরেশতাকে বললেন তোমরা আদমকে সেজদা কর?

সকল ফেরেশতা আদমকে সেজদা করলেন, আজাজিল (আ:) ব্যতীত- আদমকে সেজদা করার ব্যপারে ফেরেশতারা হুকুম পালন করলেন, কিন্তু আজাজিল আল্লাহর হুকুমের রহস্য বুঝতে পারলেন না।

যাই হোক আজাজিল (আ:) আদমকে সেজদা না করার কারণে লানত প্রাপ্ত হলেন এবং ইবলিশ শয়তান উপাধী পেলেন।

এখন প্রশ্ন জাগে, আল্লাহর বিনা হুকুমে যখন গাছের একটি পাতাও নড়ে না, তখন আজাজিল (আ:) কার হুকুমে আদমকে সেজদা করলেননা?

কেননা, তখনতো কোন শয়তান ছিলো না? তাহলে, সে কোন শয়তান আজাজিল (আ:) কে উস্কানী দিয়েছিলেন যে, তুমি আদমকে সেজদা করিও না?

তৌহিদের অন্তরালে এমন কিছু রহস্য লুকায়িত আছে, যা শুনলে শরীর শিউরে উঠবে এবং মাথা ভন ভন করে ঘুরবে। কিন্তু সে কথা বলার কোন অধিকার আমাদের দেওয়া হয় নাই।

লিখেছেনঃ সবুজ কাদরী।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel