নূরতত্ত্ব

নূরতত্ত্ব

নূর কি? নূর মানে কি আলো? তবে কি অন্ধাকারে নূর নেই? আল্লাহ বলেছেন তিনি আসমান ও জমিনের নূর এবং সব কিছুই আল্লাহর নূর হতে সৃষ্টি। এখান থেকে বুঝা যায় যে অন্ধকারের মাঝেও নূর আছে এবং অন্ধকারও নূর। সমস্ত সৃষ্টিই আল্লাহর নূর। নূর মানে আলো নয়। নূরকে বেমেছাল বলা হয়। অর্থাৎ নূরের কোনো উদাহরন নেই। নূরের কোনো সংজ্ঞা নেই। নূর নূরই। যেখানে কিছু নাই, সেখানেও নূর আছে। নূর সর্বময় সর্বভুতে অবস্থান করছে গুপ্ত কিংবা ব্যক্ত ভাবে। আলোতে যেমন নূর আছে অন্ধকারেও তেমনি নূর আছে, শ্রীতে যেমন নূর আছে বিশ্রীতেও তেমনিই নূর আছে, সুঘ্রাণে যেমন নূর আছে কুঘ্রাণেও তেমনি নূর রয়েছে। কারন সমস্ত কিছুই আল্লাহর নূর। আল্লাহর নূর ভিন্ন কিছু নাই।

সৃষ্টির আদিতে নূর আহাদ আকারে ছিল। যেই নূরের বা রূপের কোনো প্রকার উদাহরণ নেই, তাকে দেখা যায় না, ভাবা যায় না, ধরা যায় না, যা কল্পনারও অতীত। যা ওয়াজেবুল অযুদ। আহাদী নূর হইতেই আহম্মদী নূরের উৎপত্তি হইলো সর্বপ্রথম। আহাম্মদী নূর দৃশ্যমান, যাকে দৃষ্টি ধরতে পারে; কিন্তু তাকে ধরা বা ছুয়া যায় না তবে অনুভব করা যায়। যাকে বলা হয় ওহেদুল অযুদ। একজন কামেল মুর্শিদ ইচ্ছা করলে মুহূর্তের মুধ্যেই সেই নূরকে তাঁর ভক্তের অনুভবে এনে দিতে পারে। আহাম্মদী নূরই হল নূরের প্রথম প্রকাশিত রূপ। আহম্মদী নূর হইতে ক্রমে ক্রমে মুহাম্মদী নূরের উৎপত্তি হয়েছিল, আজও হচ্ছে এবং অনন্তকাল হইতে থাকবে।

অনেকেই আবার নূর বলতে ‘বীর্য’কে বুঝে থাকেন। বলে থাকেন যে বীর্যই দেহের নূর। এটা ভুল সিদ্ধান্ত। তবে ইহা সত্যি যে বীর্যও নূরেরই অংশ। দেহের মাঝে বীর্যের অবস্থান বেশি থাকলে সাধক সেই মহানূরের সন্ধে পাবে সাধনার মাধ্যমে। কারন বীর্যের সাথে মনের রয়েছে গভীর মিল। যার বীর্য যত ঘন, তার মন ততই স্থীর। আর স্থীর মন ছাড়া কখনোই সাধনায় অগ্রগামী হওয়া সম্ভব নয়।

তাই বীর্য সংরক্ষনের গুরুত্ব অনেক। বীর্য মূলত নূরের নয় বরং পানির পঞ্চগুনের প্রধান গুন। পানির পঞ্চ গুন হলো খুন, মনি (বীর্য), পেশাব, পুছিনা, আছু। আর নূরের পঞ্চগুন হল শওহাদ, মেহের, গোসসা (রাগ), বখিলি, ডর বা ভয়। এভাবে বাতাস, আগুন, মাটিরও পাঁচটি করে গুন রয়েছে। এইভাবেই অনেকে বলে থাকেন যেন পাঁচ পাচা পঁচিশ (৫*৫) বন্দের দেহঘর।এখান থেকেও নূরের ধারনা পাওয়া যায়। নূরের গুন গুলো দেখাও যায় না, ধরা ছুয়াও যায় না। তাই বীর্য নূরের অংশ, তবে নূর নয়। আবারও নূরও বটে, তবে মানুষ যেভাবে যেই আদি নূর হিসেবে বীর্যকে উপস্থাপন করতে চায়, বীর্য সেই নূর নয়।

তবে আরেকটা কথা সত্য যে, যার দেহে বীর্যের অবস্থান ও ঘনত্ব এবং যার বীর্য সংক্ষণের ক্ষমতা বেশি, সেই ব্যক্তি সাধনার পথে ততবেশি অগ্রগ্রামী। তার দেহের মাঝেও নূরের ঝলক তত বেশি দীপ্তমান। তাই সাধকগণ দমের সাধনার দ্বারা বীর্যকে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনে ও মনকে আপন বশে এনে হাজার বছরের সাধনার পথ অল্পদিনের মাঝেই পারি দেন।

লেখাঃ DM Rahat
YouTube: Sufism BD