কোরান যেভাবে আপন রব তথা গুরুর ইবাদত করতে বলেছেন।
ادْعُواْ رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
অনুবাদ: তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক, তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ ৭ঃ৫৫ নং আয়াত)।
মন্তব্যঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, “হে ইমানদারগণ তোমরা তোমাদের রবকে তথা গুরুকে তথা প্রভুকে প্রথমে ডাকবে বিনীতভাবে, এবং গুরুকে তথা রবকে ডাকবে একান্ত গোপনে গোপনে। যদি তার ব্যতীক্রম হয় তাহলে তোমরা জালেমদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।”
আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না। এই আয়াতের ভাষ্য হলো গোপনে কিভাবে রবের ইবাদত করবো? শরিয়াতে তো কোনো ইবাদতই গোপন নেই, সবকিছুই জমাতবদ্ধ হয়ে আদায় করে। সকলের সাথে তথা জামাতবদ্ধ হয়ে সকল কিছু করলে আর গোপন থাকলো কই?
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে পড়লে তা আর গোপন থাকলো না। সাদকা নামক জাকাত আদায় করলেও তা আর গোপন থাকলো না। সিয়াম সাধনা করলেও তা আর গোপন থাকছে না, কোরবানি করলেও তা আর গোপন থাকছে না, হজ্জ করতে গেলেও অনেকে একসাথে তাওয়াফ করতে হয়, তাও গোপন থাকছে না। কি এমন কর্ম আছে যে কর্মটি করলে আমল গোপন থাকে। এবং সেই আমলটি আল্লাহ দেখেন।
একজন সাধক ঐ ইবাদতটি করবে সে আর তার রবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। রসুল পাক সাঃ ইরশাদ করেন- “তুমি এমনভাবে ইবাদত কর, তোমার পাশে যে শুয়ে আছে সে যেন বুঝতে না পারে, তুমি যে এবাদতে রয়েছ।”
এমন একটি কর্ম আছে যে কর্মটি সদা সর্বদা করা যায়। আপন রব ব্যতীত জগতের কেউ জানবে না। এমন কি বুকের উপর মাথা রেখে স্ত্রী শুয়ে আছে সেও জানবে না। এমন কি স্ত্রী সহবাস রত অবস্থাতেও ইবাদতটি থাকবে। সেই এবাদতটি হলো আমলে সালেহা তথা আপন রব তথা রসুল তথা গুরুর হুকুম মতে আমল করা। সেই আমলটি হলো দায়েমি সালাত তথা ধ্যানসাধনা তথা মোরাকাবা মোশাহেদার মধ্যে মনটিকে ডুবিয়ে রাখা।
আপন রসুলকে ধ্যানে রাখা, আপন রবকে ধ্যানে রাখা, আপন গুরুকে ধ্যানে রাখা একই কথা। এই গুরুর ধ্যানটাই গোপন ইবাদত, কেউ দেখতে পারে না, আপন গুরু ব্যতীত। গুরুর ধ্যান করাটাই কোরানের বর্নিত গোপন ইবাদত। এই ধ্যানসাধনার মাধ্যমে একজন আবেদ আরেফবিল্লাহ পরিণত হয়। এই শায়েখে তাসাব্বুরের মাধ্যমে তাসকিয়ায়ে নফস অর্জিত হয়।
সুতরাং সকল কিছুর ঊর্ধ্বে হলো আপন গুরুর ধ্যান করা। এই ধ্যানসাধনার মাধ্যমেই একজন সাধক বিনীত হয়, বিনম্র হয়, সালাতি হয়, তথা মুমিন হয়, জাকাতি হয় তথা দয়াশীল হয়, সায়েম হয় তথা সংযমী হয়, হাজি হয় তথা আত্মদর্শী হয়, কুরবান হয় তথা উৎসর্গকারী হয়।
জীবন্ত গুরুর ধ্যান নেই, আনুষ্ঠানিক আমলের কানাকড়ির কোনো মূল্য নেই। এই ধ্যান ব্যতীত যে আমল করে তথা ইবাদত বন্দেগি করে কোরান তাদের পছন্দ করেন না, আল্লাহ তাদের সীমালঙ্ঘনকারী বলে অভিহিত করেছেন। আর যারা সীমা অতিক্রম করে তারা জালেম, তারা আল্লাহর বিধানের বহির্ভূত কর্ম করলো। যা আল্লাহ মোটেও ভালোবাসেন না।
সুতরাং একজন সাধক তথা আমানু তথা ঈমানদার সর্বদা আপন গুরুর ধ্যানে, খেয়ালে, নিরিখে , বর্জকে রত থাকার অভিরাম প্রচেষ্টায় থাকে । গুরুর ধ্যান করাটাই গোপন কর্ম। এই গোপন কর্মটির জ্ঞানটির নাম হলো এলমে মারফত, এলমে লাদুনি। সুতরাং আপন গুরুর ধ্যান বিহনে সকল কর্মই কলুষিত কর্ম তথা শয়তানি, ইবলিশি, মরদুতি ও খান্নাসি কর্ম। সুতরাং একজন আমানুকে কোরান জানান দিচ্ছে বিনীতভাবে ও গোপনে যে আপন গুরুর ধ্যান সাধনা যেন করে যায়। কেউ যেন ধরতে না পারে সেই মানুষটি সালাতের মধ্যে তথা আপন গুরুর ধ্যানে মনটি ডুবে আছে।
হাঁস সারাদিন পানিতে থাকে কিন্তু সাঝের বেলায় যখন উঠে আসে তখন একফোঁটা জলও লেগে থাকে না।
কচ্ছপ ডিম পাড়ে ডাঙায় কিন্তু থাকে সাগরের গহীনে। কিন্তু কচ্ছপ সাগরে থাকলেও কিন্তু কচ্ছপের নজর তথা দৃষ্টিশক্তির প্রভাবে ডিমফুটে বাচ্চা বের হয়।
সুতরাং একজন সাধক সারাদিন সংসার জলে থাকবে কিন্তু মনটি পড়ে থাকবে গুরুতে। সুতরাং সম্মুখ গুরুর ধ্যানটি হলো একজন মুরীদের গোপন এবাদত। যা গুরু ব্যতীত কেউ জানে না। এমন কি এই আশেক ও মাশুকের ভেদ রহস্য কিরামান-কাতিবিনও জানেন না।
নিবেদক: আর এফ রাসেল আহমেদ।