হক্কানী পীর চেনার উপায়
একজন হক্কানী পীরের বৈশিষ্ট্য নিয়ে অনেকজন অনেক কথা বলেছেন বা লিখেছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন স্বনামধন্য পীর ও দরবারের বই গুলোতে পীরের বৈশিষ্ট্য নিয়ে লেখা থাকে। যেমনঃ তাকে পূর্ণভাবে শরীয়ত পালন করতে হবে, পোশাক আশাক তাকওয়াপূর্ণ হতে হবে, তাফসীর সম্পর্কে জানতে হবে, এটা সেটা আরও কত কি!!
আসল কথা হল এইসব হল বিভিন্ন দরবারের একটা ফর্মালিটি (ওলীরা ফর্মালিটির বাইরে)। কারন হল হক্কানী পীর হতে হলে তাকে এইসব বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলোর অধিকারী না হলেও হয়।বরং হক্কানী পীরেরা হল কামেল ব্যক্তি, আর কামেল ব্যক্তিরা এতো ভাব সাব নিয়ে চলাফেরা করেন না, বরং তারা মানুষের কাছ থেকে নিজের ধার্মিকতাকে লুকিয়েই রাখতে পছন্দ করেন। হক্কানী পীর বলতে অনেকেই বুঝে থাকে যে, বড় লম্বা দাঁড়ি+ সাদা পাঞ্জাবী পায়জামা পড়া + বড় লম্বা সম্বা পাগরী মাথায় দেওয়া ও চোখে সুরমা লাগিয়ে + গায়ে আতর সুবার লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানোকে। কিন্তু এগুলো সম্পূর্ণ ভুল ধারনা।
অনেকেই বলেন যে, যিনি কুরআন হাদীস মত জীবন যাপন করেন, তিনিই হক্কানী পীর। কথাটা যতটা ঠিক, আবার ততটাই ভুল। কারন বাংলাদেশের বড় সন্ত্রাস ‘বাংলা ভাই’ ছিলেন মসজিদের ঈমাম, তাছাড়া এখন ত দেখতেছেনই মুখোশ পরে থাকা মানুষের ভিতরের রূপ। হক্কানী হতে হলে অবশ্যই তাকে অন্তরের দিক দিয়ে আল্লাহ্ প্রেমিক বান্দা হতে হবে, কিন্তু আমাদের কারোই অন্তর দেখার উপায় নেই। হাদীসে আছে যে ‘কোনো কোনো ব্যক্তি মানুষের নিকট মুমিন, কিন্তু আল্লাহর নিকট কাফের। আবার কোনো কোনো ব্যক্তি মানুষের নিকট কাফের, কিন্তু আল্লাহর নিকট মুমিন’।
সেই পীরই হক্কানী যিনি হক্বের খবর জানেন ও নিজে হক্বের উপর দন্ডায়মান আছেন। যিদি আত্মতত্ত্ব সম্পর্কে পূর্ণভাবে জানেন ও অন্যকে তা জানাতে পারেন। যিনি আত্মদর্শন এর জ্ঞান প্রাপ্ত। যিনি সাধনার পথ সম্পর্কে অবগত। সেই ব্যক্তিই হল প্রকৃত হক্কানী। এক্ষেত্রে পীর হওয়ার অন্যতম শর্ত হল তাকে অন্য কোনো খেলাফত প্রাপ্ত পীর হতে খেলাফত প্রাপ্ত হতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক সময় অনেকেই অনেক ওলী আল্লাহর আশেক হয়ে থাকেন, ফলে আর পীর ধরেন না, এটা ভুল। কারন আশেক হওয়া আর বায়াত হওয়া এক বিষয় নয়। তাছাড়া সকল ওলীই পীর নয়। তাই যারা খেলাফত প্রাপ্ত নয়, কিন্তু কামেল ওলী, তাদের আশেক হয়ে থাকা যাবে; কিন্তু তাদের কাছে বায়াত হওয়ার বিধান নেই।
পীর যাচাই করা যায় না। কারন একজন পীরকে শুধুমাত্র একজন পীরই যাচাই করতে পারেন। সাধারণ মানুষদের পীর যাচাইয়ের ক্ষমতা নেই। বাহ্যিক চাল চলন দেখে কখনো হক্কানী ব্যক্তিকে চেনা যায় না। এইজন্য অনেক সময় দেখা যায় মুরিদ হওয়ার পর তার ভক্তেরা বুঝতে পারে যে তারা ভুল ব্যক্তির কাছে বায়াত হয়েছে।
এখন অনেকেই বলতে পারেন যে ‘তাহলে হক্কানী পীরকে চিহ্নিত করে বায়াত কিভাবে হব?”। এক্ষেত্রে আমার মতামত হল, যার কাছেই বায়াত হবেন, তার সাথে সরাসরি সাক্ষাতে ধর্ম বিষয়ক আলোচনা করবেন। তার কথা শুনে যদি মনে হয় এই ব্যক্তি সত্য বলতেছেন, এবং তার আচার আচরন যদি আপনার ভাল লাগে, তাহলে তাঁর কাছে বায়াত হতে পারেন। এক্ষেত্রে যারা জীবনে পীরের সাথে সাক্ষাত করতে পারে না, তারা যে পীরের মুরিদ, সেই পীর সেটা জানেও না যে এই ব্যক্তি তার ভক্ত, এমন সিস্টেম তরীকতে আছে বলে আমার জানা নেই।
কারন যে ব্যক্তি আপনাকে চিনেই না, সে কিভাবে হাসরের ময়দানে আপনাকে শাফায়েত করবেন! তাছাড়া গুরুর ভজনা করতে হয়, যাকে দেখেন না, তার সেবা কিভাবে করবেন আপনি! মাইকে ওয়াজ করে আর ওজীফার বই দিয়ে যারা ভক্ত পালন করে তাদের বিষয়ে আমি মন্তব্যই করতে চাই না। কারন মারফত গোপন বিষয়, তা মাইকে আর বইতে প্রকাশ করা যায় না। তাই এমব পীরের কাছে বায়াত হবেন, যে আপনাকে সরাসরি শিক্ষা দিতে পারবেন। তাছাড়া এক মনে প্রেম হয় না, প্রেম করতে দুই মন লাগে। গুরু যদি আপনাকে না চিনেন, তাহলে আপনি একলা চিনলে প্রেম হবে কিভাবে!
এখন যখন বায়াত হয়ে যাবেন, তখনই আপনি পীরের ভিতরগত বিষয়গুলো জানতে পারবেন, বায়াত হওয়ার পর বুঝতে পারবেন সে কি ভন্ড নাকি হক্কানী। হক্কানী হলে তার পায়রবী করে কাটিয়ে দিতে হবে বাকী জীবন, আর ভন্ড হলে তাকে সাথে সাথে ত্যাগ করে অন্য একজন হক্কানী পীরের সন্ধান করে তার কাছে পুনরায় বায়াত হতে হবে।
হক্কানী পীর চেনার উপায় নেই, তাই সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই শুধু অনুমান করা যাবে এই ব্যক্তি কতটুকু হক্বের সংবাদ বা তত্ত্ব তালিম জানেন। তাই সরাসরি সাক্ষাতে কথা না বলে বায়াত হওয়া বোকামী ছাড়া আর কিছুই হবে না। আপনার পীর যদি আপনাকে আত্মজ্ঞানে পূরিপূর্ন করে মনের অন্ধকার দূর করতে না পারেন, তাহলে তার কাছে পরে থাকাটাই আপনার জন্য বোকামী, বরং আপনার উচিত ভাল কারো কাছে পুনরায় বায়াত হওয়া, যিনি আপনাকে আত্মজ্ঞান দান করে মনের অন্ধকার দূর করতে পারবেন।
হক্কানী ব্যক্তিদের বাইরে থেকে চেনা যায় না, একমাত্র প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন হলেই তারা ধরা দেয়।
তাই কোনো সাধক তার গানে বলেছিলেন.
“আসল মানুষ মনও চোর
সে বসত করে প্রেম নগর
তারে যায় না ধরা প্রেমিক বিহনে”।
লেখাঃ DM Rahat