আত্মচেতনা থেকেই আত্মশুদ্ধি
আত্মচেতনা হল নিজের চেতনা বা ব্যক্তির নিজিস্ব চেতনা শক্তি। আমরা মানুষ, তাই আমাদের সাধারণ আত্মচেতনা হল মনুষত্ব। এক্ষেত্রে মানব হৃদয়ে মনুষত্ব জাগ্রত হওয়া মানেও হল আত্মচেতনা জাগ্রত হওয়া। কিন্তু এটা আমাপর সকল মানুষের জন্য; মহাপুরুষদের জন্য বা সাধকদের জন্য এই চেতনাটুকু যথেষ্ট নয়। মহাপুরুষদের আত্মচেতনা আরো কঠিন ও গভীর।
আমরা সবাই মহান স্রষ্টার সেই নূর হতে আগত। আমার উত্তপ্তিই সেই নূরুর আলা নূর হতে। আমরা সেই মহাসিন্ধুরই এক ক্ষুদ্র বিন্দু। তবে আমরা বিন্ধুই হই বা তার চেয়ে অতি ক্ষুদ্রও যদি হয়ে থাকি না কেন, আমরা সেই মহা নূরেরই একটি নূর। সেই সূত্রে স্রষ্টা যদি মহাগঙ্গা হয়ে থাকে, তাহলে আমরাও সেই গঙ্গারই জল; অর্থাৎ আমরাও সেই গঙ্গাই। কিন্তু কর্মদোষে বা কর্ম ফেরে আমরা নলকূপের মধ্যে বা নরদমার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গিয়ে এখন নলকূপের জল বা নরদমার পঁচা জল হয়ে গেছি। তাই এখন আর আমাকে কেউ গঙ্গা বা গঙ্গাজল বলে না; বলে নর্দমার আবদ্ধ পঁচা জল। আমিও সেই রাজাধিরাজ এর পুত্র ছিলাম, আমিও এই বিশাল রাজ্যের শাহজাদা ছিলাম। কিন্তু আমি তা ভুলে গিয়ে আমার সেই চেতনাবোধলে হারিয়ে ফেলেছি; তাই এখন আমি নিজেকে ভিক্ষারী ভেবে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সেই চেতনা আমার মাঝে নেই এখন, এখন ভিখারীর চেতনা আমার মাঝে।
রাজার ছেলে যদি ভিখারীও হয়ে যায় কোনো কারনে, জীবন গেলেও সে পঁচা খাবার মুখে তুলবে না; এটাই তার চেতনাবোধ। উদার ধনী বাদশা যদি ফকীরও হয়ে যায়, তবুও অন্যের প্রতি তার দরদ ভালবাসা কমে যাবে না; এটাই তার চেতনাবোধ। বাঙ্গালী যদি অভাবে মরেও যায়, তবুও সে পাকিস্তানীদের গুনগান গাইবে না ও তাদের কাছে মাথা মত করবে না; এটাই বাঙ্গালীর চেতনা বোধ। অনুরূপ ভাবে আমাদের মাঝে যখন সেই স্রষ্টার মহাচেতনা জাগ্রত হবে, তখন আমাদের মাঝেও সেই স্রষ্টার স্বভাব প্রকাশ পাবে। জাতি ধর্ম বর্ণ বিচার তখন আমাদের মাঝে থাকবে না। অন্যায়, জুলুম, অবিচার আমাদের মাঝে থাকবে না। আমরা তখন স্রষ্টার স্বভাবে স্বভাবিত হয়ে স্রষ্টার সাথে মিশে যাবো। ফিরে পাবো আমাদের সেই আত্মচেতনা।
আত্মচেতনা জাগ্রত হলেই সেই চেতনা অনুযায়ী কর্ম করলে আমাদের আত্মশুদ্ধি অর্জন হবে। আত্মশুদ্ধি মানে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা সকল প্রকার পাপ কর্ম থেকে। আত্মচেতনা জাগ্রত না হলে কখনো আত্মশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। কারন মানুষসহ প্রতিটি প্রাণীই তাদের আপন চেতনা অনুযায়ী কর্ম করে। যার চেতনা যেমন, তার কর্ম তেমন। যখন আত্মচেতনা জাগ্রত হবে, তখনই আমাদের হৃদয়ে মহাভাবনা জাগ্রত হবে। মনে জেগে উঠবে আমিও সেই নূরুর আলা নূর। আমিও গঙ্গার জল। তখনই সাধনার দ্বারা কর্মজাল থেকে বের হয়ে মুক্তি অর্জন করতে পারব।
লেখাঃ DM Rahat