হোমপেজ আমল ও ওজিফা শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাতের ফজিলত ও বরকত।

শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাতের ফজিলত ও বরকত।

শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাতের ফজিলত ও বরকত।

শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাতের ফজিলত ও বরকত সম্পর্কে বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী ছাহেব বলেন যাহা বলেছেন তাহা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-

শাবান মাসের ১৪-ই তারিখের দিবাগত রাত্রিকে শবে বরাতের’ রাত বলা হয়। এই রাত্রিতে ইবাদত অতি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। এই রাত্রিতে অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত মহান খোদাতায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করিয়া বান্দাদের উদ্দেশ্যে রহমত বিতরণ করিতে থাকেন। হযরত আলী (কঃ) বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায় যে, দয়াল নবী (সাঃ) বলেন, যখন অর্ধ শাবান আসিবে উহার রাত্রিতে তোমরা বন্দেগী করিবে ও দিনে তোমরা রোজা রাখিবে। কেননা, উহাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহতায়ালা নিকটতম আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বলিতে থাকেন; কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি-যাহাকে আমি ক্ষমা করিয়া দিব; কোন রিজিক প্রার্থনাকারী আছ কি? -যাহাকে আমি রিজিক দেই এবং কোন বিপন্ন ব্যক্তি আছ কি? -যাহাকে আমি বিপদমুক্ত করি। এই ভাবে আরো আরো ব্যক্তিকে ডাকেন যাবত না ফজর হয়। (ইবনে মাজা, মেশকাত)

পবিত্র এই রজনীতে আল্লাহতায়ালা তাহার বান্দাদের পরবর্তী এক বছরের জন্য ভাগ্য নিরুপণ করেন; নির্ধারণ করেন জন্ম, মৃত্যু, কর্মধারা, রিজিক ইত্যাদি। সেই কারণেই এই রাত্রিকে বলা হয় লাইলাতুল বরাত।

এই রাত্রির ফজিলত সম্পর্কে কিতাবে দেখা যায় যে, একদা হযরত ঈসা (আঃ) পর্বত ভ্রমণ করিতে করিতে পর্বতের শীর্ষদেশে অতি শুভ্র ও উজ্জল একটি পাথর খন্ড দেখিতে পাইলেন। উহার সৌন্দর্যে তিনি অতিশয় বিস্মিত হইলেন। হঠাৎ গায়েব হইতে আওয়াজ হইল, হে ঈসা রুহুল্লাহ! প্রস্তর খন্ডের উপর আঘাত করুন, তাহা হইলে ইহার চেয়ে আশ্চর্যকর আরও কিছু দেখিতে পাইবেন।” তিনি পাথর খন্ডে আঘাত করা মাত্রই তাহা দ্বিখন্ডিত হইল। তিনি দেখিলেন, পশমী পোশাক পরিহিত এক সাধক পাথরের মধ্যে গভীর ধ্যানে মগ্ন। তাঁহার সম্মুখে বিভিন্ন আকর্ষনীয় খাদ্যদ্রব্য সাজানো। হযরত ঈসা (আঃ) উক্ত সাধককে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, আমি চারিশত বছর যাবত এই পাথর খন্ডের অভ্যন্তরে এই রূপ ইবাদতে মগ্ন আছি। আর আমার সামনে সজ্জিত খাবার দাবার মহান খোদাতায়ালা কর্তৃক প্রেরিত।’

ইহা দেখিয়া ও শুনিয়া হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহতায়ালাকে আরজ করিলেন, হে খোদাতায়ালা! আপনার সৃষ্টিজগতে এই বুযুর্গের চেয়েও উত্তম কোন ব্যক্তিকে সৃষ্টি করিয়াছেন কি, যাহাকে চারিশত বছর যাবত তাঁহার আহার্য পাথরখন্ডের মধ্যে প্রদান করিতেছেন?”

তখনই আল্লাহতায়ালা অহী মারফত হযরত ঈসা (আঃ) কে জানাইয়া দিলেন যে, উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৪-ই তারিখ দিবাগত রাত্রে আল্লাহর দরবারে ইবাদতে মগ্ন থাকিবে-তাহার মর্যাদা ঐ চারিশত বছরের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। তখন হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর দরবারে এই মর্যাদার অধিকারী হওয়ার জন্য মোনাজাত করিলেন।

উপরের আলোচনা থেকে শবে বরাতের রজনীর ইবাদতের গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়। প্রতি বছর শাবান মাসের এই পবিত্র রজনী ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে উদযাপিত হয় এবং আমার অবর্তমানেও এমনিভাবে উদযাপিত হইবে। আমি শবে বরাতে রোজা রাখি। ইহা ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। তোমরা যাহারা সক্ষম, তাহারা শবে বরাতের রোযা রাখিবে।

তথ্যসূত্রঃ বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী ছাহেব নসিহতঃ (বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা-পদ্ধতি)