হোমপেজ খাজাবাবা ফরিদপুরীর কারামত পীর কেবলাজান আটরশি আগমনের পূর্বে জমিদার বাবুর মায়ের ঘটনা

পীর কেবলাজান আটরশি আগমনের পূর্বে জমিদার বাবুর মায়ের ঘটনা

541
পীর কেবলাজান আটরশি আগমনের পূর্বে জমিদার বাবুর মায়ের ঘটনা
Advertisement:
IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

পরম শ্রদ্ধেয় মহান পীর কেবলাজান বিশ্ব ওলি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) সাহেব বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আটরশি পাক দরবার শরীফে আগমনের এক মাস পূর্বে ঐ এলাকার তকালীন জমিদার সুকুমার বাবুর বৃদ্ধা মাতা স্বপ্নে দেখলেন যে আটরশি গ্রামে একজন মহাসাধক আসিয়াছেন। সেই সাধক বৃদ্ধ মহিলাকে পানি পড়িয়া দিলেন এবং সেই পানি পান করিয়া উনার ত্রিশ বছরের পেটের ব্যথা ভাল হইয়া গেল। যেই ব্যথা ত্রিশ বছরে কোন ডাক্তার বা কবিরাজ কর্তৃক ভাল হয় নাই। এই স্বপ্ন দেখিয়া উনার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। পরের দিন সকাল বেলা তিনি বাড়ীর চাকর-নকর, পেয়াদা-সবাইকে ডাকিয়া বলিলেন, সকালে বিকালে এলাকায় আসা যাওয়ার সময় খােজ খবর রাখিবে একজন সাধক আটরশি আসিবেন। উনার খবর পাওয়া মাত্রই আমাকে জানাবে।

জমিদারের চাকর-নকর, পাইক-পেয়াদা, নির্দেশ মােতাবেক রীতিমত খোঁজ খবর রাখা শুরু করিলেন। এইভাবে ১ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর খাজা বাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) আটরশিতে আগমন করিলেন। উনার আসার খবর পাওয়া মাত্রই খবরটি জমিদারের লােকজন জমিদার বাবুর মায়ের নিকট পৌছাইল। এই খবর শুনিয়া জমিদারের মা পালকিতে করিয়া আটরশিতে রওয়ানা হইলেন। এক ঘটি পানি সাথে নিয়া গেলেন। আটরশিতে আসিয়া পীর কেবলাজানের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন এবং বলিলেন আপনাকেতাে আমি এক মাস আগ হইতে চিনি। ইহা শুনিয়া পীর কেবলাজান বলিলেন মা আপনি আমাকে কিভাবে চিনিলেন? আমি তাে এখানে আজকেই আসিয়াছি।

তখন জমিদার বাবুর ‘মা’ জবাবে বলিলেন আপনার আগমনের এক মাস আগে হইতে আপনাকে চিনি। ইহা বলিয়া সাথে করিয়া নিয়া আসা পানির ঘটিটি খাজা বাবার সম্মুখে দিলেন। কাদিয়া বলিলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত পেটের ব্যথায় অনেক কষ্ট পাইতেছি। আপনি দয়া করিয়া এই পানিতে একটু ফু দেন। পীর কেবলাজান বলিলেন আমি পানিতে ফু দিতে পারিব না। আমার পীর কেবলাজানের হুকুম নাই। অনেক আকতি মিনতি করার পরও পীর কেবলাজান অস্বীকৃতি জানালেন। বৃদ্ধা বলিলেন আপনি ইকুম নেন, পীর কেবলাজান বলিলেন আমাকে ১মিনিট সময় দেন। বুড়ি মা বলিলেন, আপনাকে ৫মিনিট সময় দিলাম। পীর কেবলাজান ভিতরে গিয়ে ধ্যানে বসিলেন এবং দাদা হুজুর (তিনার পীর) কেবলাজান এর সাথে কথা বলেন। দাদা হুজুর বলিলেন তুমি পানিতে আঙ্গুল দিয়া লাড়া দিয়া দাও।

ইহা শুনিয়া কেবলাজান বাহিরে আসিতেই বৃদ্ধা বলিলেন বাবা পানিতে যদি ফু না দেন তবে আপনার আঙ্গুল মােবারক এই পানিতে একটু ছুঁইয়ে দেন। তখন পীর কেবলাজান বৃদ্ধার অনুরােধে আঙ্গুল মােবারক পানিতে একটুখানি ডুবাইলেন। বৃদ্ধা ঐখানে বসিয়া একটু পানি পান করিলেন। সাথে সাথে তাহার পেটের ব্যথা কমিতে লাগিল। যেইভাবে জলন্ত আগুনের মধ্যে পানি নিক্ষেপ করিলে আগুন নিভিয়া যায় ঠিক সেই ভাবেই তাহার পেটের ব্যথা থেমে গেল। পীর কেবলাজানকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক জমিদারের মা চলিয়া আসিলেন।

IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

এই জমিদার বাড়ী এবং আটরশি পাক দরবার শরীফের মাঝখানে প্রায় এক কিলােমিটার ব্যবধান। ঐ দিন রাত্রির শেষে ভাের বেলায় ফজরের আযান পীর কেবলাজান নিজেই দিলেন। তখন মাইক ছিল না। আশেপাশের কেউ শুনিলেও ঐ এক কিলােমিটার দূরে জমিদার বাড়ীর সবাই আযানের ধ্বনি শুনিতে পাইলেন এবং সকাল বেলায় জমিদার বাবু সবাইকে ডাকিয়া বলিলেন কে আযান দিয়াছে? তাহা জানিবার জন্য তাহার পাইক-পেয়াদা লােকজন পাঠাইলেন। জমিদারের লােকজন অনেক খোঁজাখুজির পর জানিতে পারিলেন ঐ আটরশির মহাসাধক নিজেই আযান দিয়াছেন। এই খবর শুনিয়া জমিদার বাবু ঐ মহা সাধককে ধরিয়া আনার জন্য লােকজনকে নির্দেশ দিলেন। ঠিক ঐ মুহুর্তেই জমিদার বাবুর মা ডাকিয়া বলিলেন, কি করিতেছ? জমিদার বাবু।

বলিলেন, এই এলাকায় মুসলমান আযান দিয়াছে, তাই উনাকে ধরিয়া আনার জন্য লােক পাঠাইতেছি। এই কথা শুনিয়া বুড়ি মা বলিলেন, তােমরা সর্বনাশ করিতেছ। সাবধান, কাউকেই পাঠাইবে না। উনার সাথে বেয়াদবি করিলে ভগবানের গােস্বার অনলে জ্বলিয়া পুড়িয়া মরিবে। এই কথা শুনিয়া জমিদার আর কাউকে পাঠাইলেন না। মায়ের স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনিয়া এবং দীর্ঘ দিনের। পেটের ব্যধি ভাল হওয়ায় জমিদার বাবু সকলকে নিয়ে এই সাধকের ভক্ত হইয়া গেলেন।

পরবর্তী সময়ে জমিদার বাবু পীর কেবলাজানের এতই ভক্ত হইলেন যে, উনাদের নিজস্ব সয়-সম্পত্তি, বাড়ী ঘর, সমস্ত জমিদারীসহ পীর কেবলাজানের কদমে নজরানা দেয়ার আবেদন করিলেন। পীর কেবলাজান শুনিয়া বলিলেন, আমার পীর আমাকে জমিদারী করার জন্য এখানে পাঠান নাই। আপনাদের নজরানা গ্রহণ করিতে পারিব না। যদি আমার জমিদারী দরকার হয় তাহা হইলে আমার পীর কেবলাজানের দোয়ার বরকতে আল্লাহ পাকই আমাকে দান করিবেন। এ কথা বলিয়া উনাদেরকে জলপান করার হুকুম দিলেন। পীর কেবলাজান ভিতর বাড়ীতে প্রবেশ করিয়া উনাদের জন্য চিড়া, গুড়, মুড়ী, সন্দেশ সহ ১০/১২ রকমের খাবার আইটেম পাঠাইলেন।

উনারা খাওয়া দাওয়া শেষে নিরাশ হইয়া ফিরিয়া গেলেন। ৫-৬ মাস পরে আবার আবেদন করিলেন, হুজুর আমাদের জমিদারীর সয়-সম্পত্তি সব সরকার নিয়া যাবে। বরং ভাল হয় আপনিই নিয়ে যান। আমরা সবাই লিখিয়া দিব। ইহা শুনিয়া পীর কেবলাজান পূর্বের ন্যায় একই কথা বলিয়া উনাদেরকে বিদায় করিয়া দিলেন। ইহার পরও তাহারা আসা-যাওয়া করিতেন। মাস খানিক পর তাহারা আবার পীর কেবলাজানের কদমে উপস্থিত হইয়া তাহাদের ব্যবহারের আসবাবপত্র, সামিয়ানা, লাইট, তামা-কাসার তৈজসপত্র যাবতীয় জিনিস পত্র নেওয়ার জন্য হুজুর পাকের নিকট আবেদন করিলেন।

হুজুর পাক বলিলেন বাবা, আমি আপনাদের কথায় রাজি, নিব কিন্তু একটা শর্ত। শর্ত হইল এই যে, বাবা যাহা কিছু পারি আমি কিছু হাদিয়া দিব এবং আপনাদের তাহা গ্রহণ করিতে হইবে। একথা শুনিয়া জমিদারবাবু বলিলেন, আমরা সবকিছু দরবারে পাঠাইয়া দিব। পীর কেবলাজান বলিলেন, না বাবা আমি যখন যেই জিনিসের হাদিয়া দিব সেই জিনিসটাই নিব। এইভাবে ১/২ টা করে পর পর ভাল ভাল জিনিসগুলি আনিলেন এবং আকর্ষনীয় জিনিসপত্রগুলি এনায়েতপুর পাক পরবার শরীফে পাঠাইয়া দিলেন। নামমাত্র মূল্যে প্রায় লাখ খানেক টাকার জিনিসপত্র আনিলেন।

পাঠকগণ বুঝিয়া দেখেন বিনা পয়সায় দিতে চাহিল কিন্ত পীর কেবলাজান নিলেন না। হাদিয়া বা মূল্য দিয়া নিলেন। জগতে এমন কে আছে এসব লােভনীয় জিনিসপত্র বিনা মূল্যে দিলেও গ্রহণ করেন না।

সংকলকঃ আলহাজ্জ্ব আব্দুল খালেক।
সূত্রঃ “বিশ্বওলি খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেবের কারামত” নামক বই হতে তুলে ধরা হয়েছে।