দোয়া বা মোনাজাত সম্পর্কিত দলিল সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো
(১) হযরত নু’মান বিন বশীর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দোয়া হলো মূল ইবাদত। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দলীলস্বরূপ এ আয়াতখানা তেলাওয়াত করেন –
(সূরা গাফের-৬০) —— وقال ربكم ادعونى أستجب لكم
অর্থাৎ, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। নিশ্চয়ই যে সব লোক আমার ইবাদত করে, অর্থাৎ, আমার কাছে দোয়া করা থেকে বিরত থাকে এবং অহংকার করে, অচিরেই তারা অসম্মানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
-(তিরমিজী, আস্ সুনান, কিতাবুত তাফসীর, বাবে সুরাতুল মু’মেনুন ৫-৩৭৪ হাদীস – ৩২৪৭)
(২) আন আবি হুরায়রাতা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আনিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ক্বালা লাইসা শাইয়্যূন আকরামা আ’লাল্লাহি তা’য়ালা মিনাদ দূয়ায়ি’। অর্থাৎ, হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ্র দরবারে কোনো বস্তু দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত ও আদরণীয় নেই।
-(তিরমিজী, আস্ সুনান, বাবে মা জা’আ ফীদ দোয়া, হাদীস – ৩৩৭০)
(৩) ‘আন আনাস ইবনে মালেকিন আনিন নাবীয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ক্বালা আদ দোয়াও মুক্ষোল ইবাদাতি’; অর্থাৎ, হযরত আনাস বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দোয়া হচ্ছে ইবাদতের মগজ, অর্থাৎ, মূল ও সারবস্তু।
-(তিরমিজী ও দায়লমী, হাকেম, আল মুস্তাদরাক, হাদীস – ১৬০)
(৪) ‘আন আবি হুরারাতা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বাল, ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা মা সাররাহু আন ইয়াস্তাজিবাল্লাহু লাহু ইনদাশ্ শাদায়েদে ওয়াল কারবে ফালইউকসিরুদ দোয়াআ ফীর রাখায়ি’। অর্থাৎ, হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এ বিষয়ে আনন্দিত যে আল্লাহ্ দুঃখ-কষ্ট, দুর্দশা ও দুরবস্থার সময় তার দোয়া কবুল করেন, তার উচিৎ স্বাভাবিক অবস্থায় অধিক হারে দোয়া করা।
-(ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, কিতাবুদ দোয়া, বাবে ফাজায়েলে দোয়া, হাদীস – ৩৮২৯)
(৫) ‘আন আনাসিবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বাল, ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা আদ্দোয়াও লাইউরাদ্দু বাইনাল আযানে ওয়াল ইক্বামাতে’। অর্থাৎ, হযরত আনাস বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে করা দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না।
-(তিরমিজী, আস-সুনান, কিতাবুস সালাত, বাবে মা জাআ ফী ইন্নাদ দোয়াআ লা ইউরাদ্দু বাইনাল আযানে ওয়াল ইকামাতে, হাদীস – ২১২)
(৬) হযরত আনাস বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: আল্লাহ্ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, হে আদম সন্তান! যতোক্ষণ যাবত তুমি আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং আশা রাখবে, তুমি যা কিছুই করতে থাকো, আমি তোমাকে মাফ করে দেবো, আর আমি কোনো পরওয়া করিনা। হে আদম সন্তান! তোমার গুণাহ যদি আসমানের মেঘমালা পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়, তার পরও তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করো, তাহলে আমি মাফ করে দেবো। আমি কোনো পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি ভূপৃষ্ঠ সমান গুণাহ নিয়ে আমার কাছে আসো, আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ এমনভাবে হয় যে তুমি আমার সাথে কাউকে শরীক করো নি, তাহলে আমি তোমার ভূপৃষ্ঠ ব্যাপী গুণাহ মাফ করে দেবো।
-(তিরমিজী, আস- সুনান, কিতাবুদ দাওয়াত, বাবে ফাদলিত তাওবাতে ওয়াল ইস্তিগফার, হাদীস- ৩৫৪০)
উপরোক্ত ৬টি হাদিস শরিফে বর্ণিত আল্লাহ’র দরবারে বান্দার দোয়া-মুনাজাতের গুরত্ব সম্পর্কে বোঝার আর কিছু বাকি থাকে না। এ রকম অনেক সহীহ হাদীস পেশ করা যাবে।
ফরজ নামাযের পর দোয়া কবুলের ব্যাপারে হাদীসের দলিল।
(৭) ‘আন আবি উমামাতা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বালা ক্বিলা ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইউদ দোয়ায়ি আসমা’উ? ক্বালা জাউফাল লাইলে আখেরে ওয়া দুবুরাস সালাওয়াতিল মাক্তুবাতি’। অর্থাৎ, হযরত আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আরজ করা হলো, কোন্ সময়ের দোয়া সব চেয়ে বেশি কবুল হয়ে থাকে? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রাতের শেষ ভাগে এবং ফরজ নামাজগুলোর পরে (দোয়া কবুল হয়)।
-(তিরমিজী, আস-সুনান, কিতাবুত দাওয়াত, হাদীস – ৩৪৯৯)
(৮) হযরত মু’আজ বিন জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ধরলেন, আর বললেন, হে মু’আজ, আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি। হযরত মু’আজ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, ( ইয়া রাসুলাল্লাহ!) আমার পিতা-মাতা আপনার জন্যে কোরবান হোন। আমিও আপনাকে অত্যধিক ভালোবাসি। অতঃপর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে মু’আজ! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে প্রত্যেক নামাজের পর এ দোয়া করবে, কখনো বাদ দেবে না: ‘হে আল্লাহ্! আপনার জিকির, আপনার শোকর এবং সুষ্ঠুভাবে আপনার ইবাদত করার ব্যাপারে আপনি আমাকে সাহায্য করুন’।
-(নাসায়ী, আমালিল ইয়াউমি ওয়াল লাইলা, হাদীস – ১৩১)
(৯) হযরত আনাস বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (নামাজে) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরাবর পেছনে দাঁড়াতাম। তিনি যখন সালাম ফিরাতেন, বলতেন; হে আল্লাহ্! আমার জীবনের শেষ অংশটি উত্তম করে দিন। হে আল্লাহ্! আমার শেষ আমল আপনার সন্তুষ্টি দ্বারা সমৃদ্ধ করুন। হে আল্লাহ্! আমার দিবসগুলোর মধ্যে ওই দিবসকে উত্তম করুন, যে দিবসে আমি আপনার সাথে মিলিত হবো।
-(তাবরানী, আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস – ৯৪১১)
এ হাদিস শরীফগুলো দ্বারা নামাজের পর আল্লাহ’র দরবারে দোয়া করার গুরুত্ব বিদ্যমান। এ ছাড়াও অনেক সহীহ হাদিস রয়েছে।