নারী ছাড়া কি সাধনা হয়?
অমৃত জিজ্ঞাসা (পর্ব-০৭)
প্রশ্নঃ নারী ছাড়া কি সাধনা হয়?
উত্তরঃ
প্রকৃতির সবাই নারী, সৃষ্টি বলতে যা কিছু আছে তা সবই নারী। আর পুরুষ হল পরম প্রভু। নারী-পুরুষের সাধনা মানেই হল জীব আর পরমের সাধনা, নারী-পুরুষের প্রেম মানেই জীব-পরমের প্রেম। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর সমস্ত পুরুষরাও এক একজন নারী। যেহেতু তারা সবাই জীব বা সৃষ্টি। কিন্তু বাহ্যিকভাবে পৃথিবীতে নারী ও পুরুষ দু’টি পৃথক জাত। যাদের চেহারা, চলা ফেরা, শারিরীক গঠনও একে অপরের থেকে ভিন্ন। নারী ছাড়া পুরুষ ও পুরুষ ছাড়া নারী অচল ও অপূর্ণাঙ্গ। তাই স্ত্রীকে অর্ধাঙ্গিনী বা পুরুষের দেহের আধা বা অর্ধেক বলা হয়। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী বা নারী-পুরুষ দুজনে মিলে পূর্ণতা লাভ করে। তবে এটা দুনিয়াদারীর ক্ষেত্রে। সাধনার ক্ষেত্রে নয়।
ভজন-সাধনের বেলায় কেউ কারো প্রতি মুখাপেক্ষী নয়। যার যার ভজন-সাধন তার তার। এখানে একে অন্যকে সহযোগীতা করতে পারবে, কিন্তু কেউ কারো সাধনা করে দিতে পারবে না। নারীর সাধনা নারীর একার, পুরুষের সাধনা পুরুষের একার। আধ্যাত্মিক সাধনা বা দেহ সাধনার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েই সাধনার পূর্ণ উপাদান নিয়েই সৃষ্ট। সাধনার জন্য যা যা প্রয়োজন তা নারী ও পুরুষকে সমানভাবেই দিয়েছেন দয়াময় ঈশ্বর। প্রভুর সাধনার জন্য নারীর দরকার নেই কোনো পুরুষের, আর পুরুষের দরকার নেই কোনো নারীর। নারী ও পুরুষ উভয়ের মাঝেই পরম রয়েছেন একই অবস্থায়। নারী ও পুরুষের বাহ্যিক অঙ্গ ভিন্ন হলেও আত্মিক অঙ্গগুলো সম্পূর্ণ এক। নারীরও যেই মন, পুরুষেরও সেই মন, নারীর মধ্যে যেই আত্মা, পুরুষের মাঝেও সেই আত্মা, নারী ও পুরুষের মাঝে একই রূহ বিদ্যমান। মন নারীও নয়, পুরুষও নয়, আত্মা নারীও নয়, পুরুষও নয়। কর্মের কারনেই মানুষ নারী বা পুরুষের দেহ ধারন করে। আত্মা নারী দেহ ধারন করলে মন তখন নারী সুলভ হয়, আর পুরুষ দেহ ধারন করলে পুরুষ সুলভ মন হয়। তাই নারী ও পুরুষের মানসিক বৈশিষ্ট্যও অনেকটা ভিন্ন হয়। কিন্তু এসবের সাথে আত্মার সম্পর্ক নেই, এগুলো দেহের সাথে সম্পর্কিত। আর সাধনা হবে আত্মা কেন্দ্রিক, দেহকে আশ্রয় করে আত্মা প্রভুর সাধনা করবে। হোক সে আত্মা পুরুষ দেহের অধিকারী বা নারী দেহের।
ধ্যান বা মোরাকাবা মোশেহেদা করতে হয় একা একা, তাও খুব নির্জনে। সেখানে ত কেউ বলেনা যে নারী পুরুষ দুইজনকেই লাগবে, ত্রিনয়ন জাগ্রত করতে ত নারী পুরুষ উভয়কে যোগল সাধনা করতে হয় না, ইশ্বরকে ভালবাসতে ত নারী পুরুষ দুজন লাগে না, তাহলে কেন ইশ্বরলে লাভ করতে সাধনায় নারী কিংবা পুরুষকে লাগবে?সাধনার জন্য যদি নারী লাগতো তাহলে সাধু-সন্ন্যাসী বা ওলী আউলিয়ারা স্ত্রী সঙ্গ বাদ দিয়ে বনে জঙ্গলে গিয়ে একাকী সাধনা করত না।
“নারী ছাড়া সাধনা হয় না” এরূপ কথা যারা বলে তারা অধিকাংশই পথভ্রষ্ট। তাদের মধ্যে অধিকাংশই সাধুর বেশে কামুক লোভী অসাধু ব্যক্তি। আর তাই বর্তমানে দেখা যায় অধিকাংশ নামধারী সাধু ও পীরেরা নারী সংক্রান্ত অশ্লীল অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আত্মবাদ, সূফীবাদ বা মরমীবাদকে কলঙ্গিত করতেছে।
হে প্রভু! আপনি আমাদের সত্য পথে পরিচালিত করুন এবং সকল প্রকার নোংরামী থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন।
– DM Rahat