হোমপেজ আধ্যাত্মিক প্রশ্ন ও উত্তর আমিতো প্রভুর হুকুমের দাস, তবে পাপ কর্মে আমি কেন দোষী?

আমিতো প্রভুর হুকুমের দাস, তবে পাপ কর্মে আমি কেন দোষী?

388

আমিতো প্রভুর হুকুমের দাস, তবে পাপ কর্মে আমি কেন দোষী?

অমৃত জিজ্ঞাসা (পর্ব-০৮)

প্রশ্নঃ আমি ত প্রভুর হুকুমের দাস, তবে পাপ কর্মে আমি কেন দোষী?

উত্তরঃ

সৃষ্টি সর্বদাই স্রষ্টার অধীন। সবকিছুর প্রভুর ইচ্ছায় সংঘটিত হয়, তাঁর ইচ্ছার বাইরে কিছুই ঘটে না। মানুষ বা কোনো জীব স্রষ্টার ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কিছুই করতে পারে না, হোক তা পাপ কর্ম কিংবা পূণ্য বা সৎকর্ম। সকল শাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ এটাই বলে যে সবকিছুই প্রভুর ইচ্ছাতেই ঘটে। তাই অনেক মানুষের মনেই একটি প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটে। আর সেটি হল “সবই যদি প্রভুর ইচ্ছায় হয়ে থাকে, তাহলে পাপ কর্মেএ জন্য আমরা কেন দোষী হব এবং শাস্তি পাবো? এগুলো সবই ত তাঁর ইচ্ছা, আমরা ত খেলনা স্বরূপ পুতুল মাত্র। তিনি যেভাবে নাচায় আমরা সেভাবেই নাচি। তাহলে আমার কৃতকর্মের জন্য আমি কেন দায়ী হবো? আমার ত কোনো ক্ষমতাই নেই।” সাধারন মানুষের মনে এরূপ প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। তবে আত্মজ্ঞানীদের কাছে এটি তেমন জটিল নয় বরং পরিষ্কার একটি সহজ বিষয়।

মহান স্রষ্টা জীবের দেহকে পঞ্চ অনাস বা পঞ্চচীজ বা পঞ্চভূতে সৃষ্টি করেছেন। যাকে পঞ্চ জাতও বলা হয়ে থাকে। আর জীবকে সঞ্চালিত করতে দান করেছেন তারই সাতটি সিফাত বা গুন। অর্থাৎ পাঁচ জাত ও সাত সিফাত এই ১২তেই মানব সৃষ্টি। ৫ জাত হল ‘সাফা বা নূর, বাদ বা বাতাস, আতস বা আগুন, আব বা পানি, খাক বা মাটি। আর ৭ সিফাত হলো হাইয়ুন সিফাত বা জীবনী শক্তি, আলিমুন সিফাত বা বোধশক্তি, মুরিদুন সিফাত বা ইচ্ছা শক্তি, বাছিরুন সিফাত বা দৃষ্টিশক্তি, ছামিয়ুন সিফাত বা শ্রবণশক্তি, কুদিরুন সিফাত বা তাকত তথা শারীরিক শক্তি এবং কালিমুন সিফাত বা বাকশক্তি। এই সাতটি সিফাত বা গুন হল স্রষ্টার সিফাত। তিনি ভালবেসে মানুষকে তার এই প্রধান সাতটি সিফাত মানুষকে দান করেছেন। আর এগুলোকে মানুষের অধীন করে দিয়ে মানুষকে এগুলো প্রয়োগের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

অনুরূপভাবে মুরিদুন সিফাত তথা ইচ্ছা শক্তিকে প্রভু মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। তাই মানুষ স্বাধীন এবং এই ইচ্ছা শক্তি থাকার কারনে মানুষ নিজের ইচ্ছায় যা ইচ্ছা তা করতে পারে, স্রষ্টা তাকে বাধা প্রদান করেন না। এই ইচ্ছা শক্তিমূলত স্রষ্টার, স্রষ্টাই ভালবেসে মানুষকে তা দান করেছেন। আর তাই মানুষ যা করে তার সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছার মধ্যেই থাকে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে সবকিছু আল্লাহর হুকুমে হচ্ছে। আল্লাহর ইচ্ছা ও হুকুম দুটি দুই বিষয়। মানুষের সবকাজে আল্লাহর ইচ্ছা থাকে, কিন্তু হুকুম থাকেনা। কোনো পাপকাজের হুকুম আল্লাহ দেন নাই, কিন্তু তিনি জীবকে নিজের মুরিদুন সিফাত বা ইচ্ছাশক্তি দানের মাধ্যমে সৃষ্টির সকল কাজকে নিজের ইচ্ছায় সম্পাদন করছেন

মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে, বলতে পারে, দেখতে পারে, শুনতে পারে। আর এগুলো সব আল্লাহর ইচ্ছা আছে বলেই পারে। অর্থাৎ মানুষের পাপকাজগুলো আল্লাহর ইচ্ছায় হয়, আল্লাহ যদি চাইতেন তবে তাকে বাধা প্রদান করতে পারতেন, কারন তিনি সর্বশক্তিমান, কিন্তু তাঁর ইচ্ছা আছে বলেই তিনি বাধা প্রদান করেন না। আর ভাল মন্দ বিচারের জন্য আল্লাহ জীবকে তার আরেকটি মূল্যবান সিফাত তথা আলিমুন সিফাত বা বোধশক্তি দান করেছেন। আর এই জন্যেই মানুষ তাঁর সকল কৃতকর্মের জন্য নিজেই দায়ী বা দোষী।

মানুষকে যেহেতু ইচ্ছাশক্তি দান করা হয়েছে এবং স্বাধীন করে দেওয়া হয়েছে ভাল ও মন্দ কর্ম করা ক্ষেত্রে, সেহেতু নিজের ভাল কর্মের জন্য মানুষ পুরষ্কৃত হবে এবং মন্দ কর্মের জন্য শাস্তি লাভ করবে।

লেখাঃ DM Rahat

» অমৃত জিজ্ঞাসা (সবগুলো পর্ব)