আধ্যাত্মিক প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৫)
২৫.
শিষ্যঃ প্রভু! গুলিয়ে যাচ্ছি কিছুটা। আমার ক্ষুদ্র ভান্ডে এতো সূক্ষ্ম কথা ধারণ করতে পারছি না। কৃপা করে আমাকে রতি সাধনা সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন।
গুরুঃ ‘রতি’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল মৈথুন, যৌনসঙ্গম, যৌনকর্ম, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি। সেই হিসেবে ‘রতি সাধন’ এর অর্থ ধরা যায় যৌনসঙ্গম বা স্ত্রী সহবাস সংক্রান্ত সাধনা।
রতি সাধন বলতে বুঝায়, যে সাধনার দ্বারা বীর্যকে নিজের নিয়ন্ত্রনে এনে নিজের যৌন শক্তিকে বৃদ্ধি, দীর্ঘক্ষণ স্ত্রীসঙ্গম, জন্মনিয়ন্ত্রণ, আশানুরূপ সন্তান লাভ ও বীর্যকে সংরক্ষনের মাধ্যমে মনকে নিজের বশে এনে কামভাব দমন করে আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জন ও দেহকে সবল বা সুঠাম অর্থাৎ চাঞ্চল্য ও শক্তিধর করে রাখার দেহ সাধনা। এটা ‘দম সাধনা’ এর অন্যতম একটি অংশ।
শ্বাস-প্রশ্বাস ও তত্ত্ব নির্নয়ের মাধ্যমে রতি সাধকগন যৌন কর্ম করে থাকেন। কোন নাসিকায় শ্বাস প্রবাহিত হওয়ার সময় সঙ্গম করলে অধিক সময় সঙ্গম করা যায়, কিভাবে বীর্যকে স্তম্ভন করে রাখা যায়, কিভাবে নিন্মগামী চন্দ্রকে (বীর্য পাত হওয়ার উপক্রম হলে) আবার উর্ধ্বমুখী করা যায় এবং ব্রহ্ম দ্বারে দমকে আটকে রেখে বীর্যকেই রুদ্ধ করে রাখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা ও দম সাধনার মাধ্যমে এইসব ক্ষমতা অর্জন করাই হল মূলত রতি সাধন কর্ম।
রতি সাধনার আরেকটি বিষয় হল দেহের মাঝে ছয়টা চক্র আছে, যাকে ষটচক্র বলা হয়। এই ষটচক্রভেদ জেনে ও কর্ম করে দেহকে অটল রাখাও রতি সাধনের অন্যতম অংশ।
২৬.
শিষ্যঃ তবে কি রতি সাধনা আত্মিক কোনো উন্নতি করে না?
গুরুঃ করবে না কেন! আত্মা ত উন্নতি করে এই দেহের মাধ্যমেই। যদি এই দেহ ঠিক না থাকে, তাহলে সে কিভাবে আত্মিক উন্নতি সাধন করবে? তাই আত্মিক উন্নতির জন্যে রতি সাধনার গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে। কারন দেহ রতি ঠিক থাকলেই আত্মিক সাধনায় মন লাগে।
২৭.
শিষ্যঃ দেহ রক্ষা এবং মন বশে আনতে কি তবে রতি সাধনার গুরুত্বই বেশি?
গুরুঃ ‘রতি সাধনা’ করার ফলে দেহের বীর্যের ঘাটতি কমে যায়, ফলে মনের চঞ্চলতা হ্রাস পায়। রতি সাধনার জন্য দম সাধনা তথা পাছ আনফাসের সাধনা করতে হয়। তাই ইহা দেহ ও মন ভাল রাখতে সহযোগী। তবে মনকে বশে রাখার জন্য দম সাধনাই প্রধান সাধনা।
২৮.
শিষ্যঃ দমের সাথে মনের সম্পর্ক কি?
গুরুঃ দম তথা শ্বাস প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলেই বীর্য ও মন নিয়ন্ত্রনে এসে যায়। আর মনের সাথে বীর্যের অনেক সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই যার বীর্য যত ঘন তার মন তত বেশি স্থির। সাধনার ক্ষেত্রে মনকে নিয়ন্ত্রনে না আনতে পারলে বা স্থীর করতে না পারলে কেউ কোনো সাধনায় সিদ্ধি লাভ করতে পারবে না। তাই বিভিন্ন পদ্ধতিতে দেহ সাধকগন দমের সাধন করে থাকেন। আর বীর্য ঘন হলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও মন আসতে আসতে নিজের বশে চলে আসতে থাকে বা স্থীর হয়ে যায়। আর এই জন্যই রতি সাধকগন এই সাধনা করে থাকেন। যার ফলে তাদের রতি শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সাধনার এক পর্যায় বীর্যপাত ঘটানো বা না ঘটানো বা সন্তান জন্ম দেওয়া না দেওয়া তাদের ইচ্ছাধীন বা আয়ত্বাধীন হয়ে যায়। তবে ইহা সহজ কথা নয়। অনেক কঠিন সাধনা।
২৯.
শিষ্যঃ চরণে সহস্র প্রনাম প্রভু! কৃপা করে জানাবে কি যে ভজন আর সাধনা কি? দুইটা কি একই বস্তু? নাকি ভিন্নতা আছে?
গুরুঃ সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে ভজন ও সাধনার মাঝে। ভজন পায় গুরু আর সাধন পায় দয়াল (আহাম্মদী সত্ত্বা)। মূলত দুইটাই গুরু এবং দয়াল পায়। কিন্তু বাহ্যিক কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান।
৩০.
শিষ্যঃ প্রভু! তাহলে ভজন ও সাধনের মাঝে পার্থক্য কি? কৃপা করে আমাকে জানান।
চলবে….
লেখাঃ DM Rahat