রাসূল (সাঃ) মোয়াবিয়াকে বিদ্রোহী এবং জাহান্নামী বলেছেন
দয়াল রাসূল পাক (সাঃ) মোয়াবিয়াকে বিদ্রোহী এবং জাহান্নামী বলে, আর আমরা পন্ডিতরা বলি জলিল সাহাবী এবং জান্নাতি।
দয়াল রাসূল পাক (সাঃ) বলেন,
عن أَبِي سَعِيدٍ الخدري ، قَالَ: ” كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً وَعَمَّارٌ
لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ ، وَيَقُولُ: وَيْحَ عَمَّارٍ ، تَقْتُلُهُ الفِئَةُ البَاغِيَةُ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ قَالَ: يَقُولُ عَمَّارٌ: ” أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ ”
“আম্মারের জন্য আফসোস!! তাঁকে একটি বিদ্রোহী গ্রুপ শহীদ করবে, আম্মার তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকবে আর তারা আম্মারকে জাহান্নামের দিতে ডাকবে। এটা শুনে আম্মার (রাঃ) বললেন- হে আল্লাহ আমি সেই ফেতনা থেকে ফানা চাই।”
- ১. বুখারী শরীফ , ৮খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮৫-১৮৬
- ২. তিরমিজি শরীফ, ৫ খন্ড, পৃ. ৬৬৯
- ৩. মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, ২খন্ড, পৃ. ১৬১,১৬৪,২৬৪।
২৫জন সাহাবীর সূত্রে প্রায় সকল হাদিস গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে, রাসুলে পাক (সাঃ)বলেন-
হায়! হায়! সত্যত্যাগী একদল বিদ্রোহী আম্মারকে হত্যা করবে। আম্মার তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করবে তারা আম্মারকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে। তার হত্যাকারী এবং যারা তার অস্ত্র ও পরিচ্ছেদ খুলে ফেলবে তারা জাহান্নামের অধিবাসী।
- (১. বুখারী, ৮খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮৫-১৮৬।
- ২. তিরমিজি, ৫ খন্ড, পৃ. ৬৬৯।
- ৩. মুসনাদে হাম্বল, ২খন্ড, পৃ. ১৬১,১৬৪, ২৬৪; ৩খন্ড, পৃ. ৫,২২,২৮; ৪খন্ড, পৃ. ১৯৭,১৯৯; ৫খন্ড, পৃ. ২১৫,৩০৬; ৬খন্ড, পৃ. ২৮৯,৩০০)
এই হাদিসটির সততা ও সঠিকতা সম্পর্কে প্রায় সকল হাদিসবেত্তা ও ঐতিহাসিকগণ একমত পোষণ করেন। আসকালানী, ইবনে হাজর, আল্লামা সূয়্যূতি লিখেছেন, হাদিসটি এত বেশি লোক দ্বারা বর্ণিত যে, এতে কোন প্রকার সন্দেহ থাকার অবকাশ নাই। সিফফিনের যুদ্ধে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বাধীন বাহিনী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) কে শহীদ করে দেন। (মুয়াবিয়া যে মুনাফেক ও জাহান্নামি তা এই হাদিস শরিফ দ্বারা প্রমাণিত)।
পৃথিবীর বুকে এমন কোন মায়ের সন্তান জন্ম হয়নি যে, এই হাদিসটি জাল অথবা দুর্বল হাদিস বলে আখ্যায়িত করবে। ওহাবী, আহলে হাদিস, সুন্নি, শিয়া, হেফাজিত ও জামায়াত ইসলামের লোকজন একবাক্যে উক্ত হাদিসটি মেনে নিয়েছে। এই হাদিসটির সত্যতা সমন্ধে কোন ফেরকারই দ্বিমত পোষণ করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। স্বাভাবিকভাবে মনের ভিতরে প্রশ্ন জাগে, তবে কেনো আহলে বাইত প্রেমিকগণ বাদে সবাই মোয়াবিয়াকে জলিল কদর সাহাবী বলে।
গায়ের জোরে পাহাড় ঢেললে যা হয়, সেটাই হয়েছে। কারণ আহলে বাইত বংশধর ব্যতীত সকল ফেরকার ইমামগণ তাদের অনুসারীদেরকে মোয়াবিয়াকে সাহাবী বলা শিখিয়েছে। আর তাদের অন্ধ ভক্তরা একবাক্যে তাহা মনেপ্রাণে মেনে নিয়েছে। এখানেই মূল সমস্যা এবং বিপত্তি ঘটেছে। তাছাড়া এই হাদিসটি তারা হৃদয়ের সত্যতা দিয়ে উপলব্ধি করতে পারেনি এবং আহলে বাইতের প্রতি তাদের ভালোবাসা ঘাটতি এবং দুশমনির জন্য উক্ত হাদিসটি অপব্যাখ্যা ও ভিন্ন খাতে ধাবিত করছে।
সিফফিনের যুদ্ধ মাওলা আলী এবং মোয়াবিয়ার সাথে সংঘটিত হয়ে থাকে। হযরত আম্বার (রাঃ) মাওলা আলীর পক্ষ নিয়ে মোয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। হযরত আম্বার (রাঃ) মরণপণ যুদ্ধ করে অবশেষে মোয়াবিয়ার হাতে শহীদ হন। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস! দয়াল রাসূল পাক (সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণী অল্প কিছু বছর পর হুবহু মিলে যায়। দয়াল রাসূলের ভবিষ্যৎ বাণী অনুযায়ী মোয়াবিয়া ছিলেন সেই বিদ্রোহী এবং চির জাহান্নামী। এটা যারা অস্বীকার করবে, তারা মূলত সরাসরি দয়াল রাসূল পাক (সাঃ) কে অস্বীকার করার নামান্তর। এখন আপনি যদি দয়াল রাসূল পাক (সাঃ) কে অস্বীকার করে আপনার পীর অথবা ফেরকার ইমামের কথা বিশ্বাস করে মোয়াবিয়াকে জলিল কদর সাহাবী বলেন, তাহলে অধমের কিছু বলার নাই। কারণ ধর্মের মধ্যে কোন জোর জবরদস্তি নাই।
আপনার হিসাব আমি দিবো না আর আমার হিসাব আপনি দিবেন না। তবে মনে রাখিয়েন দয়াল রাসূল (সাঃ) কে অস্বীকার করার নাম ঈমান বিধ্বংসী এবং কুফরি গুণাহর শামিল। সুস্থ মস্তিষ্কে সুচিন্তিত বিবেক দিয়ে একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, আপনি কাকে মানবেন? একদিকে দয়াল রাসূল পাক (সাঃ) এবং অপরদিকে আপনার পীর ও ফেরকার ইমাম। আশা করি উত্তরটি আপনার শুদ্ধ বিবেক ঠিকই দিয়ে দিবে।
শিয়া উলুধ্বনি দিয়ে এবং ভাঙ্গা সারিন্দা বাজিয়ে আর মোয়াবিয়াকে জলিল কদর সাহাবী প্রমাণ করতে পারবেন না। কারণ সত্য যে বড়ই কঠিন এবং তিতা। সত্য তার আপন গতিতেই উদ্ভাসিত হয়, তাকে আটকানো যায় না।
নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।