হোমপেজ সকল দলিল ছামা গান বাজনা জায়েজ: দলিল সহ বণর্না

ছামা গান বাজনা জায়েজ: দলিল সহ বণর্না

1036

ছামা গান বাজনা জায়েজ: দলিল সহ বণর্না

ইসলামী ছামা গান বাজনা জায়েজ দলিল সহ বণর্না করা হলঃ-

মুসলমান ভাইয়েরা, ছামা, গান, বাজনা হারাম নহে, পবিত্র কোরানে এবং হাদিসে গান বাজনা নিয়ে অনেক গুরোত্বপূর্ন তত্ত আছে! তাই আমরা গান বাজনাকে হারাম বলার আগে তা আলোচনা করে নিজেদের উক্তি দেওয়া উচিত। আল্লাহ এবং তার রাসূলের ভক্তদের জন্য গান বাজনা তাদের আত্মার খোরাক। যদি আনন্দ, ফুর্তির জন্য গান বাজনা করা হয়, তা হারাম বলে গন্য হবে!

নিম্নে ছামা গান বাজনা সম্পর্কে কিছু দলিল দেওয়া হলোঃ-

১. আমার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আল্লাহিই ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের আগে তার ঋন ক্ষমা চাওয়ার জন্য বিল্লাল তার গলায় ঢোল নিয়ে, ঢোল বাজিয়ে রাসূলের ঋন ক্ষমা চেয়েছিলেন সেদিন! সাক্ষী তার (তাওয়ারীতে মোহাম্মদী)

২. খাজা মইনুদ্দীন চিশতী বড় পীরকে গান শুনিয়েছিলেন, নিশ্চয় রাসূলে খোদা পুরুষ প্রধান,, মহা গুনে গুনান্নিত মহা মহিয়ান!! সেদিন আকাশ, জমিন একসাথে নৃত্য করেছিলো খাজা বাবার গানের ছন্দে, সাক্ষী তার (তাযকেরাতুল আউলিয়া) ৪র্থ খন্ড!!

৩. মুসলমানদের জানমালের হেফাযতে রাসূল বিল্লালকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য অনুমতি দিলে, বিল্লাল গলায় ঢোল নিয়ে তা প্রচার করেছিলো! সাক্ষী তার (বুখারী শরীফ) ৩য় খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা!!

৪. রাসূলের নির্দেশে সেদিন বিল্লাল তার গলায় ঢোল নিয়ে মদকে নিষেধ করেছিলো, কিন্তু ঢোলকে নয়! সাক্ষী তার (বুখারী শরীফ) ষষ্ঠ খন্ড ৭৩ পৃষ্ঠা!!

৫. খাজা বাবা এবং তার পীর ওসমান হারুনি, খানকার মজলিসে বসে গান শুনতেছিলেন! আসরে ৯ব্যক্তি ছিলো তার মধ্য ২ ব্যক্তির শুধু পোশাক ছিলো, কিন্তু তারা ছিলো না! খাজা বাবা তার পীরকে জিজ্ঞেস করলে, ওসমাম হারুনি বলেন! তারা এস্কের জিকিরে খোদার জাতের সাথে লয় হয়ে গেছে! তারা আর কখনো এ পৃথীবিতে ফিরে আসবে না। সাক্ষী তার (আনিসুল আরোহা) ৮৮ পৃষ্ঠা!!

৬. রাসূল(সাল্লাল্লাহু আল্লাহিই ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা থেকে মদিনায় এসেছিলেন হিযরত করে! মদিনার মেয়েরা সেদিন দফ বাজাইয়া রাসূলকে গান শুনিয়েছিলেন! রাসূল সেদিন গান কে হারাম বলেন নি,! সাক্ষী তার (বুখারী শরীফ) ৫ম খন্ড, ২২২পৃষ্ঠা!!

৭. আনসারী মেয়েরা আমার রাসূলের হিযরতের সময় নৃত্য করে গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন! সেদিন রাসূল নিজেই আনন্দিত ছিলেন! সাক্ষী তার (বুখারী শরীফ) ৫ম খন্ড ২২৩পৃষ্ঠা।

৮. রাসূল (সাল্লাহু আল্লাহিই ওয়া সাল্লাম) যখন মা আয়েশার ঘরে গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলেন, তখন মদিনার মেয়েরা নৃত্য করে গান গেয়ে নবীর ঘুম ভেঙ্গে দিয়েছিলেন! আবু বক্কর মেয়েদের ধমক দিয়ে থামিয়ে দিতে গেলে, রাসূল তখন আবু বক্কর (রাঃ) কে ধমক দিয়ে তাদের গাওয়াকে উৎসাহ দিয়েছিলেন! সাক্ষী তার (বুখারী শরীফ) ১ম খন্ড ২৭৭পৃষ্ঠা!!

৯. একদিন জিব্রাঈল রাসূলকে সংবাদ দিলেন, তার গরীব উম্মৎ গন ধনী উম্মতদের ৪শত বছর আগে জান্নাতে যাবে! সেদিন রাসূল খুশি হয়ে বলেছিলেন, তোমাদের মধ্য কে গান জানো? তখন বধুবী নামক এক ব্যক্তি রাসূল সহ ভরা মজলিসে গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন! সাক্ষী তার (কুৎনীত শরীফ) ৩৩৭পৃষ্ঠা!!

১০. আবু মূসা নামক তার এক সাহাবীর কন্ঠে গান শুনে, রাসূল সেদিন বলেছিলেন হে মূসা নিশ্চয় দাউদ নবীর বংশ হতে আমার আল্লাহ তোমাকে এই সুর দিয়েছেন! সাক্ষী তার (মূল বুখারী শরীফ) ৭৫৫পৃষ্ঠা!

১১. সায়মা নামক এক মহিলা আমার রাসূলকে কোলে নিয়ে গান গেয়েছিলেন! সাক্ষী তার (বুখারী শরীফ) ৫ম খন্ড ৫৩-৫৪পৃষ্ঠা পর্যন্ত তার ব্যাখ্যা দেওয়া আছে!

১২. পবিত্র কাবা তোয়াফ কালে এক রমনী জুনায়েদ বোগদাদী কে গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন! সাক্ষী তার (তাযকেরাতুল আউলিয়া) ৩য় খন্ড ১৩৭পৃষ্ঠা!!

১৩. মসজিদে নববী তৈরি করার সময় আমার রাসূল নিজেই তারানা গেয়েছিলো! সাক্ষী তার (বুখারী শরীফ) ৬ষ্ঠ খন্ড ১৯৮ পৃষ্ঠা।

এশকে এলাহী বৃদ্বি করণার্থে সূফীগণ যে গজল ( উর্দু,ফার্সীতে গজল, বাংলায় গান, ছামা আরবী) বা গান করিয়া থাকেন,উহাকে তাসাউফের ভাষায় ছামা বলা হয়। উহার অর্থ শ্রবন করা। এই প্রকার গজল বা সঙ্গীত শ্রবন করিয়া সূফীগণের অন্তরে দোযখের শাস্তির ভয়, কবরে একা থাকিবার ভয়, বেহেশতের শান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রবল আকাঙ্খায় সূফীগণের অন্তরে এক প্রকার ভাবের উদয় হইয়া আল্লাহর আশেকগণ লম্ফ-ঝম্ফ করে এবং সময় সময় আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ বেঁহুশ হইয়া যায়, উহাকে অজদ বা হাল আসা বলে। মোট কথা, যে গজল বা গানে আল্লাহর রসূলের মহব্বত পাওয়া যায় ও এশকে ফাসেকীর কোন প্রকার ভয় না থাকে , তাহা জায়েজ আছে।

গানের প্রকার ভেদ::

  • ১। লোকদিগকে সৎ পথ হইতে ফিরাইয়া রাখার উদেশ্যে।
  • ২। মনের উৎসাহ বা ফুর্তিতে।
  • ৩। অর্থ উপার্জের উদ্দেশ্যে।
  • ৪। মনের ক্ষিপ্রতা ও চিন্তা দূর করার জন্য।
  • ৫। আল্লাহ ও রসূলের মহব্বত বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ইত্যাদি।

এক হইতে তিন নম্বর প্রকার পর্যন্ত গান, গজল ও গীত যাহাই হোক, উহাকে সকলেই হারাম বলিয়া থাকে কিন্তু শেষের দুই প্রকার গানকে হারাম স্বীকার করা যাইতে পারেনা। কেননা উহাতে লোকের কোন প্রকার ক্ষতি হয়না, কাহাকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্য থাকে না বরং উহা দ্বারা লোকের উপকার হইয় থাকে। সংগ্রহেঃ নূরুল আসরার(নূরতত্ত্ব) ছামা ও ওয়াজদ অধ্যায়।