খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) এর বাণী ও উপদেশ পর্ব-১২
২২১.
“স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজান হুজুরের দরবারে অবস্থান কালে পীর কেবলাজান ছাহেবের সম্মুখে নিয়ম অনুযায়ী বিনীতভাবে খেদমতের বাসনা লইয়া দন্ডায়মান হইবে। তবে এমন সময়ে পীর ছাহেব কেবলাজানের নিকট গমন করিবে না, যখন তিনি কষ্ট পাইতে পারেন বা বিরক্ত হইতে পারেন।”
২২২.
“স্বীয় পীর কেবলাজান ছাহেবের নিকটে উপস্থিত হইয়া পীর কেবলাজান হুজুরের বিনা আদেশে কোন কিছু করা এমন কি জেকের আজকার করাও অন্যায়।”
২২৩.
“স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজানের নিকট দাঁড়াইবার সময়ে এমন ভাবে দাঁড়াইবে যাহাতে নিজের ছায়া স্বীয় পীর ছাহেব কেবলার ছায়ার উপর বা তদীয় পরিধেয় বস্ত্রের উপর না পড়ে। পীর ছাহেব কেবলাজান যে স্থানে উপবিস্ট বা দন্ডায়মান থাকেন তালেব তাহা হইতে উচ্চ স্থানে উপবিষ্ট বা দন্ডায়মান হইবে না।”
২২৪.
“যিনি অন্ধকার হতে আলোর দিকে এগিয়ে যাবার পথ দেখান তিনি’ই গুরু।”
২২৫.
খাঁটি ওলী আল্লাহ পাওয়া ভারী কঠিন। তাই খাঁটি ওলী আল্লাহ পাওয়ার জন্য তোমরা আল্লাহর দরবারে কান্দো।
২২৬.
“কামেল পীরের মহব্বত, কামেল পীরের ভালোবাসা খোদাপ্রাপ্তির পথে উত্তম নেয়ামত।”
২২৭.
“এশকেও গভীরও তথ্য যদি চিনিতে চাও, কামেল পীরের পদতলে নেছার হইয়া যাও।”
২২৮.
“যেদিন তামাম দুনিয়ার মানুষ নিশির শেষ ভাগে আল্লাহকে ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহিম বলে ডাকবে, সেই দিন দুনিয়াতে আর কোন গযব থাকবে না। আসমান থেকে আর কোন গযব দুনিয়াতে আসবে না। দুনিয়াতে যে গযব আছে তা মাটিতে দাফন হয়ে যাবে। মানুষ অনাবিল শান্তির অধিকারী হবে। আবার গাছে ফল হবে। জমিনে শস্য হবে। পানিতে মাছ হবে। আকাশে-বাতাসে আল্লাহর রহমতের ঢেউ খেলতে থাকবে।”
২২৯.
“ইসলামের সত্যিকার নীতি প্রতিষ্ঠা করেছে একমাত্র সত্যিকার মুসলমানগণ। সত্যিকার মুসলমান হলেন তারাই যারা কাম-ক্রোধ, লোভ-মোহ, মদ-মাৎসর্য সহ পার্থিব কামনা বাসনার উর্ধ্বে।”
২৩০.
আল্লাহপাক ফরমান,
“যদিও ভাংগিয়া থাক তওবা শতবার, তবুও রেখেছি খুলে তওবার দুয়ার; পাপী-তাপী যতসব এস ত্বরা করি, করিব তাদের ক্ষমা, এ আদেশ আমারই।”
২৩১.
“তওবা হইল কৃত পাপের জন্য লজ্জিত বা অনুতপ্ত হওয়া। অন্য কথায়ঃ কৃত পাপ বা অপরাধের জন্য খোদার ভয়ে ভীত হওয়া, লজ্জিত হওয়া, অনুতপ্ত হওয়া, অনুতাপ অশ্রুসহ মহান খোদাতায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা অর্থাৎ খোদার দিকে প্রত্যাবর্তন করাই তওবা।”
২৩২.
“মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই কমবেশী ত্রুটি-বিচ্যুতি পূর্ণ। মানুষের হকিকত সিফাতে হাকীকীতে নিহিত। সিফাতে হাকীকী হইল আল্লাহতায়ালার আটটি বিশেষ গুণ। যথাঃ হায়াত, এলেম, কুদরত, এরাদত, বাছারাত, সামাওয়াত, কালাম ও তাকবীন। সিফাতে হাকীকীর দুইটা অবস্থা বর্তমান। একটি নিখুঁত অবস্থা, অপরটি খুঁতবিশিষ্ট অবস্থা। একদিকে নিখুঁত জ্ঞান, নিখুঁত ক্ষমতা, নিখুঁত শ্রবণ শক্তি, নিখুঁত দর্শন শক্তি ইত্যাদি। অন্যদিকে খুঁত বিশিষ্ট গুণাগুণ। সিফাতে হাকীকীর খুঁত বিশিষ্ট অবস্থাই হইল সৃষ্টির হকিকত।”
২৩৩.
“মানুষের সমুদয় গুণাগুণ তথা কল্পন, দর্শন, শ্রবণ, চিন্তন, সৃজন, কথন-সবই আল্লাহতায়ালার দান। মানুষের হৃদয় বা কালব-তাহাও আল্লাহতায়ালার আমানত বা দান। এই আমানতের খেয়ানত যে করিবে, তাহার পরিণাম ভয়াবহ।”
২৩৪.
“এক জাকের অপর জাকেরের প্রতি সহোদর ভাই এর চেয়েও সত্তরগুন মহব্বত রাখিতে হইবে। কার্যক্ষেত্রেও সেই মহব্বতের প্রমান দিতে হইবে।”
২৩৫.
“কোন জাকের যদি আপনার বাড়ীতে যায়, তাহা হইলে মনে করিবেন আপনার পীরই আপনার
বাড়ীতে আসিয়াছেন।”
২৩৬.
“আদব, বুদ্ধি, মহব্বত ও সাহসের সাথে সমস্ত কাজ করলে আল্লাহ আপনাদের সাথে থাকবেন।”
২৩৭.
“মুসিবত থেকে যদি বাঁচতে চাও, তবো আপন পীরের কদমকে শক্ত করিয়া ধরো।”
২৩৮.
“তোমরা যতই জ্ঞানী, গুণী, উচ্চ শিক্ষিত হও না কেন, পরবর্তী মূহুর্ত তোমাদের জন্য কি বহন করিয়া আনিতেছে তাহা তোমরা জান না। (মুসিবত থেকে বাচঁতে পীরের কদমকে শক্ত করিয়া ধরো।)”
২৩৯.
“যদি দুর্বিপাকের তুফান থেকে বাঁচতে চাও, তবে পীরের সংঘকে নূহের তরী মনে করে শক্ত করিয়া ধর, নচেৎ এমনই দুর্বিপাকের তুফান আসিবে, যাহা তোমার সবল ভিত্তিকে ভাংগিয়া মেছমার করে ফেলিবে।”
২৪০.
“আল্লাহতায়ালার বুজুর্গানের কদম যাহারা ধরিয়া থাকেন, আল্লাহপাক তাহাদের রক্ষা করেন। সমস্ত বিপদ-আপদে, জীবনে চলার পথে আল্লাহপাকের রহমতের ছায়া পাওয়ার জন্য মোর্শেদে কামেল যে পথ আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রদর্শন করেন, সেই পথ অনুসরণ করিলেই, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।”
[তথ্যসূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তি জ্ঞানের আলোকে বিশ্বওলী শাহ্সূফী হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের নসিহতের বিভিন্ন খন্ড হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।]
• শাহ্সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) এর বাণী ও উপদেশ সবগুলো পর্ব