পাক পাঞ্জাতনের শানে রচিত হাদিসগুলো কোথায় হারিয়ে গেল?
হযরত রাসূল পাক (সঃ) জন্ম থেকে ওফাত হওয়া পর্যন্ত যতগুলো কথা বলছেন এবং কর্মময় জীবনকে হাদিস বলা হয়। আবার সাহাবীরা যখন রাসূল পাক সঃ সামনে কোন কথা বলতেন এবং রাসূল পাক সঃ সেই কথার স্বীকৃতি দিতেন সেটাও হাদিস হিসাবে গণ্য হয়।
মাওলা আলী যখন পবিত্র ক্বাবাগৃহে জন্মগ্রহণ করে, তখন প্রথম চোখ খুলে রাসূল পাক সঃ দেখে এবং প্রথম পানাহার করে রাসূল পাক সঃ এর লালা মোবারক। মাওলা আলী সবসময় রাসূল পাক সঃ এর সাথে ছায়াসঙ্গী হয়ে লেগে থাকতেন। মাওলা আলী রাসূল পাক সঃ কে ছাড়া একমুহূর্তে থাকতে পারতেন না। তাই তো দশ বছর বয়সে মা খাদিজা রাঃ এর পর মাওলা আলী প্রথম ইসলাম ধর্ম কবুল করে। মাওলা আলীকে রাসূল পাক সঃ চিরসঙ্গী হিসাবে রেখে দেওয়ার জন্য, সবচেয়ে আদরের কন্যা কলিজার টুকরো মা ফাতেমাকে মাওলা আলীর সাথে বিবাহ দেন। যেদিন রাসূল পাক সঃ হিজরত করলেন, সেদিন মাওলা আলী নিশ্চিত মৃত্যু যেনেও রাসূল পাক সঃ এর বিছানায় শুয়ে ছিলেন, বিধর্মীদের আমানত বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। মাওলা আলীর অসীম বীরত্বের কারনেই মুসলমানরা প্রতিটি যুদ্ধে জয়লাভ করছে। রাসূল পাক সঃ ওফাতের কিছুদিন আগে বিদায় হজ্জের সময় গাদীর এ খুম নামক স্হানে পৌঁছালে আল্লাহর হুকুমে লক্ষাধিক সাহাবীর সামনে শেরে খোদা হযরত আলীকে সকল মুমিন এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতের পরবর্তী মাওলা ঘোষণা করে যান। যাতে মুসলিম জাতি পথভ্রষ্ট না হয়। ” আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা।”
মা ফাতেমা ছিলেন রাসূল পাক সঃ এর কলিজার টুকরো নয়নের মণি। মা ফাতেমাকে না দেখে রাসূল পাক সঃ একমুহূর্ত থাকতে পারতেন না। মা ফাতেমাকে রাসূল পাক সঃ সবসময় চোখে চোখে রাখতেন। মা ফাতেমা যখন রাসূল পাক সঃ এর সামনে আসতেন,তখন স্বয়ং রাসূল পাক সঃ দাঁড়িয়ে স্বাগতম এবং সম্মান জানাতেন। আর সবার সামনে বলতেন এই হল আমার জগৎ জননী মা এবং মহিলাদের জান্নাতের সর্দারনী। মা ফাতেমাকে কষ্ট দিলে স্বয়ং আমি কষ্ট পাই। মা খাদিজা রাঃ যখন ওফাত লাভ করলেন, তখন মা ফাতেমা রাসূল পাক সঃ কে মমত্ব ও ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতেন। রাসূল পাক সঃ সকল কথা মা ফাতেমার সাথে আলাপ আলোচনা করতেন।
ইমাম হাসান ও হোসাইন ছিলেন রাসূল পাক সঃ এর প্রাণ। এই দুই নাতিকে না দেখে রাসূল পাক সঃ এক মূহুর্তের জন্য থাকতে পারতেন না। ইমাম হাসান ও হোসাইন সবসময় রাসূল পাক সঃ এর সাথে খেলা করতেন। রাসূল পাক সঃ যখন নামাজে সেজদা দিতেন, তখন মাওলা ইমাম হাসান ও হোসাইন পিঠে চড়ে থাকতেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা পিঠ থেকে না নামতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত রাসূল পাক সঃ সেজদা থেকে মাথা তুলতেন না। রাসূল পাক সঃ প্রায়ই মাওলা ইমাম হাসান ও হোসাইনকে পিঠে করে নিয়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলতেন। কখনো দুই নাতিকে চোখের আড়াল হতে দিতেন না। আর মাওলা ইমাম হাসান ও হোসাইনও এক মূহুর্তের জন্য রাসূল পাক সঃ ছাড়া থাকতে পারতেন না।
এই জন্য রাসূল পাক সঃ বলেন, “আমি ইমাম হোসাইন থেকে আর ইমাম হোসাইন আমার থেকে।”
এখন আসি মূল কথায়ঃ
মূলত রাসূল পাক সঃ এর মুখের বাণী অর্থাৎ হাদিসগুলো বিভিন্ন সাহাবীরা মুখস্থ করে রাখতেন। তাঁরা হাদিসগুলো বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা করতেন। সিফফিনের যুদ্ধের মাধ্যমে এক পক্ষ চলে যায় মাওলা আলীর সাথে এবং অপর পক্ষে চলে যায় মোনাফেক মোয়াবিয়ার পক্ষে। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইনকে নির্মমভাবে হত্যা করে এজিদ রাষ্টীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তখন এজিদ পাক পান্জাতনের পক্ষের সকল সাহাবীকে হত্যাযজ্ঞ চালায়। কিছু সাহাবী অন্য দেশে চলে যায় এবং কিছু সাহাবী গোপনে চলে যায়। তখন এজিদ তার অনুসারীদের দিয়ে লক্ষ লক্ষ জাল হাদিস তৈরি করে।
আর এই হাদিসগুলো সুকৌশলে পাক পান্জাতনের বিরুদ্ধে অপমানজনকভাবে। আর কিছু হাদিস তৈরি করে তার বাপ মোনাফেক মোয়াবিয়ার পক্ষে। তখন এজিদ রাষ্টীয়ভাবে মক্তব ও মাদ্রাসা তৈরি করে এই জাল হাদিস সমগ্র আরব সমাজে পড়ানো হয়। আর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, তার একান্ত অনুসারীদেরকে। আর পাক পান্জাতনের শানে সকল হাদিস গায়েব করে দেওয়া হয় এবং মাওলা আলী, মা ফাতেমা, ইমাম হাসান ও হোসাইন এবং মা খাদিজার বর্ণনাকৃত প্রায় সকল হাদিস গায়েব করে দেওয়া হয়। এইভাবে উমাইয়ারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল ৮৯ বছর এবং তাদেরই মতো পাক পান্জাতন বিরোধী আব্বাসীয় শাসনামল ছিল ৫০৮ বছর। মূলত প্রায় এই ৬০০ বছরে রাসূল পাক সঃ এর রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে চিরতরে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়।
রাসূল পাক সঃ এর ওফাতের ২০০ বছর পর আব্বাসীয় শাসনামলে সরকারীভাবে হাদিসকে কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়। তখন যারা এই হাদিসগুলো লিখেছেন তাদের আর কিছুই করার ছিল না। কারণ তারা পাক পান্জাতনের শানে কোন হাদিস এবং মাওলা আলী, মা ফাতেমা এবং মাওলা ইমাম হাসান ও হোসাইনের বর্ণনাকৃত কোন হাদিস পাননি। তাই তাদের লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় সরকার ঘোর পাক পান্জাতনের বিরুদ্ধে ছিল। এইভাবেই মুসলিম সমাজে এজিদের বানানো অধিকাংশ জাল হাদিস লিপিবদ্ধ হয়ে গেল। আর সেই হাদিসগুলো পর্যায়ক্রমে আমাদের মাঝে আসে। এইভাবেই সত্যের সাথে মিথ্যা জাল হাদিস রচিত হয়ে গেল। কিছু সত্য কিছু জাল তাই দিয়েই ইসলাম চলতেছে।
আচ্ছা এবার আপনি নিজেই হাদিসগ্রন্হ তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখুন, পাক পান্জাতনের শানে এবং মাওলা আলী, মা ফাতেমা, মাওলা ইমাম হাসান ও হোসাইন এবং মা খাদিজা রাঃ এর বর্ণনাকৃত কয়টি হাদিস পান। পাক পান্জাতন এবং প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত সাহাবীদের বর্ণনাকৃত হাতে গোনা কয়েকটা হাদিসের বেশি খুঁজে পাবেন না। আচ্ছা দাদা ভাই এবার আপনার বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন তো, মাওলা আলী, মা ফাতেমা, মাওলা ইমাম হাসান ও হোসাইনের চেয়ে রাসূল পাক সঃ মুখের বাণী আর কে বেশী শুনছে? তাহলে তাঁদের বর্ননাকৃত হাদিস কোথায় গেল দাদা ভাই? হিসাব মতে তাঁদের বর্ণনাকৃত হাদিস সবচেয়ে বেশি থাকার কথা। কারণ তাঁরা রাসূল পাক সঃ এর সাথে সবসময় থাকতেন এবং সবচেয়ে প্রাণের কাছের মানুষ ছিলেন। কিন্তু অদৃষ্টের নির্মম পরিহাসের বিষয়, তাঁদের বর্ণনাকৃত হাদিস খুঁজে পাওয়া যায় না।
হে মুসলিম জাতি! আপনাদের বিবেকের দ্বার কি কখনো উন্মোচন হবে না। আর কতকাল অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবেন। এবার একটু মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়ান এবং নিজের বিবেককে একবার প্রশ্ন করে দেখুন। উত্তর কিন্তু আপনার শুদ্ধ বিবেক অবশ্যই দিয়ে দিবে। হায়রে সেলুকাস জাতি! যাঁদের জন্য পাইলাম ধর্ম আজ তাঁদেরকেই ভুলে থাকি। আর আমরা যখন এই মহাসত্য গুলো জাতির সামনে তুলে ধরি, তখনই শিয়া, নাস্তিক এবং কাফের উপাধি পেয়ে যাই। আর বোনাস হিসাবে মা ও বাবাসহ গালাগালি শুনি। তবুও কেনো পাক পান্জাতনের পক্ষে কথা বলি জানেন দাদা ভাই? কারণ আমরা নিজের জীবনের চেয়েও পাক পান্জাতনকে বেশি ভালোবাসি। জীবনটা সেদিনই পাক পান্জাতনের কদমে বিসর্জন দিয়েছি, যেদিন থেকে পাক পান্জাতনকে ভালোবেসেছি।
এখন আর মৃত্যুকে পরোয়া করি না বরং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিয়েছি। যায় যাবে যাক জীবন, তবুও মহাসত্য থেকে এক কদমও পিছপা হব না। বরং ছুটে চলব উল্কার গতিতে বিদ্যুৎ বেগে। মৃত্যু ছাড়া এই গতি থামাবে এমন সাধ্য কোন শক্তির জন্ম হয়নি। হে মহাশক্তি পাক পান্জাতন তোমাদের কদমে এই অধমকে একটু আশ্রয় ভিক্ষা দাও। অধমের লেখনিতে কারোর মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে, নিজ গুনে ক্ষমা করবেন।
নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।