হোমপেজ ইসলামের ভ্রান্ত ধারণা রাসূল পাক (সাঃ) ছিলেন দোজাহানের ধনী এবং তিনাকে নিয়ে সমাজের প্রচলিত ভুলধারণা।

রাসূল পাক (সাঃ) ছিলেন দোজাহানের ধনী এবং তিনাকে নিয়ে সমাজের প্রচলিত ভুলধারণা।

রাসূল পাক (সাঃ) ছিলেন দোজাহানের ধনী এবং তিনাকে নিয়ে সমাজের প্রচলিত ভুলধারণা।

আসুন কোরআন ও হাদিসের আলোকে জেনে নিন।

“আমি আপনাকে জগৎ সমূহের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি”। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ১০৭)।

“হে রাসূল আপনি) নামাজ কায়েম কর ও যাকাত দাও”। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ১১০)।

“হে রাসূল) আমি আপনাকে অসহায় অবস্থায় পেলাম, অতঃপর আপনাকে সম্পদশালী করলাম “। (সূরা দু’হা, আয়াত নং ৮)।

রাসূল পাক সঃ বলেন,
“(হে হাবীব) আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না”। (সিররুল আসরার, পৃষ্ঠা – ৭০)।

“আমার উপরে কোরবানী ফরজ করা হয়েছে, আর তোমাদের উপর ফরজ করা হয়নি এবং আমাকে চাশতের নামাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর তোমাদেরকে এর নির্দেশ দেয়া হয়নি”।

হযরত জাবের (রাঃ) বলেন,
হযরত রাসূল পাক সঃ, হযরত আবু তালিবের পুত্র হযরত আলী (রাঃ) ও তার সাথে ইয়েমেন থেকে যে দল এসেছিল তাদেরকে এবং রাসূল পাক সঃ এর সঙ্গে যারা আগমন করেছিলেন, তাদেরকে নিয়ে ১০০টি উট কোরবানী করেন। রাসূল পাক সঃ এর স্বহস্ত মোবারকে ৬৩টি উট যবেহ করেন। বাকী ৩৭টি উট হযরত আলী (রাঃ) জবেহ করেন। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৫-৬ খন্ড, পৃষ্ঠা, ১৬৭)।

“একরাতে আমি যখন নিদ্রিত অবস্থায় ছিলাম, এ সময় আমার নিকট পৃথিবীর যাবতীয় ধন-ভান্ডারের চাবিসমূহ আনা হয়, অতঃপর তা আমার হাতে অর্পণ করা হয় “। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)।

হযরত রাসূল পাক সঃ আরবের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ও প্রভাব – প্রতিপত্তিশীল কোরাইশ বংশের হাশেমী গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ আঃ ছিলেন, তৎকালীন মক্কা নগরীর শাসনকর্তা ও পবিত্র ক্বাবা শরীফের হেফাজতকারী সর্বজন শ্রদ্ধেয় আব্দুল মু্ত্তালিবের সবচেয়ে আদরের সন্তান। আর রাসূল পাক সঃ এর মাতা মা আমিনা ছিলেন মদীনার বনু যুহরা গোত্রের খ্যাতনামা, সম্মানিত এবং হিরা – যহরের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী যুহরা গোত্রের নেতা আব্দুল ওয়াহাব এর কন্যা।

রাসূল পাক সঃ এর মাতা মা আমিনা মানসিক পবিত্রতায়, বংশীয় আভিজাত্যে,সম্মান ও মর্যাদায়,চরিত্র ও সততায় অতুলনীয় ছিলেন বলেই স্বীয় গোত্রের মাঝে তিনি ” সায়্যিদাতুন – নিসা ” উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। সুতরাং দেখা যায় যে, হযরত রাসূল পাক সঃ এর পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয় দিক থেকেই আরবের সবচেয়ে ধনী, সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ পরিবারের লোক ছিলেন।

আরবরা বিশেষ করে মক্কার কোরাইশদের মাঝে হযরত ইব্রাহীম আঃ এর সুন্নত মোতাবেক আকীকা করার রেওয়াজ ছিল। সে অনুযায়ী আব্দুল মুত্তালিব হযরত রাসূল পাক সঃ এর শুভজন্মের সপ্তম দিবসে প্রাণপ্রিয় নাতীর আকিকার আয়োজন করে বহু পশু যবেহ করে, কোরায়শ বংশের সমস্ত লোকদের খাবারের ব্যবস্হা করেন।

আহার শেষে নেতৃস্থানীয় কোরায়শগণ জিঙ্গেস করেছিলেন, আব্দুল মুত্তালিব ! আপনি আপনার যেই নাতীর জন্য আমাদের দাওয়াত করেছেন, তার কি নাম রেখেছেন ? উত্তরে তিনি বললেন, ” আমি তার নাম রেখেছি ‘ মুহাম্মদ ‘। ” আর আমি চাই আসমানে আল্লাহ ও জমিনে তার মাখলুক সমস্তই এর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করুক । এমনিভাবে মহাধুমধামের সাথে হযরত রাসূল পাক সঃ এর শুভজন্ম ও আকীকা অনুষ্ঠিত হয়।

হযরত রাসূল পাক সঃ এর চার কি পাঁচ বছর হলে বিবি হালিমা তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মক্কায় নিয়ে আসেন। ফিরার পথে মক্কার কাছাকাছি কোন এক জায়গায় তিনি হারিয়ে যান। সংবাদ শুনে দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাকে খোঁজ করেন। কিন্তু কোথাও খুঁজে না পেয়ে তিনি একটি মানত করেন, যাতে তাকে আল্লাহ মিলিয়ে দেন।

অবশেষে একটি গাছের নীচে সুস্থ অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। আব্দুল মুত্তালিব তাকে গৃহে নিয়ে আসেন এবং পাওয়ার আনন্দে বহু স্বর্ণ ও কয়েকটি উট সাদকাহ দিয়ে মানত আদায় করেন এবং বিবি হালিমাকেও বিপুল পরিমাণে পুরস্কৃত করে বিদায় দিলেন।

হযরত রাসূল পাক সঃ এর মাতা সৈয়দা আমিনার আঃ কাজকর্মের সহযোগিতা করার জন্য উম্মে আয়মন নামে এক দাসী ছিল। হযরত রাসূল পাক সঃ এর বয়স যখন ছয় বছর তখন মা আমিনা তাকে পিতা হযরত আব্দুল্লাহ আঃ এর রওজা মোবারক জিয়ারত করানোর জন্য মদীনায় নিয়ে যান।

দাসী উম্মে আয়মনও তাদের সঙ্গী ছিলেন। ফিরার পথে মা আমিনা আঃ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অকালেই ওফাত লাভ করেন। অতঃপর উম্মে আয়মন হযরত রাসূল পাক সঃ কে নিয়ে বাড়ী ফিরে আসেন। সঙ্গত কারণেই বলতে হয়, হযরত রাসূল পাক সঃ যদি সত্যিই গরীব হতেন, তবে তার মায়ের তো দাসী থাকার কথা না।

হযরত রাসূল পাক সঃ এর স্নেহময়ী মাতা সৈয়দা আমিনার ওফাতের পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব নাতীর লালন – পালনের সার্বিক দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাসূল পাক সঃ কে তিনি তার সমস্ত পুত্র অপেক্ষা বেশী আদর করতেন। স্নেহে ও সোহাগে এমনই করতেন যে, তিনি রাসূল পাক সঃ কে ব্যতীত খানা খেতেন না। রাসূল পাক সঃ যখন ইচ্ছা অবাধে দাদার কাছে আসা-যাওয়া করতেন এবং তার আসনের উপর বসে যেতেন।
আব্দুল মুত্তালিবের জন্য ক্বাবার প্রাচীরের কাছে একটি মসনদ পাতা হতো। তার সমস্ত পুত্র এবং কোরায়শ নেতাগণ মসনদের আশে – পাশে উপবেশন করতেন। আর কেবলমাত্র আব্দুল মুত্তালিব আগমন করলে এ মসনদের উপর উপবেশন করতেন। কিন্তু হযরত রাসূল পাক সঃ যখন তশরীফ নিতেন, তখন তিনি দাদার মসনদে বসে পড়তেন।

যদি কেউ তাকে মসনদ হতে নামিয়ে দিতে চাইতো, তখন আব্দুল মুত্তালিব তাকে বলতেন, আমার এ আদরের নাতীকে বসতে দাও। তার মর্যাদাই আলাদা। তার নিজের সম্মান, মর্যাদা ও আভিজাত্যের অনুভুতি রয়েছে এবং আমি আশা করি সে এত সমুন্নত মর্যাদা ও উন্নত আসনের অধিকারী হবে, যা ইতিপূর্বে কোন আরব পায় নাই আর পরেও পাবে না।

হযরত রাসূল পাক সঃ যখন পঁচিশ বছর বয়সে উপনীত হলেন – তখন তার সুন্দর আদর্শ ও চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে আরবের সেরা ধনাঢ্য রমণী হযরত মা খাদিজা রাঃ তাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেন। হযরত রাসূল পাক সঃ স্বীয় অভিভাবক ও পিতৃব্য হযরত আবু তালিবের সম্মতিক্রমে হযরত মা খাদিজা রাঃ কে বিবাহ করেন। বিবাহের পর হযরত মা খাদিজা রাঃ নিজের যাবতীয় সম্পত্তি হযরত রাসূল পাক সঃ এর কদমে উৎসর্গ করে দেন।

নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে হযরত রাসূল পাক সঃ এর দুই কন্যা রোকেয়া ও উম্মে কুলসুমের সাথে আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী আবু লাহাবের দুই পুত্র উৎবা ও উতায়বার বিয়ে হয়। এ বিয়ের পিছনেও খ্যাতী ও অর্থলোভী আবু লাহাবের মনে পুত্রহীন হযরত রাসূল পাক সঃ এর বিপুল ধন-সম্পদ এবং খ্যাতীর অংশীদার হওয়ার উদ্দেশ্য নিহিত ছিল। অন্যথায় নিজে বিত্তবান হয়ে কখনো দরিদ্র হযরত রাসূল পাক সঃ এর কন্যাদের পুত্রবধু হিসেবে ঘরে আনতো না।

ইসলাম প্রচারের শুরুতে হযরত রাসূল পাক সঃ কাফেরদের প্রতিবাদের সম্মুখীন হলেও তার বিত্ত, প্রভাব – প্রতিপত্তির কারণে কেউ তাকে আক্রমন করার সাহস পায়নি। এমনকি হিজরতের প্রাক্কালে আরবের কোন গোত্র এককভাবে রাসূল পাক সঃ কে আক্রমন করার সাহস পায়নি। বরং সকল গোত্র সম্মিলিতভাবে আক্রমন করার সংকল্প করে, যাতে কেউ এ অপকর্মের জন্য এককভাবে দোষী সাব্যস্ত না হয়। মক্কার কাফেরদের এ ভীতির পিছনেও হযরত রাসূল পাক সঃ এর প্রভাব – প্রতিপত্তি নিহিত ছিল।

হযরত রাসূল পাক সঃ মক্কায় মুকুটবিহীন সম্রাট হলেও হিজরতের পর মদীনাবাসীরা আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুট পরিয়ে তাকে সম্রাটের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। মদীনাবাসী মুসলমান, ইহুদি, খ্রীষ্টান, অগ্নি উপাসক সকলেই মদীনার সনদ – এ স্বাক্ষর করে হযরত রাসূল পাক সঃ কে মদীনার অধিপতি হিসেবে মেনে নেন। ফলে রাসূল পাক সঃ নবগঠিত মদীনা রাষ্ট্রের বাদশাহ হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন।

মদীনার জীবনে হযরত রাসূল পাক সঃ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মুসলিম জাতি গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় রাসূল পাক সঃ ২৭টি যুদ্ধ করেন। আর যুদ্ধের বিপুল ব্যয় তিনি নিজে নির্বাহ করেছেন। তাছাড়া তিনি যুদ্ধে বিপুল পরিমাণে গণিমতের মাল লাভ করেন। তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুল মাল গড়ে তোলেন। হযরত রাসূল পাক সঃ এর নবুওয়াত ও মদীনার বাদশাহর সংবাদ শুনে অনেক রাষ্ট্রপ্রধান তার কাছে বহু উপঢৌকন প্রেরণ করেন।

হযরত রাসূল পাক সঃ তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ হতে তিনি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক প্রতি বছর প্রচুর অর্থ যাকাত দিতেন। তাছাড়া হযরত রাসূল পাক সঃ এর সাহচর্যে সার্ব ক্ষণিকভাবে প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ আসহাবে সুফফা অবস্থান করতেন। যারা সর্ব ক্ষণ ” ইয়া রাসূল আল্লাহ, ইয়া হাবীব আল্লাহ ” বলে রাসূল পাক সঃ এর জুতা মোবারক বুকে নিয়ে ইশকে দিওয়ানা হয়ে কান্নাকাটি করত। রাসূল পাক সঃ তাদের সমস্ত খাবার দাবারের ভরণপোষণ করতেন।

তাছাড়া রাসূল পাক সঃ এর খেদমত করার জন্য দশজন খাদেম ও ২৮জন দাস-দাসী ছিল। হযরত রাসূল পাক সঃ এদের সবার জন্য খাবারের ব্যবস্হা করতেন। এখন প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই যদি রাসূল পাক সঃ না খেয়ে নিজে ক্ষুধার তাড়নায় পেটে পাথর বাধতেন, তবে প্রতিদিন এত লোকের খাবারের ব্যবস্হা করা কি তার পক্ষে সম্ভব হতো?

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা হযরত রাসূল পাক সঃ এর জন্য যুদ্ধলব্ধ গনিমতের মালের এক – পঞ্চমাংস হালাল বলে ঘোষণা করেছেন। রাসূল পাক সঃ জীবনে সর্বমোট ২৭টি যুদ্ধ করেছেন। বিভিন্ন রাজা – বাদশাহদের সাথে যুদ্ধ করে রাসূল পাক সঃ গনিমতের মালের যে বৃহৎ অংশ লাভ করেছিলেন, তাতে তিনি কয়েক রাজার ধন – সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। আর হযরত রাসূল পাক সঃ অগাধ সম্পদের অধিকারী ছিলেন বলেই তার পক্ষে রাজা – বাদশাহদের সাথে যুদ্ধ করার মত বিপুল ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব ছিল। কারণ, যেকোন বিচক্ষণ ও বিবেকবান মানুষ সহজেই পারেন যে, একজন গরীবের পক্ষে কখনো রাজা – বাদশাহদের সাথে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়।

তাছাড়া হযরত রাসূল পাক সঃ ব্যক্তিগত জীবনেও খুব সৌখিন ছিলেন। ফলে তিনি পরিস্কার – পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করতেন ; উন্নতমানের পোশাক পরিধান করতেন এবং সবসময় সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। একজন গরীব মানুষের পক্ষে কি দামী পোশাক পরিধান করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা সম্ভব?

হযরত রাসূল পাক সঃ খাবারের পর মিষ্টি খেতে পছন্দ করতেন এবং দুপুরের খাবারের পর তিনি কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নিতেন। এখন প্রশ্ন হলো – একজন গরীবের পক্ষে কি খাবারের পর রোজ মিষ্টি খাওয়া কিংবা দুপুরে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ থাকে ? সার্বিক বিচার বিশ্লেষণে দেখা যায় – হযরত রাসূল পাক সঃ স্বীয় ধনসম্পদ, মেধা-গরিমা, শক্তি -সাহস দিয়ে সুসভ্য, সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে মুসলমানদের রেখে গেছেন । আজও সৌদি আরবের দিকে তাকালে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়ে ভেসে ওঠে।

তাছাড়া হযরত আব্দুল্লাহ আঃ এবং হযরত রাসূল পাক সঃ দুজনই ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। যাকে আল্লাহ তায়ালা জগৎ সমূহে রহমত হিসেবে প্রেরন করেছেন, যিনি রহমতের কান্ডারী সেই দয়াল রাসূল পাক সঃ যখন ব্যবসায়ী তখন তো সে ব্যবসা কেমন লাভজনক হতে পারে আপনারাই চিন্তা করুন। হযরত রাসূল পাক সঃ বাল্যকালে যখন চাচা আবু তালিবের সাথে সিরিয়ায় ব্যবসা কাজে যাইতেন, তখন আবু তালিব ব্যবসায় অধিক পরিমাণে মুনাফা অর্জন করতেন।

হযরত রাসূল পাক সঃ কে ভাল না বাসলে ঈমানদার হওয়া যায় না, রাসূল পাক সঃ কে ভালবাসার নামই ঈমান। সেই রাসূল পাক সঃ থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই এজিদ অর্থাৎ উমাইয়া শাসকরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হযরত রাসূল পাক সঃ কে গরীব বানিয়ে দিয়েছে।

প্রকৃত পক্ষে, উমাইয়ারা গোড়া থেকেই হযরত রাসূল পাক সঃ এর পূর্বপুরুষদের সাথে চরম বিরোধিতা করে আসছিল। মক্কার কুরাইশ বংশের হাশিমী গোত্রের নেতা রাসূল পাক সঃ এর দাদার বাপ হাশিম অত্যন্ত বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, দয়ালু ও পরোপকারী ছিলেন। ফলে তার প্রতি মক্কার আপামর মানুষের আস্হা ছিল। তাকে সবাই নেতা হিসেবে মেনে নেয় এবং ক্বাবাঘরের হেফাজতের দায়িত্বও তার উপর ন্যাস্ত করা হয়। অপরদিকে উমাইয়া গোত্রের নেতা এজিদের দাদার বাপ অর্থাৎ মাবিয়ার দাদা উমাইয়া হাশিমীদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। এ নিয়ে উভয় গোত্রের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে। এতে মাবিয়ার দাদা উমাইয়া পরাজিত হয় এবং বিচারকদের রায় অনুসারে উমাইয়া দশ বছরের জন্য দেশ হতে নির্বাসিত হয়।

পরবর্তীতে উমাইয়ার পুত্র হারব হাশিমী গোত্রের উত্তারাধিকার আব্দুল মুত্তালিবের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পরাজিত হয় এবং পিতার মত সেও দশ বছরের জন্য দেশ থেকে নির্বাসিত হয়। এভাবে হাশিম ও উমাইয়া গোত্রের মধ্যে বিদ্বেষের সূচনা হয় এবং পরবর্তীকালে খিলাফতের উত্তারাধিকার লাভের যে সংগ্রাম চলতে থাকে, তার মূল সূত্র এখানেই নিহিত ছিল।

হাশিমীদের সাথে উমাইয়াদের বিরোধিতার কারণেই হযরত রাসূল পাক সঃ সত্য নবী জেনেও তিনি হাশেমী গোত্রের লোক বলে উমাইয়ারা তাকে মেনে নেয়নি। বরং তারা চরম বিরোধিতা করে হযরত রাসূল পাক সঃ ও তার অনুসারীদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর উমাইয়ারা নিরুপায় হয়ে মনে মনে মোনাফেকি রেখে মক্কা বিজয়ের সময় হযরত রাসূল পাক সঃ এর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়েই মাওলা আলী, মাওলা ইমাম হাসান, মাওলা ইমাম হোসাইন এবং অনেক বিখ্যাত সাহাবীরা শাহাদাৎ বরণ করতে হয়েছে।

পরবর্তীতে তারা খেলাফতকে জবরদখল করে উমাইয়া শাসন জারি করে। তখন তারা হাশেমীদের অপদস্থ ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য – হযরত রাসূল পাক সঃ গরীব ছিলেন, তিনি ঠিকমত খাবার জুটাতে পারতেন না, ছেড়া জামা-কাপড় সত্তর তালি দিয়ে পরিধান করতেন, ইত্যাদি মিথ্যা অপপ্রচার ও মিথ্যা জাল হাদিস তৈরী করে। এজিদ অর্থাৎ উমাইয়াদের শাসনামলে সংকলিত জাল হাদিস দিয়ে কিতাব লিখে ঐসব লিপিবদ্ধ করে দেওয়াতে, হযরত রাসূল পাক সঃ সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সূচনা হয়। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।

পরবর্তীতে এজিদ কারবালার প্রান্তরে মাওলা ইমাম হোসাইনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুহাম্মদ সঃ এর নাম বাদ দিয়ে এই উমাইয়ার নামে “উমাইয়া খিলাফত” অর্থাৎ এজিদের মনগড়া ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্হা চালু করেন। যা দীর্ঘ ৬০০ বছর সমগ্র আরব জাহানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। আর হযরত রাসূল পাক সঃ এর বংশধর ও রাসূল প্রেমিকরা এজিদ ও তার দোসরদের নির্মম অত্যাচারে বিভিন্ন দেশে গিয়ে বন জঙ্গলে বসবাস শুরু করে। আর এসব ঘটনা ঘটে রাসূল পাক সঃ উফাত হওয়ার মাত্র ৩২ বছর পর। তাই রাসূল পাক সঃ এর শিক্ষা ব্যবস্হা রাষ্টীয়ভাবে কারবালার প্রান্তর থেকেই হারিয়ে যায়।

সূত্র : রাসূল সঃ কি সত্যিই গরীব ছিলেন?

নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।