ঈমান ও আমলের মধ্যে পার্থক্য।

ঈমান

আকাঈদের মূলেই হল ঈমান। মৌলিক বিশ্বাসের মধ্যে ঈমান হল মূল ভিত্তি। ঈমানের অনেক শাখা প্রশাখা আছে। ঈমান শব্দের অর্থ হল সুদৃঢ় প্রত্যয়। নিজের ইচ্ছা, আকাঙ্খা, কামনা, বাসনা ও রসনা পরিত্যাগ করে যুগের রাসুলের নিকট সমর্পণ করার নামই ঈমান।

ঈমান তাকেই বলে নিজের ইচ্ছার উপর আপন রাসুলের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া। এই জন্য আল কোরান বারংবার আহবান জানাচ্ছে রাসুলের উপর ঈমান আনার জন্য। কারণ, নিজে নিজে ঈমান আনা যায় না, তাই ঈমান আনতে হয় রাসুলের উপর। তাই রাসুলের এবং আল্লাহর সত্তা এক এবং অভিন্ন সত্তা। যিনি রাসুল তিনিই হাকিকতে রাব্বুল আলামিন ।

সেই রাসুল তাঁর উম্মাতের রাহনুমা, রাহবার, আমানতদার ও মাওলা মনোনিত করেন মাওলা আলী ওয়াজুল্লাহর উপরে । রুহুল আমিনই আল্লাহ এবং আলীর নিগূঢ়তম রহস্য। রুহুল আমিনই মূলত রাসুল আল্লাহ । এই রুহুল আমিনই রাব্বুল আলামিন। যিনি রুহুল আমিন তিনিই রাব্বুল আলামিন, তিনিই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন। তিনিই মাওলা আলী। আলী, মুহাম্মদ ও আল্লাহ রূপে ও শব্দের তিন হলে মূলে নূর।

আল্লাহ নূর, মুহাম্মদ নূর, আলীও নূর। আল্লাহ নূর, নবি নূর, রাসুল নূর, অলি নূর, মুমিন নূর, মুত্তাকী নূর, মুহসিনিন নূর, সাবেরীন নূর। আল্লাহ মাওলা, রাসুল মাওলা, আলী ইবনে আবু তালিবও মাওলা। এই মাওলা বলা হয় রাব্বুল আলামিনকে, রাব্বুল আলামিন সরকারে দোআলমকে করেছেন রহমাতুল্লিল আলামীন, কুল কায়েনাতের মাওলা।

আর মাওলা মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) – তিনি স্বয়ং ঘোষণা করেছেন আলী ইবনে আবু তালিব (আ.) – কে মাওলা। তাই মুহাম্মদি ইসলাম পূর্ণতা লাভ করেছে মাওলা আলীর মাধ্যমে। তিনিই ওয়াজুল্লাহ আল্লাহর চেহারা। এই মাওলার মধ্যে ঈমানদারগণ পরিপূর্ণতা লাভ করে মুমিন হয়। তাই মাওলা আমিরুল মুমিনিন। মাওলা হল সকল মুমিনগণের আমির। তাই আমলের মূলেই হল মাওলা। কারণ, মাওলা স্বয়ং ঈমান।

মাওলা ঈমানে পরিপূর্ণতা দান করে। ঈমান ব্যতীত আমল নিষ্ফল। ঈমান ব্যতীত আমল অন্তরসার শূন্য। ঈমানের মাধ্যমে সাধক কামালিয়াত হাসিল করে। মাওলার চেহারা ধ্যানই হল আমলে সালেহা। এখন মাওলার ধ্যান ব্যতীত আমল নিষ্ফল। মুমিনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জমিনের উপর খলিফা বানিয়েছেন। সকল খলিফাদের সরদার হল মাওলা আলী (আ.)।

মাওলা দাতা, খলিফা মাওলার হুকুমের গোলাম। যে মাওলার হুকুমে চলে সেই তো খলিফা। যে মাওলার হুকুমের মধ্যে জগতে বিচরণ করে তিনিই তো মুমিন। সুতরাং মুমিন এবং মুনাফিকের চরিত্রের মানদণ্ড হল মাওলা আলী (আ.)। আলীকে রাসুল আল্লাহরূপে যারা মানে না, এবং ভাই বলে সম্বোধন করে এবং প্রচার করে তারাই মুনাফিক।

মাওলা শুধু আওলাদে রসুলই নয়, মাওলা শুধু মোহাব্বতের পাত্র নয়, তিনি ঈমানের মূল, তিনি সালাতের মূল, তিনি এবাদতের মূল। মাওলার মস্তানি সাহায্য ব্যতীত কেউ মাকামে মাহমুদায় প্রবেশ করতে পারবে না। আমল দিয়ে মাওলার দয়া লাভ করা সম্ভব নয়, আমলের সাথে মাওলা থাকে না, মাওলা থাকে ঈমানের সাথে। আমল হল অলংকার। ঈমান মূখ্য বিষয়, আমল গৌন বিষয়। খলিফা বা দাস মনোনিত হয় আমালিয়াতের উপর। তাই খলিফাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়, আর মাওলা হল খলিফাদের কর্মের কর্তা। যিনি খলিফাদের কর্ম বন্টন করেন।

যারা মুহাম্মদের লেবাস পড়ে মাওলাকে সযত্নে এড়িয়ে আমলের জোড়ে, সাধনার জোড়ে কুদাকুদি করতেছেন, আপনাদের ফলাফল অন্তরসার শূন্য। যার ইবাদত করবেন, তাকেই যদি মন ও প্রানে না মানি এসব অভিনয় করে আমানুদের ধোঁয়া দেওয়া সম্ভব। মুমিনকে, মাওলাকে ধোঁয়া দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, মাওলা নূরে হক। মাওলা দায়িত্ব বন্টন করে, খলিফারা দায়িত্ব পালন করে।

খলিফা সৃষ্টি হলেই মাওলা আসবেন। মাওলাই মাওলা মনোনিত করে, খলিফার ভোটে মাওলা মনোনিত হয় না। সুতরাং যে খলিফা মাওলা বাদ দিয়ে লেবাস পড়ে ঘুরে, তাদের থেকে সাবধান। তারাই মাওলার দর্শনের পথে সবচেয়ে দেওয়াল, তারাই সিরাতাল মুস্তাকিমের পথে শয়তান। এই শয়তান ঈমান ধ্বংসের মূল কারণ। খলিফারা আমালিয়াত শিক্ষা দেয়, আর মাওলা পরিপূর্ণতা দান করে।

আমল

ঈমান আনার পর আসে রসুলের শরিয়ত। এই রসুলের শরিয়তের মধ্যে আমল আছে। সেই আমলগুলো কি কি সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ, কুরবানি, হালাল ও হারাম ইত্যাদি । এসব আমালের উদ্দেশ্য হল মাওলার নিকটবর্তী হওয়া। আমলের মধ্যে মাওলা নেই, মাওলা আমলের নিয়ত দেখে। এই আমল কি দুনিয়ার মকসুদ হাসিলের জন্য নাকি মাওলাকে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে। এই জায়গাটুকু মাওলা দেখেন। আমল করতে হয় মাওলার সাথে সংযোগ হওয়ার জন্য। ঈমানের দাবি হল আমল তথা মাওলার গোলামি। মাওলার বংশের গোলামি। ঈমানের মূল ভিত্তি হল মাওলার গোলামি। ইসলামের মতভেদের কারণ হল মাওলাকে না মেনে নিজেদের মনগড়া দর্শনে চলা।

সুতরাং ইসলামের ৭২ ফেরকা সৃষ্টি হয়েছে মাওলাকে না মেনে, মনগড়া মাজহাব সৃষ্টির মধ্যে । একমাত্র সুফিগণ মাওলাকে দর্শনকে মেনে নিয়ে মাওলার আনুগত্য করে। আর বাকি ৭২ ফেরকা মাওলাকে ফেলে আমলের উপর ভিত্তি করে মাজহাব তৈরি করে, নিজেরা অনেক মতে বিভক্ত হয়েছে। তাই নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ও কুরবানিতে ৭২ ফেরকা এক ও অভিন্ন। তারা আমলে এক, কিন্তু মাওলা বিষয়ে জাহেল। তাই মহানবি (সা.) – বলেছেন আমার উম্মতের মধ্যে একদল নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত , কুরবানি ও আনুষ্ঠানিক আমল করেও জাহান্নামে যাবে। কারণ, সেই আমল রিয়াযুক্ত তথা লোক দেখানো আমল। এই লোকদেখানো কর্মই জন্মান্তরের মধ্যে ফেলে দিবে। মাওলার আনুগত্যের মধ্যে কর্মফল খন্ডিত হয়, তকদির পরিবর্তন হয়, কর্ম নিষ্কাম হয়। মুমিন ব্যতীত কেউ মাওলার গোলামি করতে পারবে না। তাই আমলে নাজাত নয়, ঈমানে মিলে নাজাত।

সে সকল আমল লোকদেখানো, মাওলার সন্তুষ্টির জন্য না। সে সকল আমল হল নিকৃষ্ট আমল। মাওলার ধ্যান ও তাঁর হুকুমের মধ্যে থাকাই আমলে সালেহা। এই আমলে সালেহাই ঈমানদারকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং নাজাতের ফায়সালা দিবে। সুতরাং মাওলা হল ঈমানের মূল ভিত্তি, আমল নয়। আমল দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। জীবন তরী, ভবসাগর করে মাওলাই। এই মাওলাই হল নূহের কিস্তি, নাজাতের তরী। আমল হল জনম জনম কর্মের পানিশমেন্ট। সুতরাং আমল নয়, ঈমানই মূল। এই ঈমানের মূলেই নবি অলির মোহাব্বত।

নিবেদক: আর এফ রাসেল আহমেদ ওয়ার্সী
আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel