সৈয়দ আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনি।
বাঙ্গলা ১৩১৩ সালে ১১ই ভাদ্র তৎকালিন পটিয়া ও বর্তমান চন্দনাইশ থানার অন্তর্গত ‘হারালা’ ইউনিয়নের বিখ্যাত সৈয়দ বাড়ীর, সৈয়দ মাওলানা খলিলুর রহমান (রাঃ) ও স্ত্রী সৈয়দা মোছাম্মৎ মনিরুন্নেছা (রাঃ)’র ভাগ্যবতী মেয়ে সৈয়দা মোছাম্মৎ ছমুদা খাতুনের গর্ভে এবং পিতা সুলতানুল আউলিয়া সৈয়দ মাওলানা মুজিবুল্লাহ্ সুলতানপুরী (রাঃ) তাঁহার মাতুলালয়ে আবির্ভূত হন। আবুল খায়ের অর্থাৎ মঙ্গলের পিতা, মঙ্গলের জন্মদাতা..।
শৈশব ও অধ্যায়নঃ
প্রায় বার বৎসর বাবার বাড়ি অবস্থানের পর তাঁর আম্মাজান মোছাম্মৎ সৈয়দা ছমুদা খাতুন (রঃ) স্বেচ্ছায় তাঁর শ্বশুর বাড়ী রাউজান চলে যান। মাতুলালয়ে থাকার সময় মুরব্বীদের কাছে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের হাডেখড়ি, পরে খাঁনহাট মাদ্রাসায় এরপর রাউজান প্রত্যাবর্তন করলে রাউজান ভিক্টোরিয়া মক্তবে অধ্যায়ন করেন। স্হানীয় মক্তবে শিক্ষা গ্রহনের পর চট্টগ্রামের মোহছেনিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। কয়েক বৎসর পর তিনি মোহছেনিয়া মাদ্রাসা ত্যাগ করে চট্টগ্রাম দারুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এরপর তার আম্মাজানের চাচাত ভাই বিখ্যাত সৈয়দ পরিবারের মাওলানা আব্দুস ছবির (রঃ) ছাহেবের সহযোগিতায় কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান। এসময় তিনি আরবী,ফার্সী,উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।
কলকাতায় লেখাপড়া শেষ করে তিনি দেশে ফিরে প্রথমে রাউজান গহিরা হাইস্কুলে আরবী ও ফার্সী বিষয়ের হেড মাওলানা হিসাবে যোগাযোগ করেন। কিছু দিন পর তিনি গহিরা স্কুল ত্যাগ করে রাউজান “আর্য্যা মিত্র স্কুলে” শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। এ সময় তিনি দিনের বেলায় শিক্ষকতা করতেন এবং রাতে বিভিন্ন মাহফিলে দাওয়াতে যেতেন। একই সাথে দু’দিকে গুরু দায়িত্ব পালন করা ওনার জন্য কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়। হঠাৎ একদা ক্লাস চালাকালীন সময়ে মুর্শিদ কেবলা চিন্তা করলেন যে, একসাথে দুই দিকে দায়িত্ব হস্তক্ষেপনে অবহেলা হতে পারে তাই মুর্শিদে বরহক তাকওয়ার আত্নপ্রকাশ ও দ্বীনি খেদমতের উদ্দেশ্যে চাকরি হতে অব্যহতি নেন।
গোবিন্দরখীল গ্রামের সূফি নুরুল্লাহ্ সাহেব মওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরীর জীবনী সম্বলিত ”খাইরুল বয়ান” নামক পুস্তিকায় বর্ণনা করেন যে, তিনি কলকাতায় অবস্থান কালে সর্ব প্রথম ফুরফুরার পীর সাহেব হযরত মওলানা আবু বক্কর (রঃ) এর দরবারে গমন করে তরিকতের শিক্ষা নেন। এরপর কলকাতায় মানিকপুরের হযরত আছানগাজী (রঃ) হযরত মওলানা উল্লাহ্ শাহ্ (রঃ) ও হযরত মওলানা মোরশেদ আলী শাহ্ (রঃ) এর দরবারে প্রায় ৩ বৎসর যাবত অবস্থান করে তরীকতের শিক্ষা গ্রহন করেছেন। এরপর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পূর্বক মাইজভান্ডার দরবার শরীফের গাউছুল আযম শাহ্ ছুফি হযরত মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান (কঃ) প্রকাশ বাবা ভান্ডারীর দরবারে তরীকতের দীক্ষা গ্রহণ করার লক্ষ্যে দু’বৎসর যাবৎ যাওয়া-আসা করেন।
বায়াত গ্রহন ও খেলাফত লাভঃ
মাওলানা সৈয়দ আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) ইচ্ছা ছিলো ফুরফুরা দরবার শরীফের পীর সাহেব জনাব আবু বক্কর (রাঃ)’র হাতে বায়াত গ্রহন করবেন । সেই সুবাদে তিনি বেশ কয়েক বার ফুরফুরা দরবারে যাওয়া আসা করতেন এবং জনাব আবু বকর ফরফুরী (রাঃ) সোহবত এখতিয়ার করেন। পরিশেষ একদিন মাওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) নির্দিষ্ট করলেন যে, তিনি আবু বকর (রাঃ) হাতে বায়াত গ্রহন করবেন। তার আগের রাতে মাওলানা সৈয়দ আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) স্বপ্নে দেখলেন যে, এক ধানের ডোল চার কোণের তিন কোন তিন জনে ধরলেন আর একটা কোণ বাকী থাকলে মুজিবুল্লাহ সুলতানপুরী (রাঃ) বাবাজান কেবলাকে বলেন হে আবুল খায়ের! বাকী কোণটা তুমি ধরো। ঘুম ভেঙ্গে গেলো, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কোন ধরনের চিন্তা না করে ফুরফুরা দরবারে চলে গেলেন দরবারে পৌঁছানোর পর পীর সাহেব জনাব আবু বকর (রাঃ) কে তাজিম করার সাথে সাথে আবু বকর (রাঃ) বলে দিলেন, তুমি নিজ বাড়ীতে রাউজান চলে যাও। তোমার জন্য তোমার আব্বা অপেক্ষা করতেছেন, এরপর তিনি যথা সময়ে বাড়ীতে চলে আসলেন এবং মুজিবুল্লাহ সুলতানপুরী (রাঃ)’র ছেলে মাওলানা সৈয়দ আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) বায়াত গ্রহণ করিয়ে ধন্য করেন..।
বাবাজান কেবলার আদেশ মােতাবেক তাঁহার পূর্বেকার বৈঠকখানায় তাহাকে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে সৈয়দ আবু মােহাম্মদ মােস্তাক বিল্লাহ (আমি অধম) সুলতানপুরীর নিজ অর্থায়নে মাজার শরীফ নির্মিত হয়।
বায়াতে ছানীঃ
পীরে ছোহবত এবং রুহানী ফুয়ুজাত হাছিলের লক্ষ্যে সৈয়দ মাওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) সৈয়দ গোলামুর রহমান প্রকাশ বাবা ভান্ডারী (রাঃ) এর হাতে বায়াত গ্রহন করেন।
হযরত মওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) কে গাউছুল আযম শাহ্ সূফি হযরত মওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান (রাঃ) প্রকাশ বাবা ভান্ডারী নিজেই উনাকে খলিফা বলে উল্লেখ করেন।
সুলতানুল বাকিস্তান (পাকিস্তান) উপাদি লাভঃ
সৈয়দ মাওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) যখন আপন মুর্শিদে বরহক সৈয়দ মুজিবুল্লাহ সুলতানপুরী (রাঃ) এর মাজার শরীফ নির্মাণের কাজ শুরু করলেন, কাজের নকশা মোতাবেক মাজারের কিছু অংশ রাউজান অধিবাসী ডাঃ আবদুস সামাদের পিতার কবরের উপর পড়ে। সৈয়দ মাওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) জবাব আবদুস সামাদের কাছে উক্ত জায়গায় মাজার নির্মাণের অনুমতি চাইলে ডাঃ আবদুস সামাদ জায়গা দিতে অসম্মতি জানায়। তৎপর আমার মুর্শিদে বরহক মাজার শরীফ নির্মাণের কাজ স্হগিত রেখে পটিয়ায় ফিরে আসেন। ১৯৫১ সালে সৈয়দ মাওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) যখন দ্বিতীয় বারের মতো হজ্বে গমন করলেন, সেখানে মদিনাতুল মনোয়ারায় ডাঃ আবদুস সামাদের সাথে দেখা হয়। সৈয়দ মাওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) যখন রাসুল (দঃ) এর রওজা আকদসে সালাতুস সালাম পেশ করলেন,
“(আস্ সালাতু আস্ সালামু আলাইকা সৈয়দি ইয়া রাসুলুল্লাহ)”
সঙ্গে সঙ্গে রওজা আকদস থেকে আওয়াজ আসলেন “ওয়ালাইকুম সালাম ইয়া সুলতানুল বাকিস্তান (পাকিস্তান)”।
আর একটু লিখা প্রয়োজন ছিল সেটা হচ্ছে “ডাঃ আবব্দুস সামাদ সাহবে রাসূল (দঃ)’র সালামের জবাব শুনেছিল এবং বিস্মিত হয়ে মুজিবুল্লাহ সুলতানপুরীর (রাঃ) মাজার নির্মানের অনুমতি দিয়ে দিছিল”
দরবার, মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠাঃ
পীরে কামেল হযরত শাহ্ সূফি সৈয়দ মওলানা মতিউর রহমান আল কাদেরী প্রকাশ (পাগলা মিঞা) সুলতানপুরী (কঃ) ১৯৩৫ সালে ইন্তেকালের পর আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) (প্রকাশ বড় মিঞা) প্রতি সপ্তাহে অত্র দরবারে আসা-যাওয়া করতেন। বিশেষ করে দরবারে প্রচলিত প্রতি চন্দ্র মাসের ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত গেয়াঁরভী শরীফের মাসিক ফাতেহায় তিনি হাজির থাকতেন।
পরবর্তীতে তিনি সাতগাছিয়া দরবার শরীফে স্থায়ী ভাবে স্বপরিবারে অবস্থান করেন এবং তখন হতে তিনি এ অঞ্চলে বড় মিয়া হজুর হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেন। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা যখন রেঙ্গুন দখল করে নেন তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মােড় ঘুরে যায়, এদেশে মহা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। যখন রাস্তা-ঘাট, পথে-প্রান্তরে মানুষ অনাহারে অর্ধহারে মারা যাচ্ছিল তখন হযরত মওলানা আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) এর কাছে একখানা বক্সাওয়াগন গাড়ী ছিল। অসহায় মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে মুর্শিদে বরহক অনেক অনাথ এতিমদের এনে সাতগাছিয়া দরবার শরীফে একটি এতিমখানা স্থাপন করেছিলেন। এতে অনেক গরীব-দুঃখী এতিম ছাত্র লালন-পালন হতে থাকে। এতিম শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অন্যান্যদের আবাসস্থল ও শিক্ষা কার্যক্রম জোড়ালাে করার জন্য তিনি দরবার মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে দ্বিতল ভবন তৈরী করেন।
ভবনের নিচের তলায় ছাত্র-শিক্ষকের আবাসস্থল এবং উপরের তলায় হাইদগাঁও মােজহেরুল ইসলাম সিনিয়র মাদ্রাসার প্রাতিষ্ঠানিক কাজ শুরু করেন। তাঁর দাদাজান হযরত মওলানা সৈয়দ মােজহেরুল্লাহ (কঃ)’র সুলতানপুরীর নামে অত্র মাদ্রাসায় নাম করন করেন। ঐ সময় তিনি অত্র দরবারের আস্তানায় দস্তগীর (কঃ), আওলাদে সুলতানপুরী (কঃ) এর মাজার শরীফ ও পুরানাে মসজিদটি সংস্কার করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি মসজিদে ৪০ দিন পর্যন্ত ইতেকাফকালীন সময়ে কোন সাক্ষাতকারীদের সাথে মুখে বাক্যলাপ করতেন না প্রয়ােজন একটি চিরকুট লিখে দিতেন। এ সময় তাঁর খেদমতে যারা থাকতেন তাঁরা সাক্ষাতকারীদের তা বুঝিয়ে দিতেন। পরবর্তীতে তিনি একাক্রমে ১২ মাস রােজা রেখে ‘ সিয়ামুদ্দাহার’ পালন করেছিলেন। হযরত মাওলানা সৈয়দ আবুল খায়ের সুলতানপুরী (কঃ) কয়েকবার রজব চাঁদ হতে পরবর্তী ৩ মাস রােজা রাখতেন..।
সাপ্তাহিক কার্যক্রম পরিচালনাঃ
তিনি প্রতি সপ্তাহে ১-২ দিন করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে স্বীয় ভক্তদের সাক্ষাত দিতেন। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সাতগাছিয়া দরবার শরীফে, শনি রবি ও সোমবার কিছু সময় ৮০/৩ এ,সি দত্ত লেন পাথর ঘাটাস্হ বাসায়, এবং মঙ্গলবার ও বুধবার রাউজানে অবস্থান করতেন। দৈনিক শত-শত মানুষ তাঁর কাছে নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কোরআন ও হাদিসের আমল এবং ঔষধ-পত্রের জন্য আসতেন এবং উপকৃত হতেন। ফজরের নামাজ তিনি মসজিদেই আদায় করতেন। ফজরের জামাতের পর তিনটি পবিত্র কোরআনে খতম আদায় করতেন। এর মধ্যে তিনি নিজে মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর পাশে ‘খতমে খাজেগান’ মধ্যভাগে মওলানা আবদুর রশীদ ছাহেব ‘খতমে শেফা’ ও মসজিদের দক্ষিণাংশে মাওলানা শাহবুল্লাহ ছাহেব বা মাওলানা আবু তালেব সাহেবের নেতৃত্বে ‘খতমে ইউনুচ’ পরিচালনা করতেন। খতম শেষ হলে আস্তানা ও দক্ষিণের দরগাহ জেয়ারত করে চলে আসতেন।
শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতঃ তিনি আস্তানায় দস্তগীর প্রবেশ করে চতুর্পাশ্বে তাওয়াফ করতেন, আর ছাত্র, শিক্ষক ও অন্যান্যরা বাইরে দাঁড়িয়ে সমস্বরে কছিদা পাঠ করতেন অতঃপর তিনি উপস্থিত ছাত্রদের মধ্যে একজনের প্রতি ইশারায় মােনাজাত করার নির্দেশ দিতেন। সর্বশেষ তিনি দরজায় কেবলামুখী হয়ে মােনাজাত শেষ করতেন, এরপর দক্ষিণের দরগাহে গমন করতেন। তথায় খাদেমরা তাঁর জন্য পূর্বেই হযরত সৈয়দ কাজী ওয়ারেছ বিল্লাহ সােলতানপুরী (কঃ) এর মাজার শরীফের পশ্চাতে একটি জায়নামাজ বিছিয়ে বসার স্থান করে দিতেন এবং অন্যরা বাইরে বসে বা দাঁড়িয়ে জেয়ারত সম্পন্ন করতেন। মােনাজাত শেষে সবাই নিচে আসলেও তিনি আবার মসজিদে প্রবেশ পূর্বক চার রাকাত ‘কাজায়ে ওমরীর’ নামাজ আদায় করতেন। তিনি পুনঃ মসজিদে প্রবেশের পূর্বে খাদেমরা নির্দিষ্ট স্থানে একটি জায়নামাজ বিছায়ে রাখতেন। প্রতিদিন ফজরের জেয়ারতের সময় তিনি মসজিদ হতে বের হয়ে আযান খানার সামনে দাঁড়িয়ে জেয়ারত শেষ করতেন এবং কেবলামুখী হয়ে মােনাজাত করে সবার অগ্রে নিচে আসতেন।
প্রতি চন্দ্র মাসের ১০ তারিখে মুরব্বীদের নিয়ে গেয়ারভী শরীফ ও ফাতেহা শরীফ তিনি জারি রেখেছিলেন। প্রতি বুধবার বাদে জোহর খতমে কোরআন এবং বৃহস্পতিবার বাদে মাগরিব মিলাদ, কিয়াম ও দোয়া শরীফ পাঠ করতেন, যা এখনাে পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। ফাতেহার দিন জোহরের নামাজ পড়তে গেলে ছাত্র শিক্ষক সকলকে খতমে কোরআন পড়তে হত। কোরআনের ত্রিশ পারাকে ত্রিশ খন্ডে বিভক্ত করে প্রত্যেক জনের হাতে এক-একটি খন্ড তুলে দিতেন। মাঝে মধ্যে তার ছেলেরাও উক্ত কোরআন পাঠে অংশ নিত। আবার আছরের নামাজের পর ছয় রাকাত সালাতুল আওয়াবিন ও খাওয়া-দাওয়ার পর চার রাকাত ‘সালাতুত তাছবিহ’র নামাজ আদায় করতেন।
প্রতি সােমবার ও বৃহস্পতিবার বাদে এশা হইতে মসজিদে জিকির এবং এরপর বৈঠক খানায় ছেমা-মাহফিল হত। অনেক সময় তিনিও ‘ ওয়াজ করতেন। মেয়েদের জন্য মসজিদের উত্তর পার্শ্বে নামাজের পৃথক ব্যবস্থা ছিল এবং তার বৈঠক খানায় মহিলাদের পর্দাসহকারে মাহফিলে শরীক হওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মাদ্রাসা চলাকালীন ও নামাজের সময় ঢােল বাজনা, মাইক জয়ধ্বনী দিতে কিংবা মাদ্রাসার ছাত্রদের লেখাপড়া ও নামাজের ব্যঘাত ঘটিয়ে কোন কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, যা এখনাে পর্যন্ত চলমান রয়েছে। তিনি প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজের পর বৈঠক খানায় অজিফা এবং চাশতের নামাজের আদায়ের পর লােক জনের সঙ্গে কথা কর্মসূচী-বার্তা বলতেন। মাঝে মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম হলেও এটিই ছিল তাঁর দৈনন্দিন কর্মসূচী।
তার জীবদ্দশায় ১৭ ই ফাল্গুন ওরশ শরীফ পরিচালনাঃ
প্রতি চন্দ্র মাসে দশ তারিখে কইশ্যা পাড়ার সুফী রমিজ আহমেদ সাহেব আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরী (কঃ) হুজুরায় চাটা বিছিয়ে বসতেন। ভক্তরা দশ তারিখের ফাতেহার নজরানা বাবত আনিত টাকা-পয়সা ও চাউল, ডাল, মরিচ তাঁর কাছে দিয়ে খাতায় লিস্ট ভুক্ত করতেন। তাছাড়াও ১৭ ই ফাল্গুনের ওরশ ফাতেহার জন্য ১৪, ১৫ ও ১৬ ফাল্গুন মাদ্রাসার একটি কক্ষে কাঞ্চন নগরের জনাব এজহার মিঞা ও ওয়াহিদুর পাড়ার এক ভক্তের মাধ্যমে টাকা-পয়সা ও চাউল, ডাল, মরিচ জমা দিয়ে খাতায় নথিভূক্ত করতেন। ওরশ ফাতেহার পর জমাকৃত ঐ জিনিস পত্রের মূল্য নির্ধারণ করে প্রত্যেককে তার দাম পরিশােধ করা হত। স্বেচ্ছায় অনেক নাম মাত্র মূল্য বা একেবারেই মূল্য গ্রহণ করতেন না। ১৭ ই ফাল্গুনের ওরশ ফাতেহার দিন মাঠের মধ্যে বড় বড় অক্ষরে লিখে দেয়া হত যােহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ মাঠে হইবে।
যা এখনাে পর্যন্ত চলমান। ওরশের দিন শেষ রাতে তিনি নসিহত করতেন। ফজরের নামাজের পর তবরুক বিতরণ হত, তিনি সবাইকে তবরুক গ্রহণের দাওয়াত দিতেন। ভক্তরা চলে যাওয়ার সময় যাতে তাঁকে ‘ তাজিম করতে পারে তাই তিনি পুরানাে গেইটের পশ্চিম পার্শ্বে মাদ্রাসায় বারান্দায় একটি চেয়ার নিয়ে অবস্থান করতেন। ওরশ মােবারক শেষে তিনি ভক্তদের নিয়ে কিছুক্ষণ ছেমা মাহফিল করতেন। এর পর ‘ভােলানটিয়ার’ সমাবেত ভক্ত অনুরক্তদের নিয়ে দুপুরে তারুক গ্রহণ করতেন। ওরশের দিন তিনি হাজীদের এহরামের মত পােশাক পড়তেন। ঐদিন তিনি সহ অনেক মুরিদ রােজা রাখতেন, ইফতারের পর হতে পরের দিন ১৮ ই ফাল্গুন পর্যন্ত কোন দানা আহার করতেন না। ১৮ ই ফাল্গুন ছেমা মাহফিলের পর গােসল সেরে তিনি ভােলানটিয়ারসহ তাবরুক গ্রহণ করতেন।
সাতগাছিয়া দরবার শরীফের অভিভাবকঃ
১৯২২ সালে মুজিবুল্লাহ সুলতানপুরী (রাঃ) ইন্তেকালের পর দরবারের সমস্ত দায় দায়িত্ব ওনার ছােট ভাই হযরত মাওলানা মতিউর রহমান (রাঃ) এর হাতে দিয়ে যান। তিনি সুষ্ট ও সুন্দরভাবে ত্বরীকতের প্রচার-প্রসার ও দরবার পরিচালনা করে আসেন। ১৯৩৫ সালের ১৩ ই ফাল্গুন যখন উনার ইন্তেকাল হওয়ার কিছু দিন আগে সাতগাছিয়া দরবার শরীফের মতােয়াল্লী বা অভিভাবক ও ত্বরীকতের ইমাম হিসাবে ভাইয়ের বড় ছেলে হযরত মাওলানা সৈয়দ আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) বাবাজানের হাতে ন্যাস্ত করেন এবং হযরতুলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) এর ইমামতিতে তাঁন জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ইহা হতে বুঝা যায় যে, ওনার পরে হযরত মাওলানা সৈয়দ আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) দরবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী হন।
ত্বরীকত ওয়ালী নির্বাচন ও খেলাফত প্রদানঃ
বাবাজন কেবলা চিন্তা করলেন যে, আমার পরে সাতগাছিয়া দরবার শরীফের ত্বরীকতের উত্তরাধিকারী বা ইমাম কে হবেন। সেই চিন্তায় অনেক দিন যাচাই-বাচাই ও অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সৈয়দ আবু মােহাম্মদ মােস্তাক বিল্লাহ সুলতানপুরীকে (আমি অধম) শহর থেকে ডেকে এনে বায়াত করিয়ে সাতগাছিয়া দরবার শরীফের তরীকতের একমাত্র উত্তরাধিকারী বা ইমাম হিসাবে নিয়ােগ দেন। সেই থেকে আমাকে ওয়ারেছিয়া স্বেচ্ছাসেবক কমিটির প্রধান হিসাবে নিয়ােগ দেন।
স্বেচ্ছাসেবক কমিটির দায়িত্ব ছিল দরবারের সমস্ত অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করার মাধ্যমে নিজেকে গােলাম মােস্তফা হিসেবে পরিচিতি লাভ করা। সে হতে আমি অধম ধীরে ধীরে শরীয়ত, তরীকত, হাকীকতের শিক্ষা বাবাজান কেবলার সােহবত থেকে অজন করার চেষ্টা করি। সাতগাছিয়া দরবার শরীফের মাওলানা হযরত আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) এর হাতে আমি অধম ছাড়া আর কোন ছেলে সন্তান বায়াত গ্রহণ করেন নাই। আমি অধম আবু মােহাম্মদ মােস্তাক বিল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ বা স্বপ্নযােগে খেলাফত বা ত্বরীকতের ইমাম হিসাবে নিযুক্ত করেন নাই।
তাঁর জীবন সায়াহ্নের ঘটনাবলী ও ইন্তিকালঃ
১৯৭৪ সালের ২৫ জুন মঙ্গলবারে হযরত ছৈয়দ মাওলানা আলহাজ্ব আবুল খায়ের সুলতানপুরীর (রাঃ) অসুস্থতা বেড়ে যায়, তখন তাঁর পরিবারের সকল সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও ভক্ত মুরীদানের উপস্থিতি ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেতে লাগল। মাইজভাণ্ডারীর বাবাজান কেবলা কাবা সৈয়দ গােলামুর রহমান (কঃ) এর নাম তেলাওয়াত করে দেয়া হচ্ছে, তিনিও সাথে সাথে এ নাম পাঠ করছিলেন। এভাবে আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত চলতে থাকে। মাগরিবের পর হতে অবস্থা ক্রমে অবনতির দিকে গেল। এক সময় দীর্ঘ কলেমা শরীফ তেলাওয়াত করতে পারছিলেন না, তখন নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে তাল মিলিয়ে শুধু আল্লাহু, আল্লাহু, জিকির শুরু করা হল, তখন তিনি আল্লাহু আল্লাহু জিকির করছিলেন। একই তালে ঘরে-বাইরে শত শত কণ্ঠে আল্লাহু আল্লাহু জিকির রবে, সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হল।
রাত প্রায় পৌনে নয়টার সময় কান্নার রােলে আকাশ বাতাস ধ্বনিতে মুখরিত হয়, ঐদিন ছিল ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে জুন, রােজ মঙ্গলবার সাতগাছিয়া দরবার শরীফের ইতিহাসে এ যেন এক নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি। হযরত ছৈয়দ মাওলানা আলহাজ্ব আবুল খায়ের সুলতানপুরী (কঃ) ইন্তিকালের কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁন ঘরের সামনে, ফুল বাগানের পাশেই মওলানা শাহাবুল্লাহ, মাওলানা আবুল কাশেম, গােমদণ্ডিরর ছুফী আবুল খায়ের মিঞা, (ফতেয়ার বাপ) চুয়ার পাড়ার জনাব হাফেজুর রহমান সাহেবসহ আরাে অনেকে শেষ গােসলের কাজ সম্পন্ন করেন। অতঃপর মাঠের পশ্চিম পাশে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে তাঁকে রাখা হল দলে দলে লােকজন শেষ বারের মত তাঁকে দেখার জন্য আসা শুরু করল।
জানাজা ও জিকির মাহফিলঃ
অছিয়ত মোতাবেক জনাব আলহাজ্ব মাওলানা আবু মোহাম্মদ মোস্তাক বিল্লাহ সুলতানপুরী তাঁর বৈঠকখানায় রওজা তৈরীর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এ দিকে কেউ কোরআন, কেউ অজিফা কেউ তাসবীহ তাহলিল পাঠে ব্যস্ত হন। আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) এর ইন্তেকালের সংবাদ পেয়ে দীর্ঘ ১০ বৎসর পর আলহাজ্ব মাওলানা আরেফ বিল্লাহ সুতলানপুরী ২৫ জুন, ১১ আষাঢ় ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ রােজ বুধবার কাঞ্চন নগরের কিছু লােকসহ দরবারে আসেন। আছরের নামাজের পর আলহাজ্ব মাওলানা আরেফ বিল্লাহ সুতলানপুরীর ইমামতে প্রথম জানাজা, জনাব আলহাজ মুহাম্মদ মােস্তাক বিল্লাহ সুলতানপুরীর ইমামতে দ্বিতীয় জানাজা, ও তাঁর ভাগিনা জনাব মাওলানা হুমায়ুন সাহেবের ইমামতে তৃতীয় জানাজা শেষে তাঁর বৈঠকখানায় মাগরিবের পর ওনাকে সমাহিত করা হয়। জনাব আলহাজ্ব মােস্তাক বিল্লাহ সুলতানপুরীর নেতৃত্বে ভক্ত-অনুরক্তরা দরবারের সারামাঠ প্রদক্ষিণ করে ছেমা মাহফিল করেছিলেন।
কারামতঃ
গুটি বসন্ত রােগ তাড়ানােঃ
পূর্ব হাইদগাঁও মাহাদাবাদের, হাজী মীর আহম্মদ, পীং- মকবুল আলী বর্ণনা করেন তাদের গ্রামে একদা গুটি বসন্ত রােগ দেখা দেয়। জনাব সূফি নুরুল হক তালুকদার ছাহেব ও তার ছােট ছেলে দানু মিঞা ঐ রােগে আক্রান্ত হন। তখন তালুকদার তার স্ত্রী বর্ণকের আম্মা জনাবা মাইমুনা খাতুনকে ডেকে বললেন, তুমি তাে মওলানা আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) ছাহেবের খুব ভক্ত তার নিকট গিয়ে আমাদের আরােগ্যের জন্য একটু দোয়া করতে বলাে। জানাবা মাইমুনা খাতুন দরবারে এসে হুজুর বড় মিঞা সাহেবকে সব কথা খুলে বলেন, হাজী সাহেব বর্ণনা করেন ঐ দিন গভীর রাতে তার পিতা হালের গরুকে কুড়া ভূষি খাওয়ানাের জন্য জাগ্রত হয়ে বাইরে আসলে দেখেন, রাস্তা দিয়ে দু’জন লােক উত্তর দিকে চলে যাচ্ছেন। তাদেরকে চেনা গেল না, ডেকে জিজ্ঞাসা করা হলাে তারা কে..? কোথাকার লােক..? কোন জবাব না দিয়েই উত্তর দিকে চলে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর ঐ রাস্তা দিয়ে দক্ষিণ দিকে অপরিচিত লােকদ্বয়ের একজন পুনঃ ফিরে আসলেন। পরের দিন সকালে বর্ণকের আম্মা যখন বড় মিঞা হজরের নিকট আসলেন, তখন তিনি বললেন, ‘ মাইমুনা গত রাতে গুটি বসন্ত রােগকে তােমাদের গ্রাম হতে বের করে দিয়েছি। পরে তালুকদার ও তার ছেলে আরােগ্য লাভ করেছিলেন..।
হাতির ঘটনাঃ
বোয়ালখালী থানার গোমনন্ডী জনাব সূফী আবুল খায়ের (প্রকাশ আবু মিয়া ওরফে ফতেয়ার বাফ) সাহেব এ ঘটনাদ্বয়ের বর্ণক ছিলেন। তিনি যখন কাপ্তাইয়ের চাকরী করতেন, তথায় সূফী সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি হযরত মওলানা আলহাজ্ব আবুল খায়ের সুলতানপুরী (রাঃ) মুরিদ ছিলেন। একদিন তাহাজ্জুদ নামাজ মসজিদে আদায়ের জন্য বাসা থেকে বের হতেই দেখলেন একটি হাতি তাঁর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তখন তিনি তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে আল্লাহকে স্মরণকরতঃ তাঁর মুরশিদ কেবলাকে খেয়াল করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর দরজায় ফাক দিয়ে হাতি চলে গেছে। তারপর তিনি মসজিদে গিয়ে নামাজ শেষ করলেন। সকালে অন্যান্য লোকেরা কাছ থেকে উক্ত ঘটনাটি জানলে সকলেই হাতি আসার কথা অস্বীকার করেন। ক’দিন পর চন্দ্র মাসের ১০ তারিখ ফাতেহার দিন যখন সাতগাছিয়া দরবারে তাঁর মুর্শীদ কেবলার সামনে আসলেন, তখন কিছু বলার আগেই তাঁকে তিনি নিজ হতে বললেন, “ফতেয়ার বাপ! হাতি দেখে কি ভয় পেয়েছিলে?” ছুফী সাহেব সব ঘটনা বর্ণনা করলে তাঁর মুর্শীদ ভবিষ্যতে ঘর হতে বের হওয়ার সময় ভাল করে দেখে শুনে বের হবার উপদেশ দিলেন।
আবুল খায়ের এর ঘটনাঃ
১৭ ই ফাল্গুন ওরশ ফাতেহার সময় আস্তানা শরীফ তদারকির দায়িত্ব তার মুর্শিদ কেবলা তাকেই (আবু মিঞা) সব সময় দিতেন। এক বৎসর ঐ দায়িত্ব পুনঃ গ্রহণের সময় তিনি মুর্শিদ কেবলাকে কিছু বলতে চাইলে তা তিনি কর্ণপাত করেন নি। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, আস্তানায় তাঁকে তাে কোনদিন দেখতে পেলাম না। ১৬ তারিখ রাতে স্বপ্নদৃষ্ট হলাম আমি আস্তানার সামনে বসে আছি, আস্তানার উপর সৌম্যকান্তি এক ব্যক্তি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে আবুল খায়ের আমি গাউছুল আজম এ আস্তানায় আছি, তুমি সন্দেহ কেন করছ..? তার ঘুম ভেঙ্গে যায়, ফজরের নামাজের পর মুর্শীদ কেবলা তাকে লক্ষ্য করে বললেন, “ফতেয়ার বাপ..! গত রাতে কি কারাে সাথে দেখা হয়েছে”?
অনুয়ার বিলের ঘটনাঃ
খরনা, কইশ্যা পাড়া নিবাসী জনাব সুফী রমিজ আহম্মদ, পীং- সুফী শরীয়ত উল্লাহ সাহেব বর্ণনা করেন- এক সময় তিনি ছেলের খত্না করার জন্য হাজামকে বাড়িতে আসার জন্য বলেছিলেন। স্থানীয় নিয়ম অনুসারে ঐদিন পাড়ার মুরব্বিদের কিছু আপ্যায়ন করতে হয়, এ জন্য আয়ােজনও হয়েছে। ঠিক সে সময় তাঁর কাছে এক লােক এসে বলল যে, বাবাজান কেবলা হযরত সৈয়দ মাওলানা আলহাজ্ব আবুল খায়ের সুলতানপুরীর (রাঃ) বেহেলাসহ আপনাকে মাগরিবের পরপরই যেতে বলেছেন। এ’ খবর পাওয়া মাত্র তিনি আত্মীয়-স্বজনদেরকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বেহেলাে হাতে দরবারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। কোনাকুনি “অনুয়ার বিলের মধ্যদিয়ে পায়ে চলার ‘ধুর’ ধরে সােজা লাইলার বাপের বাড়ীর পশ্চিম পার্শ্বে বি.ও.সি রােডে উঠার পর পিছন থেকে কে যেন বেহেলাসহ তাঁকে চেপে ধরল। তিনি বার বার জিজ্ঞাসা করলেও কোন জবাব দিচ্ছে না দেখে, তাঁর ডান হাতটি কৌশলে কাঁধের উপর দিকে তুলে পিছনের লােকটির টুটী ধরে ফেলে, তখন সে তাকে ছেড়ে পিছনে পালিয়ে যায়।
পিছনে ফিরেও তেমন কিছু দৃষ্টি গােচর হলাে না। আর অপেক্ষা না করে দরবারে পানে ছুটলেন, তখন বাবাজানের বৈঠক খানায় মিট-মিট আলাে জ্বলছে। এশার আজান হয়েছে, আলহাজ্ব হযরত সৈয়দ মওলানা আবুল খায়ের (রাঃ) প্রথম হতে উৰ্দ্ধমুখি তৃতীয় এবং বর্ণনাকারী দ্বিতীয় সিঁড়িতে, তিনি পেছনে ফিরে জিজ্ঞাসা করলেন” রমিজ মিঞা অনুয়ার বিলে কি কিছু হয়েছে? তিনি বিনীতভাবে বললেন অনুয়ার বিলে নয় লাইলার বাপের বাড়ীর পশ্চিম মাইজপাড়া রাস্তার মাথায় বি.ও.সি রােড়ে আমাকে কে যেন জড়িয়ে ধরেছিল। সব ঘটনা খুলে বললে, তখন তিনি বললেন এখানে আমার কাছে কেউ আসে খােদা তালাশের জন্য, আর কেউ আসে ‘খােদ’ তালাশের জন্য। সাবধানে থাকাই ভাল। এ বলে তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেন..।
মাজার শরীফ, চাহরম শরীফঃ
যেহেতু বুধবার দিবাগত রাত ৮.০০টা হইতে ৮.৩০ মিনিটের মধ্যে বাবাজান কেবলাকে দাফন করা হয়। সুতরাং চন্দ্রমাস হিসাবে তাহা বৃহস্পতিবার ধরিতে হইবে বিধায়, রবিবার তাঁহার চাহরম শরীফ আদায় করা হয়।
বংশ পরিচয়ঃ
আমাদের বাবাজান কেবলা কাবা (রঃ) এর আদি পুরুষগণ পবিত্র মক্কা শরীফ হইতে তুরস্কে ও পরে পবিত্র বাগদাদ শরীফের নিকটবর্তী “ওয়াসী নামক স্থান হইতে মােঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে ভারতবর্ষে আগমন করেন। সেখান হইতে প্রথমে পাঞ্জাবের ‘দোয়াব’ অঞ্চলে ও পরে দিল্লী ও গৌঢ হইয়া তাঁহার পূর্ব পুরুষ হযরত সৈয়দ আদম বরহা (রঃ) বর্তমান বাংলাদেশের রাউজান থানার সুলতানপুর গ্রামে বসতী স্থাপন করেন।
লেখকঃ
- হযরত শাহ সূফি সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মোস্তাক বিল্লাহ সুলতানপুরি (মা.জি.আ.)
- সাজ্জাদানশীন,সাতগাছিয়া দরবার শরিফ, মুজিব নগর, হাইদগাউঁ, পটিয়া, চট্টগ্রাম।