হোমপেজ জীবনী ও পরিচিতি খাজা আলিম উদ্দিন আউলিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনী

খাজা আলিম উদ্দিন আউলিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনী

337
ছবি: খাজা আলিমউদ্দিন আউলিয়ার মাজার শরিফ
Advertisement:
IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

খাজা আলিম উদ্দিন আউলিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনী

শাহেন শাহ্ কুতুবুল আকতাব মজ্জুমে সালেকিন হযরত খাজা আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) কুমিল্লা জেলা, হোমনা থানা, ভাষানিয়া কাশিপুর গ্রামে সমভ্রান্ত মোল্লা বংশে জন্ম গ্রহন করেন। উনার পিতার নাম হযরত নিজাম উদ্দিন মোল্লা (রহঃ)। হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (রহঃ) সকলের কাছে বাবা আলী ফকির নামে পরিচিত। হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) এর স্ত্রীর নাম হযরত আমেনা বিবি (রহঃ)। হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) এর দুই জন কন্যা সন্তান ছিল। বড় মেয়ের নাম হযরত বিবি তৈয়বেন নেছা এবং ছোট মেয়ের নাম হযরত বিবি কুলছুম নেছা (রহঃ)। হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) বাংলা ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের ২০শে চৈত্র, ইংরেজি ১৯৩৩ খ্রিঃ এপ্রিল মাসের ৩ তারিখ ওফাত লাভ করেন। হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) এর দরবার শরীফ এর নাম “ফকির বাড়ী দরবার শরীফ”।

“ফকির বাড়ী দরবার শরীফটি” কুমিল্লা জেলা, হোমনা থানা, ভাষানিয়া কাশিপুর গ্রামে অবস্থিত। ফকির বাড়ী দরবার শরীফটি হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (রহঃ) এর ওফাতের পর উনার বড় মেয়ে হযরত বিবি তৈয়বেন নেছা (রহঃ) এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) এর কাছ থেকে স্বপ্ন যোগে হুকুমের মাধ্যমে উনার বড় মেয়ে (বিবি তৈয়বেন নেছা) মোরাকাবা মোশাহেদা করে এই দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ফকির বাড়ী দরবার শরীফে চারটি রওজামুবারক আছে।

মাজারের মাঝ খানে হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) এর রওজামুবারক, মাজারের পশ্চিম পাশে উনার স্ত্রী বিশ্ব মা হযরত আমেনা বিবি (রহঃ) এর রওজামুবারক, মাজারের পূর্ব পাশে উনার বড় কন্যা হযরত বিবি তৈয়বেন নেছা (রহঃ) এর রওজামুবারক এবং মাজারের বারান্দায় পশ্চিম পাশে উনার দৌহিত্র হযরত মুহাম্মদ শাহআলম শাহ্ ফকির (রহঃ) এর রওজামুবারক অবস্থিত। হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) এর উফাত দিবস উপলক্ষে ইনশাআল্লাহ প্রতিবছর ২০ শে চৈত্র, ইংরেজি এপ্রিল মাসের ৩ তারিখ থেকে শুরু করে সপ্তাহ ব্যাপি ফকির বাড়ী দরবার শরীফে উরশ মোবারক উদযাপিত হয়ে থাকে। হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) ছিলেন একজন মুফতি আলেম এবং কোরআনে হাফেজ।

তৎকালীন সময়ে অত্র এলাকার সকল ধর্মীয় বিষয়ে মাসলা মাসায়েল ও ফতুয়া তিনি দিয়ে থাকতেন। পরবর্তীকালে তিনি যখন সত্য স্বরূপ দর্শন করেন, তারপর থেকে তিনি অস্থির অবস্থায় থাকতেন এবং পাগলের ন্যায় আচরণ করতেন। উনার স্বভাবিক ভারসাম্য ফিরানোর জন্য বাংলার আবদুহু বেলতলির হযরত সোলাইমান শাহ্ লেংটা বাবা ( রহঃ) কাছে চলে যান। এরপর হযরত সোলাইমান শাহ্ লেংটা বাবা ( রহঃ) সাথে সঙ্গ করেন এবং উনার (লেংটা বাবার) সান্নিধ্যে থাকারপর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর থেকে হযরত বাবা আলিম উদ্দিন আউলিয়া (রহঃ) আর কোন শরীয়তের পোশাক পরিধান করেন নি।

IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

কোন ভাবে একটা চাদরের ন্যায় একটা কাপড় লেংটি দিয়ে পরিধান করতেন। প্রথম অবস্থায় হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (রহঃ) এর অলিত্ব প্রকাশ সকলের কাছে না পেলেও পরবর্তীতে ইহা আস্তে আস্তে প্রকাশ হতে থাকে। উনার পরিবারের লোকেরা শুরুতে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন যে, উনার যাবতীয় যা কিছু আছে আস্তে আস্তে সব দান করে দিতে থাকেন। অথচ পরিবারের লোকেরা এর মধ্যে অত্যান্ত দরিদ্র অবস্থায় জীবনযাপন করতেছিল। একদিন উনার বাড়িতে চোর আসে। চোর যখন চুরি করতে ছিল একেবারে চুরির শেষ সময়ে হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন ” ওরে আর চুরি করিস না, আমার ভাগের গুলো সব নিয়ে যা আর আমার ভাইয়ের ভাগের গুলো রেখে যা “। সেই সময় চোর হতভম্ব হয়ে পরে এই ভেবে যে,ঘরের গৃহস্থ লোক সজাগ আমি চুরি করলাম কিন্তু আমাকে কিছু করলোনা।

চোর বুঝতে পারলো তিনি আর কোন সাধারণ ব্যাক্তি নন। অতপর চোর উনার পায়ে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায় এবং চুরির মত খারাপ কাজ করা ছেড়ে দেয়। উনার স্ত্রী বিশ্ব মা আমেনা বিবি (রহঃ) প্রথম দিকে উনাকে তেমন বুঝে উঠতে পারেন নি। একদিন হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) উনার স্ত্রী কে বললেন চলো আমরা লুকোচুরি খেলি। আগে তুমি লুকাও তারপর আমি। উনার স্ত্রী লুকানোর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে উনার স্ত্রী কে খুঁজে বের করে ফেললেন। তারপর যখন আবার হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) লুকালেন উনার স্ত্রী সাড়া ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন এরপর খুঁজে না পেয়ে আকুতি করলেন বের হয়ে আসার জন্য। তারপর আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) সামনে দরজার কর্নার থেকে বের হয়ে আসলেন। পরবর্তী সময়ে হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (রহঃ) আর উনার নিজের বাড়িতে থাকেন নি।

তিনি যেই হিন্দু করদের বাড়িতে থাকতেন সেই হিন্দু করদের কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজারে দোকান ছিল। ভৈরব বাজারে যখন আগুন লাগলো তখন হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) সেই বাড়ির সকল লোকদের বলতে লাগলেন যে ” ওরে তোরা আমার গায়ে পানি ঢাল, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোদের কে থামতে না বলি”। পানি ঢালতে ঢালতে বাড়ির সমস্ত উঠান ভিজে যখন কাদা হয়ে গেলো তারপর তিনি পানি ঢালা বন্ধ করার জন্য হুকুম দিলেন। প্রথম অবস্থায় হিন্দু করদের বাড়ির লোকেরা হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) এর পানি ঢালার রহস্য কেউ বুঝতে পারেন নি। এর কিছুদিন পর সেই সূদুর কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজার থেকে যখন খবর আসলো বাজারের সব দেকান পুরে ছাই। শুধুমাত্র হিন্দু করদের দোকানটাই অক্ষত অবস্থায় ভালো আছে।

বাড়ির সকল লোকজন অশ্চর্য হয়ে গেলো এই ভেবে যে তিনি কোন সাধারণ ফকির নয়। তানা হলে তিনি কিভাবে কুমিল্লা জেলা থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজারের অগ্নিকান্ডের খবর জানলেন। আবার তিনি নিজের এলাকাতে থেকে নিজের গায়ে পানি ঢেলে সেই আগুন নিভালেন। পরবর্তীতে যখন এই ঘটনা সকলের কাছে জানাজানি হয়ে যায়, আনেক মানুষ ভিড় করেন উনার কাছে মুরিদ হওয়ার জন্য। লোকজন হাদিয়া দিতে দিতে যখন উনার গামছাটি টাকা পয়সায় ভরে যেতো, সন্ধ্যা সময়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় গামছাটি ঝাড়া দিয়ে সকল টাকাপয়সা ফেলে রেখে চলে আসতেন। তিনি কাউকে মুরিদ করান নি।

লোকজন বেশি বিরক্ত করলে, তিনি জঙ্গলে চলে যেতেন এবং চারপাশে ময়লা ছিটিয়ে রাখতেন। তারপর তিনি বলতেন তোরা যে ময়লা গুলো পার হয়ে আমার কাছে এসে আমার হাতে ভাত খেতে পারবি আমি তাকেই গ্রহন করবো। ইহা দেখে অনেকেই চলে যেতেন। তবে যারা ময়লা গুলো পার হয়ে এসে উনার হাতে ভাত খেতে পেরেছিলেন, উনাদের কেই তিনি মুরিদ করিয়ে ছিলেন এবং উনারা সকলেই উচ্চ মাকাম সম্পন্ন অলিআল্লা হয়ে ছিলেন। হযরত আলিম উদ্দিন আউলিয়া (আলী ফকির) (রহঃ) এর ইন্তকালের পরেও উনার সাক্ষাত অনেকে পেয়েছিলেন।

কুমিল্লা জেলায় মুরাদনগর থানার কুরাখাল গ্রামের এক মহিলার মাথায় কুষ্ঠ রোগ হয়েছিল। মহিলার কান্নার চিৎকারে বাড়ির লোকজন থাকতে পারতো না। সেই কারনে পরিবারের লোকজন উনাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাড়ির বাহিরে রেখেছিল। একদিন ঐ মহিলার বাড়ির পাশ দিয়ে এক আগন্তুক ফকির যাচ্ছিলেন এবং উনাকে রোগ মুক্তির জন্য ঔষধ দিয়ে গেলেন। তারপর ফকির ছাহেবের ঔষধ খেয়ে তিনি সুস্থ হয়ে যান। উনার সুস্থতা দেখে পরিবারের লোকেরা অবাক হয়ে যায় ও জনতে চায় তিনি কিভাবে এই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেলেন। তিনি ফকির ছাহেবের সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত ভাবে সকলকে বললেন।

তারপর আবার যখন ফকির ছাহেব সেই গ্রামে আসলেন, সকলে গিয়ে পায়ে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন দয়া করার জন্য। ফকির ছাহেব উনাদের কে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যদি আমার দোয়া ও আল্লাহর রহমত পেতে চাও তাহলে কুমিল্লা জেলা, হোমনা থানা, কাশিপুর গ্রামে আলী ফকিরের মাজার আছে। ইনশাআল্লাহ সেখানে গিয়ে চৈত্র মাসের ২০ তারিখ সিন্নি তবারক রান্না করে আছরের নামাজের পর লেংটা বাচ্চাদের মাঝে বিতরণ করবে। সেই থেকে আজ অবধি ফকির বাড়ী দরবার শরীফে সিন্নি তবারক রান্না করা হয়ে থাকে। শাহেন শাহ্ কুতুবুল আকতাব মজ্জুমে সালেকিন হযরত খাজা আলিম উদ্দিন আউলিয়া (বাবা আলী ফকির) (রহঃ) এর দর্শনের মূল প্রেক্ষাপট হলো কামেল পীরের কাছে মুরিদ হওয়া। পীরের হুকুম মোতাবেক জীবন গঠন করা।

অখণ্ড থেকে সমস্ত প্রকার চাওয়া, পাওয়া, কামনা, বাসনা, ইত্যাদির উর্ধ্বে উঠে নিসকাম ভাবে স্রষ্টা এবং সৃস্টির প্রেমালিঙ্গন করা। স্রষ্টার সৃষ্ট এই জাগতিক পরিবারকে পূন্যবান,পাপি, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে কোন প্রকার ভেদাভেদ না করে সকলকে ভালোবাসা এবং সকলের সেবা করা। উনার এই দর্শনের উপর ভিত্তি করে উনার দরবারে সকল ধর্মীয় ভেদাভেদ উপেক্ষা করে সকল স্তরের লোকজনের সমাগম হয় এবং মানব সেবার পরিপূর্ণতা প্রকাশ পায়।

মন্তব্যঃ-

শাহেন শাহ্ কুতুবুল আকতাব মজ্জুমে সালেকিন হযরত খাজা আলিম উদ্দিন আউলিয়া (বাবা আলী ফকির) (রহঃ) ছিলেন একজন ত্যাগি, বাহ্যিক, অশিক, অলৌকিক, আধ্যাতিক ক্ষমতা সম্পন্ন মহা পুরুষ। উনার জীবন দর্শনের অধিকাংশ প্রেক্ষাপট ছিল সকলের কাছে অজানা। তিনি ছিলেন অত্যান্ত দয়ালু। তিনি মানুষের বিপদের দুর্দিনে মানুষকে সাহায্য করতেন। তিনি যদি নিজ ইচ্ছায় কারো সাথে সাক্ষাত না দিতেন তাহলে কেহই উনাকে খুঁজে পেতেন না। সুতরাং এখানে শাহেন শাহ্ কুতুবুল আকতাব মজ্জুমে সালেকিন হযরত খাজা আলিম উদ্দিন আউলিয়া (বাবা আলী ফকির) (রহঃ) এর জীবন দর্শন এবং যে সকল মোজেজা সম্পন্ন ঘটনাবলি সকলের কাছে ব্যাপক পরিচিত ইহার সমান্যতম অংশ তুলে ধরবার চেষ্টা করা হয়েছে।